প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলের নির্দিষ্ট একটি সময়ে 'নিখোঁজ' সামরিক কর্মকর্তার সংখ্যা বের করতে জরিপ করা উচিত বলে মনে করেন লরেন্স লিফশুলৎজ।
খ্যাতনামা এ সাংবাদিক বলেছেন, "১৯৭৭-৭৮ সালে হারিয়ে যাওয়া সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের মধ্যে বর্তমান সরকারের একটি জরিপ করা উচিত; যাতে কীভাবে তারা মৃত্যুবরণ করেছেন বা কোথায় তাদের সমাহিত করা হয়েছে তা চিহ্নিত করা হয়। "
"এ জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। কমিশন অনুদ্ঘাটিত মৃত্যুর ঘটনাগুলো বের করবে। "
কর্নেল আবু তাহেরের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধে এ কথা বলেন লিফশুলৎজ।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী সদস্য বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান চলে। এরই এক পর্যায়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নেওয়ার পর কর্নেল তাহেরসহ ১৭ জনকে সামরিক আদালতে গোপন বিচারের মুখোমুখি করা হয়।
১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই রায়ের পর ২১ জুলাই ভোরে কর্নেল তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ফাঁসির পর নেত্রকোনার কাজলায় পারিবারিক গোরস্তানে তাহেরকে দাফন করা হয়।
গত ২২ মার্চ রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তাহের হত্যাকে অবৈধ বলে রায় দেয়।
কথিত ওই বিচারের বৈধতা নিয়ে করা চারটি রিটের প্রেক্ষিতে এ রায় হয়।
তাহেরের গোপন বিচার চলাকালে লিফৎশুলজ ফার ইস্টার্ন ইকোনোমিক দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি হিসাবে তৎকালীন ঘটনা প্রবাহ নিয়ে প্রতিবেদন করতে বাংলাদেশে আসেন।
তাহেরের ওই বিচার চলাকালে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত গোপন ট্রাইব্যুনাল নিয়ে প্রতিবেদন লেখার চেষ্টা করেন। ভেতরে ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে তিনি কারাগারের বাইরে অবস্থান নেন। পরে সরকার তাকে ধরে নিয়ে দেশ থেকে বহিষ্কার করে।
ওই বিচার প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারেন- এই বিবেচনায় রিটের শুনানির সময় তাকে আদালতে বক্তব্য দিতে অনুরোধ করে হাইকোর্ট।
'আশা করি মির্জা ফখরুল কথা বলবেন'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক মিলনকেন্দ্র টিএসসিতে কর্নেল তাহের সংসদ আয়োজিত বৃহস্পতিবারের আলোচনা সভায় লিফশুলৎজ বলেন, "তাহের হত্যা অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় ছিল আক্ষরিক অর্থেই ঐতিহাসিক। এটা আধুনিকতা ও সভ্যতার পথে বাংলাদেশের এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। "
"তাহের ছিলেন একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তার জীবন কাহিনী বর্তমান প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।
যাতে তারা এর থেকে অনুপ্রেরণা পেতে পারে। "
মার্কিন এই সাংবাদিক বলেন, "তাহের হত্যার রায় দেওয়ার পর বিএনপি নেতা এমকে আনোয়ার বলেছিলেন, 'সরকার একজন বিদেশি সাংবাদিককে ভাড়া করে এনেছে। ' তখন আমি তাকে ফোন করে কথা বলতে চেয়েছিলাম। তিনি কথা বলতে চাননি। "
"পরে বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এক সমাবেশে এ কথা বলেছিলেন," জানিয়ে লিফশুলৎজ বলেন, "এবার বাংলাদেশে এসে আমি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন করেছিলাম।
আশা করছি, তিনি কথা বলবেন। "
আলোচনায় জাসদ সভাপতি ও তাহেরের সঙ্গে অভিযুক্ত হাসানুল হক ইনু, হায়দার আকবর খান রনো ও গোলাম রব্বানী বক্তব্য দেন।
কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম ১৯৩৮ সালের ১৪ নভেম্বর আসামের বদরপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যার প্রতিবাদে স্টাফ কলেজ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭১ সালের ২০ জুলাই মেজর এম এ মঞ্জুর, মেজর জিয়াউদ্দিন এবং ক্যাপ্টেন পাটোয়ারিকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ থেকে পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারত যান তাহের।
মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন। ১৪ নভেম্বর (জন্মদিনে) ঢাকার প্রবেশদ্বার কামালপুরের শত্র" ঘাঁটিতে আক্রমণ চালানোর সময় আহত হন তাহের। তার বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।