সুমাইয়া সরোয়ার (প্রথম পর্ব)
রমজান শরীফের অসংখ্য হিকমত রয়েছে। এখানে নয়টির বর্ণনা করা হল:
প্রথম হিকমত:
রমজান শরীফের রোযা ইসলামের পাঁচটি রোকনের মধ্যে অন্যতম এবং ইসলামের মৌলিক নির্দশনগুলোর মাঝেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, রমজান শরীফের এই রোযা মহান আল্লাহ তায়ালার রুবুবিয়াতকে, মানুষের সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনের দায়িত্ববোধকে, নিজের নাফসের পরিশোধন এবং আল্লাহ প্রদত্ত অসংখ্য নিয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপনের মত অনেক বিষয়কে অনুধাবন করাতে সাহায্য করে।
রমজানের রোযার মাঝে মহান আল্লাহ তায়ালার রুবুবিয়াত সম্পর্কিত অসংখ্য হিকমত রয়েছে। এগুলোর মধ্য থেকে একটি হল: আল্লাহ তায়ালা ভূপৃষ্ঠকে নিয়ামতের ছোফরা (খাবার সমৃদ্ধ চাদর) হিসেবে সৃষ্টি করে বিভিন্ন রকমের নিয়ামত দ্বারা ওই ছোফরাকে সুসজ্জিত করছেন।
এভাবে আল্লাহ তায়ালা, مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ অর্থাৎ মানুষের কল্পনাতীত উপায়ে এই নিয়ামতগুলো সরবরাহ করে তার পরিপূর্ণ রুবুবিয়াত, রাহমানিয়াত ও রাহিমিয়াতকে উপস্থাপন করছেন। মানুষ গাফলতে নিমজ্জিত হয়ে এবং বস্তুগত দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করার কারণে ওইসব হাকিকাতকে পরিপূর্ণভাবে দেখতে পায়না, দেখলেও ভুলে যায়। কিন্তু পবিত্র রমজানের শুরুর সাথে সাথেই ইমানদারগন সুশৃংখল একটি সৈন্য বাহিনীতে পরিণত হয়। চিরন্তুন সুলতানের পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত হয়ে উবুদিয়াতের নিদর্শণ স্বরূপ সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহারের অনুমতির অপেক্ষায় থাকে। এভাবে, মহান আল্লাহর সীমাহীন মমতা, পরক্রমশীলতা ও সামগ্রিক রাহমানিয়াতের জন্য ব্যাপক, বৃহৎ ও সুশৃংখল উবুদিয়াতের (দাসত্ব) মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে।
এমন মহিমান্বিত উবুদিয়াত ও মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বে যারা অংশগ্রহন করে না তারা কি মানুষ হওয়ার যোগ্যতা রাখে?
দ্বিতীয় হিকমতঃ
পবিত্র রমযানের রোযার মাঝে আল্লাহ তায়ালার প্রদত্ত নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় সম্পর্কিত অসংখ্য হিকমত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে থেকে একটি হলঃ
কোন বাদশাহর রন্ধনশালা থেকে কেউ খাবার পরিবেশন করলে ঐ পরিবেশনকৃত খাবারের জন্য একটি নির্দিষ্ট মূল্য দিতে হয়। এখন কেউ যদি ঐ মহমূল্যবান রাজকীয় খাবারকে মূল্যহীন বিবেচনা করে শুধুমাত্র পরিবেশনকারীকে বখশিশ দেয়াকেই যথেষ্ঠ মনে করে এবং প্রকৃত নিয়ামতদাতাকে অস্বীকার করে তবে তা স্রেফ বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়।
মহান আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির জন্য এই পৃথিবীকে নানা প্রকারের নিয়ামত দিয়ে সুসজ্জিত করেছেন। বিনিময়ে তিনি মানুষের কাছ থেকে শুকরিয়া প্রত্যাশা করছেন।
ওই সব নিয়ামত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাহ্যিক কারণ ও পারিপার্শ্বক মাধ্যমগুলো এখানে পরিবেশকের ভূমিকা পালন করছে। আমরা ওই পরিবেশকদেরকে মূল্য দেই এবং তাদের কাছে কৃতজ্ঞ হই! এমনকি তাদের প্রাপ্যের চেয়েও অনেক বেশী সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানাই। অথচ প্রকৃত নিয়ামতদাতা হিসেবে আল্লাহ ওই মাধ্যমগুলোর চেয়ে শতগুণ বেশী শুকরিয়ার দাবিদার। আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা, নিয়ামতগুলো যে সরাসরি তাঁর কাছ থেকে আসে তা জানা, এগুলোর মূল্যকে উপলব্ধি করা এবং নিজেদের জন্য এগুলোর প্রয়োজনিয়তাকে অনুভবের মাধ্যমে সম্ভব ।
পবিত্র রমজান মাসের রোযা হল হাকিকি, খালিছ, মহান এবং সার্বিক এক শুকরিয়ার চাবিকাঠি।
কারণ, অন্যান্য সময়ে অধিকাংশ মানুষ বাধ্য না হওয়ার কারণে প্রকৃত ক্ষুধা অনুভব করে না। একারণে অধিকাংশ নিয়ামতের মূল্য অনুধাবন করতে পারে না। ক্ষুধাহীন কোন ব্যক্তি, বিশেষ করে সে যদি ধনী হয় তবে এক টুকরো শুকনো রুটির মাঝে যে নিয়ামত আছে তা বুঝতে পারে না। অপরদিকে ইফতারের সময় একজন মুমিনের দৃষ্টিতে ঐ শুকনো রুটি যে অতি মূল্যবান এক ইলাহী নিয়ামত তা স্বাদ আস্বাদনের মাধ্যমে বুঝতে পারে। পবিত্র রমজানে ঐ নিয়ামতের গুরুত্বগুলো বুঝতে পেরে বাদশাহ-ফকির নির্বিশেষে সকলেই মানেভী কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে।
দিনের বেলায় সন্তুষ্টির সাথে খাবার থেকে দূরে থাকে আর বলে, “ওই নিয়ামতগুলো আমার মালিকানাধীন না, আমি নিজের ইচ্ছায় এগুলো খেতে পারি না। এগুলো অন্যের সম্পদ ও নিয়ামত। তার আদেশের অপেক্ষা করছি। ” এভাবে নিয়ামতের গুরুত্ব অনুধাবন করে এবং মানেভী কৃতজ্ঞতায় হৃদয় ভরে উঠে।
এভাবেই বিভিন্ন দিকে থেকে রমজান মাসের রোযা মানুষের প্রকৃত দায়িত্ব শুকরিয়া আদায়ের চাবিকাঠি হিসেবে পরিগণিত হয়।
(চলবে…)
(তথ্যসূত্র: বদিউজ্জামান সাঈদ নূরসীর রিসালে-ই নূর এর মাকতুবাত গ্রন্থের ২৯ তম মাকতুব থেকে নেয়া। )
লেখাটি এখান থেকে নেয়া ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।