আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাহলে আর কি? দাদাবাবুদের পণ্য, কিনে হন ধন্য।

সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল (ইসলাম ধর্মানুলম্বিদের ধর্মীয় উপলক্ষ্য আসলেই, একদল বরাহ পোনার মানবতা, পশুপ্রেম ইত্যাদি চাগাড় দিয়ে উঠে। সুকৌশলে ইসলামবিদ্বেষকে ছড়িয়ে দেবার লক্ষ্যে এরাই মানবতা-সুশিলতা-ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি মুখোশ পড়ে থাকে। যদিও সর্বজনবিদিত যে, ভারতীয় চরম সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠি আর এস এস এর পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠা একটি অন্তর্জালভিত্তিক ইসলামবিদ্বেষি সাইট এর সামুর প্রতিনিধি এরা। অথচ পরিমল ইস্যুতে এরা একেবারে গর্তে সিধিয়ে ছিল। আওয়ামি লিগের দুঃশাসন কিংবা বাংলাদেশের প্রতি ভারতের বৈরি এবং আগ্রাসি ভুমিকাকে সাধারণের দৃস্টি ফিরিয়ে রাখার জন্য এরা প্রচার করে, এই সব নাকি ভারতীয় জুজু।

আবার এর সাথে পাকিস্থানের ভারত বিরোধীতার সামঞ্জস্য খুজে পায়। কোন অসতির গর্ভে জন্ম নিলে, এরা দেশের স্বার্থর চেয়ে ভারতের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে, সেটা বিচার করার ভার পাঠকদের উপরই ছেড়ে দিলাম। তাছাড়া এদের উদ্ধত দেশদ্রোহিতার বিরুদ্ধে বাস্তব এবং অপরবাস্তব দুই যায়গাতেই যথাযোগ্য প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধের প্রয়োজন অনুভুত হচ্ছে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সমুন্নত এবং দেশের আবহমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্যই এ ব্যাবস্থা গ্রহন জরুরি বলে মনে করছি। ) আমাদের বিদেশপ্রীতি/অনুকরণপ্রীতি আজকের নয়।

বলতে গেলে স্বাধীনতাপুর্ব বাংলাদেশের মানুষদের মধ্যেও এ রোগ ছিল। উর্দু ইংরেজিতে দখল, ফিরিঙ্গি আর পাকিস্থানি অভিনেত্রিদের উগ্র পোষাক, মায় সুচিত্রা সেনের চুল বাধা শাড়ি পড়ার স্টাইল এসব অনুকরণই ছিল ফ্যাশন। সৌভাগ্যের বিষয় ছিল যে, তখন সমাজ আজকের তুলনায় বেশ রক্ষণশীল ছিল বলে, সেই রোগ মহামারি আকার ধারণ করতে পারেনি। তাই ময়ুরপুচ্ছধারিরা নিতান্ত সংখ্যালঘু হলেও, দেশের শিক্ষিত অর্থবিত্ত প্রভাবশালি মহলে প্রচন্ড প্রভাবশালি ছিল। তাই দেখতে পাই, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে অনেক শিক্ষিত প্রভাবশালিদের রাজাকারিতে নিমগ্ন হতে।

সে কারণেই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধীতা করেও, অনেকেই এখনও ধরাছোয়ার বাইরেই রয়েছেন। স্বাধীনতার পর পাকিস্থানি অভিনেত্রিদের অনুকরনের বদলে শুরু হলো ভারতীয় অভিনেত্রি এবং কলকাতার অপর্না সেনীয় ফ্যাশন। নাভির নীচে শাড়ি পড়া, বগল কাটা ব্লাউজ ইত্যাদি তখনকার নারীদের ফ্যাশন হিসাবে দেখা গেলো। ছেলেরা বড় জুলফি, টাইট শার্ট আর কুত্তার জিহবার মত লক লক করা বেলবটম প্যান্ট। এসব দেখে বিতশ্রীদ্ধ সমাজের অনুরোধে, শুনেছি তৎকালিন মুজিব সরকারের নির্দেশে রক্ষিবাহিনী, মেয়েদের উন্মুক্ত উদরে আলকাতরা প্রলেপন আর ছেলেদের বড় চুল আর জুলপি ঘচাং করে কেটে দিতো।

আওয়ামি লিগের বর্তমান সাঃ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের ভাষায় জিয়া আর এরশাদের সেই "নস্ট প্রজন্মের" অগুণিত নারী পুরুষের দেশপ্রেমের কারণেই বিদেশী অনুকরণপ্রিয়তা মুলধারা থেক অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। দেশীয় শিল্পগুলি (গার্মেন্টস, হস্তশিল্প, কারুশিল্প) মুলধারার মানুষের কাছে সমাদৃত হয়েছিল। দেশের মানুষ দেশে উৎপাদিত কাপড় এবং দেশিয় সংস্কৃতিকেই ফ্যাশন হিসাবে গ্রহন করছিল। আজকে দেশীয় পণ্য এবং ফ্যাশনের সামান্য যে চাহিদা এবং আদর, সেটা কিন্তু সেই "নস্ট প্রজন্মের"ই দেশপ্রেমের ফসল। কিন্তু না।

আমাদের ভাগ্যে সেই সুখ সইলো না। মুক্ত বানিজ্যের নামে মুক্ত কচ্ছ হয়ে আকাশ সংস্কৃতির নামে বিজাতিয় পণ্য আর সংস্কৃতির আমদানি ঘটিয়ে আপন পণ্য আর সংস্কৃতির চুড়ান্ত করা হলো। আর এই "সুকর্মটির" হোতা, না আঃ লিগ নয়, বি এন পি। জ্বি ঠিকই শুনেছেন, বি এন পি। যদিও মুখে তাদের দেশপ্রেম।

কর্মক্ষেত্রে তারা অন্তত সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সংস্কৃতিধবংসি। যদিও আমাদের নিজস্ব বেসরকারি চ্যানেল সম্প্রচারে এসেছে, তারাও কিন্ত বিজাতিয় সংস্কৃতিকেই অনুসরন করছে। ফলে আমাদের যে মুল ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি তার বিকাশের ধারাটিও এগুতে পারছে না। খাল কেটে কুমির আনার মত ভারতীয় বিজাতীয় সংস্কৃতি বাংলাদেশে প্রবেশ করানোর ফলে একদিকে যেমন ফ্যাশনের নামে অশ্লিলতার প্রদর্শনী দেখছি, তেমনি মডেলিং এর নামে উচু স্তরের পতিতাবৃত্তিকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছি। ৪৭ সালে ভারত ভাগের পর, নেহেরু অর্থনীতিতে সমাজতান্ত্রিক ধারাকেই অনুসরন করেছিলেন।

দেশীয় পণ্যেকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবার ফলে, একদিকে যেমন বিদেশি পণ্য এবং সংস্কৃতি ভারতীয় সমাজে প্রবেশ করতে পারেনি, তেমনি দেশী পণ্যের ব্যাপক বিস্তার ঘটাতে সেটা ভারতের জন্য মহা আশির্বাদ বয়ে এনেছিল। আজকের ভারতের যা সমৃদ্ধি, তার মুলই কিন্ত দেশীয় শিল্পের কারণে। শুধু একটা সেক্টরেই পুঁজিতান্ত্রিক ধারাকে ভারত অনুসরণ করেছিল। সেটা হচ্ছে তাদের চলচিত্র এবং ফ্যাশন মডেলিং। নারীকে পণ্য করতে যা যা করার দরকার সবই তারা করেছিল।

যাতে লাভের পরিমান আশার চেয়ে বেশি ছড়িয়ে যায়। অনেক আগে থেকেই ভারতের বিভিন্ন পণ্যের প্রচারে স্বল্প বসনা নারী মডেলদের ব্যাপক অংশগ্রহন, যা এখনও আমাদের দেশে অকল্পনীয়। ৬০এর দশকে ভারতীয়রা আমাদের মতই রক্ষণশীল ছিল, সে সময় রবিন্দ্রনাথের নাতনি শর্মিলা ঠাকুর একটি বানিজ্যিক ছবিতে বিকিনি পড়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় আর্ট কালচারের নামে বিখ্যাত চলচিত্র পরিচালক রাজ কাপুর তার প্রতিটা ছবিতেই নারীকে প্রায় অর্ধলঙ্গ করে প্রদর্শন করতেন। যেহেতু দেখালে সবাই দেখতে উৎসুক, সেহেতু ভারতের এবং ভারতের বাইরে বলিউডের ছবি ব্যাপক বাজার পায়।

পর্দায় যতই খোলামেলা হোন না কেন, বাস্তবে যতই চারিত্রিক স্খলন হোক, ভারতীয়দের সেলেব্রেটিরা খুব সযতনে নিজেদের আড়াল করে রাখেন। আর আমাদের দেশে তারকা খ্যাতিতে পৌছানোর আগেই হবু সেলেব্রেটিরা তাদের সবকিছু উন্মুক্ত করে বসে থাকেন। তাতে অন্তত পর্দায় যত সুনামই থাক, বাস্তবে তাদের সম্মান বলে কিছুই থাকে না। দেশে শিক্ষার হার বাড়লেও, শিক্ষিতদের হার কতটা বেড়েছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকেই। নইলে আধুনিক বারবনিতা ভারতের নারী মডেল/অভিনেত্রিদের পোষাক আসাক অন্ধের মত অনুসরণ করার মানসিকতা আসছে কোথা থেকে? ঈদ তো ভালোই, বছরের অন্য সময়গুলিতেও যে এই অনুসরণপ্রিয়তার ঘাটতি থাকে এমন কিন্ত না।

মাচ্ছাকালি না জুতার কালি, দেবদাস কিংবা ক্যাটরিনা এসবের নামে পোষাক আমদানিতে যে কোটি কোটি টাকার অপচয় ঘটে সেটা একবারও কি আমরা ভেবে দেখেছি? আমরা কেমন মানসিকতায় আচ্ছন্ন যে, এসব নামের পোষাক না পড়লে আমার ইজ্জত থাকে না? ঈদ হয় না? আসলে, যুগ পাল্টালেও আমরা আমাদের মানসিকতা পাল্টাতে পারছি না। উলটো পুজিবাদের নামে, নারীকে যথেচ্ছ পণ্যের মত উপস্থাপন করে, সাম্রাজ্যবাদি শক্তি আজ আমাদের মন মানসিকতাকে সম্পুর্ণ গ্রাস করে ফেলেছে। তারাই ঠিক করে দিচ্ছে কোনটা আধুনিক, কোনটা ফ্যাশন। আমাদের নিজেদের সামাজিক এবং রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের কারনেও, যুগ পাল্টালেও আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য নিয়ে হীনমনত্যার শিকার। এ অবস্থা নিরসনে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

রাজনীতিবিদ, সমাজবিদ, বুদ্ধিজীবি, শিক্ষক সমাজ, মিডিয়া সবাইকে সচেতন হতে হবে। তবে সচেতনার মুল ক্ষেত্রটি হতে হবে পরিবার কেন্দ্রিক। সংসারের কর্তাকর্ত্রিই যদি বিদেশি বিজাতীয় চেতনায় অন্ধ হয়ে থাকেন, তাহলে সন্তানদের অবস্থা কি হবে? সাথে সাথে দেশি পণ্যের উৎপাদকদেরও এক লাফে কোটিপতি হবার চেতনায় উভাসিত না হয়ে, বরং দেশীয় পণ্যকে আরো ছড়িয়ে দেবার নিমিত্তে সীমাহীন মুনাফা করার স্বপ্নীল পাগলা ঘোড়ার মুখে লাগাম টেনে ধরতে হবে। কোন কিছুই যদি করতে না পারেন, তাহলে আল্লাহর ওয়াস্তে দেশপ্রেম, স্বাধীনতার চেতনা, ভাষা ঐতিহ্য সংস্কৃতি এসব নিয়ে খামাখা চাপাবাজি করার দরকার নেই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.