আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাজ্ঞানী খলিল মিয়ারা এবং এবং তাদের মানুষকে বিভ্রান্তকরন !!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! হুমায়ূন আহমেদ স্যারের একটা উপন্যাস পড়েছিলাম কদিন আগে । উপন্যাসটার নাম "মেঘের ওপর বাড়ি" । একজন লোকের মৃত্যু পরবর্তী কিছু ঘটনা নিয়ে উপন্যাসের প্রেক্ষাপট । যাই হোক উপন্যাসে দেখা যায় খলিল নামে একজন ইনেস্পেক্টর এটা ধরেই নেয় যে ঐ মৃত ব্যক্তিকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে এবং খুনটি করেছে মৃত ব্যক্তিটির স্ত্রী রুবিনা । এরপর থেকে কাহিনী শুরু ।

এরপর খলিলুর রহমান তদন্ত শুরু করে । খলিল মিয়া কিন্তু মৃত ব্যাক্তির হত্যা রহস্য উত্‍ঘাট করতে তদন্ত করে না সে সর্বাত্তক চেষ্টা করে রুবিনাকে খুনী প্রমান করতে । এইটা আমার মুল কথা না । তাহলে ? এতো গুলো কথা কেন বললাম ? বললাম কারন আমি কি বলতে চাই, তার একটা ধারনা দিতে । যাই হোক আমাদের আশে পাশে এই খলিল মিয়ার মত লোকের অভাব নাই ।

তারা কোন ঘটনার সত্য জানার চেষ্টা করবে না । আগে নিজের থেকে একটা ধারনা বা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবে । তারপর সেই ধারনাকে যে কোন ভাবেই প্রমান করার চেষ্টা করবে । যদি সত্য কোন ভাবে তার সিদ্ধান্তের বিপরীতে যায় তাহলে তথ্য প্রমান এমন ভাবে উপস্থাপন করে যেন ফলাফল তার সিদ্ধান্তের দিকে যায় । একজন জ্ঞানী লোকের কথা বলি ।

সব দিক দিয়ে ঠিক কিন্তু কেন জানি নামাজ পড়তে চাইতো না । একদিন একজন মাদ্রাসার ছেলে তাকে জিজ্ঞেস করল -কি ব্যপার আপনে নামাজ কেন পড়েন না ? সে ঐ ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল -কোরআনে ৮৬ লেখা আছে নামাজের পড় না । মাদ্রাসার ঐ ছেলে যেন আকাশ থেকে পড়ল । এই লোক বলে কি ? তখন ঐ জ্ঞানী লোক একটা কোরআনের বঙ্গানুবাদ ছেলেটাকে দেখালো । এবং সেখানে আসলেই এমন কথা লেখা আছে ।

ছেলেটা কনফিউজ হয়ে গেল । আসলে আমরা সবাই কোরআন আরবী পড়ে কিন্তু অর্থ সহকারে আর কয় জন পড়ে ? তারপর সেই ছেলে গেল মসজিদের লতিফ হুজুরের কাছে । গিয়ে ব্যাপারটা বলতেই হুজুর নিজেও তাই বললেন । আসলেই নাকি এমন কথা লেখা আছে ! কিন্তু ... । এই খানেই আসল খেল ! হুজুর বললেন -কোরআনে বলা হয়েছে যখন তোমরা নাপাক থাকো তখন নামাজ পড় না ।

যখন তোমরা অপবিত্র থাকো তখন তোমরা নামাজ পড় না । খলিল মিয়ার মত লোক গুলো ঠিক এই ভাবেই তাদের মতামত বা সিদ্ধান্তকে প্রমান করে বা প্রমান করার চেষ্টা করে । সম্পুর্ন কোন কিছু প্রমান দেখায় না ! কেবল তাদের যে টুকু দরকার সেই টুকু নিয়ে নেয় ! আর একটা কৌশল তারা অবলম্বন করে । অনেক আগে একটা মুভি দেখেছিলাম । সেখানে কোর্টে একটা মামলার দৃশ্য চলতেছে ।

এক পর্যায়ে একটা মেয়েকে কাঠগড়ায় নিয়ে আনা হল । উকিল তাকে প্রশ্ন করল -আচ্ছা আপনি কি অমুক তারিখ রাতে মিষ্টার তমুকের বাড়ি ছিলেন ? মেয়েটি বলতে চাইলো আসলে অমুখ তারিখ রাতে মিষ্টার তমুকের ছোট্ট ছেলে .. উকিল বলল -অত কথা শুনতে চাই না কেবল বলেন ছিলেন কি না ! হ্যা কি না ? মেয়েটি মাথা নিচু করে বলল -হ্যা ছিলাম । তখন উকিল উল্লাসের সাথে বলে তাহলে -মিলর্ড যেহেতু রাতে এই মেয়ে ছিল সুতরাং এই মেয়ে দুষ্চরিত্র । মেয়েটি বলে -নাআআআআ ! সবাই মনে করলো মেয়েটি যখন নিজেই স্বীকার করেছে তখন মেয়েটি নিশ্চই খারাপ । কিন্তু আসল কথাটা কেউ জানতেও চাইলো না ।

ঐ দিন রাতে মিস্টার তমুকের ছোট ছেলের খুব শরীর খারাপ ছিল তাই মিস্টার তমুক তাকে আসতে বলেছিল ছেলের সেবা করার জন্য , নিজের মনজঞ্জন করার জন্য নয় । (ছবির কাহিনী) বাংলা সিনেমা হলেও ঠিক এই ভাবেই খলিল উকিল তার কাঙ্খিত ফলাফলটি প্রমান করে । একেবারে মিথ্যা না আবার পুরোপুরি সত্যও না । সব থেকে আধুনিক যে টেকনিকটা তারা ব্যবহার করে সেটা হল কিছু কিছু সত্য কথার মাঝে মাঝে নিজের কিছু মতবাদ ঢুকিয়ে দেয় । এই কাজটা করে আধুনিক কিছু খলিল মিয়ারা ।

এবং সব চেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় কোন প্রবন্ধ বা ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে । আরো ভাল করে বলতে গেলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বা এই যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের নিয়ে কিছু লিখতে গেলে ! এরা এই কাজ গুলো করে খুবই চতুরতার সাথে ! বুদ্ধিমান আমি বলবো না ! কারন এরা এদের জ্ঞান বুদ্ধিকে ভাল উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে না ! যাই হোক এই আধুনিক খলিল মিয়া যে বিষয়টা নিয়ে লিখবে অন্য কথায় বলবে নিজেদের প্রনীত সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করবে, আগে সেইটার ব্যাপারে প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করবে ! তারপর প্রচুর এডিশনাল তথ্য দিবে যেগুলোর হয়তো কোন দরকার ছিল না । মানে যে বিষয়টা ফোকাশ করার কথা ছিল সেইটা প্রথমে ফোকাস না করে আশে পাশের অনেক এডিশনাল তথ্য দিয়ে ভরে ফেলবে ! এবং একটা কথা এই ব্যাপারে তারা সঠিক তথ্য আর রেফারেন্স দিবে ! এর ফলে কি হবে যারা তার লেখাটা পড়ছে তাদের মনে হবে, আরে বাব্বা এই লোকটা তো আসলেই অনেক জ্ঞানী ! এই লোক যা বলবে নিশ্চই সঠিক ! কোন ভুল থাকতে পারে না ! এটাই হল মেইন ফ্যাক্ট ! খলিল মিয়াদের এই থাকে প্রধান চেষ্টা ! পাঠক যেন তার প্রতি একটা পজেটিভ ধারনা আনে ! ধারনা আনে যেন লোকেরা মনে করতে পারে লেখক কোন ভুল করতে পারে না বা এই লোকটা যে তথ্য সরবারহ করতেছে সেটাতে যেন নির্ভর করতে পারে ! তারপরই খলিল মিয়া আসতে আসতে তার লেখার জাল ফেলতে থাকে আর পাঠক সেই জালে আটকাতে থাকবে !! কিছু ফেফারেন্স দিবে সাথে সাথে নিজের কিছু মত বাদ ঢুকিয়ে দিবে ! মনে করুন একটা কঠিন এবং জরুরী মিটিংয়ের বিরতিতে আপনি আপনার কলিকের সাথে একটু হাসি ঠাট্টা করলেন ! এই ব্যাপার টাই খলিল মিয়া করবে কি, আপনার কলিগের মন্তব্য নিবে ! তারপর আস্তে করে লেখায় বিরতির ব্যাপারটা এড়িয়ে যাবে ! কথার ছলে এমন একটা কিছু দাড় করাবে যেখানে পাঠকের মনে হবে আপনি কঠিন এবং জরুরী মিটিংয়ের ভিতরেই আপনার কালিকের সাথে হাসি ঠাট্টা করেছেন ! যা কিন্তু ঠিক না ! কিন্তু খলিল মিয়া ঠিকই প্রমান করে দিয়েছে যে আপনি এই কাজটা করেছেন ! যত বিশাল উদ্দেশ্য নিয়েই এই খলিক মিয়ারা যাই লিখুক না কেন তাদের উদ্দেশ হয় খুব সংকীর্ণ ! খুব ছোট ! তাদের লেখার আসল উদ্দেশ্য কখনই আসল ইতিহাস কে সামনে আনা নয় ! তাদের আসলে উদ্দেশ্য হল প্রতিপক্ষকে নিচু দেখানো ! প্রতিপক্ষের সাথে কাদা ছোড়াছুরি করা ! কিন্তু এই খলিল মিয়াদের এই সব কাজ কর্মে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হই আমরা সাধারন পাবলিকরা ! এরা তো একে পরের সাথে কাদা ছোড়াছুড়ি করে আর আমরা সাধারন পাবলিকরা বিভ্রান্ত হই ! আমরা যদি কিছু বলতে যাই তাহলে আমাদের আমরা হয়ে যাই তার প্রতিপক্ষ ! তখন আমাদের জিজ্ঞাসা কে তারা ফুলফিল তো করেই না বরং উত্তরে এমন সব কথা বলে বা এমন সব রিপ্লে দেয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না ! আমি বেশ কয়েক মাস ধরে বাংদেশের ইতিহাস নিয়ে একটু পড়াশুনা করছি ! বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী সময়ের ইতিহাস ! ছাপার বইতে তো ব্যাপার টা আগেই ক্ষ্যাল করেছি কিন্তু অনলাইনে এর অবস্থা ভয়াবহ ! একই দিনের বিবরন যেমন মনে করেন ২৫ মার্চের কথাই ধরুন, একেক জন লিখেছে একেক রকম ভাবে ! আওয়ামীলীগ পন্থী লিখেছে এক রকম করে আবার বিএনপিপন্থী লিখেছে আর এক রকম ভাবে ! কিন্তু দুজনের আচরনই সেই খলিল মিয়ার মতই ! কেউ আসল ইতিহাস জানানোর জন্য লিখছে না, লিখছে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমান করার জন্য, লিখছে প্রতিপক্ষকে নিচু দেখানোর জন্য ! এবং এই কথা তারা নিজেরাই স্বীকার করে ! তাদের কমান্টের জবাব দেখলেই বোঝা যায় ! আবার সব থেকে হাস্য কর লাগে তারাই আবার সেই লেখা গুলোর রেফারেন্স দেয় ! নিরপেক্ষ বলে দাবি করে ! আবার নিরপেক্ষ কেউ যদি এই সব বিষয় নিয়ে লিখতে যায় এবং যদি বিষয়টা খলিল মিয়াদের বিপক্ষে যায় তখনও দল বেধে খলিল মিয়ারা তাকে আক্রমন করে ! বড়ই দঃখজনক !! খলিল মিয়ারা যতদিন থাববে ততদিন এই রকম কাঁদা ছুড়াছুড়ি চলতেই থাকবে ! আর আমরা জেনারেল পাবলিক বিভ্রান্ত হতেই থাকবো !! (এটি একটি হতাশা এবং আক্ষেপমুলক পোষ্ট ! খলিল মিয়া নামটি কেবল রুপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে । খলিল নামে কোন লোক প্লিজ কিছু মনে করবেন না) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.