প্রথম দৃশ্যে অন্ধকার রাত। চলটা ওঠা দেয়াল, মাঝে মাঝে ছোপ ছোপ শ্যাওলার ঝোপ; এমনই পুরোনো একটা বাড়ি। কোনোদিকে কোনো বাতি নেই, অন্ধকার। বাড়ির বাইরে ক্যামেরা। অন্ধকার অথচ বাড়ির ভেতর থেকে ভেসে আসবে খালি দোলনা হাওয়ায় দোলার শব্দ।
এবার বাড়ির ভেতরে ক্যামেরা। দোতলার একটি ঘরে মিটমিটে আলো। সেখানে বসে কবিতা লিখছেন কবি। কবিতা লেখা শেষ হলে এক দৌড়ে বাড়ির ছাদে কবির আগমন। হাতে কবিতার খাতা।
দ্বিতীয় দৃশ্যে ছাদে কবির বন্ধু রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর মুখে কোনো কথা নেই। অথচ কবি তাঁকে তাঁর সদ্য লেখা কবিতা পড়ে শোনাচ্ছেন অনর্গল। পাশেই দোলনায় দোল খাচ্ছে কান্নারত কবির প্রেমিকা, সুপর্ণা। অন্ধকারে তাঁর মুখ দেখা যাবে না।
শুধু ভেসে আসবে কান্না আর দোলনার হাওয়ায় দোলা শব্দ। কারও মুখে কোনো কথা নেই দেখে কবি নতমুখে সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে যাবেন।
তৃতীয় দৃশ্যে চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার মাঝে মিটিমিটি আলোর মধ্যে কবি আবারও লিখতে বসবেন। কিন্তু এক লাইনের পর আর কিছুতেই লিখতে পারবেন না। একের পর এক ছিঁড়ে যাচ্ছেন খাতার পাতা।
নিদারম্নণ যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকবেন কবি। ঘামতে থাকবেন তিনি। একটা অদৃশ্য ছুরি এসে রক্তাক্ত করে যাবে তাঁর ভেতর। এই দৃশ্য লিখতে লিখতে রক্তাক্ত হচ্ছে স্বয়ং স্ক্রিপ্ট রাইটার।
ক্লোজ শটে, ছাদে কবি তাঁর বন্ধুটির কাঁধ ধরে থাকবেন।
পাশে দোলনা থেকে উঠে সুপর্ণা বলে উঠবে, ‘তুমি কবিতা লিখতে ভুলে গেছো। তোমাকে দিয়ে আর কোনো কবিতা সম্ভব নয়। কবি হিসেবে তুমি ব্যর্থ। এর চেয়ে বরং ভালোবাসতে শেখো, ভালো বাসতে শেখাও। কবির চোখ দিয়ে পানি ঝরবে।
কবির হাত থেকে উড়ে উড়ে দুরে চলে যাবে কবিতার পাতা। আস্তে আস্তে কবি বুঝবেন, শুধু কবিতা নয়, আসলে দুরে চলে গেল তাঁর প্রিয় ভালোবাসা। সুপর্ণা কবির বন্ধুটির পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। আর কোনো কথা নেই কারও মুখে। কবি সুপর্ণার চুলে আলতো করে হাত বুলাবেন।
শেষ দৃশ্যে কেঁপে উঠবে ভুমি। কেঁপে উঠবে ভবনের ছাদ। সবার চোখে মুখে নেমে আসবে বিষাদের ছায়া। এরই মাঝে কবি বলে উঠবেন, ‘আমাকে দিয়ে আর কিছুই হবে না। ভালো থেকো সুপর্ণা, ভালো থেকো।
’ ক্যামেরা দেখাবে, সেপিয়া টোনের ভেতরে পেছাতে পেছাতে কবি চলে যাচ্ছেন নিজস্ব নির্জনতার দিকে, কবি চলে গেলেন মহত্ কবিতার দিকে। সঙ্গে সঙ্গেই নেমে যাবে নীল রংয়ের একটা পর্দা।
আর ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে উঠবে, ‘মায় রে, কলঙ্কিনি রাধা, কদম গাছে উঠিয়া আছে কানু হারামজাদা-মায় তুই জলে না যায়-ও। ওকি ও, হাটে না যায়-ও, বাটে না যায়-ও, ঘাটে না যায়-ও রাধে, মায় তুই আরও না যায়-ও কাছে। ওকি ও, যাইওনারে যাইওনারে কদমতলা দিয়া, কানা আবার দিছে ফান্দ রাধিকার লাগিয়া, মায় তুই জলে না যায়-ও।
ওকি ও, কলসীতে পানি নাই যমুনা বহুদুর, হাঁটিতে না পারে রাধে পড়িতে নুপুর। মায় তুই জলে না যায়-ও। ’ সুপর্ণার ভেতরে ভেতরে নৈঃশব্দের চিত্কার।
শেষ দৃশ্য লিখে নিজেই রক্তাক্ত স্ক্রিপ্ট রাইটার। যেন তাঁর মনে হল, এই মাত্র বুঝি মৃত্যু হল তার ব্যক্তিগত কবির।
এমত চিন্তায় নির্ঘুম স্ক্রিপ্ট রাইটার। রাত জেগে বড় যত্ন করে এইসব দৃশ্য ছিঁড়ে কুটিকুটি করেছিল তারপর। এই স্ক্রিপ্টের কোনো চিহ্ন পাওয়া গেলনা আর। সেই সঙ্গে পাওয়া গেলো না স্ক্রিপ্ট রাইটারকেও। স্বরচিত বিষাদে ভেসে ভেসে স্ক্রিপ্ট রাইটারও সেদিন হাওয়া হয়ে গেছে।
বহুদিন পর গতকাল রাতে শ্যামাসুন্দরীর কাছে গলায় কলসী বাঁধা তাঁর লাশ পাওয়া গেছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।