আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসন্ন কোরিয়া-জাপান সাইবার যুদ্ধ

মিলে মিশে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ! স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে কোরিয়াতে আয়োজন করা হচ্ছে এক বিশাল সাইবার যুদ্ধ জাপানের বিরুদ্ধে. আগামী ১৫ই আগস্ট কোরিয়ার স্বাধীনতা দিবস। সেদিন "কোরিয়া নেটওয়ার্ক ইউনাইটেড" নামের এক সাইবার ক্যাফেতে বসে হাজারো কোরিয়ান জাপানের সবচেয়ে বড় সামাজিক ওয়েবসাইট "চ্যানেল ২" তে এই আক্রমণ চালাবে। পরিকল্পনাটা হলো এরকম, ঐদিন বেলা তিনটায় ঐ ক্যাফের ২,৬০০ জন কোরিয়ান সদস্য একসাথে জাপানের "চ্যানেল ২" সাইটে লগ ইন করবে এবং ক্রমাগত কি-বোর্ডের "F5" বাটন চেপে যাবেন, যাতে করে ঐ সাইটের বুলেটিন বোর্ড অচল হয়ে যায়। ২০১০-এর মার্চের ১ তারিখেও তারা এমন সাইবার হামলা চালিয়ে জাপানি সাইটের ৩৩টার মধ্যে ৩০টা বুলেটিন বোর্ড নষ্ট করে। কেন এই হামলার আয়োজন? কারণ হলো অন্যায়ভাবে জাপান সরকারের কোরিয়ার অধিভুক্ত দ্বীপ "দক"কে নিজেদের বলে দাবি করা এবং এই ওয়েবসাইটগুলো সেই দাবীর পক্ষে প্রচারণা চালানো।

এই দ্বীপের মালিকানা নিয়ে দুই দেশের মাঝে অনেকদিন যাবৎই টানাপোড়েন চলে আসছে। কিছুদিন আগে জাপানের প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারী স্কুলগুলোর ইতিহাসের সিলেবাসে দক দ্বীপকে জাপানের টেরিটরি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করাতে এই উত্তেজনা আবারো নতুন করে বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে জাপান কমিউনিটিও কোরিয়ার বিভিন্ন সরকারী সাইটে পাল্টা আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করছে। তাদেরও একই দাবী, "দক" -এর উপর থেকে কোরিয়ার সার্বভৌমত্ব প্রত্যাহার। জাপানের অধিবাসীরা কোরিয়ার আরো কিছু বেসরকারী সাইটেও হামলা চালানোর পরিকল্পনা আঁটছে, সেসব সাইটে কোরিয়ায় জাপানী উপনিবেশের সময় জাপান যেসব ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে তার বর্ণনা দেয়া আছে।

জাপান সে তথ্যগুলো সংশোধনের দাবী জানিয়ে আসছে। অবশ্য কিছুদিন আগে উত্তর কোরিয়াও একইভাবে হামলা চালিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সরকারী সাইটে, যদিও সেভাবে সফল হয়নি। কেউ কেউ এ ধরণের আয়োজন করে সাইবার হামলার বিরোধীতাও করছেন, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আলোচনার মাধ্যমে এর একটা সমাধান খুঁজতে আগ্রহী তারা। কোরিয়ানরা বরাবরই জাপানীদের পছন্দ করে না। জাপানের প্রায় চল্লিশ বছরের উপনিবেশিকতাই এর জন্য দায়ী।

ইদানীং আরো কিছু ঘটনায় এই এন্টি-জাপান মনোভাব আরো বেড়েছে। কয়েকদিন আগে TBS-এর টিভি প্রোগ্রামে একজন নারী কোরিয়ানকে তিনজন জাপানী পুরুষ কমেডিয়ান ইচ্ছাকৃতভাবে মেরেছে। তারা হেলমেট পরিহিত ছিল, কিন্তু ঐ মহিলা খালি মাথায় ছিলেন। পরে তীব্র প্রতিবাদের মুখে ঐ কমেডিয়ানরা ক্ষমা চেয়েছে। ঐদিকে জাপানের প্রায় ৬০০ জন প্রতিবাদকারী ফুজি টিভির হেডকোয়ার্টারের সামনে এসে দাবী জানাচ্ছে কোরিয়ান প্রোগ্রামের এয়ার টাইম কমাতে, অনেক বেশি সময় ধরে নাকি তাদের টিভিগুলোতে কোরিয়ান প্রোগ্রাম প্রচারিত হয়।

যাই হোক, যেই দক দ্বীপের জের ধরে এতোকিছু তার ইতিহাসটা একটু জানি। Dokdo ( দকদ্বীপ ) : কোরিয়ান শব্দ 'Do' মানে হলো দ্বীপ। এই দ্বীপটি কোরিয়ার পূর্ব উপকূল থেকে ২১৫ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ কোরিয়ার উল্লেউন দ্বীপ থেকে ৯০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। জাপানও কোরিয়ার পূর্ব দিকে অবস্থিত। ৫১২ খ্রিস্টাব্দে সিল্লা সাম্রাজ্যের শাসনামলে এই দ্বীপটি প্রথম কোরিয়ার দলিলপত্রে অধিভুক্ত হয়।

১১৪৫ সালের কোরিয়ান এক অফিসিয়াল ডকুমেন্ট "তিন রাজ্যের ইতিহাস"-এও এর অন্তর্ভুক্তি দেখা যায়। এমনকি ১৮৭০ সালে জাপানের পররাষ্ট্র মণ্ত্রনালয়ের এক রিপোর্টেও দক দ্বীপকে কোরিয়ার অন্তর্গত হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু ১৯০৪ সালে জাপান-রাশিয়া যুদ্ধের সময়ই জাপান প্রথম এর ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বুঝতে পারে। সেই দ্বীপের কাছাকাছি এলাকাতেই জাপান, রাশিয়ার দুই যুদ্ধজাহাজের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঐ যুদ্ধ শেষেই জাপান জোর করে কোরিয়ার সাথে একটা শান্তিচুক্তি করে, যার ফলে জাপানী আর্মি কোরিয়াতে ঘাঁটি গাড়ে, যার অবসান ঘটে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর।

এর মাঝেই জাপান নিজেদের দলিলপত্রে দকদ্বীপকে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। দ্বীপের নাম পাল্টে রাখে 'টাকেশিমা'। সাধারণত: কোন দেশ যদি কোন ভূ-খন্ড অধিগ্রহণ করে তাহলে প্রকাশ্যে আন্তর্জাতিক অংগনে সেটার ঘোষণা দিতে হয়। কিন্তু জাপানের এই দ্বীপ অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ১৯০৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারীতে একটা স্থানীয় পত্রিকায় খবর ছাপা ছাড়া আর তেমন কোন সভা অনুষ্ঠান বা ঘোষণা দিতে দেখা যায়নি। অনেকটা নীরবেই হয়েছে এই অন্তর্ভুক্তি।

তাই তো বিতর্ক থেমে নেই, থেমে নেই দুই পক্ষের দাবী-দাওয়া। জনমানবহীন এই দ্বীপটির নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী অনেক দৃষ্টিনন্দিত। প্রতি বছর কোরিয়ান মণ্ত্রণালয় থেকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদয়ালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয় দক দ্বীপ ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য। এর আরেকটা মহৎ উদ্দেশ্য হচ্ছে ইতিহাস সম্পর্কে নিজ দেশের শিক্ষার্থীদের সচেতন করা যাতে তারা সবাই মিলে তাদের যৌক্তিক অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষকদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে আন্তর্জাতিক অংগনে যেহেতু তাদের যোগাযোগ বেশি, তাই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিটিং-কনফারেন্সে অংশগ্রহণের ফাঁকে দক দ্বীপের যৌক্তিক মালিকানা দাবিটিও যেন তারা আন্তর্জাতিক পরিসরে ছড়িয়ে দেয়।

সূত্র: ১। Click This Link ২। Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।