(এই পোস্টটা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত না তবে মূলত জিয়া বিমানবন্দরকে নিয়ে লেখা। )
খুব সাম্প্রতিক সময়ে গেছেন কেউ বিদেশ থেকে দেশে, অথবা দেশ থেকে বিদেশে? জিয়া বিমানবন্দর হয়ে? তাহলে খিয়াল না করলে বলব আপনি হয় আন্ধা নাহয় হিংসুক। আর যদি না গিয়ে থাকেন, জলদি প্ল্যান করে ফেলেন, ছুটির এপ্লাই করেন নাহয় কবে করা যায় তার চিন্তাভাবনা করেন। অদ্ভূত চমৎকার করে সাজানো হয়েছে আমাদের পিচ্চি (অনেক দেশের তুলনাতেই) এই বিমানবন্দরটিকে। নতুন তেমন কিছুই না, আকার আয়তনে সেই আগের সমানই রয়ে গেছে কিন্তু দু-তিন বছরের তুলনায় আশ্চর্য ঝকমকে মনে হয়েছে।
কোথাও একফোঁটা ধুলোর চিহ্ন নাই, ঝুটঝামেলা নাই। যেখানে সেখানে ট্রলির অভাব নাই, বাংলালিঙ্কের কল্যাণে প্রতিটি ট্রলি নিখুঁত মসৃণ। নোটিশবোর্ডগুলো খেয়াল করেছেন? এলজির বিশাল ফ্ল্যাটস্ক্রীণ টিভিগুলোতে অত্যান্ত ঝকঝকে ইন্টারফেসে (অল্প যেই কয়টাই হোক) প্লেনের এরাইভাল আর ডিপার্চারের টাইম দেখাচ্ছে। সেটার তুলনায় আমাদের হীথ্রোর বক্সটাইপের নোটিশবোর্ডগুলোকে একেবারেই মান্ধাতার মনে হল। কোথাও কোন পয়সাপাতির ঝামেলা নাই, বরং মনে হল সবাই বেশ উৎসাহের সাথেই আগ বাড়িয়ে কাজ করছে বা করে দিচ্ছে।
আমি ঠিক হিসাব মিলাতে পারলাম না, আমার হিসাবে এই মানুষগুলোই এক বছর আগেও এই একই এয়ারপোর্ট চালাচ্ছিল, জলপাইয়ের ছায়া পেয়েছে বলে কিনা জানি না, তবে আগরতলা আর চকির তলার মত ডিফারেন্স মনে হল। তবে গরীব দেশ আমাদের, কজনই আর প্লেন পর্যন্ত পৌঁছায়, খুবই ভাল লেগেছে চট্টগ্রাম বন্দর রাহুমুক্ত হতে দেখে। আমার দেশের প্রায় সারা জীবনই আব্বা চাকরী করেছিলেন চট্টগ্রাম ড্রাইডকে, পুরো ক্যারিয়ারই লড়তে হয়েছে, রাজনৈতিক ক্ষমতাপুষ্ট আর কাজ না করা সিবিএ নেতাদের সাথে।
এই একটা উদ্যোগ আশা করি জাতির ঘাড় থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার বোঝা কমিয়ে দিবে।
তবে যেই বিষয়টা নিয়ে লিখব বলে বসেছিলাম সেখান থেকে একটু সরে পড়েছি।
প্লেন ছাড়বে, বেশ কিছুক্ষণ বাকি আছে, ভাবলাম দেশের সার্ভিস আরেকটু নিয়েই যাই। তাই খুঁজেখাজে মেনস রুম বের করে ঢুকে পড়লাম। আমার ধারণা পৃথিবীর যে যেখানেই থাকেন না কেন, সবারই জানা আছে যে, কোন এক বিচিত্র কারণে পৃথিবীর সবখানেই টয়লেটের দরজাকে মানুষ এক বিশেষ শিল্পমাধ্যম হিসাবে বেছে নেয়। মোটামুটি সতস্বিদ্ধ এইটাই যে, এই বিশেষ দরজায় কিছু চিত্রকর্ম থাকবে, প্লাস কিছু বাণী আর অবশ্যই দুচারটি কবিতা। মোটামুটি সবগুলোই এমন ক্যাটাগরির যে, বাথরুমের দরজা ছাড়া আর কোথাও সেগুলো প্রকাশ করা অসম্ভব।
এই এক যায়গার দরজা দেখে আমি নিজের ভিতরে একটা বড়সড় ধাক্কা খেলাম। নিজের মনের অজান্তেই বের হয়ে আসল- আহারে!
কোন ছবি নেই, নেই কোন নোংরা উক্তি, আছে আনাড়ির হাতে লেখা কিছু পংক্তি। কেউ হয়ত দুলাইনে মার কাছ থেকে শেষবিদায় নিয়েছে, কেউ লিখেছে কতদিন তার প্রাণের টুকরো সন্তানকে দেখতে পাবেনা তার কথা, কেউ হয়ত প্রেমিকার উদ্দেশ্যে প্রিয় গানের এক কলি লিখেই শেষ করেছে, আর কেউ একেছে নিজের স্মৃতি থেকে শেষবারে মত দেশের মানচিত্রকে। কেউ বলে দেয়নি কিন্তু ঠিকই বুঝলাম অনেকেই প্লেনে উঠে অবিশ্বাস্য হাড়ভাঙ্গা খাটুনি আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি হবার আগে শেষবারের মত কেঁদে নিয়েছে। এরা কেউ পিএইচডি করতে আর স্কলারশিপ নিয়ে যাচ্ছে না, আর না আছে এদের বাপের ব্যাঙ্কে সিক্স ফিগার আর সেভেন ফিগার একাউন্ট।
অনেক দিন পরে আফসোস হল, কেন ক্যামেরা ফোন কিনার পয়সা এখনো হল না। আমি আর কিছু যোগ করলাম না, নিজেই ঝাপসা চোখে নিঃশব্দে বেরিয়ে এলাম।
বেরিয়ে দেখলাম, মাঠে কাজ করার পোষাকেই একদল মানুষ তখুনি প্লেনে উঠছে। এদের রক্ত পানি করা অর্থেই আমরা আমরা আওয়ামী-বিএনপি-জামাত করি। দেশপ্রেমিক আর দেশদ্রোহীর মুখোশ পরে নিজেদের মধ্যে খুনসুটি আর মারামারি করি।
আর এরা দেশে ফিরলে সোজা গার্মেন্টসের শ্রমিকের শ্রেণীতে ফেলে দেই। আশা করি জাতি আমাদের এই নির্লজ্জ অপরাধ কোনদিক ক্ষমা করবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।