আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পূণ্যভূমি আলীকদম আদর্শ একটি উপজেলার নাম

- মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান) প্রাককথনঃ শৈল সমারোহে সুষমামন্ডিত পার্বত্য বান্দরবান জেলার একটি আদর্শ উপজেলার নাম আলীকদম। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার এক দশকেরও পরে এটি একটি মানোন্নীত ‘থানা’ হয়। যা একসময় সাবেক লামা মহকুমার অধীনস্থ একটি ইউনিয়ন ছিল মাত্র। পরে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রকরণের আওতায় একটি প্রথম শ্রেণীর মানোন্নীত থানা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে দু’টি ইউনিয়ন নিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রে। উপজেলা(থানা)’র আয়তনঃ চিটাগাং হিলট্রাক্টস্ ডিসট্রিক্ট স্টাটিসটাইক-১৯৮৩ মতে জানা যায়, আলীকদম উপজেলার আয়তন ৮৮৫.৭৮ বর্গকিলোমিটার।

এর মধ্যে ১,৬০,৬৬৪ একর এলাকাকে বনভূমি হিসাবে গণ্য করা হয়। জনসংখ্যাঃ আলীকদম যখন সাবেক লামা মহকুমার আওতাধীন ছিল তখন এ উপজেলার লোকসংখ্যা ছিলো অতি নগন্য। এর মধ্যে উপজাতীয় মুরুং সম্প্রদায়েরা সংখ্যায় ছিল বেশী। ১৯৮৪ সালে অত্র উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার পর মূলত জনসংখ্যা (পাহাড়ী-বাঙ্গালী) আনুপাতিক হারে বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের ২০০১ সালের আদম শুমারীর তথ্য অনুযায়ী এ উপজেলার জনসংখ্যা ৩৪,০০২ জন।

এর মধ্যে পুরুষ ১৮৬৯২ জন, মহিলা ১৫৩১০ জন। মোট জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিম- ১৮,৯২৪ জন, হিন্দু- ১০৫৯ জন, মুরুং-৭৬৭৬ জন, মার্মা- ৩০৪৬ জন, চাকমা- ৩৮৯ জন, ত্রিপুরা- ১৬৪০ জন, তঞ্চঙ্গা- ১১৯৬ জন, বড়–য়া- ৭২ জন। ইউনিয়নঃ গ্রামীণ এলাকাকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দারিদ্র বিমোচন ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এটি সহায়ক এক শক্তি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অত্র উপজেলায় দু’টি মাত্র ইউনিয়ন রয়েছে।

যা বাংলাদেশে বিরল। এর একটি ১নং আলীকদম ইউনিয়ন পরিষদ, অন্যটি ২নং চ্যৈং ইউনিয়ন পরিষদ। এর মধ্যে আলীকদম ইউনিয়নটি উন্নয়ন কাঠামোয় অপোকৃত এগিয়ে রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম কে শক্তিশালী করার জন্য ইতোমধ্যে দাতাসংস্থা ইউএনডিপি, বিশ্বব্যাংক ও কেয়ার সহায়তা করার কথা ঘোষণা করেছেন। পার্বত্য এ উপজেলার আয়তন এবং সার্বিক মূল্যয়নে অন্ততঃ আরো দু’টি ইউনিয়ন হওয়া ছিল বাঞ্ছনীয়।

কিন্তু এেেত্র অত্র উপজেলায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। ইতোপূর্বে বান্দরবানের সাংসদ ১নং আলীকদম ইউনিয়ন কে দু’ভাগ করে ‘কুরুপপাতা ইউনিয়ন’ করার এক ঘোষাণা দিয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয় নেতৃত্বের অদুরদর্শী মনোভাবের দরুন সাংসদের এ ঘোষণা বাস্তব রূপ নেয়নি। ইউনিয়নটি বাস্তবায়িত হলে সরকারী বরাদ্দের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রাপ্ত আয়ের অংশও উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করা যেতো। সেই সাথে দুর্গম এলাকায় বসবাসরত উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর জীবন মানও বৃদ্ধি পেতো।

স্থানীয় শাসন পর্যায়ে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও নেতৃত্বের ভাবমূর্তি সৃষ্টিতে ১নং আলীকদম ও ২নং চ্যৈং ইউনিয়ন কে দু’ভাগ করে আলাদা ২টি ইউনিয়ন পরিষদ করা এখন সময়ের দাবী। দু’ইউনিয়নের ৬৫৩২ টি পরিবারের মধ্যে শুধুমাত্র ৩০৮ টি পরিবার বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে বলে সরকারী পরিসংখ্যনে জানা যায়। অধিকাংশ এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছাইনি। অত্র উপজেলার দু’টি মাত্র ইউনিয়নের মধ্যেও পর্যাপ্ত পরিমাণ আভ্যন্তরিণ সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। খরস্রোতা মাতামুহুরী নদী আলীকদম ইউপি’র সাথে চ্যৈং ইউপি’র যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।

ফলে দু’ইউনিয়নের সিংহভাগ পাহাড়ী-বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী বর্ষা মৌসুমে নদী পারাপারে অন্তহীন দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়ে থাকেন। বিশেষ করে মাতামুহুরী নদীর ওপারে উপজাতীয় মুরুং, মার্মা, ত্রিপুরা সম্প্রদায় সহ বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর বসতি রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। সুতরাং এসমস্যার উত্তোরণে নিন্মোক্ত ব্রিজগুলি নির্মাণ করা অতীব প্রয়োজন। ১। আলীকদম-নয়াপাড়া (চ্যৈং) মাতামুহুরী নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ, ২।

কলার ঝিরি ব্রিজ নির্মাণ, ৩। অসতি ত্রিপুরা পাড়া ব্রিজ নির্মাণ, ৪। সোনাইছড়ি ঝুমিয়া পাড়া ব্রিজ নির্মাণ। যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ দু’দশক আগেও অত্র আলীকদম উপজেলার সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল দুর্গম গিরির পায়ে মেটো পথ। অন্যদিকে, খরস্রোতা মাতামুহুরী নদী পথে নৌকা যোগে অধিকন্তু লোকজন যাতায়াত করতো।

১৯৮০Ñ৮৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর ১৬ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের অকান্ত পরিশ্রমে আরকান সড়কের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী থেকে আলীকদম পর্যন্ত মোট ৩৯.৪৪ কিলোমিটারের সংযোগ সড়কটি নির্মিত হয়। এসড়ক নির্মাণের ফলে পার্বত্য ভূখন্ড আলীকদমের সাথে বহির্থানা সমুহের বৈপ্লবিক যোগাযোগ সাধিত হয়। আলীকদমের সাথে ইতোপূর্বে পার্বত্য থানচি উপজেলা ও নাই্যংছড়ি উপজেলার সাথে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার কাজ শুরু হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর হলে থানচি সড়ক নির্মাণের কাজ চলমান প্রক্রিয়ায় রয়েছে। নাই্যংছড়ির সাথে যোগাযোগ সড়কটি লাল ফিতায় বন্দী থাকায় যোগাযোগ সুবিধা থেকে এ দু’ উপজেলার পাহাড়ী-বাঙ্গালী জনগণ বঞ্চিত রয়েছে।

কবে নাগাদ এ সড়ক সংযোগ কাজ শুরু হবে তা বলা দুষ্কর। উপজেলা বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রতিবছর অত্র উপজেলার ভৌত অবকাঠামো রনাবেণে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এখনো বেশ কয়েক মৌজার সাথে যাতায়াত সড়ক একমাত্র পাহাড়ীয়া শ্বাপদিত সরু পথ। অত্র উপজেলার সাথে রয়েছে পাশ্ববর্তী মায়ানমারের পাহাড়ী সীমান্ত। পাহাড়ী পথে প্রতি বছর অগণন সংখ্যক অনুপ্রবেশ ঘটে থাকে।

তাই সীমান্তবর্তী এলাকা পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। যাতে করে সরকারী তদারকি জোরদার করা যায়। এক সরকারী প্রস্তাবনায় দেখা গেছে, এ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার সমুহ উন্নয়নে ১। আলীকদম হ’তে কুরুপপাতা-পোয়ামুহুরী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ, ২। আলীকদম হ'তে দোছরী-বলাই পাড়া সড়ক নির্মাণ, ৩।

কলার ঝিরি হ'তে মাঙ্গু পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ, ৪। সোনাইছড়ি হ’তে ঝুমিয়া পাড়া পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ, ৫। আমতলী হতে অসতি ত্রিপুরা পাড়া পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ ও ৬। সোনাইছড়ি হ’েত মেজর জামান পাড়া হয়ে রূপসী পাড়া পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। ডাক ব্যবস্থাঃ অত্র উপজেলার সূচনা পর্বে নির্মিত একমাত্র ডাকঘরটি দীর্ঘদিন যাবৎ সংস্কার বিহীন।

সরকারী বেসরকারী নানা রকম ডকুমেন্ট প্রেরণের একমাত্র অবলম্বন এ ডাকঘরটি। এর প্রয়োজনীয় সংস্কার না থাকায় বর্ষা মৌসুমে নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা যায়। তাছাড়া থানা সদর থেকে অন্তত ৬০/৬৫ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত কুরুপপাতা ও পোয়ামুহুরীতে কোন সাব-পোষ্ট অফিস না থাকায় সরকারী প্রশাসন সহ স্থানীয় জনগনের দুর্ভোগ চরমে। এ অবস্থার উত্তোরণে উর্ধ্বতন কর্তৃপরে সুনজর প্রয়োজন রয়েছে। টেলি যোগাযোগঃ ৩০ লাইন বিশিষ্ট আলীকদম উপজেলার টেলিফোন এক্সচেঞ্জটি এখনো সেই গ্রাহামবেলীয় যুগের রয়েছে।

চাহিদার তুলানায় গ্রাহক সেবা নিতান্তই অপ্রতুল। ৬ জোড়া কডের মধ্যে প্রায় সময় ২/৩ টি কডই বিকল্প থাকে। ফলে সরকারী বেসরকারী গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ েেত্র দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সকলকে। প্রযুক্তির বিকাশের ধারায় এ বাংলা মায়ের অন্যান্য উপজেলার তুলনায় এ উপজেলাটি এখনো সেই তিমিরে রয়ে গেছে। সরকারী প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মহৎ উদ্যোগ ছাড়া এ সমস্যার উত্তোরণ করা সম্ভব নয়।

সুতরাং অত্র পার্বত্য এলাকার পাহাড়ী বাঙ্গালী উভয় সম্প্রদায়ের প্রাণের দাবী আলীকদম উপজেলাকে ডিজিটাল এক্সচেঞ্জের আওতায় আনা হউক। শিাঃ বাংলাদেশের সামগ্রীক প্রোপটে আলীকদম উপজেলার শিার হার তুলনামূলক কম হলেও হতাশাজনক নয়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এ পার্বত্য ভূখন্ডে স্বাধীনতা পূর্বকাল থেকেই প্রাথমিক শিার উম্মেষ ঘটেছিল বলে জানা যায়। আলীকদম আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৬৫ সালের দিকে প্রতিষ্টিত হয়ে এতদাঞ্চলে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক শিার স্ফুরণ ঘটিয়েছিল বলে জানা যায়। সে সময় থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিার ভিত্ রচিত হলেও দেশ স্বাধীনের ৩২ বছর পরেও পার্বত্য এ উপজেলায় কোন কলেজ বা মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

এেেত্র এলাকায় শিানুরগী মহলের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে প্রতিয়মান হয়। যার ফলশ্র“তিতে এ উপজেলার শিার্থী ছাত্র/ছাত্রীদের মাধ্যমিক স্তর পার হয়ে অন্যান্য উপজেলায় পাড়ি জমাতে হয়। আর্থিক দৈন্যতার কারণে অনেক গরীব মা-বাবারা সন্তানদের কে বাহিরে পাঠিয়ে শিার সুযোগ করে দিতে অপারগ। এ কারণে উচ্চ শিােেত্র তুলনামূলক পিছিয়ে আছে অত্র উপজেলা। ০১ টি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, ০১ টি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও ০২ টি নিন্ম মাধ্যমিক স্কুল মাধ্যমিক স্তরের শিার প্রসারে অবদান রেখে আসছে।

অপরেেত্র ০১ টি দাখিল মাদ্রসা ও ০১ টি কওমী মাদ্রাসা এ উপজেলার ইসলামের নৈতিক ও আদর্শিক শিা বিস্তারে সমন্বয় সাধন করে চলছে। পরিসংখ্যনে জানা যায়, অত্র উপজেলায় মোট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়- ১৪ টি, বেসরকারী রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়- ০৮ টি, আনরেজিঃ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়- ০১ টি, স্যাটেলাইট বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়- ১০ টি, কমিউনিটি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়- ০৩ টি, কিন্ডার গার্টেন ০১ টি। এছাড়া অত্র উপজেলায় বর্তমানে “নুরানী শিা” নামে ৪/৫ টি শিা প্রতিষ্ঠান সাম্প্রতিক সময়ে চালু হয়ে ধর্মীয় ও আধুনিক শিা দানে ব্রতী হয়েছে। এছাড়া আদিবাসী মারমা ভাষা প্রাথমিক শিা চালু করার একটি পদপে সাম্প্রতিক সময়ে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পুরো উপজেলায় শিেিতর হার ২২%।

প্রাথমিক শিা েেত্র এ উপজেলায় হতাশাজনক চিত্র রয়েছে বলে ইতোপূর্বে প্রকাশিত অনেক সংবাদপত্রের রিপোর্টে জানা গেছে। কর্মসংস্থানহীন এ উপজেলায় অনেক পরিবারের শিশুরা স্কুলে বিমুখ রয়েছে বলে জানা যায়। যদিও সদাশয় সরকার ‘সবার জন্য শিা কর্মসূচী’ বাস্তবায়নে আন্তরিক। সরকারী প্রাথমিক শিা প্রতিষ্ঠান সমুহে ঝরে পড়ে শিশুর সংখ্যা অনেক। অত্র উপজেলায় ঝরে পড়া শিশু সংখ্যার সত্যানুসন্ধানী জরিপ এ যাবৎকাল পাওয়া যায়নি।

শিা অফিসও এেেত্র ডাক ডাক গুড় গুড় ভাব ধারণ করে থাকেন। সবার জন্য শিা কর্মসূচী এ উপজেলায় কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে তা তলিয়ে দেখা সময়ের দাবী হয়ে উঠেছে। উপজাতীয়তের শিার মানোন্নয়নে ভাববার অবকাশ রয়েছে। এেেত্র সম্প্রদায় ভিত্তিক প্রশিতি শিক নিয়োগ দিয়ে পাঠ্যদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে এতাদাঞ্চলে অবহেলিত উপজাতীয়রা আধুনিক শিায় শিতি হয়ে দেশ মাতৃকার কল্যাণ সাধনে সহায়ক শক্তিতে রূপ নিতে পারতো বলে পর্যাবে মহলের ধারণা। অত্র উপজেলার সামগ্রীক শিার মানোন্নয়ন কল্পে এক প্রস্তাবনায় দেখা গেছে, বেশ কতিপয় অসংগতি বিষয়।

সে সবের বাস্তবায়ন করা গেলে পার্বত্য এ উপজেলায় শিােেত্র সামান্যতম হলেও আলোর ঝলকানি দেখা যাবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ১। বিদ্যালয় সমুহের শুণ্য পদ পুরণ, ২। নীতিমালা মোতাবেক ছাত্র সংখ্যার অনুপাতে শিক পদ সংখ্যা বাড়ানো। , ৩।

উপবৃত্তির পরিমাণ ৪০% থেকে ৮০% উন্নীত করা, ৪। যে কোন কিছুর বিনিময়ে শিকদের পাঠদানে অধিকতর মনোনিবেশ করা, ৫। পাঠ্যসূচীতে এমন একটি বিষয় অন্তর্ভূক্তি করা যাতে করে ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে অধিকতর আগ্রহী হয়, ৬। আলীকদম সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়কে দ্বাদশ শ্রেণী এবং দাখিল মাদ্রাসাটিকে ফাজিল পর্যন্ত চালু করার পদপে গ্রহণ করা, ৭। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে যে সব শিক-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন তাদের কে অন্যত্র বদলীর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ৮।

আসবাবপত্র সংকট নিরসন করা ও ৯। এতিমখানাগুলোতে ক্যাপাসিট্যান্টগ্রাণ্ড বাড়ানো প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। স্বাস্থ্যঃ ওপেক’র অর্থানুকুল্যে বিশাল আয়তনে সুরম্য অট্টালিকায় নির্মিত হয়েছে আলীকদম সরকারী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি। দৃষ্টিনন্দন এ দালানটি দেখে এলাকার পাহাড়ী-বাঙ্গালী জনগণের চোখ জুড়ালেও স্বাস্থ্য সেবার মান নগন্য। ৩১ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নির্মিত হলেও প্রয়োজনীয় ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীর সংখ্যার স্বল্পতা রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে কোন গাইনোকলজিষ্ট (প্রসুতি বিশেষজ্ঞ) ও শিশু বিষয়ক ডাক্তার না থাকায় নারী ও শিশুরা সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সর্বদা ঔষধ সংকট বিদ্যমান থাকে হাসপাতালটিতে। তবুও প্রায় ৩৫ হাজার বাঙ্গালী-পাহাড়ী জনমানুষের একমাত্র স্বাস্থ্য সেবার মহান ব্রত পালন করে থাকে হাসপাতালটি। পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ অন্তহীন। অনেক দম্পতির সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ তথা পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে তাদের সম্যক কোন ধারণা নেই।

এ নিয়ে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা যথেষ্ট থাকলেও প্রয়োজনীয় তদারকিতে রয়েছে অনেক ফাঁক ফোকর। জনসমাজের কল্যাণে হাসাপাতালটিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তারের শুণ্যপদ পুরণ, ঔষধ সংকট নিরসন, এবং শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করণ বর্তমানে সময়ের দাবী। অপরদিকে, কোন প্রকার লাইসেন্স ছাড়াই অত্র উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য ফার্মেসী। ড্রাগ লাইসেন্সের নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি ফার্মেসীতে অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্ট রাখার কথা থাকলেও এখানকার ফার্মেসীর অধিকাংশে এ আইনের বালাই নেই। এসবের উত্তোরণ হওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।

জনস্বাস্থ্যঃ জনগণের মৌলিক অধিকার প্রদানে জনস্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর হলেও আলীকদম উপজেলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সমন্বয়হীনতায় দুর্ভোগের স্বাীকার হয়ে থাকে এলাকার পাহাড়ী-বাঙ্গালী জনগণ। সরকারী অর্থায়নে ইতোপূর্বে স্থাপিত অনেক রিংওয়েল, টিউবওয়েল প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবে মাটির সাথে একাকার হয়ে গেছে। মেরামত প্রচেষ্টা ীণ। তবে ইতোপূর্বে একটি এনজিও সংস্থা এলাকায় বিনামূল্যে রিংওয়েল স্থাপন করে এ এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা লাঘবে সহায়তা দান করে চলেছে বলে জানা গেছে। এখনো প্রত্যন্ত এলাকায় পাহাড়ী-বাঙ্গালী লোকজন নদী-নালা, ছড়া-নির্ঝর ও পুস্করিনী ও কুয়ার পানি পান করে অধিকন্তু সময় সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত থাকে বলে বিভিন্ন সময় জানা যায়।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলেরর কর্মকান্ডে সমন্বয় সাধন হওয়া প্রয়োজন। কৃষিঃ ‘ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য তিকর’ হলেও পার্বত্য এ ভূখন্ডে তামাক চাষ হচ্ছে বল্গাহীন গতিতে। একসময় এ উপজেলায় উৎপাদিত ধান, ভূট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, ধনে, সরিষা, আদা, বাদম, কপি, আলূ প্রভৃতি শস্যদি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য এলাকায় রপ্তানী করা হতো। কিন্তু বর্তমানে রপ্তানী করা তো কষ্ট কল্পনাই বরং এলাকার চাহিদা মেটাতে বহির্থানাসমুহ থেকে আমদানী করতে হচ্ছে। কারণ দু’তৃতীয়াংশ জমিতেই এখন তামাক চাষ হয়ে থাকে বলে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়।

১৯৮১-৮২ সালের এক সরকারী পরিসংখ্যনে জানা গেছে, আলীকদমে ৬ একর জমিতে ৩শ’ মণ পেঁয়াজ উৎপন্ন হতো। তামাক কোম্পানীরা কৃষকদের আগাম ঋণের সুযোগ দিয়ে তামাক উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করছে। অধিক লাভের আশায় কৃষকেরাও অন্যান্য চাষের চেয়ে অবাধে তামাক চাষ করে চলছে। গত মৌসুমে কতিপয় কোম্পানী মাঝপথে তামাক ক্রয় বন্ধ করে দেয়। ফলশ্র“তিতে অনেক কৃষক বিপাকে পড়েন।

এতে করে অনেক কৃষক ঋণের বোঝায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়েছেন এবং রাজপথে অনেক কৃষকের করুণাবস্থা দেখা গেছে। অবশ্য কোম্পানীর তরফ থেকে বলা হয়েছে, তাদের ল্যমাত্রা অনুযায়ীই তামাক ক্রয় করা হয়েছিল। সরকারী পরিসংখ্যনে আলীকদম উপজেলার মাটির গুণগত মান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দোয়াশ মাটি ৩০%, বেলে মাটি ৬%, এটেল মাটি ১% ও কেকনায় ৬৩% । উঁচু ভূমির পরিমাণ ৭০% ও মধ্যম ভূমির পরিমাণ ৩০%। আবাদযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ: এক ফসলী- ৬০৪৫ একর, দু’ফসলী- ৪৫৩৭ একর, তিন ফসলী- ১১১০ একর, পতিত জমির পরিসংখ্যান ৯৮ একর মাত্র।

সেচ যোগ্য জমির পরিমাণ- ৯১৩ একর, আবাদযোগ্য অনাবাদী জমির পরিমাণ- ৪০০ একর। কৃষি প্রধান এদেশের সামগ্রীক উন্নয়নে কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যক্টর। তামাক চাষে সরকারের মোটা অংকের রাজস্ব আয় হয়ে থাকে বলে জানা যায়। কিন্তু স্বাস্থ্য অনিষ্টের মূলে তামাক একটি প্রতিবন্ধক বস্তু হিসাবে ধিকৃত হয়ে আসছে দীর্ঘকাল ধরে। পার্বত্য আলীকদমেও তামাক চাষের আগ্রাসী থাবা বিস্তার করেছে বিগত অর্ধযুগেরও বেশী সময়কাল আগে থেকে।

এতে করে এলাকার অন্যান্য কৃষি সেক্টরে অন্তরায়ের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে কৃষি ব্যবস্থার সামগ্রীক উন্নয়নে আলীকদম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ভূমিকা পালন করে চললেও এ এলাকার কত একর তামাক চাষ হয় তার সুনির্দ্ধিষ্ট কোন পরিসংখ্যন কৃষি বিভাগের কাছে নেই। বিষয়টি উদ্বেগের। বনজ সম্পদঃ দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে যে, আলীকদম উপজেলার সবুজাভ অরণ্যাঞ্চল ক্রমশ মরুময়তার দিকে এগুচ্ছে। তদানিন্তন বৃটিশ সরকার ১৯২০ সালে এ এলাকার ১ লাখ ৩ হাজার একর ভূমিতে প্রথম বনায়ন শুরু করেন বলে জানা যায়।

পরে পূর্ব পাকিস্তান সরকারও দেশবিভাগের পর থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখেন। যার ফলে সৃষ্ট হয় ‘মাতামুহুরী রিজার্ভ’। ২০০১ সালের পরিসংখ্যানে জানা গেছে, এ উপজেলায় সরকারী বনের পরিমাণ- ১ লাখ ৬০ হাজার ৬ শত ৬৪ একর। তাছাড়াও ৩৩ হাজার ৯ শত ৯৯ একর অশ্রেণীভূক্ত (বেসরকারী) বনাঞ্চল রয়েছে বলে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যনে জানা যায়। এসব বনাঞ্চলের মধ্যে মূল্যবান প্রজাতীর সেগুন, গর্জন, চাপালিশ, গামারী, চাম্পাফুল প্রভৃতি ধরণের গাছ রয়েছে।

১৯৮৪ সালে উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ সাধিত হওয়ার পর থেকে এসব বনাঞ্চলে একশ্রেণীর ব্যবসায়ির আগ্রাসী তৎপরতা শুরু হয়ে আজো বিদ্যমান রয়েছে। প্রতিনিয়ত জোত পারমিটের অনুকুলে পার্বত্য এ উপজেলার বনজ সম্পদ সুকৌশলে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে সংবাদপত্রের খবরে জানা গেছে। সরকার যেখানে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে পার্বত্য জেলা সমুহে প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেখানে নির্বিবাদে বনজ সম্পদ হরিলুট হওয়া প্রশ্ন সাপে। বন্যপ্রাণীঃ এক সময়ে আলীকদমের গহীন অরণ্যে নানা প্রজাতীর পশু পাখির নিরাপদ আবাস স্থল ছিলো। বাঘ, ভাল্লুক, হাতি, হরিণ, বানর সহ নাম না জানা অসংখ্য প্রজাতীর পশু এবং বিচিত্র রকমের পাখপাখালীর অবিরত গুঞ্জনে প্রকৃতির কোলাহলে ভিন্ন মাত্রার আমেজ সৃষ্টি করতো।

বর্তমানে অব্যাহত জুম চাষ, নির্বিচারে বৃ নিধন হওয়ায় পশু পাখিরা তাদের নিরাপদ আবাস হারাচ্ছে। ফলে অনেক পশু পী হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে। অনেক শিকারী আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে হরিণ শিকার করে থাকে বলে জানা যায়। আবাস হারিয়ে বন্য হাতির দল পার্শ্ববর্তী লামা উপজেলায় বিভিন্ন পাহাড়ী পল্লীতে হানা দিচ্ছে বলে পত্র পত্রিকার সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। চিত্ত বিনোদনঃ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সুরম্য এ পার্বত্য উপজেলায় চিত্ত বিনোদনের কোন অবলম্বন নেই।

এরশাদ সরকারের আমলে নির্মিত একটি শিশু পার্ক থাকলেও তা দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এর সংস্কার কার্য সম্পাদন করা হলেও তা যথেষ্ট নয়। মানসিক উৎকর্ষ সাধনে সুস্থ বিনোদনের অবদান অনস্বীকার্য। এেেত্র আলীকদম উপজেলাটি শত যোজন পিছিয়ে রয়েছে বহুকাল ধরে। এর অবসান ঘটানো একান্ত প্রয়োজন।

কৃষ্টি-সংস্কৃতিঃ বাঙ্গালীর কৃষ্টি-সংস্কৃতির সাথে অত্র উপজেলায় রয়েছে পাহাড়ী উপজাতীয় সংস্কৃতির এক মেলাবন্ধন। মার্মাদের সাংগ্রাই, ওয়াও, ওয়াগ্যাই এবং মুরুংদের গো-হত্যা উৎসব পালিত হয়ে থাকে মহাধুমধামের মধ্য দিয়ে। আলীকদম উপজেলাধ বিগত ১০ বছর আগে থেকে মার্মা উপজাতীয়দের একটি মেলা হয়ে আসছে মিরিঞ্জা পর্বতের চুড়ায়। ঐতিহ্যবাহী মারাইং তং জেদী মহা বৌদ্ধ মেলা/০৩ ইং সম্পন্ন হয়েছে গত ১০, ১১ ও ১২ ডিসেম্বর। উক্ত উৎসব উদ্যাপনের সময় বিভিন্ন এলাকা হতে পার্বত্য এলাকার অসংখ্য বৌদ্ধ ভিু ও হাজার হাজার দায়ক/দায়িকার সমাগম হয়ে থাকে।

এছাড়াও উক্ত মেলাটি পার্বত্য এ উপজেলয় অন্যান্য পাহাড়ী সম্প্রদায় ছাড়াও বাঙ্গালীদের মধ্যে বিনোদনের একটি মাধ্যম হয়েছে। উপজাতীয়দের পাশাপাশি বাঙ্গালীরাও মেলায় যোগ দিয়ে থাকে। উক্ত মেলায় সহাবস্থানের একটি চিত্র প্রতিভাত হয়ে উঠে প্রতিবছর। তবে অন্তত: দেড় হাজার ফুট উঁচু পাহাড় চুড়ায় উঠা এক অর্থে কষ্ট সাধ্য। এর উন্নয়নের জন্য পাহাড় চুড়ায় উঠার রাস্তাটি সংস্কার করা জরুরী।

ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানঃ পার্বত্য এ উপজেলায় দু’টি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গত ২০০০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। বিভিন্ন সরকারী দিবসে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশ নেয়া ছাড়াও এলাকার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের উন্নয়নে প্রতিষ্ঠান দু’টি নিজ নিজ কর্মতৎরতা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ২০০০ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে ‘ঝিলিক’ নামে একটি সংগঠন এবং ২০০১ সালের ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস পালনের মধ্য দিয়ে ‘প্রতিভা’ নামে অন্য সংগঠনটি গোড়াপত্তন হয়। অত্র উপজেলায় ঝিমিয়ে পড়া ক্রীড়াঙ্গনও সাম্প্রতিক সময়ে সরগরম হতে দেখা যাচ্ছে। তবে এর পাশাপাশি সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সহায়ক হতো।

পাঠাগারঃ তৎকালীন উপজেলা পরিষদ আমলে বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল এর অর্থায়নে অত্র উপজেলার প্রশাসনিক এলাকায় একটি ‘গণপাঠাগার’ নির্মিত হয়েছিল। প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবে তা কার্যতঃ বন্ধ রয়েছে দীর্ঘবৎসর ধরে। এর বই সংখ্যাও নেহাত কম। অপরদিকে, আলীকদম উপজেলার বিশিষ্ট ধর্মজ্ঞানশিানুরাগী মরহুম মাওঃ আবুল কালাম আজাদের স্মৃতিকে অয় রাখার প্রত্যয়ে বিগত ১৯৯৫ ইং সালে ‘আজাদ স্মৃতি পাঠাগার’ নামে একটি বেসরকারী পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। পাঠাগারটিরও বই-পুস্তক স্বল্পতা বিদ্যমান রয়েছে।

আবাসিক সংকটঃ পার্বত্য এ উপজেলায় নানা সমস্যার মধ্যে আবাসিক সংকট কে অগ্রগণ্য করা হয়ে থাকে। কোন পর্যটক বা সফরকারী দল অত্র উপজেলায় আসলে তাদের থাকার ব্যবস্থা নিতান্তই অপ্রতুল। জিয়া বোর্ডিং নামের একটি বোর্ডি রয়েছে আলীকদম বাজারে। অতি নিন্মমানের ওই বোর্ডিংয়ে কারো পে অবস্থান করা গ্লানিকর বলে জানা যায়। ব্যবসায়িক ভাবে অন্যকোন বোর্ডিং বা আবাসিক নির্মাণ না হওয়ায় পর্যটক বা সফরকারীদের এ উপজেলায় রাত যাপন করা অনেক েেত্র সম্ভবপর হচ্ছে না।

সুতরাং এ অবস্থার উন্নয়নে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি বেসরকারী পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা জরুরী। রেষ্ট হাউস:ডাকবাংলোঃ দীর্ঘদিনের আবাসিক সমস্যার সমাধানে সামান্যতম হলেও ভূমিকা পালন করছে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত ‘পানবাজারস্থ রেষ্ট হাউস’ টি। অপরদিকে, লামা বনবিভাগের আওতাধীন মাতামুহুরী রেঞ্জে একটি ‘গর্জন’ নামে ডাকবাংলো রয়েছে। তাতে বনবিভাগের উর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তা ছাড়া কারো থাকার সুযোগ নেই বলে জানা গেছে। শিল্প কারখানাঃ দেশ স্বাধীনের ৩২ বছর পার হলেও অত্র উপজেলায় কোন শিল্প কারখানা গড়ে উঠেনি।

বন আইনের নীতিমালাকে পাশ কাটিয়ে ৬টি স’মিল স্থাপিত হয়েছে আলীকদম সদর এলাকায়। তবে ুদ্র শিল্প কারখানার মধ্যে গণ্য হতে পারে এ ধরণের ০১ টি আইস ফ্যক্টরী, ০১ কুটির শিল্প এবং ০১ টি ফাইউড ফ্যাক্টরী রয়েছে। মাতামুহুরী নদী ও তার ভাঙ্গনঃ আরকান অদ্রিমালা থেকে নির্গত খরস্রোতা মাতামুহুরী নদীর বদৌলতে মূলত পার্বত্য লামা-আলীকদম উপজেলার জনবসতির সুত্রপাত ঘটে। আলীকদম উপজেলাতেই ১২৮০ একর আয়তন দখল করেছে খরস্রোতা মাতামুহুরী। অত্র উপজেলার বুক চিরে বহমান এ নদীটি এখন ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

অব্যাহত বৃ নিধন এবং ঝুম চাষের ফলে মাটির উপরি অংশ য় হয়ে নদীতে পড়ছে। ফলে নদীটি হারাচ্ছে তার গতি। বর্তমানে নদীটির ভাঙ্গণে আলীকদম সদর এলাকার খুইল্যা মিয়া পাড়াটি একটি অংশ বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সম্প্রদায় ঃ আগমণ-নির্গমণঃ মানুষের আগমণ-নির্গমণ বসতি স্থাপন, উন্নতি বিপর্যয় জ্ঞাপক লোকজ ইতিহাসের েেত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম অনেক পিছিয়ে আছে। অধিকাংশ প্রকৃত তথ্য বিভিন্ন রূপকথা, কিংবদন্তি আর অপতথ্যের আবর্জনায় তলিয়ে আছে।

উদ্ধারের চেষ্ঠা ীণ। স্থানীয় ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মৌলিকত্ব নির্ণয়ে লোকজ কাহিনী আর আচার আচরণ এবং আগমণ-নির্গমণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুত্র। এেেত্র পার্বত্য আলীকদম উপজেলার লোকজ সংস্কৃতির ইতিহাসও নানা অপতথ্যের আবর্জনায় তলিয়ে গেছে। সুতরাং প্রকৃত তথ্য পাওয়া খুবই দুষ্কর। তারপরও বর্তমানে যে তথ্য পাওয়া যায় তা নিন্মরূপ: মগ বা মার্মাদের আগমণÑ বোমাংগ্রীর নেতৃত্বে মগ বা মার্মারা আরকান থেকে এ পার্বত্য চট্টগ্রামে আগমণ করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।

বাঙ্গালীদের আগমণÑ ২য় মহাযুদ্ধের পর প্রথমে হিন্দু-মুসলিম বণিক মহাজনরা পণ্য সামগ্রী নিয়ে এ এলাকায় আগমণ করে। মুরুংদের আগমণÑ সপ্তদশ শতাব্দীর দিকে মুরুং উপজাতীরা আরকান থেকে পালিয়ে এ উপত্যকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ১৭৮৭ সালের ২৪ জুন তারিখে চট্টগ্রামের তদানিন্তন শাসন কর্তাকে লিখিত ব্রক্ষ্ম সম্রাটের একখাটি চিঠিতে মুরুং উপজাতী কিভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে এসেছিল সে সম্বন্ধে উল্লেখ্য রয়েছে। তঞ্চঙ্গাদের আগমণ- ১৪১৮ সালের দিকে রাজা মারাক্যা তৈন সুরেশ্বরীর নেতৃত্বে তঞ্চঙ্গারা আরকান থেকে এ আলীকদম উপজেলায় আগমণ করে ১৫১০ সাল পর্যন্ত ছিল বলে জানা যায়। ত্রিপুরাদের আগমণÑ পার্বত্য ত্রিপুরা থেকে নোয়াখালী কুমিল্লা, সাতকানিয়া, কাকারা এবং রামু পর্যন্ত রাজা বিজয় মানিক্যের অস্তিত্ব এবং প্রতœতাত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেলেও অত্র এলাকায় ত্রিপুরা আগমণ পূর্ব পাকিস্তান আমল থেকে বলে জানা যায়।

সুত্রঃ গণপদচারণে আলীকদম: শ্রী উচ্চতমণি তঞ্চঙ্গা, লামা-আলীকদম প্রেস কাবের প্রকাশিত ‘মাতামুহুরী’র ১ম সংখ্যায় প্রকাশিত “মুরুং উপজাতী”। পাহাড়ী-বাঙ্গালী জনগণের সমন্বিত উন্নয়নে যা করা প্রয়োজনঃ এক সমীপত্রে দেখা গেছে, পাহাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উপজাতীয় পরিবারগুলোর সামগ্রীক উন্নয়নে তাদের কে সম্প্রদায় ভিত্তিক সহজে গমণযোগ্য এলাকায় পূনর্বাসন এবং জমির স্বত্ব প্রদান করতে হবে। পুনর্বাসিত এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। সামগ্রীক উন্নয়নের জন্য সমবায় ভিত্তিক নিন্মোক্ত কর্মসূচী চালু করা যেতে পারেঃ ১। হাঁস-মুরগী ও গবাদি পশু পালন, ২।

ঝিরিতে বাঁধ নির্মাণ ও পুকুর খননে প্রকল্প সহায়তা দেয়া ও ৩। তাঁত শিল্পে ুদ্র ঋণদান প্রভৃতি। # উপস্থাপনায়ঃ মমতাজ উদ্দিন আহমদ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।