জিয়ার প্রথম ছবি নিঃশব্দ-এর শেষ দৃশ্যগুলোর কথা কি দর্শকদের মনে আছে? সেই ছবিতে জিয়ার চরিত্রের নাম জিয়াই ছিল। জিয়াকে হারিয়ে, সংসার-সন্তান হারিয়ে পাহাড়চূড়া থেকে লাফ দিয়ে মরতেই যাচ্ছিলেন বিজয় (অমিতাভ বচ্চন)। কিন্তু আত্মহত্যা না করে ফিরে এলেন। মৃত্যুভয়ে নয়। শুধু জিয়ার স্মৃতিকে সঙ্গে নিয়ে বাকি জীবনটা কাটাবেন বলে।
নিঃশব্দ ছবির এই দর্শনটা আত্মহত্যার আগে কি একবারও মনে পড়েনি জিয়ার? মনে পড়লে হয়তো এভাবে নিঃশব্দে পৃথিবী ছেড়ে যেতেন না বলিউড অভিনেত্রী জিয়া খান।
১৯৮৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে জন্ম নেওয়া নাফিসা খানের বলিউডে পরিচিতি জিয়া খান নামে। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিলেও তাঁর বেড়ে ওঠা যুক্তরাজ্যে। ১৯৯৮ সালে দিল সে ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে বলিউডে অভিষেক ঘটে জিয়া খানের। এরপর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ২০০৭ সালে নায়িকা হিসেবে বলিউডে জিয়ার যাত্রা শুরু রাম গোপাল ভার্মার নিঃশব্দ ছবির মাধ্যমে।
অসম বয়সী দুই নর-নারীর প্রেমের কাহিনি নিয়ে নির্মিত এই ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন। ছবিটি বক্স অফিসে চলেনি ঠিকই, কিন্তু সাহসী গল্পের সাহসী নায়িকা হিসেবে নজর কাড়েন জিয়া। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তাঁর চুম্বনদৃশ্য হইচই ফেলে দেয় সে সময়। তবে, ছবিটি নানা বিতর্কের জন্ম দিলেও জিয়ার অভিনয় ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিল। এক আবেদনময়ী অষ্টাদশী কিশোরীর মোহিনী মন্ত্রে শুধু অমিতাভ বচ্চনই নন, বশ হয়েছিলেন চলচ্চিত্রবোদ্ধারাও।
ফলে সে বছর ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে সেরা নবাগতার মনোনয়নও পেয়ে যান জিয়া খান। তবে, জিয়া খানের সেরা কাজ বলিউড পারফেকশনিস্ট আমির খানের সঙ্গে গজনি (২০০৮) ছবিতে। ছবিটি বক্স অফিসে দুর্দান্ত ব্যবসা করে। ২০১০ সালে সাজিদ খানের হাউসফুল ছবিতে তাঁকে দেখা যায় অক্ষয় কুমারের বিপরীতে। এটিই জিয়া অভিনীত শেষ ছবি।
তারপর যেন বড় পর্দা থেকে একরকম উধাও হয়ে গেলেন জিয়া। গত তিন বছর তাঁর হাতে কোনো ছবি ছিল না। বলিউডে ডুবন্ত ক্যারিয়ার নিয়ে তাই অনেক দিন থেকেই হতাশায় ভুগছিলেন জিয়া। নিঃশব্দ বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি। পরের ছবি গজনি রেকর্ড গড়লেও পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করা জিয়ার জন্য আলাদা করে কোনো প্রাপ্তিই ছিল না।
শেষ ছবি হাউসফুল হিট হলেও জিয়ার জায়গা হয়নি সামনের সারিতে। মুম্বাই চলচ্চিত্র জগতের কারও কারও মতে, বলিউড তাঁকে নির্বাসন দিয়েছিল। কারণটা যদিও অজানা, তবে এই হতাশার পরিণতিই হয়তো আত্মহনন। আট মাস আগেও একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। শুধু এই কারণে তিনি আত্মহত্যার মতো কঠিন একটি পথ বেছে নেবেন, এটা মানতে নারাজ তাঁর কাছের মানুষেরা।
তাঁরা জানান, সম্প্রতি অভিনেতা আদিত্য পাঞ্চোলির ছেলে সুরজ পাঞ্চোলির সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরেছিল জিয়ার। জিয়া সন্দেহ করছিলেন, অন্য কোনো নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন সুরজ। প্রেমিকের কাছ থেকে প্রতারিত হওয়ার পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন জিয়া। তাঁর আত্মহত্যার পেছনে এটা বড় একটা কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। মৃত্যুর ছয় দিন পর বাড়িতে খুঁজে পাওয়া জিয়ার লেখা সুইসাইড নোটটিও সেই দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
তবে জিয়া ও সুরজের সম্পর্কে টানাপোড়েনের সঙ্গে পেশাগত হতাশা মিলেমিশেই তিনি এই চরম পথ বেছে নিয়েছেন বলে মনে করছে পুলিশ।
এ রকম মৃত্যু এর আগেও বহুবার দেখেছে বলিউড। নব্বই দশকের অন্যতম সম্ভাবনাময়ী অভিনেত্রী দিব্যা ভারতীর মৃত্যুর স্মৃতি আজও অমলিন হয়ে আছে বলিউডবাসীর মনে। শোলা অওর শাবনাম, বিশ্বাত্মা, দিওয়ানার মতো সুপারহিট ছবির নায়িকা, অসম্ভব জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর মাত্র ১৯ বছর বয়সে হঠাৎ রহস্যজনক মৃত্যু হয়! সে মৃত্যুর জট আজও খুলতে পারেনি মুম্বাই পুলিশ। আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী পারভীন ববির মৃত্যু নিয়েও রয়েছে নানা রহস্য।
এ তালিকায় পরিচালক-অভিনেতা গুরু দত্ত, পরিচালক মনমোহন দেশাই, দক্ষিণের জনপ্রিয় নায়িকা সিল্ক স্মিতা, মডেল নাফিসা জোসেফসহ রয়েছেন আরও বেশ কজন। একই পথ বেছে নিয়েছিলেন তাঁরাও। জিয়া তাঁদেরই উত্তরসূরি হলেন। জিয়া খান সর্বশেষ টুইটার বার্তায় লিখেছিলেন, ‘খুবই দুঃখিত। আমি টুইটার থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।
কখনো কখনো স্মৃতি রোমন্থনের জন্য ছুটি দরকার!’ কিন্তু জীবন থেকেই তিনি যে ছুটি নিচ্ছেন, তা কেউ বোধ হয় ভাবেননি। ঠিক ১০ দিন পর মুম্বাইয়ের জুহু বিচ-সংলগ্ন নিজ বাসায় মিলল জিয়ার নিথর দেহ। গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হলেন বছর পঁচিশের এই বলিউড অভিনেত্রী।
সাজিদুল হক
জিনিউজ, বলিউড হাঙ্গামা, ফিল্মফেয়ার, এবিপিনিউজ, আইএমডিবি অবলম্বনে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।