আমি একজন ফাউ ইঞ্জিনিয়ার.। । । হৃদযন্ত্রের আটারি ব্লক নিরাময়ে ব্যবহৃত রিং (স্টেন্ট) বিক্রির বাবদ বিভিন্ন হাসপাতালে ডাক্তাররা কোটি টাকা বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, ট্রেড প্রাইজ নির্ধারিত না থাকায় রিং বিক্রির মাধ্যমে ইন্টারভেনশন কার্ডিওলজিস্ট ও ট্রেডিং কোম্পানির লোকজন রোগীদের কাছ থেকে এ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, এ্যাপোলো হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসাপতাল, স্কয়ার হাসপাতাল এবং ল্যাবএইড ছাড়াও অন্যান্য হাসপাতালে বসেই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বিভিন্ন ট্রেডিং কোম্পানির স্টেন্ট বা আটারিতে লাগানোর রিং বিক্রির কমিশন নিচ্ছেন।
তবে ইন্টারভেনশন কার্ডিওলজিস্টরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এ্যাপোলা হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক এ.কিউ.এম রেজা বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, “স্টেন্ট কেনা-বেচার ওপর সরকারের বা ওষুধ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে কোনো চিকিৎসক এ ধরনের কাজে জড়িত থাকতে পারেন। তবে ঢালাওভাবে সব চিকিৎসকের ব্যাপারে এ অভিযোগ করা যাবে না।
এ বিষয়ে নিয়ম থাকলে ফাঁক-ফোকর থাকত না। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও ঢালাওভাবে অভিযোগ উঠত না। ”
তিনি বলেন, “এ্যাপোলোতে আমাদের সঙ্গে ট্রেডিং কোম্পানির কোনো যোগাযোগ নেই। কর্তপক্ষকে স্টেন্ট দিয়ে যায় কোম্পানিগুলো। বিক্রির পর কোনটা এবং কতগুলো বিক্রি হলো তার বিক্রিমূল্য একসঙ্গে নেয় কোম্পানিগুলো।
”
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ইন্টারভেনশন কার্ডিওলজিস্ট ডা. আতাহার আলী অভিযোগ অস্বীকার করে বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, ‘‘স্টেন্ট আমদানি করে কোম্পানির লোকজন ব্যবসা করছে। তাছাড়া, ট্রেডপ্রাইজ নির্ধারিত না থাকায় অন্য কোথাও এটা হতে পারে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে এ ধরনের অভিযোগ জানা নেই। ” তবে কোম্পানির লোক রোগীদের কাছ থেকে দাম বেশি নিতে পারেন বলে তিনি জানান।
বিভিন্ন হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের ক্যাথেল্যাবগুলোর সামনে টেডিং কোম্পানির লোকজন ব্যাগে করে স্টেন্ট নিয়ে থাকে।
ইন্টারভেনশন কার্ডিওলজিস্টরা রোগীর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দাম-দর মিটিয়ে তাদের কাছ থেকে স্টেন্ট কিনে নেন। অস্ত্রপাচারের প্রস্ত্ততির পর ট্রেডিং কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে চিকিৎসরা এই স্টেন্ট সংগ্রহ করেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, হৃদযন্ত্রের আটারি শতকরা ৬০ ভাগ ব্লক হয়ে গেলে ইন্টারভেনশন কার্ডিওলজিস্টরা স্টেন্ট লাগানোর মতামত বা পরামর্শ দেন। সেক্ষেত্রে একজন রোগীর যতটি ব্লক আছে, ততটি স্টেন্ট বা আটারিতে লাগানোর রিং ব্যবহার করতে হয়।
ব্লক নিরময়ের ক্ষেত্রে বেয়ার মেটাল, কোবাল্ট ক্রোমিয়াম এবং ড্রাগ ইলুইটিং-এ তিন ধরনের স্টেন্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
তবে বাংলাদেশে প্রস্ত্ততকারক কোম্পানি না থাকায় এগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করছে বিভিন্ন ট্রেডিং কোম্পানি। দেশে মূলত কোবাল্ট ক্রোমিয়াম ও ড্রাগ ইলুইটং বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে।
ট্রেডিং কোম্পানিগুলো স্টেন্ট বিক্রি করছে ৩৫ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে।
ওমেগা হেলথ কেয়ার কোম্পানির এম আর লুৎফর রহমান বার্তা২৪ ডটনেটকে জানান, বেয়ার মেটাল ৩৫ থেকে ৫৫ হাজার, কোবাল্ট ক্রোমিয়াম ৬০ থেকে ৭০ হাজার এবং ড্রাগ ইলুইটিং ৭০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেয়ার মেটাল রিং কিনতে নেয়া হচ্ছে ৭০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা, কোবাল্ট ক্রোমিয়াম এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং ড্রাগ ইলুইটিং দু’লাখ ২৫ হাজার টাকা।
অর্থাৎ দ্বিগুণ দাম নেয়া হচ্ছে রোগীদের কাছ থেকে।
তবে দ্বিগুণ দাম নেয়া হয় কি না, জানতে চাইলে লুৎফর রহমান বলেন, “বেলুন বা অন্যান্য কারণে দাম কিছু বেশি পড়তে পারে। ” তবে দ্বিগুণ দাম নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “এ ধরনের তথ্য আমার জানা নেই। ’’
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে রোগীদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোম্পানির লোকজন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ভেতরে ব্যাগে করে এসব স্টেন্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। যখন কারো প্রয়োজন হয় তখন চিকিৎসকরা কোম্পানির লোকদের কাছ থেকে তা সংগ্রহ করে রোগীর লোকদের নিদিষ্ট অঙ্কের দাম দেয়ার পরামর্শ দেন।
এমনকি চিকিৎসকরা রোগীকে বা রোগীর লোকদের কম দামে স্টেন্ট কিনে দেয়া হলো বলে আশ্বস্ত করেন। রোগী ও রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেন, সব হাসপাতালেই একই অবস্থা।
ল্যাবএইডে চিকিৎসা নিতে আসা প্রশান্ত সাহার অভিভাবক মমতাজ বেগম বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, ‘‘ল্যাবএইডে অন্য হাসপাতালের চেয়ে বেশি দাম নিচ্ছে। তা ছাড়া রিংয়ের দাম দ্বিগুণ নিয়েছে। ” তবে এ বিষয়ে এখন কথা বললে দ্বিতীয় দফায় চিকিৎসার ক্ষতি হতে পারে তিনি জানান।
’
হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক নিয়ে চিকিৎসা করতে আসা রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাতাব উদ্দিন বার্তা২৪ ডটনেটকে জানান, এ্যাপোলোতে তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন রিংয়ের দাম অনেক বেশি। যেখানে কম মূল্যে পাবেন সেখানে রিং লাগাবেন।
ইন্টারভেনশন কর্ডিওলোজিস্ট জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মির জামাল উদ্দিন বার্তা২৪ ডটনেটকে জানান, স্টেন্টের দাম চিকিৎসকদের নির্ধারণ করার কথা নয়। রোগীদের সঙ্গে দাম-দর হওয়ার কথা। বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে সাধারণত কর্তৃপক্ষই দাম নির্ধারণ করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।