ক্রিয়েশনিস্টরা একটা কথা প্রায়ই বলে,হিটলার একজন নাস্তিক এবং বিবর্তনের উপর প্রভাব খাটিয়ে তিনি মাস্টার রেস তৈরি করতে চেয়েছিলেন। এই মিথ্যাচারের উদ্দেশ্য ডারউইন এবং বিবর্তনের উপর গণহত্যার দায়ভার চাপানো।
প্রথমত হিটলার একজন ধর্মপ্রান খ্রিস্টান। এবং হিটলারের পাগলামির সাথে বিবর্তনের কোন সম্পর্ক নেই। দ্বিতীয়ত,মাস্টার-রেস আইডিয়া সম্ভবত গত শতাব্দির সব থেকে হাস্যকর থিওরি।
এ নিয়ে পাবলিশ হওয়া থিওরি পেপার গুলো পড়লে মনে হবে শুধু গায়ের চামড়া সাদা হলেই আপনি অন্য যেকোনো বর্ণের মানুষের চাইতে বেশী বুদ্ধিমান এবং শক্তিমান।
বিবর্তন কোন মাস্টাররেসের অস্তিত্ব স্বীকার করেনা। কখনো করেওনি। বিবর্তন বলে,প্রতিটি প্রাণী প্রকৃতির সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য নিজের জিনগত পরিবর্তন আনে,যা তার দৈহিক পরিবর্তন ঘটায়।
গতকাল একজন প্রশ্ন করলেন ক্লাসে,ইউরোপের সাদা চামড়ার মানুষ গুলো কিভাবে এত উন্নতি করল?অন্য কোন জাতি এতটা উন্নতি করতে পারেনি।
তাইলে ওরা কি এই পৃথিবীর জন্য সব থেকে উপযুক্ত?
এইটা ঠিক যে ইউরোপিয়ানরা গত এক হাজার বছরে অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। অন্য সকল জাতিকে নিয়ন্ত্রন করতে ওরা সক্ষম হয়েছিলো গত শতাব্দিতে। কিন্তু তার মানে এই না যে ওরা এইটা ওদের যোগ্যতাবলে করেছে।
মানব জাতির ইতিহাস বেশী পুরানো না। মাত্র ২০ হাজার বছর আগেও এই পৃথিবীর অর্ধেকটা বরফে ঢাকা ছিল।
আমাদের আবাস ছিল প্রধানত আফ্রিকা কেন্দ্রিক। বরফ গলার পর সবার প্রথমে আমাদের গ্রাম তৈরি হয় 'Fertile Crescent' নামের একটা জায়গায়। জায়গাটা বর্তমান সিরিয়াতে অবস্থিত। ফোরাত এবং ইউফ্রেতিস নদীর পলিমাটি জমে এলাকাটি অত্যন্ত উর্বর হয়ে উঠে। প্রায় একি সময়ে আমরা শস্য বপন করতে শিখে গেছি।
তাই আফ্রিকা থেকে বের হয়ে আমাদের প্রথম আবাস ছিল সেখানে। পশুপালন করতে শেখার পর অত্র এলাকার মানুষের জীবন তুলনামুলকভাবে সহজ হয়ে উঠে। তখন গবাদিপশু একটি নির্ভরযোগ্য খাদ্য উৎসে পরিনত হয় এবং মানুষের শারীরিক শ্রম লাঘবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। প্রথমবারের মতো মানুষ বিজ্ঞান,শিল্প,উৎপাদন নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় পায়। এবং জন্ম নেয় একটার পর একটা সভ্যতা(ব্যাবিলনিয়ান,মেসপ্টেমিয়ান,আশিরিয়ান ইত্যাদি)কিন্তু কয়েক হাজার বছর পর গোচারনভুমির অভাবে মানুষকে সরে আসতে হয় সেখান থেকে।
কিছু মানুষ দক্ষিনে এসে নীল নদের তীরে গড়ে তুলে মিশরীয় সভ্যতা। কিছু উত্তরে চলে আসে,সর্বপ্রথম ইউরোপিয়ান হিসেবে সভ্যতা গড়ে তুলে।
আমরা আমাদের গত ৪৫ হাজার বছরের ইতিহাসে মাত্র অল্প কয়েকটা প্রাণী ব্যবহার করতে শিখেছি। মজার ব্যাপার হচ্ছে এর বেশীরভাগ পাওয়া যেতো সেই Fertile Crescent এ। গবাদি পশুগুলো এখান থেকেই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।
আফ্রিকায় কিন্তু গবাদি পশুগুলো ছিল না। একি কথা প্রযোজ্য ল্যাটিন আমেরিকানদের জন্যেও। ওদের একমাত্র গবাদি পশু ছিল লামা এবং আলপাকা। অথচ এই দুই প্রাণী ভারী কাজ করতে অক্ষম। ইন্ডিয়াতে গরু ছিল,এরা তাই দ্রুত সভ্যতার মই বেয়ে উঠতে পেরেছে।
কিন্তু আফ্রিকায় কিংবা পাপুয়া নিউগিনিতে মানুষ গুলোর হাজার বছরের ইতিহাস হচ্ছে খাদ্য সংগ্রহের ইতিহাস। সারাদিন যার মাথায় খাবারের চিন্তা ঘুরে,তার পক্ষে সভ্যতা সৃষ্টি সম্ভব নয়।
এক হাজার বছর আগে ইউরোপ ও ইন্ডিয়ার সাথে আরব কিংবা ইন্ডিয়ার তেমন অর্থনৈতিক অথবা সামরিক পার্থক্য ছিল না। ইউরোপিয়ানরা অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে যায় ইন্ডিয়া ও আমেরিকা আবিস্কার ও দখলের পর। মাস্টার রেস মাই অ্যাস!! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।