ষোল বছরের কিশোর শামছুদ্দিন মিলনকে গণপিঠুনী দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত ২৭ জুলাই সকালে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ঘটে এই অকল্পনীয় ঘটনা। মিলনকে হত্যার অভিযোগ এনে তার মা বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছেন। এ ঘটনায় ‘দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে’ কোম্পানীগঞ্জ থানার তিনজন পুলিশ সদস্যকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয় এভাবে: আর কিছু লোক কিশোর মিলনকে রাস্তার ওপর ফেলে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাথি মারছে।
একজন লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ি পেটাচ্ছে। মারধরের একপর্যায়ে মিলন উঠে দৌড়ে পাশের একটি দোকানে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু উপস্থিত কেউ তাকে বাঁচাতে ন্যূনতম চেষ্টাও করেনি। এ পর্যায়ে সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা একজন ইট নিয়ে সজোরে আঘাত করেন মিলনের মাথায়। সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে মিলন।
একই লোক ইট দিয়ে এর পরও মিলনের মাথায় একাধিকবার আঘাত করেন। সঙ্গে আরও কয়েকজন এলোপাতাড়ি লাথি মারতে থাকে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মিলনের লাশ পুলিশ গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। পুরো ঘটনার সময় পুলিশের সদস্যরা গাড়ি নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। মিলনকে পুলিশের গাড়ি থেকে নামানো, পিটিয়ে হত্যা এবং লাশ পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত পুরো ঘটনার ভিডিও চিত্র এখন কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্নজনের মুঠোফোনে পাওয়া যায়।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় গতকাল এর ভিডিও চিত্রের উল্লেখযোগ্য অংশ সম্পচারও করেছে।
আমি প্রশ্ন করি, শুধু কি পুলিশ দায়ী ? সাধারণ জনতা যারা গণপিঠুনী দেয় তারা দায়ী নয় কি ? কতটা বর্বর হলে, কতটা অসভ্য হলে এভাবে লাথি, কিল, ঘুষি দিয়ে; ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে একজন তরতাজা যুবককে মেরে ফেলা যায়...!
এ কেমন নিষ্ঠুর, দয়ামায়াহীন মানুষ !
কিছুদিন আগে পাকিস্তানে ডাকাত সন্দেহে সরফরাজ নামের এক কিশোরকে গুলি করে হত্যা করে পাক আর্মি । সেই ভিডিও দেখে মনটা এখনও খারাপ হয়ে আছে। এই ঘটনা নিয়ে ব্লগে কমেন্টের হিড়িক হড়ে যায়।
পাক আর্মির গুলি করে কিশোর হত্যার চেয়ে জগন্য মনে হয় গণপিটুনী।
সরকারের বা পুলিশের দোষ দিয়ে কি লাভ। যারা এই গণপিঠুনীতে অংশ নেয় তাদের ভেতর চেতনা ফিরে আসতে হবে। একবার ভেবে দেখুন নীজের সন্তান, ভাই, বন্দুকে কি এভাবে গণপিটুনি দেয় হত্যা করতে পারবেন? একবার তাদের পরিবারের কাছে গিয়ে দেখুন - মিলনের মা, বোনেরর কান্না দেখে আসুন !
সম্প্রতি সাভারে ডাকাত সন্দেহে ৬ ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার রেশ কাটতে না কাটাতেই নোয়াখালীতে ৬ ডাকাত গণপিটুনিতে নিহত হয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সালে কমপক্ষে ১২৬ জনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। এ বছরের ছয় মাসে ৭০ জনেরও বেশি লোককে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন অভিযোগে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
এ কেমন বর্বর মানুষ !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।