আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাসান সাব্বাহঃ দি গ্র্যান্ড অল্ড ম্যান অফ দ্য মাউন্টেন

যে মুখ নিয়ত পালায়......। । কয়েকদিন আগে একটা ছবি দেখেছিলাম। তার কাহিনীটা এরকম, মাটির নিচে বিশাল জায়গায় অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থায় রাখা হচ্ছে ক্লোন দের। ক্লোন মানে পৃথিবীতে বসবাস কারী মানুষের ক্লোন।

পৃথিবীর কোন মানুষ লাইসেন্স করলে কোম্পানী সেই লোকের ক্লোন মাটির নিচে তৈরি করে রাখে। হঠাৎ কোন কারনে ঐ পৃথিবীর মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের দরকার হলে এদের কাছ থেকেই নেয়া হবে। এই হল ব্যবস্থা। কিন্তু ক্লোনদের জানতে দেয়া হয় না তারা যে ক্লোন। তাদের একটি আইসল্যান্ডের স্বপ্ন দেখানো হয়।

যা তাদের সামনে উপস্থাপন করা হয় স্বর্গসম রূপে। প্রতিদিন লটারির মাধ্যমে একজন নির্বাচিত হয় এই দ্বীপে যাওয়ার জন্য। তাই সবাই উচ্চসিত থাকে তাদের নামটি লটারি তে উঠলে। কিন্তু আসল ঘটনা হল, ক্লোনের মালিকের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের দরকার হলে মিথ্যা এই লটারি নাটক সাজিয়ে নির্দিষ্ট ক্লোনকে ধরে নেয়া হয় দ্বীপের লোভ দেখিয়ে। তারপর অপারেশন করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে নেয়া হয়।

এই মারাত্বক প্রতারনাটাই ছবির প্রধান এক দিক। কিন্তু এরকম প্রতারনা যে বাস্তবে হয় নি তা নয়। ঠিক এরকম একটি প্রতারনার বিবরন পাই পারস্য সাহিত্য সম্পর্কে পড়তে গিয়ে। হাসান সাব্বাহ। (1050s-1124)।

তিনি ছিলেন ওমর খৈয়াম(গিয়াসউদ্দিন ইবনে আল ফাতাহ ওমর ইবনে ইব্রাহীম আল খাইয়ামী) এবং নিজাম-উল-মুলক(হাসান ইবনে আলী ইবনে ইছহাক তুসী) এর সহপাঠী। ঈমাম মোয়াফফেকউদ্দিনের ছাত্র। তখন অসাধারন পান্ডিত্যের অধিকারী এই ঈমাম বিষয়ে প্রচলিত একটি কথা ছিল। সবাই মনে করত, তার ছাত্ররা জীবনে সৌভাগ্য অর্জন করবেই। তখন ৮৫ বছরের বৃদ্ধ ইমামের সেরা তিন ছাত্র ছিলেন, হাসান সাব্বাহ, খৈয়াম এবং নিযাম উল মূলক।

এই তিন ছাত্রের মধ্যে ওমর খৈয়াম বিখ্যাত কবি, দার্শনিক। তার রুবাইয়াত পৃথিবীর শ্রেষ্ট সম্পদের মধ্যে একটি। হাসান ইবনে আলী ইবনে ইছহাক তুসী পারস্যের উজির হয়েছিলেন। পরে তার নাম হয় নিযাম উলমূলক। এই নামেই পরিচিত।

তিনি বার্ষিক বারশত স্বর্নমুদ্রা ভাতার ব্যবস্থা করে ওমর খৈয়ামকে সাহায্য করেছিলেন। আর হাসান সাব্বাহ হয়েছিলেন কুখ্যাত। হাসান সাব্বাহ ছিলেন প্রচন্ড উচ্চাভিলাষী। তিনি প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী হতে চাইতেন। তিনি মিশরে গিয়ে ইসমাইলি নামে এক মত গ্রহন করেছিলেন।

চতুর হাসান ইসমাইলি মতের মধ্যে একটি নতুন স্তর সৃষ্টি করলেন। এই স্তরের লোকজনদের কাজ হবে গুরুর আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা। তিনি কাস্পিয়ান সাগরের উপকূলবর্তী মাজেন্দারান এলাকায় পার্বত্য জাতিগুলোকে দীক্ষা দিতে শুরু করেন। তাদের নিয়ে এক কর্মঠ বাহিনী গঠন করেন। এই বাহিনীর নাম দেন ফিদায়ী।

ফিদায়ীর ইংলিশ মানে হল ডিভোটেড। তারপর দখল করলেন পাহাড় পর্বতের মধ্যে এক দূর্গ। এই দূর্গের নাম ছিল আলামূত। মানে ঈগলের নীড়। হাসানকে মানুষ বলত শেখ উল জাবল মানে দি গ্র্যান্ড অল্ড ম্যান অব দ্য মাউন্টেন।

হাসান দূর্গের পাশে বানালেন এক বেহেশত। সবাইকে বলা হল যে হাসানের আদেশকৃত কাজ করে সফল হবে তাকে এই স্বর্গে পাঠানো হবে। জন্য। হাসানের আদেশকৃত কাজগুলোর মধ্যে ছিল ক্ষমতাসীনদের হত্যা, লুন্ঠন,ডাকাতি ইত্যাদি। বেহেশতে কোরানে বর্নিত বেহেশতের মত ব্যবস্থা রাখার চেষ্টা করা হয়।

প্রথমে যারা দলে যোগ দিত তাদের নেশাগ্রস্থ করে একবার পাঠানো হত বেহেশতে বিশ্বাস সৃষ্টির জন্য। ফিদায়ী লোকেরা হাসানের হুরদের মোহে অন্ধ হয়ে তার আদেশ পালন করত অক্ষরে অক্ষরে। তার আদেশে অকাতরে প্রান দিতে প্রস্তুত থাকত সর্বদা। যাদের স্বর্গ নেবার প্রয়োজন হত হাসান তাদের পান করাতেন হাশিশ নামে এক ধরনের পানীয়ে। এই মারাত্বক মাদক খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে স্বর্গে নিয়ে যাওয়া হত।

সবাই মনে করত হাসানের স্বর্গে তাদের সঙ্গী হুরদের নিয়ে ভালই আছে। কিন্তু আসল কথা হল হাশিশের ক্রিয়ায় তার মৃত্যু হত তখনি। অজ্ঞান ব্যক্তির আর হাসানের স্বর্গ দেখাই হত না। এই হাসান সাব্বাহ ব্যাক্তি হিশেবে ছিলেন রহস্যময় লোক। তিনি তার দুই পুত্র কে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন মদ্যপান এবং অহেতুক হত্যা এই দুই অভিযোগে।

তার বিষয়ে আর একটি ধারনা তিনি কখনো তার দূর্গ থেকে বের হতে না। উপরের শ্রেনীর কয়েকজন ছাড়া কেউ তার সাথে দেখাও করতে পারত না। বিভিন্ন বিষয়ে তার জ্ঞান ছিল প্রচুর। (palmistry, languages, philosophy, astronomy and mathematics (especially geometry) তার বাহিনির সদস্যদের ও তিনি জ্ঞান বিদ্যা বুদ্ধি সব দিক দিয়েই চৌকশ করে গড়ে তুলেছিলেন। দূর্গে তৈরী করেছিলেন বিশাল এক গ্রন্থাগার।

তিনি এতই ক্ষমতাবান ছিলেন যে এক শাসককে চিঠিতে একবার লিখেছিলেন, “ একজন সুলতানের মতো ক্ষমতা নেই আমার, কিন্তু নিশ্চিত জেনে রাখুন একজন সুলতানের চাইতে অনেক বেশি ক্ষতি করার ক্ষমতা আমি রাখি। ” হাশিশ মাদক পানের জন্য এই সম্প্রদায়কে হাশিশী ও বলা হত। এদের মাধ্যমে অনেক অনেক হত্যা কান্ড সংঘটিত হয়েছিল। দির্ঘদিন ধরে ত্রাসের রজত্ব(প্রায় ১৬৬ বছর) কায়েম করে রেখেছিল এরা। শেষে ১২৫৪ সালে হালাকু খানের মাধ্যমে আলামুত দুর্গের পতন হয় চিরতরে।

। হাশিশিদের হাতে যারা মারা পড়েছিলেন তাদের একটি ছোট বর্ননা উইকি তে দেখতে পারেনঃ View this link View this link View this link View this link পোস্টের এক কপি এখানেও। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.