আমি সত্য জানতে চাই
“নিঃশ্বঙ্ক চিত্তের চেয়ে জীবনে আর বড় সম্পদ নেই” এই উক্তিটি যার তিনি কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অমীমাংসিত একটি চরিত্র কর্নেল তাহের। একটি আদর্শকে তাড়া করতে গিয়ে একজন মানুষ যতটুকু দিতে পারেন, দিয়েছেন সবটুকুই। যদিও সে আদর্শ প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। কিন্তু তথাকথিত বহু সাফল্যের চেয়ে কোনো কোনো ব্যর্থতাও হয়ে উঠতে পারে উজ্জ্বল।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ছিলেন ১১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার। স্বাধীনতা যুদ্ধে দুঃসাহসিক এক অভিযানের মধ্য দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে, যুদ্ধক্ষেত্রের দুর্ধর্ষ এক অপারেশনে হারিয়েছেন একটি পা, ক্রাচে ভর দিয়ে তারপর নেতৃত্ব দিয়েছেন বিরল এক সিপাহি অভ্যুত্থানের এবং সর্বোপরি কিংবদন্তি সেই ক্ষুদিরামের পর শিকার হয়েছেন উপমহাদেশের দ্বিতীয় রাজনৈতিক ফাঁসির। মুক্তিযোদ্ধা এবং বামপন্থী বিপ্লবের নেতা কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমকে ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই ভোর রাতে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়। কর্ণেল তাহেরের মৃত্যুদিনে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী এই মহান যোদ্ধা ১৯৩৮ সালের ১৪ নভেম্বর আসাম প্রদেশের বাদারপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
পরে আসাম থেকে তাঁর পরিবার বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলায় আসেন। তাঁর বাবার নাম মহিউদ্দিন আহমেদ এবং মায়ের নাম আশরাফুন্নেছা। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অসম্ভব মেধাবী। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করেন চট্টগ্রামের প্রবর্তক স্কুল ও কুমিল্লার ইউসুফ স্কুল থেকে। পরবর্তীতে ১৯৫৯ সালে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করেন।
ছাত্রাবস্থায় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬০ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে সেনাবাহিনীতে যোগদেন। ১৯৭১ সালে তিনি ১১ নাম্বার সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। ৭১’সালের ১৪ নভেম্বর কামালপুরে সম্মুখ যুদ্ধে এই বীর সেনানী গোলার আঘাতে আহত হয়ে তার বা পা হারান।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল নিযুক্ত হন। একই বছর সেনাবাহিনী হতে পদত্যাগ করে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের আকাঙ্খায় জাসদীয় রাজনীতিতে যোগদান করেন।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জাসদ, গণবাহিনী ও সৈনিক সংস্থার উদ্যোগে কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহী জনতার অভ্যূত্থান সংঘঠিত হয়। পরবর্তী সময় জাসদ নেতৃত্বসহ কর্নেল তাহের গ্রেফতার হয়ে সামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন হলে কর্নেল ইউসুফ হায়দার সহ তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েম, সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান ও বিচারপতি আব্দুস সাত্তার (পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি) আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে কর্নেল এমএ তাহেরের সামরিক আদালতে বিচারের প্রক্রিয়া করেন।
এরই এক পর্যায়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নেওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এমএ তাহেরসহ ১৭ জনকে সামরিক আদালতে গোপন বিচারে ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই সাজা দেওয়া হয়। এরপর ২১ জুলাই ভোররাতে কর্নেল তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। জিয়াউর রহমান, আব্দুস সাত্তার ও আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েমই কর্নেল তাহেরের বিচারের পরিকল্পনা করেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল নূরুল ইসলাম শিশু। এর আগে মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ ই-মেইলের মাধ্যমে বলেছিলেন, তাহেরের ফাঁসির আদেশ 'পূর্বনির্ধারিত' ও 'পরিকল্পিত' ছিল।
১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই এই মহান স্বাধীনচেতা অকুতোভয় সৈনিক মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর মৃত্যুদিনে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।