আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী নারী নেত্রী আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। তার এতই প্র-ভা-ব যে তিনি নিজের পোষা কুকুর গুলাকেও সামলাতে পারেননা ।

ঢাকা: ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক দ্য ইকোনোমিস্ট আবারও বাংলাদেশ বিষয়ে নতুন প্রতিবেদন রচনা করেছে। ‘দ্য পয়জনাস পলিটিক্স অব বাংলাদেশ : রিভারসন টু টাইপ’ শিরোনামে শনিবার ওই সংখ্যাটি বাজারে আসছে। পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণের বেনিয়ান অংশে এর অপর শিরোনাম ‘ইন দ্য নেম অব দ্য ফাদার’। এদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার প্রশংসা করে রাজনৈতিক সংস্কৃতির সমালোচনা করে পত্রিকাটি লিখেছে, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি বিষাক্ত হয়ে উঠছে। ’ এর আগে বাংলাদেশ সম্পর্কে ছাপানো ‘আপত্তিজনক’ একটি প্রতিবেদনের রেশ কাটতে না কাটতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে।

গত ৩০ জুলাই বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি আপত্তিজনক প্রতিবেদন প্রকাশ করে পত্রিকাটি। এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ চার পৃষ্ঠার একটি দীর্ঘ প্রতিবাদ জানায়। প্রতিবাদলিপি তাদের অনলাইন সংস্করণে ছাপা হলেও মূল পত্রিকায় ছিল না। তবে পরে ইকোনমিস্টের পক্ষ থেকে প্রতিবাদলিপি ‘৩০০ শব্দের মধ্যে’ করে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়। দ্বিতীয়দফা পাঠানো প্রতিবাদটি শনিবার প্রকাশ হওয়া সংখ্যায় থাকছে বলে শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার অণুবিভাগের মহাপরিচালক শামীম আহসান বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

নতুন করে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, গত আড়াই বছরের সরকার পরিচালনাসহ বিরোধীদলের সঙ্গে সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের চলমান অর্থনীতির পর্যালোচনা করা হয়েছে। ইকোনমিস্টের নয়া এ প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার পর ৪০ বছরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ঠিক ততটুকুই পিছিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচন ছিল বাংলাদেশের জন্য এক যুগসন্ধিক্ষণ। নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে। ওই বিজয়ের পেছনে ছিল জাতির এক বুক আশা।

সবাই প্রত্যাশা ছিল শেখ হাসিনা তার দলের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করবেন, জাতীয় ঐক্য গড়বেন, আওয়ামী লীগ ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মধ্যে চলতে থাকা ‘উইনার টেকস অল’ (বিজয়ীরাই সব পাবে) চক্রাকার রাজনীতির অবসান ঘটাবেন। তবে আশঙ্কাও ছিল যে, ‘ওই বিপুল ম্যান্ডেটকে দলীয় সুবিধার কাজে লাগাবেন হাসিনা সরকার’। নির্বাচনের আড়াই বছরের শেষে আশাবাদ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চুরমার হলো। মোটামুটি প্রতিফলন ঘটল আশঙ্কারই। এ সপ্তাহে শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে।

তার নির্বাসিত ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পযন্ত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া একটি দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন। শেখ হাসিনাও চাঁদাবাজি ও হত্যার ষড়যন্ত্রসহ ১৩টি অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছিলেন। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলা প্রত্যাহার আর খালেদা জিয়াদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো সচল রাখা হয়েছে। ইকোনমিস্টের ভাষায়, এটাই বাংলাদেশের রাজনীতির স্বাভাবিক ঘটনা।

দ্বি-দলীয় ব্যবস্থায় পারিবারিক কলহ-বিবাদই হয়ে দাঁড়িয়েছে যেন রাজনীতির মূল কথা। ইকোনমিস্ট প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালে নিহত বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীর শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। মিসেস জিয়া ১৯৮১ সালে নিহত আরেক রাষ্ট্রপতির বিধবা স্ত্রী। প্রধান দুটি দল তাদের শীর্ষ নেতৃত্বের সীমাহীন পারস্পরিক কলহকে মেনে নিয়েছে। বিএনপি সংসদ বর্জন করে রাজপথকে বেছে নিয়েছে।

আর আওয়ামী লীগের মহানুভবতার সব প্রতিশ্রুতি শাসনকে দৃঢ় করার নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে ধূসর হয়ে পড়েছে। ইকোনমিস্টের বিশ্লেষনে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি সংবিধান সংশোধন। গত বছর শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজপাকসে যেমনটা করেছেন, সংসদীয় গণতন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে শেখ হাসিনাও তেমনটাই করেছেন বলে মন্তব্য করেছে পত্রিকাটি। বলা হয়েছে, অন্য সব পরিবর্তনের মধ্যে এ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। যে সরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য নির্বাচনের তত্ত্বাবধান করত।

বিএনপি নতুন ব্যবস্থায় নির্বাচনে যাবে কি-না সেটা বলা মুশকিল। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থাহীনতার কারণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবকে ঘিরে শেখ হাসিনা যে আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করছেন, সে ব্যাপারে ‘পাবলিক ডিবেট’ বা বিতর্কও কম। এ সপ্তাহে ইস্যু করা ব্যাংক নোটসহ তার (শেখ মুজিবের) ছবি সর্বব্যাপী। ইকোনমিস্টের এ বিষয়ে মন্তব্য ‘কোনো এক দলের নিজেকে জাতির এতো ঘনিষ্ঠ হিসেবে চিহ্নিত করা সুস্থ স্বাভাবিক লক্ষণ নয়।

’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একইসঙ্গে পাকিস্তান থেকে থেকে স্বাধীনতার সময় সংঘটিত নৃশংসতার জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হতে যাচ্ছে। ঝুঁকির বিষয় হচ্ছে এ বিচারকে দেখা হচ্ছে দলীয় ভিত্তিতে। এ মাসে আসামিপক্ষের একজন নেতৃস্থানীয় ব্রিটিশ আইনজীবীকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ যখন বিশাল প্রতিশ্রুতির সামনে দাঁড়িয়ে, তখন দেশটির রাজনীতি রয়ে গেছে সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং বিষাক্ত আকারে। ইকোনমিস্ট বলেছে, ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর দেশটির বেশিরভাগ মানুষই দরিদ্র।

সরকারের জনপ্রিয়তা এখনও অক্ষুণ্ণ আছে। অর্থনীতি ভালোই চলছে। তৈরি পোশাক রফতানির ব্যবসা নিয়ে অর্থনীতি মোটামুটি সবল। চীন এবং বিশেষ করে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো পথেই এগুচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আগামী মাসে বাংলাদেশ সফরে যেতে পারেন।

সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে ওই সফরে স্বাক্ষর হতে পারে কয়েকটি চুক্তি। এ সফর সম্পর্কে ইকোনমিস্টের বক্তব্য, ‘তিনি (মনমোহন সিং) এবং বাংলাদেশের অন্য বিদেশি বন্ধুরা যদি তাদের বন্ধুত্বকে শুধু একটি দলের সঙ্গে নয়, দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব হিসেবে দেখেন তবেই ভালো। ’ ‘ইন দ্য নেম অব দ্য ফাদার’ প্রসঙ্গে ইকোনমিস্ট বলে, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষকে প্রশ্ন করলে তারা উন্নয়ন ও এগিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের উদাহরণ দিতেই বেশি পছন্দ করে। তবে শেখ হাসিনা চান দেশকে ১৯৭৫ পূর্ববর্তী তার বাবার আদর্শের আদলে তৈরি করতে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.