https://www.facebook.com/tanvir.mh "The great task of revolution in India has fallen on the Indian Republican Army. We in Chittagong have the honour to achieve this patriotic task of revolution for fulfilling the aspiration and urge of our nation. It is a matter of great glory that today our forces have seized the strongholds of Government in Chittagong…The oppressive foreign Government has closed to exist. The National Flag is flying high. It is our duty to defend it with our life and blood"
১৮ এপ্রিল ১৯৩০, শুক্রবার রাত ১০টায় চট্রগ্রামে অবস্থিত ব্রিটিশ অস্ত্রাগার লুন্ঠন এর পর উক্তিটি করে আমাদের মাস্টার দা সূর্যসেন। তিনি সেদিনই চট্টগ্রাম কে স্বাধীন ঘোষণা করেন। সেদিন থেকে চট্টগ্রাম সম্পূর্ণরুপে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত ছিল চারদিন। যা সমস্থ ভারতবর্ষেই বিপ্লবের নতুন জাগরন তৈরি করে দিয়েছিলেন আমাদের সূর্য দা।
চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এফ. এ. পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে পাশ করে তিনি চট্রগ্রামের 'উমাতারা উচচ ইংরেজি বিদ্যালয়ে' অংকের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
এসময় বিপ্লবী দলের সাথে তাঁর সম্পর্ক গভীরতর হয়ে ওঠে এবং শিক্ষকতা করার কারণে তিনি 'মাস্টারদা' হিসেবে পরিচিত হন। কিন্তু শিক্ষকতার জালে নিজেকে বেশিদিন বেধে রাখতে পারেননি। বিপ্লবী সূর্য দা ব্রিটিশ বিরোধী সব আন্দোলনেই নিজেকে জড়িয়ে রাখতেন। ১৯২০ সালে গান্ধীজী- কর্তৃক অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে অনেক বিপ্লবী এই আন্দোলনে যোগ দেন। সেখানে সূর্য সেনও যোগ দেন।
১৯২৮ সালে কলকাতার পার্ক সার্কাসে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির বার্ষিক অধিবেশন হয়। ঐ অধিবেশনে চট্টগ্রাম থেকে প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন সূর্য সেন,তাছাড়া তিনি অম্বিকা চক্রবর্তী, অনন্ত সিং, নির্মল সেন, লোকনাথ বল, তারকেশ্বর দস্তিদার এর মত অনেক বিপ্লবীকে সাথে পেয়েছেন।
তখন থেকেই পরিকল্পনা হতে থাকে চট্রগ্রাম অস্ত্রাগার লুট করার। অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে ২জন মহিলা বিপ্লবী ও যোগ দেন। একজন প্রীতিলতা অপরজন কল্পনা।
এ প্রসজ্ঞে মাস্টার’দা লিখেছেন
"
বাংলায় বীর যুবকের আজ অভাব নাই। বালেশ্বর থেকে জালালাবাদ, কালারপোল পর্যন্ত এদের দৃপ্ত অভিযানে দেশের মাটি বারে বারে বীর যুবকের রক্তে সিক্ত হয়েছে। কিন্তু বাংলার ঘরে ঘরে মায়ের জাতিও যে শক্তির খেলাই মেতেছে, ইতিহাসে সে অধ্যায় আজো অলিখিত রয়ে গেছে। মেয়েদের আত্মদানে সে অধ্যায় রচিত হোক এই-ই আমি চাই। ইংরেজ জানুক, বিশ্বজগত জানুক, এদেশের মেয়েরাও মুক্তিযুদ্ধে পেছনে নেই”
চট্রগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন সহ নানা ধরনের মুহুর্মুহু আক্রমন হতে থাকে সূর্যসেনের নেতৃত্বে।
তাই ইংরেজ প্রশাসন সূর্য সেনকে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় ধরার জন্য সর্বাত্নক চেষ্টা অব্যাহত রাখে।
সূর্য সেন গৈরলা গ্রামে ক্ষীরোদপ্রভা বিশ্বাসের বাড়িতে আত্মগোপন করে ছিলেন। । কিন্তু রাত ২টার দিকে অনেক গোলাগুলির পর অস্ত্রসহ সূর্য সেন এবং ব্রজেন সেন ধরা পড়েন। [তারপর ঐ বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ সূর্য সেনের নিজের হাতে লেখা অর্ধসমাপ্ত আত্মজীবনীর খাতা উদ্ধার করে।
সেই খাতার উপর লেখা ছিল “বিজয়া”।
বিচারের সময় “বিজয়াতে” লেখা তাঁর কথাগুলো বিপ্লব এবং প্রশাশনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রমান হিসাবে অনেকবার ব্যবহার করা হয়। ১৭ই ফেব্রুয়ারী রাতে সূর্য সেন এবং ব্রজেন সেনকে প্রথমে জেলা গোয়েন্দা সদর দপ্তরে, পরে কোর্ট হয়ে চট্টগ্রাম জেলে নেয়া হয়। সূর্য সেন গ্রেপ্তার হবার খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। ১৯৩৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বেঙ্গল চিফ সেক্রেটারী কর্তৃক লন্ডনে ব্রিটিশ প্রশাসনের কাছে কাছে পাঠানো রিপোর্টে লেখা হয়
“The outstanding event of the fortnight is the arrest on 17 February of Surjya Sen of Chittagong Armoury Raid notoriety, who, as the leader and brain of absconders, has been giving constant anxiety over the last three years. It was unfortunate that when Surjya Sen and his companion were arrested, 4 others made good their escape…But luck enters very largely into these night operations and it certainly was a great stroke of luck that Surjya Sen was secured”।
১৯৩৩ সালের মার্চ মাসে বিপ্লবীরা জেল থেকে সূর্য সেনকে মুক্ত করার জ়ন্য কয়েকবার চেষ্টা চালায়। প্রতিবারই তাদের গোপন পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়।
তারপর তার ফাসির আদেশে হয়ে যায়। আর তিনি জেল থেকে বের হতে পারেননি। কনডেম্ড সেলে সূর্য সেনকে কড়া পাহারায় নির্জন কুঠুরীতে রাখা হত।
একজন কয়েদি মেথর সূর্য সেনের লেখা চিঠি ময়লার টুকরিতে নিয়ে জেলের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বন্দী বিপ্লবীদের দিয়ে আসতো। মৃত্যুর আগে জেলে আটক বিপ্লবী কালীকিঙ্কর দে’র কাছে সূর্য সেন পেন্সিলে লেখা একটি বার্তা পাঠান। সে বার্তায় তিনি লেখেন “আমার শেষ বাণী-আদর্শ ও একতা”।
তিনি স্মরণ করেন তাঁর স্বপ্নের কথা--স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন যার জন্য জীবনভর উৎসাহ ভরে ও অক্লান্তভাবে পাগলের মত তিনি ছুটেছেন। তাঁর ভাষায় “ভারতের স্বাধীনতার বেদীমূলে যে সব দেশপ্রেমিক জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের নাম রক্তাক্ষরে অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে লিখে রেখো”।
তিনি সংগঠনে বিভেদ না আসার জন্য একান্তভাবে আবেদন করেন । শেষ দিনগুলোতে জেলে থাকার সময় তাঁর একদিন গান শোনার খুব ইচ্ছা হল। সেই সময় জেলের অন্য এক সেলে ছিলেন বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী। রাত ১১টা/১২টার দিকে কল্পনা দত্ত তাঁকে চিৎকার করে বলেন “এই বিনোদ, এই বিনোদ, দরজার কাছে আয়। মাষ্টারদা গান শুনতে চেয়েছেন”।
বিনোদ বিহারী গান জানতেন না। তবুও সূর্য সেনের জন্য রবিঠাকুরের “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে” গানটা গেয়ে শোনালেন। ১৯৩৪ সালের ১২ই জানুয়ারী মধ্যরাতে সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসী কার্যকর হয়।
তাঁর আগে তিনি সেলে গীতা পাঠ করেন এবং যাওয়ার আগে চিত্কার করে বলেন “আমাদের ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাচ্ছে”। ।
সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের লাশ আত্মীয়দের হাতে হস্তান্তর করা হয়নি এবং হিন্দু সংস্কার অনুযায়ী পোড়ানো হয়নি। ফাঁসীর পর লাশদুটো ব্রিটিশ ক্রুজার “The Renown” এ তুলে নিয়ে বুকে লোহার টুকরা বেঁধে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন একটা জায়গায় ফেলে দেয়া হয়।
এভাবেই একজন বিপ্লবীর বিদায় ঘটে। আজ এই ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়েছে,তার নিজের মাটি বাঙলাও আজ স্বাধীন হয়েছে। এই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন একজন মাস্টার,একজন সূর্য দা।
আমাদের সূর্য দা। স্বপ্ন আজ বাস্তব কিন্তু তিনি নেই।
সূর্য সেন কে নিয়ে বলিউডে একটি মুভি হয়েছে "খেলে হাম জি জান সে" নামে। অপর একটি মুভি “চিটাগং” খুব শীগ্রই মুক্তি পাবে।
আসা করবো খুব দ্রুতই কোন বাঙালী পরিচালক এর দ্বারা আমাদের মাস্টার দা’র পূর্ণ জীবন কাহিনী নিয়ে একটি মুভি নির্মিত হবে।
সূর্য দা বেচে থাকবেন আমাদের মাঝে,যতদিন এই বাংলার মানুষ বেচে থাকবে।
তানভীর মাহমুদুল হাসান
২০/১০/২০১২
তত্ত্ব ও ছবিঃ- উইকিপিডিয়া ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।