ভুল করেছি,প্রায়শ্চিত্য করবো না, তা তো হয় না চীনে আসার সময় লাগেজে কি কি ভরবো এটা নিয়ে বিন্দুমাত্রও টেনসন ছিল না, আমি খালি ভাবছি আহ! বিমানে চড়ুম.... বিমান বলে কথা :p এতো যেনতেন জিনিস নয়, শূন্যে ভাসে বিরাট এক দৈত্য. লাগেজ নিয়ে টেনশনের কারন ছিল না এজন্য যে আমি ভাবতাম চীনে সব জিনিসের দাম কম কেননা আমরাতো বাজারের বেবাকই চীন থন আমদানি করি. আমার বাপ-মায় একটা লিস্টি করছিল যেমন- দু পিচ গামছা, দু পিচ লুঙ্গি... যা মোতাবেক সব কিছু তারাই কিনে ব্যাগ ভরায় দিবে. গুণীজনের কথা না শুনলে পস্তাইতে হয় সেটা এখানে আসার পর হাড়ে হাড়ে টের পাইছি. আমি বাপরে কইছিলাম, ধুর কি কও.. যামু চীন, কষ্ট করে দেশ থেকে শাবান শ্যাম্পু টাইনা নেওয়ার দরকার কি ! আসল ঘটনা হইল চীন সরকার রপ্তানি পণ্যের উপর কোন শুল্ক নেয় না কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রয় পণ্যের উপর উচ্চহারে ট্যাক্স আদায় করে. এজন্য যে কোন জিনিসের দাম বাংলাদেশের বাজারের তুলনায় বেশী. একটা লেমন লিপজেলের জন্য আমাকে ২৩ ইউয়ান/ ৩০০ টাকারও বেশি খরচ করতে হয়েছে, colgate টুথপেষ্ট কিনতে ১৫.৫ ইউয়ান বের করতে হয়, হেড এন্ড শোল্ডার ছোটোটার জন্য ৩৫ ইউয়ান, T-shirt কিনতে হয় ৯৯ ইউয়ান দিয়ে. অথচ একই কোয়ালিটির এগুলোর দাম দেশে অনেক সস্তা. আমি মায়রে কইলাম China Eastern Airlines ২০ কেজি মাল নিতে দেয় সো পুরাটাই খাবার দাবার দিয়ে ভড়িয়ে দেও. তো দিল আমার খুব্বি পছন্দের ডাল ১০ কেজি, কি ভাবতাছেন! ফেনসিডিলের ডাল .. নাগো নাহ ওগো না, এ যে মশুরের ডাল. বিরাট প্যাকেটে মুড়ি আর চিড়া কারন আমি আলসা পোলা তাই মায়ের এই বুদ্ধি ! যাইয়া তো আর চাইনিজ খাবার খাইতারবিনা কিংবা তুই যে অলস! রান্নাও করবি না, না খাইয়া সিধা হইয়া দাঁড়াই থাকার চাইতে চানাচুর মিশাইয়া মুড়ি চাবাবি আর দুধে চিড়া মাখাইয়া পেটটা ঠান্ডা করবি. আমগোর তো আবার মশলা মাখাইন্না মুখ, মশলাবিহীন কিছু গলায় ঢুকে না এজন্য মোর মায় বাজার থাইক্কা ১৮ পদের মশলা কিনে মমতা মাখানো হাতে ভাল্লো করে ধুয়ে- রোদে শুকিয়ে নিজে দাঁড়াই থাইকা মেশিনে ভাঙ্গাইছে. কম করে হলেও ৫ কেজির মত হবে সেই ফাঁকি মশলার ওজন যা এই দুই বছরে নিজে খাইয়া এমনকি অন্যদেরকে দিয়েও শেষ করতে পারি নাই! বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে আমি একবারের জন্যও ওজন করি নাই ট্রলি ব্যাগের? কারন লাগেজে খাদ্যসামগ্রী ছাড়া তো আর কিছু নাই. ইমিগ্রেশনের আগে যখন ব্যাগ কনভেয়ার বেল্টে করে বিমানে পাঠাই দিব তখন হেরা কয় ২৮ কেজি! আমার মাথায় হাত...কেমনে কি! বাপের বন্ধু যে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে চাকরি করেন উনি অন্য একজনের সাথে আমার ব্যাগটা একত্রে ওজন করে পাঠাই দিলেন. দুজনের একত্রে ৩৯ কেজি. আমার সাথে বাপে মায়ে আর মোর ছোট চাচা গেছে বিমানবন্দরে, দোতলায় ওয়েটিং সেকশনে বাপে বিনা টিকেটে ঢুকতে পারলেও ৪০০ টাকা খরচা করে দুইডা টিকেট কিনতে হইল কারন জনশক্তি ব্যুরোর এমপ্লয়িরা ফ্রি ঢুকতে পারলেও তাদের আত্নীয়দের ফ্রি ঢুকাইতে গিয়ে প্রোবলেম করে. মতিঝিল থেকে ১ লক্ষ টাকা ইউয়ান আগেই করে রেখেছিলাম, তারপরও বাপে ওখানেই দোতলায় মানি এক্সচেঞ্চ থেকে আরও ২০ হাজার ভাঙ্গাইয়া আনলো. কিছু ইউয়ান বাকিটা ডলার কারন তাদের কাছে ইউয়ান শেষ হয়ে গেছে. এখানে কমিশন বেশি কাটে তাই না ভাঙ্গানোই উচিত. আমার বাপের চোখে কোনদিন পানি দেখি নাই, ভেবেছিলাম এদিন হয়ত দেখব [যদিও মুখে বলি যাত্রাকালে কারো চোখে পানি দেখতে ভাল লাগে না কিন্তু সত্যি বলতে কি ঐসময় ভাল না লাগলেও পরবর্তীতে চোখ বন্ধ করে এদৃশ্যগুলো দেখায় আলাদা এক শান্তি আছে] কিন্তু না এদিনও হল না. সে বিরাট শক্ত মনের অধিকারী, অন্যদের কাছে শুনেছিলাম এসএসসি পরীক্ষার পরে অপারেশনের সময় এনেসথেসিয়া অবস্হায়ই আমার বমি করার কারনে যখন রক্ত লাগার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল কিন্তু রক্তদাতা কেউ ছিল না তখন নাকি বাপ আমার কেঁদেছিল কারন AB- গ্রুপের এক বয়স্ক মহিলাকে আগে থেকেই হাজির করে রাখা হলেও সে ভয়ে চলে গিয়েছিল [অনেকের মধ্যেই রক্তদানের ব্যাপারে ভয় কাজ করে] আর আমার মা'তো ওয়েটিং সেকশনে স্টিলের চেয়ারে বসেই সবার সামনে ফুপাচ্ছিল, আমি মায়ের চোখে পানি দেখতে দেখতে অভ্যস্ত. সে এমনই একজন যে কিনা ছোট বোন যখন বাসা থেকে ঢাকায় আসত তখনও ভ্যাট করে কাঁদতো কিংবা আমি রাজশাহী যাওয়ার সময়. বাপের বন্ধুর সাথে ইমিগ্রেশনে গেলাম, একটা লাইনে সিরিয়াল দেখে উনি আমাকে অন্য একটাতে নিয়ে গেল. পুলিশটি কেমন আড়চোখে তাকাল কারন জনশক্তি ব্যুরো অফিসের এমপ্লয়িরা অনেক সময় সঠিক কাগজপত্র ছাড়াই পয়সা খাইয়া মানুষ পাড় করে দেয়. তবে পুলিশটি যখন চাইনিজ সরকারী স্কলারশীপ কাউন্সিলের লেটারটি দেখল তখন হাসি দিয়ে সিল মেরে দিল Passport এর পাতায়. ১ মিনিটেই ইমিগ্রেশন পার ! জাস্ট ছবি তুলতে এই সময়টা লাগলো. এরপর ভিতরে বিমানে ঢোকার প্যাসেজ সংলগ্ন ওয়েটিং রুমে ঢোকার আগে বিমানের এক নিরাপত্তা এমপ্লয়ি মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে বডি চেক করল. প্যান্টের পকেট বের করে দেখাতে বললো এজন্য যে কোন বাংলা টাকা আছে কিনা [টাকা নেওয়া মানি পাচারের মধ্যে পড়ে]. আমি দেখালাম ৪টা দুই টাকার নোট ছাড়া বাকি সব ইউয়ান আর ডলার. এই ৮ টাকা নিয়ে আসছি যদি কখনও এমন হয় যে পুনরায় ঢাকা ব্যাক করতে হয় এবং কোন আত্নীয় রিসিভ করতে আসে নি তখন যেন সুপ্রভাত বাসে চড়ে টঙ্গি চাচার বাসায় যেতে পারি. ওয়েটিং রুমে বসে আছি, আশেপাশে বাংলাদেশীর তুলনায় চাইনিজই বেশি. মিনিট ৪০ পরে আমাদেরকে দোতলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নিয়ে গেল এরপর কিছু দূরে দন্ডায়মান উড়ালজাহাজের কাছে. রাত দুটোয় বিমানবন্দরের লাইটগুলো এমন এক মোহনীয় পরিবেশ তৈরী করেছিল যতই উড়োজাহাজের কাছে যাচ্ছি ততই স্বপ্ন মনে হচ্ছে. সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলাম আর ভাবছিলাম টিভিতে ভিভিআইপিদের এদৃশ্যগুলো দেখে যে স্বপ্ন মনে দানা বেঁধেছিল আজ তা পূরণ হল. দরজার পাশে দুজন লাস্যময়ী চৈনিক সুশ্রী কন্যা শুভেচ্ছা জানাল, আমিও মাথা বাঁকিয়ে প্রতিউত্তর জানালাম. বিমানবালার পেশাটা এমনই এক জব আপনি যত বড় পন্ডিত জ্ঞানী, উচ্চমানের সনদওয়ালা হোন না কেন... যদি হাসতে না পারেন তাহলে এই পেশার জন্য অযোগ্য. প্লেনে ঢুকতেই দরজার সম্মুখে হাতের ডানদিকে অল্প কিছু চেয়ার দেখলাম বেশ আলিশান ভাব, কিন্তু আমার সামনের কেউ ওখানে বসছে না ! সবাই ভেতর দিকে হেঁটে চলছে বুঝলাম এগুলো তাহলে বিজনেস ক্লাস, ধনী মাইনষের লাইগা, আমগোর লাইগা ইকোনোমি. হাতের বামপাশে দেখলাম ককপিট, আসন দুটি ফাঁকা- পাইলটরা এখনও আসেনি. মোর মায়ের ইচ্ছা আছিল, ছেলে তার উড়ালজাহাজের ড্রাইভার হবে. আমি যখন পেটে আসি ঐসময় বাপ-মা যে বাসায় ভাড়া থাকত তাদের মেয়ে জামাই ছিল পাইনা জাহাজের ড্রাইভার. সে কিছুদিন পরপর হরেক স্বাদের নানা পদের বিদেশী খাবার পাঠাত. মালিকের বৌ আম্মাকে ওগুলি বেশি বেশি দিত আর কৈত পোয়াতী মানুষ বেশি কইরা ভাল খাবার খা... ঠাট্টা ছলে বলত তোর পোলা উড়ালজাহাজের ড্রাইভার হইয়া আকাশ দিয়া যাওয়ার সময় তোর জন্য খাবার ফেলব, তুই ক্যাচ ধরবি ! পাইনা জাহাজের ড্রাইভারতো সমুদ্রে থাকে.. নিয়মিত স্বাদের বৈদেশী খাবার না পাঠাইতারলেও উড়ালজাহাজের ড্রাইভররা আকাশ দিয়া যাব আর বাড়ির দিকে প্যাকেট ঢিল মারবো ! হলিউডের মুভি দেইখাই তো সব জানা বিমানের ভিতরে বাইরে কি থাকে না থাকে :p তয় কথা যেটা সেটা হইল মুভিতে দেখতে হয় অন্যের চোখে, সে ক্যামেরাতে যেমনে দেখায় হ্যামনে দেহা লাগে আর এখানে নিজের ইচ্ছামত যে জিনিস যতক্ষন ইচ্ছা ততক্ষণ দেখো. চাইলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই থাক কিংবা বিমানবালার হেটে চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখো কিংবা মাঝখানের অংশে পায়চারী করে রুপবতী কইন্ন্যা কয়টা আছে মাথা গুনো অথবা মাথার উপরে এসির বাতাস কিভাবে কমানো বা বাড়ানো যায় উহা নিয়া গুভেষনা কর কিংবা টয়লেটে গিয়ে মুখ ধুয়ে আসো নানান জিনিস ভাবতে ভাবতে. বিমানের টয়লেটে বদনা থাকে না, চীনে আসার আগে ঢাকা বিমানবন্দরের ওয়াশরুমে শেষবারের মত মন ভইরা 'বদনা' দেইখা নিবেন কেননা চাইনিজরা হাগুর পর পানি ব্যাবহার করে না বিধায় চীনের কোথাও বদনা নাই. আমার টিকেটের সিটটা জানালার পাশে হইলেও বইতে পারলাম না, উনি নিজে আগেই ওটা দখল করে ফেলছে. ইচ্ছা থাকলেও কিছু বলতে পারলাম না, হাজার হোক উনার কারনে ৮ কেজি মাল বেশি আনতে পারছি. কার্গোতে পাঠানো লাগেজের ক্ষেত্রে ধরাবাঁধা নিয়ম থাকলেও নিজের সঙ্গে কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে/ হাতে ইচ্ছামতো নেওয়া যায়. আমার কাঁধে যে ব্যাগটা ছিল উহা মাউন্টেইন ক্লাইম্বিংয়ের এবং হাতে শক্ত কাপড়ের তৈরী ব্রিফকেস ওতে মোর শিক্ষাজীবনের সকল সনদ, ট্রলি ব্যাগসহ এই ৩টিই কিনছি বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে মার্কেটের নিচ তলা থাইক্কা。. মাথার উপরে জিনিসপত্র রাখার যে তাক আছে ওটা দুজন দুজন করে ভাগ করা, একজনের বেশি হলেও সমস্যা নাই অন্যজনের কম হলেই হল. আমার এক ফ্রেন্ড, ও বড় বড় দুটা ব্যাগ..... একটা কাঁধে তো নিছেই আর একটা হাতে..... ও শক্তিশালী বটে ! এতগুলো ভাড়ি ভাড়ি জিনিস টানা চাট্টিখানি কথা. কালিজিরা চাল এমনকি হাঁড়ি-পাতিলও নিয়ে আসছে. বুদ্ধিমানের কাজ করছে কারন চীনের লোকাল বাজারে সবকিছুর দাম বেশী এমনকি ইলেকট্রনিক্স পণ্যও. আমি ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজন চৈনিকরে চিনি যারা বিডি থেকে চীন আসার সময় নামিদামি বিদেশী ব্র্যান্ডের জিনিস লাগেজ ভইরা নিয়া আসে. অন্যান্য বিমানের ইঞ্জিনের শব্দ শুনতে শুনতে একসময় সবাইকে সিটবেল্ট বাঁধতে বলা হল. রানওয়ে সংলগ্ন সশস্ত্র বাহিনীর ISSB সেন্টারে red card পাওয়ার সময় যে কয়দিন ছিলাম তখন বিমানের শাঁ শাঁ শব্দ কানে তালি লাগাই দিছিল কেননা বি.এ.এফ বাশার ঘাঁটির যুদ্ধবিমানগুলিও এই একই জায়গায়. নিকুঞ্জ/ জিয়া কলোনীর লোকজন জগিংয়ের সময় হ্যাঙ্গারে রাখা বিমানগুলি দেখতে পারে কারন বিমানবন্দরের দক্ষিণ সীমানা সংলগ্ন রাস্তা বেশ উঁচু. আমাদের নিয়ে বিমানটি যখন উড়াল শুরু করবে তার আগে একটা ছোট্ট মতন গাড়ি বিমানের সামনের চাকা টেনে ঘুরিয়ে বিমানকে রানওয়ে অভিমুখী করে দিল. 'বাইট্টা হইলে কি হব ঝাঁঝ আছে' এই প্রবাদের মতই গাড়িটা পিচ্চি হইলেও অনেক ওজন যা আকাশের দৈত্য বিমানকে ঠেলতে পারে. রানওয়ে ধরে ধীর গতিতে উড়ালজাহাজ এগিয়ে যাচ্ছে আর আমি রানওয়ের লাইটগুলো উইঙ্কলেস চোখে দেখছি, এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব. যতটুকু মনে পড়ে উড়ালজাহাজ একবার ডানদিকে মোড় নিয়ে আবার ডানদিকে মোড় নিয়েই যৌবন ফিরে পেল, খুব দ্রুত ছুটে যখন সামনের চাকা শূন্যে উড়লো তখন পুরো প্লেন একটা ঝাঁকি দিল. জানালা দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম অল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকা শহরটা ছোট হতে লাগল, একটা সময় লাইটগুলোর দ্যুতি ছাড়া আর কিছুই বুঝা যাচ্ছিল না. ছোটো প্লেন.. পাশাপাশি দু'সিট করে, মুভিতে দেখতাম বিমানে নায়কদের সিট পড়ে হয় কোন নায়িকার পাশে বা মুখোমুখি অপর সিটে সুন্দরী কোন ললনা থাকে. আমি তো আর নায়ক নই একারনে আমার সামনে মুখোমুখি যে দুজন বসে আছে তারা মধ্যবয়সী চৈনিক পুরুষ, একজন রাশভারী গম্ভীর প্রকৃতির যে কিনা হাসতে না জানলেও আমাদের দু বাংলাদেশীর কম্মে অবাক হয়ে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি আনতে বাধ্য হইছিল. কারন আমি বিমান থেকে নামার সময় বমি করার যে ব্যাগটা আর টিস্যু ওরা দেয় তা আমার পকেটে ভরি, ফ্রি জিনিস অযথা ফেলে রেখে যাব কেন ! পরবর্তীতে কাজে খাটাবো :p অন্য আর একজন সে পত্রিকা পড়াতেই মনোযোগী ছিল. আমিও একটু সময়ের জন্য হাত বুলাইছিলাম কারন চাইনিজ ভাষার পত্রিকা! ছবি ছাড়া আর কিছুই ন বুঝি. এক বিমানবালা আমাদেরকে খাবার এগিয়ে দিল, তার সঙ্গের পুরুষটি ট্রলী ঠেলছিল. মেয়েদের জন্য একটু আফসোস ই বটে, এয়ারলাইন্সগুলো পুরুষের মন জয়ের দিকে গুরুত্ব দিলেও মহিলা প্যাসেঞ্জারের কথা চিন্তা করে অতটা হ্যান্ডসাম ছেলেদের রিক্রুট করে না. চিনি মেশানো ভেজাল জুস খাওয়া জিহ্বায় খাঁটি কমলার রস সহ অন্যযেসব জুস দিল ওসব কেমন যেন তিতা তিতা লাগলো, খাইয়া নো মজা. দুরকমের খানা western food, chinese food যে কোন একটা নিতে হবে. আমরা দুজন একজন নিলাম western আর একজন chinese. ঐ ফাস্টফুড খাইয়া কি পেট ভরে! এদিকে চৈনিক খাবারও মুখে দিতারালাম না কেমন কাঁচা কাঁচা, রাইসও আঠা আঠা [একটার সাথে আর একটা লাগানো] .প্রথম শূন্যে ভাসার উত্তেজনায় থাকায় খাওয়া নিয়ে মাথা ঘামানোর টাইম নাই. ঘন্টা দুয়ের মত লাগলো কুনমিংয়ে পৌছাতে, মাঝরাতের ফ্লাইট হওয়ায় যাত্রাপথে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখলাম না.. না শুভ্র মেঘের আর না ছবির মতন বাড়িঘর. কুনমিংয়ের আকাশে পৌছতেই ভোর হয়ে গেছে, শহরটার প্যানারোমিক ভিউ হৃদয়ে দোলা দিল. কুনমিং হল চিরবসন্তের শহর, আগস্টের ২৯ তারিখে ঢাকায় গরম থাকলেও ওখানকার সব লোকজন ভোরবেলায় জ্যাকেট পড়ে একটু ঠান্ডা আবহাওয়ার কারনে. এই পাহাড়ি শহরে চক্কর দিতে দিতে সবুজ শ্যামল রুপ দেখলাম, উপর থেকে পাহাড় দেখার মধ্যে অন্যরকম মজা. ল্যান্ড করার সময় যখন চাকা মাটি টাচ করল তখনও পুরো প্লেন ঝাঁকি খেল. নামার আয়োজন করতে গিয়ে মনডা খারাপ হইয়া গেল, সিটের উপর সুন্দর নকশা করা প্যাকেট করা একটা লাল রঙের চাদর ছিল. আমি ভাবছিলাম টিস্যু আর বমির ব্যাগের মত ওটাও ফ্রি, তাই প্যাকেটটা না ছিঁড়ে ওভাবেই রেখে দিছিলাম. পরে বুঝলাম আসলে ওটা দিয়েছিল রাতের বেলা কারো শীত লাগলে গায়ে জড়িয়ে ঘুমানোর জন্য. আফসুস ঐ দুই চৈনিকের মত আমিও যদি প্যাকেটা ছিঁড়ে একটু সময়ের জন্য গায়ে দিতাম তাহলেও শখ কিছুটা মিটত. দরজা দিয়ে মাথা বের করতেই দেখলাম সিঁড়ি বেয়ে নামতে হবে, মনের মধ্যে জটিল কল্পনা চলে আসে.. হাত নাড়তে নাড়তে সিঁড়ি দিয়ে নামছি, একটি সুন্দর ফুটফুটে পিচ্চি মেয়ে ফুলের তোড়া নিয়ে এগিয়ে আসলো :p ভাবাভাবিতে তো আর বিধি নিষেধ নাই, মনে মনে কল্পনা যখন করমু একটু বেশি করেই করি...ভাবতে তো আর পয়সা খরচ হয় না ! নামার পর সবাইকে বাসে করে বিমানবন্দর লাউঞ্জে নিয়ে যাওয়া হল যেখানে passport এর পাতায় এন্ট্রি সিল মারে, লাইনের পেছনে থাকা সত্বেও আমার ডাক পড়ল আমার সাথের ঐ ভাই লাইনের সামনে থাকায় কারন আমাদের দুজনের লাগেজ একসাথে ওজন করা. এসময়টাতে কাগজপত্র দেখল যে মহিলা সে বিরাট লম্বা. জীবনে এই প্রথম কোনো লম্বু চাইনিজকে সরাসরি দেখা, চাইনিজ বলতেই আমারা বুঝি বেঁটে,চিকন চাকন গড়নের তবে এদের ৪টা প্রদেশ hei-long-jiang,ji-lin, liao-ning & shan-dong এর লোকজন রাশানদের মত লম্বা,স্বাস্হ্যবান. কুনমিংয়ে দেড় ঘন্টার ট্রানজিট, মানে ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট থেকে নামাইয়া ডোমেস্টিকে অন্য প্লেনে উঠাইয়া দেয়. ইমিগ্রেশন পার হয়ে এসকেলেটরে দোতলায় উঠে বিষম খাইলাম! একি, আমাদের দেশে ঈদের সময় বাসে ট্রেনে উঠার জন্য যেমন ঠেলাঠেলি সেরকমই. পুলিশ এসে লাঠি দেখাচ্ছে, ধমকাচ্ছে... লোকজনের ভিড় এত বেশি যে লাইন ঠিক থাকছে না, শালার প্লেনে উঠার জন্য কি কসরত ! একসঙ্গে অনেক ফ্লাইট, দেরী হলেই বিপদ কিন্তু চেকিংয়ের জন্য দরজাগুলির সংখ্যা অল্প. চাইনিজরা আর আগের মত গরীব নাই, এদের বহুত টাকা, আমার ফ্রেন্ডদের দেখি ছুটির সময় বাড়ি যায় আকাশে উইড়া উইড়া. মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে যে মেয়েটি চেক করছিল সে সবাইকেই পরনের জামা, বেল্ট এমনকি মোজা খুলাচ্ছিল. আমি খুলতে খুলতে ভাবছিলাম টিভির ঐ বিজ্ঞাপনের মত না করলে হয় যেটাতে এক বডিবিল্ডারের সুঠাম দেহ দেখার লাইগ্গা দুই লুল নিরাপত্তা মহিলা সব খুলায়. এখানে দেখলাম মাসাজের জন্য উন্মুক্ত জায়গায় চেয়ার পাতা আছে, এক একটা চেয়ারের পিছনে এক একজন মেকআপ করা চৈনিক কইন্যা. একপাশে বিমানে উঠার জন্য মানুষের হুড়োহুড়ি অন্যপাশে মাসাজের চেয়ার. চেকিং শেষে দোতলা থেকে নিচে নেমে এসে পুনরায় বাসে উঠা, গন্তব্য china eastern এর অন্য বিমানে উঠে বেইজিং যা ঘন্টা ৫ এর মত.
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।