http://rmpalash.blogspot.com/
সেবার বেশ বিপদে পড়ে গিয়েছিলাম।
ক্যাম্পাসে বাধনের ছেলেরা হেপাটাইটিস-বি এর টেষ্ট করাচ্ছে। বিনামুল্যে। সেখানে আবার কম খরচে টিকাও দেয়া যাচ্ছে। হেপাটাইটিস-বি এর কথা চারিদিকে শুনি।
কিন্তু জানিনা যে রোগটা আসলে কি?বাধন যখন টিকা ক্যাম্পেইন করল লাফাতে লাফাতে চলে গেলাম। যাবোনাই বা কেন?কে না জানে যে জীবন বাচান ফরজ?
গুতাগুতি করে কি টেষ্ট ফেষ্ট করার পর জানলাম যে আমার হেপাটাইটিস বি হয়নাই। বাচলাম। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি হয়। তাই টিকা নিতেই হবে।
সারাজীবন দেখেছি এই সব ক্যাম্পেনে টিকা দেয়া রক্ত নেয়া ইত্যাদি কাজ করে সুন্দর সুন্দর আপুরা। কিন্তু ভাগ্য এতই খারাপ আর কি বলব। গোমরামুখো এক ভাই শরীরের ভেতরে ঢুকিয়ে দিলেন টিকা। ধরিয়ে দিলেন একটা কাগজ। ঠিক এক মাস পরে এই কাগজ দেখিয়ে আবার টিকা নিতে হবে।
কয়েকদিন পরে ইদের ছুটি ছিল। গাট্টি-বোচকা বেধে বাড়ি চলে গেলাম। তারপরে বেমালুম খাওয়া দাওয়া আর আরাম আয়েশের মাঝে ডূবে টিকার কথা বেমালুম ভুলে গেলাম। একমাস পরে আমার আরেক ডোজ দিতে হবে সে কথা মাথাতেই ছিলনা। পেটে খাবার ঢুকে মাথা থেকে সব কিছু বের করে দিচ্ছিল।
বাড়ি থেকে যখন ঢাকা ফিরলাম তখন দেড়মাস হয়ে গিয়েছে। মানে ১৫ দিন অভার। টিকাতো দিতে হয়। কি করা?
ক্লাসমেট একজন বাধনে কাজ করে। তারে ধরলাম।
-কিরে ব্যাটা আমার টিকার কি খবর।
-টিকার কি খবর মানে। টিকাতো একমাস পরে আমরা ঠিকই দিছি। তুই আসিস নাই কেন?
-আরে ব্যাটা আমি তো বাড়ি ছিলাম। বাড়ি থেকে টিকা কেমনে দিতে আসব?
-অইডা তো আর আমি জানিনা।
তুমি টিকা দিছ একটা আরেকটা দেবার কথা তোমার মনে রাখবা না?আমরা কি তোমাগো বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে টিকা দিয়েবেড়াব নাকি?
মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। গুষ্টী কিলাই তোর টিকার। কিন্তু একডোজ দিছি এখন যদি আর না দেই তাইলে সমস্যা হয় যদি?
-কিরে আমি যদি আর না দেই তাইলে আমার কি কিছু হবে?
-হবেনা মানে?টিকা হইল জীবানু,তুই যদি ডোজ কম্পলিট না করস তাইলে এই জীবানুর কারনে তোর অসুখ হয়ে যাবে।
লে হালুয়া!জীবানু মারার জন্যে টাকা খরচ করে দিলাম টিকা। আর এখন শুনি এই টিকার কারনেই নাকি আমার আবার অসুখ হবে।
এরেই কয় কপাল। দোস্ত ফ্রি ফ্রি একটা উপদেশ দিল। ঢাকা মেডিক্যালের সন্ধানীতে নাকি এই টিকা দেয়ার ব্যবস্থা আছে। আমার তাড়াতাড়ি সেখানে যোগাযোগ করা উচিত। মেডিক্যালের ছেলেপিলেগুলারে আমি ব্যাপক ভয় পাই।
সারাদিন কাটাকাটি ভিতরে থাকে বলে এদের মায়া দয়া কম বলে আমার বিশ্বাস। একটা ছেলেকে ধরে তিনতালা থেকে ফেলে দেবার পরে সেই বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়েছে। এখন আমাকে নাকি যেতে হবে আবার ঢাকা মেডিক্যালে। বলা যায় না কেউ ধরে যদি আমাকে আবার তিনতলা থকে ফেলে দেয়?কিন্তু যেতে ত হবেই। কি আর করা।
বিপদ ডেকে এনেছি নিজে। এখন সেই বিপদ কাটাতে খাটনি তো করতেই হবে।
পরেরদিন সকালে গেলাম ডিএমসিতে। এত বড় হাসপাতাল। হাসপাতালে ঢুকে আমি পুরাই বোকা হয়ে গেলাম।
এত মানুষজন এত কিছুর ভিতরে উত্তর-দক্ষিন সবতো এলোমেলো হয়ে গেল। এর ভেতরে আমি সন্ধানী কোথায় খুজে পাই?একেকজনরে জিগাই,একেক দিকে দেখায়। লাটিমের মত ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে উপস্থিত হলাম বাধনের সামনে। স্পষ্ট মনে আছে আমি মেডিক্যালে এইদিক দিয়ে ঢুকেছলাম। তারমানে এতক্ষন পন্ডশ্রম দিলাম।
সন্ধানীর অফিসের সামনে গিয়ে দেখি কেউ নাই। কতক্ষন অপেক্ষা করার পর একটা মেয়ে আসল। এপ্রন পড়া। তার পিছু পিছু ভিতরে ঢুকলাম। তারপরে টিকার কাগজটা দিলাম।
মেয়ে ব্যাপক ভাব নিয়া কাগজটা দেখল। তারপরে কঠিন মুখ করে আমারে কতক প্রশ্ন করল। একটাও টিকার সাথে রিলেটেড না। ভাবলাম টিকা দিতে মনে হয় এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।
প্রশ্নের নমুনাঃ
-আপনার বংশের আর কেউ এই টিকা দিয়েছে(কারো এই রোগ হয়েছে কিনা তা জিজ্ঞেস করলে মানতাম।
কিন্তু আমার বাপে টিকা দিলে তা কি আমার কাজে লাগবে?)
-আপনি বিবাহিত না অবিবাহিত(টিকা কি ম্যারিটাল স্টাটাস দেখে কাজ করে?)
-আপনার ব্লাড গ্রুপ কি?
প্রত্যেকটা প্রশ্নেই আমি প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খাইলাম। তারপরে উত্তর দিলাম। তারপরে একটা হে হে করে একটা ছ্যবলামি মার্কা হাসি দিলাম। প্রশ্নে উত্তর দিয়েও তার হাত থেকে বাচার আলামত দেখা গেলনা। একটা প্রেসার মাপার যন্ত্র বের করে আমার প্রেসার মাপার কাজে লেগে গেল।
টিকার সাথে প্রেসারের সম্পর্ক কি আল্লাই জানে।
কি প্রেসার মাপল কে জানে!প্রেসার মাপা শেষে বড় বড় চোখ গুলো গোল করে আমার দিকে তাকাল। তার সেই দৃষ্টি দেখে আমি সেখানেই কুপোকাত। কলিজা শুকিয়ে কাঠ।
-আপনার হাত ঘামে?
-ঘামে মনে হয়।
-বুক ধড়ফড় করে?
-না তো!(মাইয়াগো সামনে গেলে মাঝে মাঝে করে,কিন্তু সেকথা কি আর এখানে বলা যায়?)
-কাচা লবন খান?
এই রকম প্রশ্নের মাহাত্ম বুঝতে পারতেছিনা। মনে কৌতুহল বাড়তে বাড়তে ফেটে যাচ্ছে ঐদিকে জিজ্ঞেসও করতে পারছিনা সাহসের অভাবে। অবশেষে কুই কুই করে জিজ্ঞেস করে ফেললাম। আপা আমার কি হইছে-
-আপনার হাইপ্রেসার,অনেক হাই!৯৫ এর উপরে। আপনার অবস্থা ভয়াবহ।
লে বাবা এ কয় কি?মাস খানেক আগে প্রেসার মাপাইলাম। হাই প্রেসার তো দূরে কথা প্রেসার ছিল লো। ডাক্তার প্রেসার বাড়ানোর জন্যে বেশি বেশি করে ডিম খাইতে বলল। আর আজ একমাসের মাথায় এ কি বলে!এই পাটখাঠি শরীরে হাইপ্রেসার!
এর আরো কি কি করার ইচ্ছা ছিল উপর-ওয়ালা জানে। তবে আল্লাহতাআলা যুগে যুগে অসহায়ের সাহায্যে হস্ত প্রসারিত করে দেন।
এইবারও দিলেন।
ডাক্তার আপা তার পরবর্তী পদক্ষেপে যাবার আগেই রুমে আরেকজন ঢুকলেন। যিনি ঢুকলেন তার নাম আবিদ। কলেজে একসাথে ছিলাম,আর দেখা হয় নাই। মেডিক্যালে চান্স পাইছে বলে শুনেছিলাম।
এ রুমে ঢুকার সাথে সাথে মহিলা ডাক্তার আপা সালাম ভাইয়া বলে উঠে দাড়াল। তারপরে কত কি ঘটিল তা আর বলার সাধ নাই। তবে ২ বছরের জুনিয়র একটা মেয়েরে এতক্ষন আপনি আপনি করে বলছিলাম এই নিয়া বন্ধুরা আমারে অনেকদিন ক্ষেপাইছিল।
তার নাম ছিল তন্দ্রা। ফার্ষ্টইয়ার।
এতসব অস্বাভাবিক প্রশ্ন আর হাই প্রেসার এর মাহাত্ম তখনই বুঝেছিলাম। বুয়েটের ছেলেরা ফার্ষ্ট ইয়ারে ঢুকেই ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যায়। তারপরে স্যারদের ক্রমাগত বাশ খাইয়া ফাইনাল ইয়ার পর্যন্ত যাইয়া আর নিজেরে ইঞ্জিনিয়ার পরিচয় দিতে সাহস পায় না। এইখানেও সেইম কেস। এযে কতবড় ডাক্তার তার প্রমান তখনই পাইছিলাম।
কাপা হাতে মিনিটখানেক চেষ্টা করে যখন সে সুইটা শিরায় ঢুকাইতে পারলোনা ব্যাপক হাসি পাইতেছিল। আমাদের দুই বন্ধুর হাসির সাথে সাথে তার হাত কাপাও বাড়তে ছিল।
(গল্প চলতে থাকবে। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।