নাজমুল ইসলাম মকবুল
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া সময়ের দাবী
নাজমুল ইসলাম মকবুল
গত কয়েকদিন যাবত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রধানমন্ত্রীকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভুষিত করার বিষয়ে লেখালেখি হয়েছে। লন্ডন থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় দেখলাম এ ব্যাপারে মতাসীন দলের কয়েকজন নেতা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নাকি জোর তদবিরও চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে জাদরেল একজন মন্ত্রীও রাখঢাক না করেই জানিয়ে দিলেন, ড. ইউনুসের নোবেল প্রাপ্তিতে প্রধানমন্ত্রীর অবদানের বিষয়টি। প্রধানমন্ত্রীর এ অতুলনীয় তথা অসামান্য অবদান ড. ইউনুস ও তাঁর পরিবারবর্গ, ভক্ত অনুরক্তরা কৃতজ্ঞচিত্তে আজীবন স্মরণ রাখারই কথা। যিনি অন্যকে নোবেল এনে দিতে সফলতার চুড়ায় আরোহন করতে বেগ পেতে হয়নি, তিনি নিজেও নোবেল পেতে আশা করি তকলিফ করতে হবেনা।
তবে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর সাথে যৌথভাবে শান্তিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতিরও নোবেল পুরস্কার পাওয়াটা সময়ের সেরা দাবী। রাষ্ট্রপতি শুধু একজন প্রবীণ ও বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ নন, সর্বজনশ্রদ্ধেয়, শান্তিপ্রিয় ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিত। এই শান্তিপ্রিয়তার জন্যই তাঁর দয়ার সাগর উছলে উঠে ছল ছল করতে থাকে। এই দয়াবানের দয়ার সিন্ধু নিয়ে স¤প্রতি আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ২০০০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে লীপুর শহরের বাসা থেকে বিশিষ্ট আইনজীবি নুরুল ইসলামকে অপহরণ করে তৎকালীণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর চেয়ারম্যান তাহেরের বাসায় নিয়ে তার স্ত্রী নাজমা তাহেরের উপস্থিতিতে তাদের সুনামধন্য তিন ছেলে বিপ্লব, লাবু ও টিপু মিলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মমভাবে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় জবাই করে।
এরপর লাশ ১৭ টুকরো করে বস্তায় ভরে মেঘনা নদীতে ফেলে দেয়। এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ তখন দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। তখন আবু তাহেরও সন্ত্রাসের গডফাদার হিসেবে ব্যাপক আলোচনায় ছিলেন।
এর দায়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক মৃতুদন্ডপ্রাপ্ত অন্যতম আসামী ও একাধিক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে রাষ্ট্রপতি অশান্তির হাত থেকে অর্থাৎ মৃত্যুর হাত থেকে নিজের অসীম সাংবিধানিক মতাবলে মাফি দিয়ে এক ঐতিহাসিক মহানুভবতার পরিচয় তথা শান্তির কাজ করেছেন। এর আগেও সাজেদা চৌধুরীর পলাতক ছেলের ১৩ বছরের কারাদন্ড এবং নাটোরের ২০ খুনীকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক মৃত্যুদন্ডের সাজার হাত থেকে নিজ করুনা, দয়া ও মতাবলে মা করে দিয়ে বিশ্বশান্তির বীজ বপন করে বিশ্বব্যাপী নন্দিত হওয়ার মহাগৌরব অর্জন করতে সফল হয়েছেন।
ফলে খুনীরা জেল থেকে খালাস পাওয়ার সময় স্থানীয় এমপি ও মতাসীন দলের নেতারা কাঁচা ফুলের মালা গলায় দিয়ে মিছিল সহকারে তাদেরকে জামাই আদরে বরণ করে নেবার পরও বিরোচিত আরো সম্বর্ধনা দিয়ে প্রতিপদের খুন খারাবির মাধ্যমে শায়েস্তা করতে সিমাহীন উৎসাহ দেবার মাত্র কয়েকদিন পরই নাটোর উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্য রাজপথে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সামনে সাপ সেভাবে পিটিয়ে মারা হয় সেভাবে বেধড়ক পিটুনি দিয়ে হত্যা করার ঐতিহাসিক রেকর্ড গড়তে সম হয়। তাঁর শান্তিময় মার মাধ্যমে এমপি শাওনসহ আরও অনেকে নাকি সুখ শান্তি পেয়েছেন।
অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামের হত্যাকারীকে মা করে দেবার প্রতিক্রিয়ায় নুরুল ইসলামের বিধবা স্ত্রী রাশিদা ইসলাম বলেন, আমার স্বামীর খুনিকে মা করে আইভি হত্যার বিচার চাওয়ার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির উচিত হবে এখন আইভি রহমানের হত্যা মামলা প্রত্যাহারের আদেশ দিয়ে ওই ঘটনায় জড়িতদের মা করে দেয়া। কারণ, তিনি যেমন স্ত্রী হারিয়েছেন আমিও স্বামী হারিয়েছি।
আমার স্বামী হত্যাকারীদের মা করে দিয়ে স্ত্রী হত্যার বিচার করার অধিকার তার নেই। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার পিতার হত্যাকারীদের বিচার করে দ্রুততার সঙ্গে তাদের ফাঁসি কার্যকর করেছেন। যারা পলাতক আছেন তাদেরও ধরে এনে ফাঁসি দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অথচ তার সরকারের প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে নুরুল ইসলামের খুনিদের মা করে তাদেরকে আরও খুন করার লাইসেন্স দিচ্ছেন। তিনি যেমন পিতার হত্যাকারীদের বিচার চাওয়ার বা করার অধিকার রাখেন তেমনি আমার এতিম সন্তানরাও পিতৃ হত্যার বিচার পাওয়ার, খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর দেখার অধিকার রাখে।
তিনি আপে করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীতো তাঁর পিতার কবর জিয়ারত করে কিছুটা হলেও মনে শান্তি পাচ্ছেন, কিন্তু আমি আমার স্বামীর লাশটি পর্যন্ত পাইনি। তিনি ােভ ও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার আছে মৃত্যুদন্ডের আসামিকে মা করার। তাই বলে এমন জঘন্য খুনিদের তিনি মা করে দেবেন এটা ভাবতেও অবাক লাগছে। কোনো সভ্য দেশে দলীয় বিবেচনায় খুনিদের এভাবে ছেড়ে দেয়ার দৃষ্টান্ত নেই। তাহের পরিবার শুধু আমার স্বামীকেই নয়, আরও অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে খুন, গুম ও চিরতরে পঙ্গু করে দিয়েছে।
গোটা এলাকাবাসীর জীবন তারা বিপন্ন করে তুলেছে। তারা যদি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ থেকে আস্কারা পায় তখন তাদের খুনের নেশা আরও বেড়ে যাবে। আমাদের মতো নিরীহ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নতুন করে হুমকীর মুখে পড়বে। একটা স্বাধীন দেশে যদি খুনি মা পেয়ে যায়, তাহলে কোথায় আইনের শাসন। এই খুনির মা হয় কীভাবে?
একটি পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ পড়ার সময় আলোচ্য সংবাদে পাঠকদের অসংখ্য অগণিত মন্তব্যও আমার দৃষ্টিগোচর হলো।
বিভিন্নজন বিভিন্ন ধরনের মন্তব্যের মাধ্যমে ােভ প্রকাশ করেছেন। এরমধ্যে একজন মন্তব্য করেছেন, রাষ্ট্রপতিতো একজন পুতুল, তাকে যা করতে বলা হবে, তাই তিনি করতে বাধ্য। তাই বর্তমানে যার সরকার এসব শান্তির কাজ করতে বাধ্য করছেন সেই সরকারের সরকার প্রধানও যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দাবী যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখা দরকার। এছাড়া তাঁর আরও বেশ কিছু গুণাবলী আছে, যেগুলো নোবেল প্রাপ্তির দাবীকে আরও জোরালো এবং পাকাপোক্ত করতে পারে। যেমন, তিনি একসময় শান্তির ধর্ম ইসলামে শান্তির পরশ পেয়ে মাথায় পট্টি বেঁধে হাতে তসবিহ তুলে নিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে নির্বাচনে বিজয়ী হবার কিছুদিন পর আবার তা পরিত্যাগ করার রেকর্ড গড়েন। দেশের সিংহভাগ মানুষের কলিজায় আঘাত দিয়ে নিজ মতাবলে সংবিধান থেকে মহান আল্লাহপাক এর উপর পুর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে দিয়ে বিসমিল্লাহ সম্পর্কেও নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে শান্তি পাচ্ছেন। বক্তব্যের মাধ্যমে নিজ দলীয় নেতা কর্মীদের লগি বৈঠা নিয়ে বের হবার অর্ডার দিয়ে ঢাকার প্রকাশ্য রাজপথে হাজার হাজার মানুষের চোখের সামনে লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করানোর শান্তিময় রেকর্ড আছে তাঁর ঝুলিতে। অসংখ্য অগণিত বিরোধী দলীয় নেতা কর্মী, মানবাধিকার কর্মী, ভিন্নমতের সাংবাদিকদেরকে জেলে গাদাগাদি করে রেখে সাজানো মামলায় রিমান্ডের পর রিমান্ডে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে সুখে শান্তিতে মতার তখতে বসে আছেন। বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক ও শান্তিপুর্ণ যে কোন ধরনের আন্দোলন পুলিশ দিয়ে বেপরোয়াভাবে পিটিয়ে নস্যাত করে দিয়ে গণতন্ত্রের ফাঁকা বুলি আওড়াচ্ছেন।
এমনকি ভ্রাম্যমান আদালত পাঠিয়ে স্ব্যাপ্রমাণবিহীন বিচারের মাধ্যমে জেলে পুরা হচ্ছে আন্দোলনরতো অগণিত বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী কিংবা নিরীহ পথচারিদেরকে। দেশের স্বার্থ উপো করে ভারতের সকল আবদার দ্রুত পুরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, ফলে ভারত সীমান্ত এলাকায় ফেলানীসহ অসংখ্য অগণিত মানুষকে প্রতিনিয়ত নির্বিচারে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করতে তাদের হাত একটুও কাঁপছেনা। শেয়ারবাজারকে ধ্বংস করে দিয়ে দেশের লাখ লাখ বিনিয়োগকারীকে পথে বসানোর এবং দ্রব্যমুল্যের লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হবার শান্তিময় রেকর্ডও আছে প্রধানমন্ত্রীর ঝুলিতে। বিরোধী দলকে সংসদে রাখতে ব্যর্থতা, চাকরি বাকরিতে দলীয়করণ, দেশের শিাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্রী ধর্ষন, খুনসহ নানা ধরনের অপকর্ম ডিজিটাল গতিতে বাড়তে থাকলেও বলা হচ্ছে দেশের মানুষ সুখে শান্তিতে আছে। এত্তোসব শান্তিময় কাজকর্ম করার পরও প্রধানমন্ত্রীকে এবং সেসাথে যৌথভাবে রাষ্ট্রপতিকে শান্তিতে নোবেল দিয়ে নোবেল কমিটির দায়বদ্ধতা কিছুটা হলেও লাঘব করবেন বলে মনে করেন বাংলার শান্তিকামী জনগন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।