গুলশানের এক পার্টি থেকে গত মাসে ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক সেবনরত অবস্থায় ৫০ জন তরুণ-তরুণীকে গ্রেফতার করে মাদক অধিদপ্তর ও র্যাব সদস্যরা। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বহু তরুণ-তরুণী ইদানীং ইয়াবার নেশায় মত্ত। প্রতিদিনই রাজধানীর কোথাও না কোথাও ইয়াবার চালান আটক করছে প্রশাসন। তবু এর বিস্তার কমছে না। ইয়াবার নীল দংশনে রাজধানীর তরুণ-তরুণীরা আজ বিপর্যস্ত।
বড়লোকের শখের নেশা ইয়াবা এখন সস্তা যৌন উত্তেজক মাদকে পরিণত হয়েছে।
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ১৫টি সিন্ডিকেট বিভিন্ন ধরনের মাদক ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ইয়াবা আমদানি ও বিক্রি করছে। এদের সাথে ছোট ছোট ৪শ’ বিক্রেতা রাজধানী ঢাকায় চুটিয়ে ব্যবসা করছে। ইয়াবা আমদানি ও বিক্রির সাথে রোহিঙ্গারাও জড়িত। আমদানিকারকরা বিভিন্ন পেশাজীবী ও সংস্থার লেবেল আঁটা গাড়িতে করে বিভিন্ন পয়েন্টে ইয়াবা পৌঁছে দিচ্ছে।
ধরা পড়লে আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে পুনরায় এ ব্যবসায় লিপ্ত হচ্ছে।
এ ব্যবসা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও লাভজনক হওয়ায় সিন্ডিকেট এ ব্যবসাকেই ধরে রেখেছে। রাজধানীর অভিজাত হোটেল এবং ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী ও উত্তরায় গড়ে উঠেছে নাইট ক্লাব বা ডিজে পার্টি। এসব বার ও ডিজে পার্টিতে ইয়াবা বিক্রি হয় দেদারছে। উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা এই ইয়াবা সেবন করে।
ইয়াবার একমাত্র আমাদানিকারক ছিল জনৈক জুয়েল। অন্যতম ডিলার কক্সবাজার-টেকনাফের ফোরকান।
উত্তরার নুরুল, সাঈদ, পুরান ঢাকায় পরাগ। ৯০ দশকে বাংলাদেশে ইয়াবা প্রথম আসে। তখন ধণাঢ্য কিছু মানুষের শখের নেশা ছিল ইয়াবা।
তখন কিছু ল্যাগেজ পার্টি শখের এই নেশা বাংলাদেশে আনত। দামও ছিল চড়া। প্রতি পিস ৫০০ টাকা। ১৯৯৭ সালে বিমানবালা ও বিতর্কিত এক এমপি ইয়াবা আমদানি করে। ২০০০ সালে জুয়েল নামে এক ব্যক্তি ইয়াবাসহ বিমানবন্দরে ধরা পড়ে।
এরপর থেকে তার নাম হয় ইয়াবা জুয়েল।
ইয়াবা আমদানিকারক জুয়েল কয়েক দফা গ্রেফতার ও জামিনে মুক্তি পেয়েছে। ২০০৭-০৮ সালের দিকে বাংলাদেশে ইয়াবার ব্যাপক প্রচালন শুরু হয়। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ইয়াবা সেবন করে বিকৃত যৌনকর্মে লিপ্ত হয়ে ক্যামেরায় চিত্র ধারণ ও ওয়েব সাইটে প্রচার করে। তখন এসবের বিরুদ্ধে র্যাব পুলিশের ব্যাপক অভিযান শুরু হয়।
সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর খুনি শাহরিয়ার রশিদের মেয়ে শেহনাজ ও তার তিন বয়ফ্রেন্ডকে ইয়াবাসহ আটক করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ।
এ ধরনের অপরাধীরা আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে পুনরায় অপকর্মে লিপ্ত হয়। এভাবে এই ভয়ঙ্কর নেশা ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ইয়াবা এখন দেশের তরুণ-তরুণীর জন্য ভয়াল থাবা হিসেবে বিস্তার করছে। মরণ এ নেশার ছোবলে দংশিত হচ্ছে দেশের লাখ লাখ মানুষ। দেশে বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত।
এর মধ্যে ২০ লাখই ইয়াবা আসক্ত। ‘মাদককে না বলুন’ সেগানকে পাশ কাটিয়ে আমদানিকারকরা মাদক আমাদানি ও বিক্রি অব্যাহত রেখেছে।
র্যাব-পুলিশের হাতে রাজধানীতে প্রতিদিন অনন্ত ৫০ জন সেবনকারী ও বিক্রেতা ধরা পড়ছে। বর্তমানে ইয়াবার ব্যাপক প্রচারণা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুনির উদ্দিন আহমেদ ভয়ঙ্কর এ নেশার কুফল বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেছেন, ইয়াবা সেবনে কিডনি ও ফুসফুসের ক্ষতি হয়। রক্তচাপ বেড়ে স্ট্রোক হতে পারে।
ইয়াবা অন্যান্য মাদকের মতো হ্যালুসিনেশন বা বিভ্রম সৃষ্টি করে। সেবনকারীরা প্যারানুইয়া বা ভ্রমগ্রস্ত হয়ে ইউফোরিয়া বা আনন্দদায়ক অনুভুতিতে ডুবে যায়। কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে পরবর্তীতে চরম উত্তেজনা, দেহের অপবৃদ্ধি, খিটমিটে মেজাজ, অনিন্দ্রা, হাত, পা কাঁপা ও চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যা হয়ে থাকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।