আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাহাড় ধসের কারণ ও প্রতিকার

খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... স¤প্রতি চট্রগ্রাম নগরির টাইগারপাসের বড় বাটালি হিল এলাকায় পাহাড় ধসে মাটি চাপায় একই পরিবারের ৫ জন সহ ১৫ জনের জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। এরও আগে ২০০৭ সালের ১১ জুন নগরীর কুসুমবাগ, কাইচ্যাঘোনা, সেনানিবাসের লেডিস ক্লাব সংলগ্ন লেবু বাগান, বায়েজিদ বোস্তামি, মতিঝর্ণা পাড়সহ সাতটি স্থানে পাহাড় ধসে মাটি চাপায় নিহত হয় ১২৭ জন। সেসময় ব্যাপক প্রাণহানির পাশাপাশি বৃষ্টিতে নগরীর সর্বত্র কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। ২০০৮ সালের ১৮ আগষ্ট লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকার ট্যাঙ্কির পাহাড় ধসে ১১ জনের মৃত্যু হয় । সূত্র মতে, এখনো ভয়াবহ বিপদ মাথায় নিয়ে মতিঝর্ণা, বাটালি হিল, ট্যাঙ্কির পাহাড়, বাঘঘোনা এলাকার এক বর্গকিলোমিটারের একটু বেশি জায়গায় পাহাড়ের পাদদেশে প্রায় ১ লাখ লোকের বসবাস রয়েছে।

প্রতিবছর বৃষ্টি বা বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসের মতো ঘটনা ঘটে এবং প্রাণহানির তালিকা নিয়মিতভাবে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষনে দেখা যায় বাংলাদেশি পাহাড়ের ভূপ্রকৃতি ও গঠন বালি ও কাদা মাটির মিশ্রনে গঠিত। পাহাড়ি এলাকার বৈশিষ্ট্য খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে পাহাড়ের উপরিভাগে মোটা দানার বালির বিশাল স্তর, তার নিম্নভাগে রয়েছে কাদামাটির লেয়ার বা স্তর । এভাবে একটার পর একটা কাদামাটি ও বালির স্তরের উপর দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের পাহাড়গুলো। ঘন বর্ষায় প্রবল ঢলে বালি মাটির ছিদ্রান্বেষনে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে কাদামাটির স্তরকে দূর্বল করে তোলে ।

যা পাহাড়ি ঢলে প্রবল শক্তির সমন্বয়ে সমতলে গড়িয়ে পড়ে। এবং গড়িয়ে পড়ার সময় সামনে যাকিছুই পায় তা ধংসযজ্ঞে পরিণত করে জনজীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে। পাহাড়ের ঢালে বসতি গড়ে তোলার সময় প্রকৃতির বিপরীতে পাহাড়ের সবচেয়ে শক্ত স্তর যার উপর পুরো পাহাড় সমস্ত শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সেই কাদামাটির স্তরটিকে কেটে তার উপর নিত্যদিনের বসবাসের জায়গা করা হয়। ফলে চরম অনিশ্চয়তা আর প্রাণহানির মারাতœ ঝুকির মধ্যে বাস করে সেখানকার মানুষগুলো । পাহাড়ের ঢালে বসবাস করার কারণে পাহাড়ের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট হচ্ছে।

পাহাড়ি পানির উৎস থেকে ক্রমাগত গড়িয়ে পড়া পানি ঢালু পথটাকে পিচ্চিল করে তোলে আর বর্ষা মৌসুমে সেই পথ ভয়াবহ রুপে নিয়ে আচড়ে পড়ে সমতলে। যার ফলে মহুর্তের মধ্যেই মানব জীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠে। পাহাড়ি অঞ্চলজুড়েই রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট ফাটল। আর এসব ফাটলে পানি জমে থাকার কারণে পাহাড়ি মাটি এমনিতেই নরম থাকে। আর বর্ষার ঢলে এসব ফাটলের আকার কয়েকগুন বড়ো হয়ে ধসে পড়ে।

অন্যদিকে পাহাড়ি ভূমি ক্ষয়জাত প্রকৃতির হওয়ায় ধসে পড়ার প্রবণতা বেশি থাকে। আর এসব জায়গায় মানুষ না বুঝে বসবাস করার কারণে অনাকাঙ্খিত প্রাকৃতিক বিপদ ডেকে আনছে। এতোসব প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াও মনুষ্য কারণেও পাহাড়ে ধস নামে। পাহাড়ের মাটি ও বালি কেটে স্বার্থন্বেষি মহল বাণিজ্য করছে যা প্রকৃতির সাথে বিরুদ্ধাচারন আর প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে কেউই টিকে থাকতে পারেনা। বালি ও মাটি পাহাড় থেকে কাটার ফলে প্রকৃতিগতভাবেই পাহাড়ি পরিবেশ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠছে।

পাহাড়ের বনাঞ্চলকে পুজি করে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি বা গোষ্ঠি পাহাড়ে গাছ কাটার উৎসবে মেতে উঠে। অবাধে গাছ কাটার ফলে পাহাড়র মাটি আলগা হচ্ছে। যা ভূমি ধসের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন ভূবিজ্ঞানিরা। পাহাড়ে বসতি গড়ার লক্ষেও পাহাড়ি বৃক্ষ কর্তন করতে দেখা যায়। যে গাছপালা পাহাড়কে স্বীয় অবস্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করছে বছরের পর বছর ধরে।

সেই গাছ পালা কেটে ফেলা পাহাড়ি এলাকার জন্য সুখকর কোন বিষয় নয়। আর মনে রাখতে হবে গাছ পালাই পাহাড়কে ধসে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করে । কিন্তু মানুষ মাথা গোজার ঠাঁই হিসেবে পাহাড় কাটছে, অবাধে গাছ পালা কেটে পাহাড়ের কোলে আবাসন ভূমি গড়ে তোলছে যা মনুষ্য বসবাসের জন্য নিরাপদ কিনা তা বিবেচনায় আনছেনা। মানুষ পাহাড়ে বসতি গড়ছে নিরাপদ মাথা গোজার ঠাঁই হিসেবে অতচ সেই ঠাঁই তাদের জন্য মৃত্যুর ফাঁদ হিসেবে অপেক্ষা করছে। আর এটা হচ্ছে মানুষের না জানার কারণে।

তাই মানুষকে সচেতন করতে হবে । সরকারি উদ্যোগসহ বিভিন্ন মহল থেকে মানুষকে সচেতন করার কাজটি করতে হবে। নিরূপায় হয়ে যারা পাহাড়ের ঢালে মাথা গোজে তাদেরকে পূর্ণবাসন করতে হবে। পূর্ণবাসন করা না গেলে সচেতনার ডাকঢোল পিটিয়ে লাভ নেই। পাহাড়ি গাছ কাটা থেকে মানুষজনকে বিরত করা না গেলে পাহাড়ি ধস ঠেকানো যাবেনা।

পাহাড়ি ধস ঠেকাতে পাহাড়ি এলাকায় বনায়নের কর্মসূচী নিতে হবে। চোরাই কাঠের ব্যবসা চিরতরে বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় পাহাড়ে এই অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর মিছিল রোধ করা যাবেনা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।