আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাজ্ঞানী পণ্ডিতগণ, চালাও তোমরা শিক্ষাঙ্গন... আমরা গেলাম সুন্দরবনে।

মহাজ্ঞানী পণ্ডিতগণ, চালাও তোমরা শিক্ষাঙ্গন... আমরা গেলাম সুন্দরবনে। লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২২ জুল ২০১১, ১০:২৪ AM) ক্যাটেগরি: চিন্তাভাবনা এন এস আই ককটেল কাদের ডাকাত ঢাবি প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ প্রোক্টর বায়োকেমিস্ট্রি রিমান্ড সববয়সী অনেক আক্রোশ নিয়ে লিখতে বসেছি। কি লেখা বেরুবে জানি না। তবে সবাইকে জানানো দরকার। ঢাবির প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রকে পুলিশ ডাকাত বানিয়ে, মেরে হাত ভেঙ্গে, পায়ের টেন্ডন ছিঁড়ে দিয়ে, সারা শরীর থেঁতলে দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে।

কিন্তু আমাদের বিখ্যাত শিক্ষকগণ বারবার অনুরোধের পরও একটা ফোন পর্যন্ত করতে পারেননি থানায়। ছেলেটির নাম আব্দুল কাদের। তার বাড়ি কুমিল্লার বুরিচং থানায়। সে কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ঢাবির প্রাণরসায়ন থেকে অনার্স শেষ করেছে। সে ফজলুল হক হলের প্রধান ভবন এর ২০২ নং কক্ষে থাকত।

১৬ তারিখ রাত আনুমানিক ১ টার দিকে সে হল থেকে বের হয়। বন্ধুদের ভাষ্যমতে সে তার মায়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিল। টহল পুলিশ তাকে দুদক এর প্রধান কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার করে খিলগাঁও থানায় নিয়ে যায়। সে কোন আই ডি কার্ড দেখাতে পারেনি। তাকে সারারাত থানায় মারধর করা হয়।

পরদিন তার রুমমেট তাকে দেখতে গেলে দেখা করতে দেওয়া হয় নি বরং আরও শাসানো হয়েছে যে দেখা করতে চাইলে তাকে আরও মারধোর করা হবে। দুপুরে তাকে ডাকাতি ও পুলিশের ওপর হামলার মামলায় চালান করে ২ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডের প্রথম দিন তাকে মেরে হাত ভেঙে দেওয়া হয়। পায়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে চামড়া ফাটিয়ে মাংস বের করে ফেলা হয়। অবস্থা গুরুতর হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল এ নেওয়া হয়।

প্রথমে ওয়ার্ডে পরে বারান্দায় ফেলে রাখা হয়। তার মা, শিক্ষক ও ছাত্ররা তাকে দেখতে গেলে দেখা করতে দেওয়া হয় নি। বলা হয় এরপর যারা দেখা করতে আসবে তাদেরকেও গ্রেফতার করা হবে। সে এখন কেন্দ্রীয় কারাগারে আছে। আমার কথা হচ্ছে যে ছেলেকে কোনোদিন সিগারেট পর্যন্ত খেতে দেখা জেত না।

যার সাথে কোনোদিন কারো ঝগড়াঝাঁটি হয় নি। সে কিভাবে ডাকাতি করে ও পুলিশকে দেখে ককটেল ছোঁড়ে টা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এবার আমাদের বিখ্যাত পণ্ডিতগণ এর কথায় আসি। গ্রেফতার এর দিন সকালে বিভাগের শিক্ষকদের বিষয়টা জানানো হলে তাদের মন্তব্য শুনুন – চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ চৌধুরী, “এটা ভার্সিটির বাইরের ঘটনা, এখানে আমার কিছু বলার নেই। “ সিনিয়র শিক্ষক ইশতিয়াক মাহমুদ, “তোমার এত মাথাব্যাথা কেন, নিজের পড়াশোনার দিকে নজর দাও।

“ জুনিয়র শিক্ষক সজিব চক্রবর্তী, “তোমরা ব্যাপারটা দেখ। “ প্রোক্টর কে তো খুঁজেই পাওয়া যায়নি। অথচ এদের যে কারো একটা ফোন কল ই কিন্তু যথেষ্ট ছিল কাদেরকে রিমান্ডের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। আমার ভাবতে হতবাক লাগে যে কি ধরনের সুবিধাবাদী আর দায়িত্বজ্ঞানহীন লোকেরা আমাদের এখানে পড়ায়। পলিটিকাল কেউ হলে তো এক সেকেন্ডও লাগে না পদক্ষেপ নিতে।

কিন্তু কোনোদিন রাজনীতির সাথে না জড়ানো কাদেরের জন্য কিছু করা তো ফাও খাটনি। কেন তারা করতে যাবে। প্রোক্টর সাইফুল ইসলাম খান সাহেব তো আরও এককাঠি সরেস। তাকে অফিসে, ফোনে কোনোভাবেই খুঁজে না পেয়ে অবশেষে তার ফুলার রোডের বাসার সামনে গাড়ি করে বের হয়ে যাওয়ার সময় পাওয়া যায়। ছাত্ররা কাদেরের কথা বললে তিনি তাদের কাদেরের পক্ষ নেওয়ার জন্য তিরস্কার করেন।

ছাত্রদের নাম জিজ্ঞাসা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন। তারপরও ছাত্ররা চাপাচাপি করলে তিনি ছাত্রলীগ এর এক নেতাকে ডেকে বলেন যে কিছু ছাত্র নাকি তাকে ‘ডিস্টার্ব’ করতেসে। সেই নেতা এসে ছাত্রদের ধমকাধমকি করে। তারপরও কিছু করার জন্য চাপাচাপি করলে সে বলে যে পুলিশ নাকি তাকে আগেই ফোন করেছে। কাদেরের বিরুদ্ধে নাকি এন এস আই এর রিপোর্ট আছে।

এন এস আই কি আজকাল দাকাত/ছিন্তাইকারি ধরতেসে নাকি? যাওয়ার আগে তিনি বলে যান ছাত্ররা যদি এতই নিশ্চিত থাকে যে কাদের নির্দোষ তাহলে তাদের নাম ঠিকানা সহ ভিসির কাছে দরখাস্ত করতে। কাদের দোষী নাকি নির্দোষ, দেশের পুলিশগুলো কত বড় হারামজাদা এইসব লিখতে গেলে আরেকটা লেখা লিখতে হবে। লিখবও হয়ত। কিন্তু এইখানে আমার সবথেকে ভয় লাগছে শিক্ষকদের আচরণ দেখে। আমরা ঢাকার বাইরে থেকে আসি পড়ালেখা করতে।

এখানে আমাদের তেমন কেউ থাকে না। আমরা থাকি হলে। শিক্ষকেরা হবেন আমাদের অভিভাবকের মত। তারাই যদি এইরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন হন তাহলে এই ঢাবির আই ডি কার্ড নিয়ে ঘোরার মানে কি? তারা তো আমাদের পরিচয়টা পর্যন্ত কনফার্ম করতে উদাসীন। আজকে যে একটি ছেলের ক্যারিয়ার, শারীরিক আর মানসিক স্বাস্থ্য, পরিবারের স্বপ্ন, সব শেষ হয়ে গেল তার দায়িত্ব কে নেবে? আমরা জানি কাদের কেমন ছেলে।

তারপরও আমরা শিক্ষকদের বলি নাই যে কাদেরকে নির্দোষ বলতে। আমরা খালি বলেছি একটু পদক্ষেপ নিয়ে অন্তত একটা জামিন করাতে। তাহলে অন্তত মার খেয়ে পঙ্গু হওয়ার হাত থেকে সে বেঁচে জেত। তাও তারা করেননি। আমি কোন ব্লগার না।

কোন সংগঠনও করি না। আমার অনেক বড় ফ্রেইন্ডসার্কেল ও নেই। লোকজন বলে ব্লগ নাকি এখন অনেক শক্তিশালী। ফেইসবুক এ নিয়মিত শেয়ার লিংক গুলো পড়ি। অনেকেই অনেক ভালো লেখে।

তাদের মত লিখতে পারি না। যতটুকু পারি তাই দিয়ে সবার কাছে বলছি। ঢাবির বায়োকেমিস্ট্রির ছাত্র হয়েও যদি ডাকাত হওয়া লাগে তাহলে আপনারা কেউ ই নিরাপদ নন। আবার বলছি সবার জানা দরকার। সাংবাদিক ভাইরা যদি পড়েন তবে প্লিজ একটা স্টোরি করেন।

আমরা আমাদের বন্ধুদের মাঝে আরেকটা লিমন দেখতে চাই না। প্লিজ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.