বঙ্গোপসাগরের দু'টি ব্লক থেকে তেল-গ্যাস উত্তোলনের জন্য বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি মার্কিন বহুজাতিক তেল গ্যাস কোম্পানি কনোকো-ফিলিপসের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। এ চুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে আমরা কথা বলেছি-তেল-গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদের সঙ্গে। পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারটি
রেডিও তেহরান : বাংলাদেশ সরকার কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের দু'টি ব্লক থেকে তেল-গ্যাস উত্তোলনের বিষয়ে চুক্তি করেছে। এই চুক্তির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অনেকে কথা বলছেন। আপনার সংগঠন 'তেল-গ্যাস,খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি' চুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছে।
চুক্তির সমস্যাটা কোথায় ?
অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ : দেখুন, প্রথমেই আমি বলবো মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি কনোকো-ফিলিপসের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের এই চুক্তি দেশের জন্য একটি ভয়াবহ বিপর্যয় তৈরী করবে। এর বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। চুক্তির ফলে বাংলাদেশের- জ্বালানী নিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তা- দুটো ক্ষেত্রে এ চুক্তিকে মহা হুমকী হিসেবে আমরা দেখছি। এ চুক্তিটা পিএসসি ২০০৮ নামের একটি মডেল কাঠামোর মধ্যে করা হয়েছে। আর এই পিএসসি ২০০৮ এর মধ্যে এমন সব ধারা আছে যার মাধ্যমে মার্কিন কোম্পানি কনোকো-ফিলিপস যেসব সুবিধা পাবে তাতে বাংলাদেশের গ্যাস সম্পদ এ দেশের পক্ষে আর কাজে লাগানো সম্ভব হবে না।
'মডেল পিএসসি ২০০৮'র একটি ধারার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, বাংলাদেশ কোনভাবেই ২০ ভাগের বেশি মালিকানা পাবে না। তাছাড়া আরো বলা আছে কনোকো-ফিলিপস যে শতকরা ৮০ ভাগ মালিকানা পাবে তারা সেই গ্যাস এলএনজির মাধ্যমে এক্সপোর্ট করতে পারবে। এর মধ্য দিয়ে যেটা হবে তা হচ্ছে - সমুদ্রবক্ষের যে গ্যাস সম্পদ তার শতভাগই কার্যত তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।
আমি একথা এ জন্য বলছি যে, বাংলাদেশ যে শতকরা ২০ ভাগ গ্যাস পাবে তা বাংলাদেশকে সমুদ্রবক্ষে পাইপলাইন তৈরী করে তা আনতে হবে। আর বাংলাদেশের পক্ষে পাইপ লাইন বা অবকাঠামো নির্মাণ করে ঐ গ্যাস আনা খুবই ব্যয়বহুল হবে।
ফলে এই গ্যাস সম্পদ বাংলাদেশের কোন কাজে আসবে না বলে আমাদের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি কনসার্ন হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
দ্বিতীয় কনসার্ন হচ্ছে, কনোকো-ফিলিপস বিভিন্ন দেশে গ্যাস উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তাদের দুর্ঘটনার রেকর্ডও খুব খারাপ। সে দিক থেকে চিন্তা করলে সমুদ্রে গ্যাস সম্পদ উত্তোলন যেহেতু খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, এতে ক্ষতির সম্ভাবনাও অনেক বেশি। তো এই চুক্তিতে ক্ষতি মনিটরিং করা বা ক্ষতিপূরণের বিষয়টি পরিস্কারভাবে নির্ধারণ ও নিরূপন করা এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়টি খুবই অস্বচ্ছ।
ফলে যদি কনোকো-ফিলিপসের অনুসন্ধান এবং উত্তোলনের সময় কোন দুর্ঘটনা হয় তাহলে তা শুধুমাত্র একটি ব্লক নয় পুরো সমুদ্রের গ্যাস সম্পদতো নষ্ট করবেই, তাছাড়া সমুদ্রের অন্যান্য খনিজসম্পদ এবং পরিবেশগত মহা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। আর সেই বিপর্যয়ের ক্ষতিপূরণ করা কোনভাবে সম্ভব নয় এবং সেই ক্ষতি সামাল দেয়াও বাংলাদেশের পক্ষে দুরূহ।
এছাড়া আরো একটি কনসার্নের কথা আমি এই মুহুর্তে বলব। আর সেটি হচ্ছে, মার্কিন কোম্পানি যখন এই ব্লকের দখল নেবে তখন পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি যে, মার্কিন সিক্যুরিটি ফোর্স কিংবা নেভী মার্কিন কোম্পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুরো বঙ্গোপসাগরে তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য সচেষ্ট হবে। আর সেটি বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকী হিসেবে দেখা দেবে।
মূলতঃ এই তিনটি কারণে আমরা মনে করি- মার্কিন কোম্পানি কনোকো- ফিলিপসের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের এই চুক্তি পুরোপুরি জাতীয় স্বার্থ বিরোধী। আর বাংলাদেশের জনগণ জাতীয় স্বার্থবিরোধী এই চুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং এর বিরুদ্ধে আন্দোলনও নতুন মোড় নিয়েছে।
রেডিও তেহরান : সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর চরিত্রই হচ্ছে অন্য দেশের সম্পদ লুটে নেয়া। ফলে তারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশগুলোর সরকারের ওপর চাপ দিয়ে তাদেরকে দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তি করতে বাধ্য করে। আপনি চুক্তির বেশ কিছু দুর্বল দিক তুলে ধরলেন।
তো আপনি কি মনে করেন- সরকার এই চুক্তির ক্ষেত্রে আরো বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারতো ?
অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ : হ্যাঁ আমরা মনে করি সরকারের পক্ষে আরো বলিষ্ট ভূমিকা পালন করা সম্ভব ছিল। কিন্তু সরকার তা করেনি। আমি বলবো, বাংলাদেশের সরকার যদি জনগণের সমর্থনের ওপর নির্ভর করত; জনগণকে যদি চুক্তির সমস্ত বিষয় জানাতো এবং সর্বোপরি সরকারের মধ্যে কমিশনভোগীদের আধিপত্য না থাকত তাহলে তারা জনগণকে সাথে নিয়ে একটি শক্তি তৈরী করতে পারত এবং ওই শক্তি দিয়ে সাম্রাজ্যবাদকে মোকাবেলা করা সম্ভব হতো।
জনগণ যদি দেখত যে, সরকার চেষ্টা করছে তাহলে জনগণ তাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি নিয়ে সরকারের সাথে থাকত। এ রকম বহু উদাহরণ রয়েছে যে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো পৃথিবীর বহু দেশ দখল করেছে, সেখানে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
আবার এ রকম উদাহরণও আছে যে, সরকার জনগণকে সাথে নিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের অপতৎপরতাকে প্রতিরোধ করেছে,প্রতিহত করেছে। আর এ ক্ষেত্রে সেটি খুবই সম্ভব ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি এ চুক্তির ক্ষেত্রে।
রেডিও তেহরান : জনাব আনু মোহাম্মদ, অনেকে মনে করেন- বর্তমান সরকারের জায়গায় অন্য কোন সরকার থাকলে তাদের পক্ষেও এসব ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদীদের চাপ এড়িয়ে দেশের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হতো না, আপনি কি মনে করেন ?
অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ : আমি মনে করি বাংলাদেশের প্রধান যে দু'টি ধারা বা প্রধান যে দু'টি রাজনৈতিক দল (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) আছে- তাদের নীতি-আদর্শের খুব একটা পার্থক্য নেই। কারণ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আমরা দেখেছি- তারা তাদের ক্ষমতায় থাকার সময় সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সার্ভিস বা সেবাদানের জন্য তৎপর ছিল এবং কমিশনলাভের একটা বিষয় তো ছিলই।
আবার বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সময়ও কমিশন নির্ভর এ ধরনের চুক্তি হলো। মার্কিন কোম্পানির সাথে চুক্তি করার বিষয়েও কিন্তু বিরোধী দল বিএনপি বা জামায়াত কোন কথা বলছে না কিংবা আন্দোলন করছে না। তারা অন্যান্য বিষয়ে হরতাল দিচ্ছে, নানা কর্মসূচী দিচ্ছে। কিন্তু এসব বিষয়ে কিন্তু তারা কোন কথা বলছে না। সে জন্য অলটারনেটিভ দল হিসেবে শুধু যদি বিএনপি ও জামায়াতকে ধরা হয় তাহলে বাংলাদেশের কোন ভবিষ্যত নেই বলে আমি মনে করি।
যদি বাংলাদেশের ভবিষ্যত জনগণের জন্য করতে হয় তাহলে এসব দলের বাইরে নতুন একটি জোট প্রয়োজন হবে। আর জনগণ সেটাই প্রত্যাশা করে।
রেডিও তেহরান : এর আগে মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টাল এবং কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোর হাতে গ্যাস ব্লকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনার পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশে কয়েকবার সরকার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু কোন সরকারই ওই দুই কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারেনি। আসলে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য সরকার তেমন কোন জোরালো পদক্ষেপই নেয় নি।
এটা কেন ?
অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ : দেখুন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই সরকারের সময় দুটো দুর্ঘটনা ঘটেছিল। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মাগুরছড়ার দুর্ঘটনা ঘটেছিল। তারপর বিএনপির আমলে ট্যাংরাটিলার বিস্ফোরণ ঘটেছিল। তো এ দুটো দলের ক্ষমতায় থাকার সময় ওইসব দুর্ঘটনার বিষয়ে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যাপারে তারা কোন জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি কারণ হচ্ছে, দল দুটো সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তারা মনে করে তাদের ক্ষমতার প্রধান উৎস হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ।
যদিও দল দুটো ভোট চায় জনগণের কাছে, আর জনগণের কাছ থেকে ভোট নিয়ে এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে স্বার্থ রক্ষা করে সাম্রাজ্যবাদীদের এবং দেশীয় কমিশনভোগীদের।
রেডিও তেহরান : আপনি বলেছেন যে, উত্তোলিত গ্যাসের শতকরা ৮০ ভাগ কনোকো-ফিলিপস পাবে এবং বাংলাদেশ পাবে ২০ ভাগ। তারা এই ৮০ ভাগ গ্যাস রপ্তানিও করতে পারবে। তো তারা যাদের কাছে এই গ্যাস রপ্তানী করবে তারাও তো নিশ্চয়ই লাভবান হবে। তো সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এই যে চুক্তিটি করল এটি কার স্বার্থে করল এবং কারা তাতে লাভবান হবে বা কারাই বা ওই গ্যাস কিনবে?
অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ : আপনি চমৎকার একটি বিষয় এখানে এনেছেন।
নিশ্চয়ই যারা এই গ্যাস কিনবে তারা লাভবান হবে। আর এলএনজি'র মাধ্যমে এই গ্যাস রপ্তানীর যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে তাতে- দু'টি দেশের নাম আসতে পারে আমেরিকা ও ভারত। প্রথমত সম্ভাব্য গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হতে পারে। কারণ মার্কিনীদের একটা হিসাব আছে। আর সেই হিসাব অনুযায়ী তাদের একটা পরিকল্পনাও আছে।
তাদের আগামী ১০ বছরের মধ্যে ৫ থেকে ৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঘাটতির সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেটি পূরণ করারও একটি পরিকল্পনা রয়েছে। অন্যদিকে ভারতের বিষয়টিও এখানে আছে। কারণ ভারতের ২০২১ সালের মধ্যে পাওয়ার জেনারেশনের জন্য প্রচুর গ্যাস প্রয়োজন। সে কারণেও দ্বিতীয় সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে ভারতের নাম বলা যায়।
ফলে এখানে দুটো দেশের স্বার্থের কথা বলা যাবে। আর তাদের স্বার্থেই এই চুক্তি করা হয়েছে এবং কনোকো-ফিলিপস বা অন্যরা যাতে এ থেকে সুবিধা পায় সে লক্ষ্যেই এ চুক্তি করা হয়েছে। তবে আমরা গ্যাস রপ্তানীর বিষয়টির পুরোপুরি বিরোধী। কারণ বাংলাদেশের শিল্পায়ন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে পরিমাণ গ্যাস প্রয়োজন সেই পরিমাণ গ্যাস আমাদের নেই। ফলে অনবায়নযোগ্য সীমিত পরিমাণ গ্যাস সম্পদ আমাদের নিজেদের কাজে ব্যবহারের জন্য রপ্তানীর বিষয়টি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার দাবি করছি আমরা।
সুতরাং ভারত বা আমেরিকা যারাই রপ্তানীকৃত গ্যাস কিনুক না কেন তাদের জন্য দরকার হবে এমন একটা কোম্পানি- যে কোম্পানি তার সাম্রাজ্যবাদীদের শক্তির বলে এই গ্যাস সম্পদ নিয়ে তাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারবে। ফলে এখানে সুস্পষ্টভাবে পারস্পরিক একটি স্বার্থের ব্যাপার রয়েছে। #�
সাপ্তাহিক : কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেল। সরকার বলছে, প্রথমবারের মতো তারাই সমুদ্রবক্ষের গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা করল। এটাকে তারা সাফল্য হিসেবে দাবি করছে।
কিসের ভিত্তিতে আপনারা এর বিরোধিতা করছেন?
প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ : এই দাবি তারা করতেই পারে। একটা সর্বনাশকে আনন্দের ব্যাপার বলে দাবি করতে পারে। গোয়েবলের 'বারবার প্রচার করবে' নীতি গ্রহণ করে তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। ধনিকশ্রেণীর সরকারগুলো এখানে বরাবরই তাই করে এসেছে। তারা যখন ক্ষমতায় যায় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সেবা করতে উন্মুখ থাকে।
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে সেবা দেয়ার ব্যাপারে ধনিকশ্রেণীর প্রতিনিধিদের মধ্যে বিশাল প্রতিযোগিতা আছে। এক দল এখন এটা করছে। অন্যদল ব্যাঘ্র হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমরা দীর্ঘদিন থেকে এই শাসকদের মুখোশ উন্মোচন করে চলেছি। তারা যাকে বলছে সাফল্য, আমরা তাকে বলছি জাতীয় স্বার্থ হন্তারক।
বিনা যুদ্ধে, বিনা দখলে, শান্তিপূর্ণভাবে তারা দেশের সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দিয়েছে। চুক্তির শর্তাবলি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, আমরা এ থেকে কোনো লাভই পাব না। অবস্থাদৃষ্টে আমার মনে হচ্ছে, গ্যাস উঠলে সমুদ্রবক্ষের একটু গ্যাসও আমরা পাব না। চুক্তি অনুযায়ী পুরো গ্যাসই মার্কিন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান কনোকো ফিলিপস পাবে। এই চুক্তি দেশদ্রোহী চুক্তি।
সাপ্তাহিক : কিসের ভিত্তিতে আপনারা দাবি করছেন যে, আমরা গ্যাস পাব না? মডেল পিএসসিতে এ ধরনের কী কী বিষয় আছে?
শহীদুল্লাহ : মডেল পিএসসি ২০০৮ এর ১৫.৫.৪ ধারায় বলা আছে যে, যত যাই হোক সম্পূর্ণ বাজারজাতযোগ্য গ্যাসের ২০ ভাগের বেশি আমরা কিছুতেই পাব না। এই ২০ ভাগ হচ্ছে আবার সর্বোচ্চ। অর্থাৎ এর কমও আমরা পেতে পারি। এটা আবার আমাদেরকে দেয়া হবে গ্যাস আকারে। আর তারা যা পাবে, ৮০ ভাগ বা তারও বেশি, এটা তারা এলএনজি আকারে বিদেশে রপ্তানি করবে।
চুক্তিটা এমনভাবে করা হয়েছে যেন তারাই মালিক আর আমরা তাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে গিয়েছি। চুক্তিতে বলা হচ্ছে, যদি তোমরা পাইপলাইন করে গ্যাস নিতে পার, যদি সেই গ্যাস আভ্যন্তরীণ কাজে ব্যবহার করতে পার তাহলে তোমরা সর্বোচ্চ ২০ ভাগ গ্যাস পেতে পার। অর্থাৎ চুক্তি অনুসারে আমাদের গ্যাস হওয়া সত্ত্বেও আমরা তা নিজেরা রপ্তানি করতে পারব না। আমরা যদি তা ব্যবহার করতে না পারি তাহলে আমরা গ্যাস পাব না। আমরা যদি সমুদ্রবক্ষ থেকে গ্যাস না নিয়ে আসতে পারি তাহলেও আমরা গ্যাস পাব না।
অদক্ষতার বিষয়টি চুক্তিতে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। অদক্ষতার জন্য কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাব না। আইন মন্ত্রণালয়ও অদক্ষতার বিষয়টি রাখার বাধ্যবাধকতা দিয়েছে। কিন্তু কনোকো ফিলিপস তা মানেনি। সরকারও তাই অদক্ষতা শব্দটি বাদ দিয়ে চুক্তি করেছে।
মডেল পিএসসির ১০.২৭ ধারায় এটা রয়েছে।
আবার আগের চুক্তিগুলোয় বলা ছিল, মোট মজুদের ৭.৫ ভাগের বেশি হারে উত্তোলন করা যাবে না। কিন্তু কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তিতে এটা বলা হয়নি। অর্থাৎ তারা যত খুশি বেশি করে উত্তোলন করতে পারবে। আর এত বেশি গ্যাস উত্তোলন হলে আমরা যা পাব তা তো পুরোটা তৎক্ষণাৎ কাজে লাগাতে পারব না।
চুক্তিতে আবার বলা আছে আমাদেরকে ব্যবহার করতে হবে। ফলে চুক্তি অনুযায়ী ব্যবহার করতে না পারায় আমরা গ্যাস পাব না। বেশি উত্তোলনের দায় আমাদের বইতে হবে। আমরা গ্যাস পেয়েও হারাব। চুক্তিতে মজুদের কথাও নেই।
অর্থাৎ আমরা মজুদও করতে পারব না।
মডেল পিএসসি ২০০৮ এর ১৫.৫.১ ধারায় বলা হয়েছে, কনোকো ফিলিপস তাদের গ্যাস রপ্তানি করার অধিকার রাখে। আর পুরো চুক্তির ধরন দেখে মনে হয়, কনোকো ফিলিপসই কর্তা। তারাই মালিক। আমরা কিছু না।
চুক্তি আবার তারা নিজেদের স্বার্থে বদল করে নিতে পারে। স্যান্টোসের ক্ষেত্রে তো আমরা তাই দেখলাম। চুক্তি বদল করে তাদেরকে তৃতীয়পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির অনুমতি দেয়া হলো। মডেল পিএসসি ২০০৮ সমুদ্রবক্ষের ক্ষেত্রে গ্যাস উত্তোলনের হারের কোনো নির্দিষ্ট সীমা রাখা হয়নি। কস্ট রিকভারি বা উত্তোলন ব্যয় নিয়েও একটা ঝামেলা তৈরি হতে পারে।
যার ফলে আমরা মোটেও গ্যাস নাও পেতে পারি। যদি সরকারপক্ষের লোকজন তাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে দেখিয়ে দেয়, গ্যাস উত্তোলনে কনোকো ফিলিপসের অনেক বেশি ব্যয় হয়েছে তাহলে আমরা কী করতে পারব?
সাঙ্গুতেও তো তারা একই ঘটনা ঘটিয়েছে। উত্তোলন ব্যয় যা নয়, তার চেয়েও অনেক বেশি দেখিয়েছে। ফলে আমরা সেখান থেকে কোনো গ্যাস পেলাম না। সবই তাদের দিয়ে দিতে হয়েছে।
এই অভিজ্ঞতা আমাদের বলে যে, সমুদ্রবক্ষের গ্যাস আমরা নাও পেতে পারি।
সাপ্তাহিক : আপনি বলছেন সমুদ্রবক্ষ থেকে আমাদের পক্ষে গ্যাস আনা সম্ভব হবে না। কিন্তু সরকারপক্ষ তো বলছে ওরা মেজারমেন্ট পয়েন্ট পর্যন্ত গ্যাস পৌঁছে দেবে। এতে করে গ্যাস পরিবহনে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না।
শহীদুল্লাহ : এটা খুবই হাস্যকর কথা।
এটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে, আমাদের চুক্তিকারীরা প্রচণ্ড অসৎ। স্বাভাবিকভাবেই তারা বহুজাতিকদের দেখানো জায়গাতেই মেজারমেন্ট পয়েন্ট নির্দিষ্ট করবে। ফলে গ্যাস আর আমরা পাব না। এখন যদি কষ্ট করে ধরেও নেই যে, সরকার কিছু পরিমাণ গ্যাস পেতে চায় তাহলে তো তারা চুক্তিতে মেজারমেন্ট পয়েন্ট নির্দিষ্ট করতে পারত। তারা তো বলতে পারত গ্যাসপ্রাপ্তির স্থান থেকে দেশের নিকটস্থ উপকূলের ১০ মাইলের মধ্যে মেজরমেন্ট পয়েন্ট নির্দিষ্ট হবে।
অথবা কক্সবাজার বা চট্টগ্রাম বন্দর হবে মেজারমেন্ট পয়েন্ট। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে সেই পর্যন্ত গ্যাস পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু চুক্তিতে তা রাখা হয়নি। কেন রাখা হয়নি, এটা সহজেই অনুমেয়। মেজারমেন্ট পয়েন্ট সুনির্দিষ্ট না করার অর্থ হচ্ছে ফাঁকিবাজির সুযোগ রাখা।
সরকারের যারা দায়িত্বে থাকবে, মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে গ্যাসক্ষেত্রের প্রকৌশলী পর্যন্ত সবারই পয়সা আয়ের সুযোগ থাকবে। মেজারমেন্ট পয়েন্ট সমুদ্রবক্ষে ফেললে কনোকো ফিলিপস পুরো গ্যাসটাই নিয়ে নিতে পারবে। তার বিনিময়ে সরকারের এই কর্তারা টু পাইস কামানোর সুযোগ পাবে। আবার এমনও হতে পারে যে, আসলে তারা পুরো গ্যাসটাই বিকিয়ে দিয়েছে। এ জন্যই চুক্তিতে মেজারমেন্ট পয়েন্ট নির্দিষ্ট করেনি।
সাপ্তাহিক : আমাদের জাতীয় সক্ষমতা তো এখন অনেক সীমিত। কনোকো ফিলিপসের সামর্থ্য তো চাইলেই আমরা অর্জন করতে পারছি না। তাহলে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে না ডেকে কিভাবে আমরা এর সমাধান করব?
শহীদুল্লাহ : এখানে আমাদের স্পষ্ট অবস্থান হচ্ছে বাপেক্সকে শক্তিশালী করতে হবে। বর্তমানে সে চেষ্টা কিছুটা হচ্ছে, সে জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। আর জাতীয় সক্ষমতা অর্জন না করা পর্যন্ত গ্যাস যেখানে আছে সেখানে ফেলে রাখতে হবে।
কনোকো ফিলিপসের সামর্থ্য, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা কোনোটারই আমাদের দরকার নেই। আমরা যেদিন সক্ষমতা অর্জন করব সেদিন গ্যাস উত্তোলন করব।
আরেকটা পথ হচ্ছে, শতভাগ মালিকানা হাতে রেখে আমরা কনোকো ফিলিপস বা যে কাউকেই নিয়োগকৃত ঠিকাদার হিসেবে কাজে লাগাতে পারি। আমরা গ্যাস উত্তোলনের জন্য দরপত্র আহ্বান করব। যে প্রতিষ্ঠান কম দামে রাজি হবে তাদেরকে দিয়ে কাজ করাব।
চুক্তি অনুযায়ী তাদের টাকা আমরা তাদের দিয়ে দেব। কিন্তু তারা কোনো গ্যাস পাবে না। এভাবে তো আমরা কনোকো ফিলিপসের সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে পারি।
সাপ্তাহিক : কিন্তু সরকার তো বলে গ্যাস তোলার মতো পর্যাপ্ত অর্থ আমাদের নেই।
শহীদুল্লাহ : প্রথম কথা হচ্ছে, অর্থ না থাকলে তুলবেন না।
দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, সরকারের এ দাবির পুরোটাই ভাঁওতাবাজি। কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে যে চুক্তি হলো সেখানে কনোকো ফিলিপস মাত্র ৭৭০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। তাও আবার একবারে নয়। ধাপে ধাপে। পাঁচ বছরে।
আমাদের হিসেবে ৭৭০ কোটি টাকা পাঁচ বছরে বিনিয়োগ করার মতো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কয়েকশ আছে। আর সরকার চাইলে এ টাকা একদিনে বিনিয়োগ করতে পারে। সরকারের পক্ষে এ টাকা বিনিয়োগ করে দরপত্রের মাধ্যমে অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে গ্যাস তোলানো খুবই সহজ ছিল।
এখন কনোকো ফিলিপস কী করবে। তারা প্রথমে দ্বিমাত্রিক জরিপ চালাবে।
গ্যাস ক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সম্পর্কে জানবে। গ্যাসের মজুদ নিশ্চিত হলে তারা আবার ত্রিমাত্রিক জরিপ চালাবে। দৈর্ঘ্য-প্রস্থ গুরুত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হবে। তারপর গ্যাস উত্তোলনের পথে যাবে। এতটুকু কাজ কিন্তু আমরা নিজেরাই করতে পারতাম।
বাপেক্সকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও লোকবল দিয়ে এ জরিপ দুটি চালানো যেত। অথবা দরপত্র আহ্বান করেও এ জরিপ দুটি করা যেত। এরপর গ্যাসের মজুদ নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা ধীরেসুস্থে গ্যাস উত্তোলনের জন্য পুনরায় দরপত্র আহ্বান করতে পারতাম। তখন আমরা হিসেব করতে পারতাম যে, এ পরিমাণ গ্যাস আছে। প্রাপ্ত গ্যাস দিয়ে আমরা কী করব।
পুরো পরিকল্পনা করে তখন আমরা কাজ করতে পারতাম। কিন্তু এখন আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। আছে একটা চুক্তি। সেই চুক্তি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, আমরা কোনো গ্যাস পাব না। পুরোটাই তারা নিয়ে যাবে।
সাপ্তাহিক : নিজেদের অর্থায়নে আপনি জরিপ চালানোর কথা বললেন। কিন্তু সরকার বলছে, গ্যাস না পাওয়ার সম্ভাবনাও আছে। তাই এত টাকা ব্যয়ের ঝুঁকি তারা নিচ্ছেন না। চুক্তি অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়া গেলে কনোকো ফিলিপসকে কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না।
শহীদুল্লাহ : তারা টাকা ব্যয়ের ঝুঁকি নিচ্ছেন না।
কিন্তু পুরো গ্যাস না পাওয়ার ঝুঁকি তো নিচ্ছেন। এই টাকার ঝুঁকি আসলে অজুহাত। এই অজুহাতের ফাঁক গলেই তারা গ্যাস পাচারের বন্দোবস্ত করেছে। আর ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ কি আগে কখনো সরকার করেনি? কোন বিনিয়োগে ঝুঁকি নেই?
সাপ্তাহিক : সরকারকে আপনারা দুষছেন। কিন্তু এটা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সরকার।
এদের হাতে চুক্তিগুলো নিরাপদ নয় কেন?
শহীদুল্লাহ : কেননা তারা মোটেই সৎ না। নির্বাচনের সময় তারা অনেক অঙ্গীকার করে। নির্বাচন আসলে ইশতেহার প্রকাশ করে। সেখানে তারা অসংখ্য প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে দেখা যায় তার একটিও তারা পূরণ করে না।
ক্ষমতায় থেকে তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। এতে বদনাম হয়ে যায়। মানুষ তাদের ওপর বিরক্ত হয়। আরেকটা দল বসে থাকে এই সুযোগ নেয়ার জন্য। মানুষ এক দলের ওপর বিরক্ত হয়ে আরেক দলকে ভোট দেয়।
তারাও একই রকম প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেয়। ক্ষমতায় গিয়ে একই কাজ করে। এই চক্র চলতে থাকে। মানুষ এই চক্রের মধ্যে পড়ে হাঁসফাঁস করে। ইংরেজিতে একে বলে, ফ্রম প্যান টু ফায়ার।
এই চুক্তির ব্যাপারে বিএনপি একেবারেই নিশ্চুপ। কারণ ক্ষমতায় গেলে তারাও একই কাজ করবে। আমেরিকার সুনজরে থাকার জন্য তারাও প্রতিযোগিতা করছে।
সাপ্তাহিক : অর্থনীতিতে এই চুক্তির কিরূপ প্রভাব পড়বে?
শহীদুল্লাহ : গ্যাস তো আমরা পাবই না। আমাদের অর্থনীতির উন্নয়নে এই চুক্তি কোনো কাজেই লাগবে না।
শুধু পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমরা অপরাধী হয়ে থাকব। আমরা নিজেরা ব্যবহার করলাম না। রেখেও দিলাম না। কোনো লাভ ছাড়া বিদেশি বহুজাতিকদের হাতে পুরোটা ছেড়ে দিলাম। পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের ধিক্কার দেবে।
তাই তেল-গ্যাস কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পুরো জাতিকে আমরা ঘৃণা ও ধিক্কারের বস্তু হতে দেব না। রক্ত দিয়ে হলেও আমরা এই গ্যাস পাচার ঠেকাব। আর প্রকৃত দুর্নীতিবাজ, অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন করব।
সাপ্তাহিক : পিএসসির ক্ষেত্রে আমাদের মডেল হতে পারে কোন দেশ?
শহীদুল্লাহ : ভেনিজুয়েলারটা গ্রহণ করা যায়। সেখান থেকে কনোকো ফিলিপস বিতাড়িত হয়েছিল।
সেখানে জনগণের সরকার এসে তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। তারা প্রমাণ করে আগের চুক্তিটি ছিল জনবিরোধী। পরে তারা দরপত্র আহ্বান করে অন্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছে।
আমাদের মডেলই আমরা অনুসরণ করতে পারি। আমাদের মডেল হচ্ছে, আর কোনো পিএসসি নয়, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদের শতভাগ মালিকানা জাতীয় হতে হবে।
জাতীয় সংস্থার সক্ষমতার বিকাশ ঘটাতে হবে। আমাদের বিশেষজ্ঞ ও তরুণদের হাতে নেতৃত্ব দিতে হবে। সকল চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। দেশের জ্বালানি সম্পদ শুধু দেশের বিদ্যুৎ ও শিল্পায়নের কাজে লাগাতে হবে। গ্যাস-কয়লা রপ্তানি বন্ধ করতে হবে।
বহুজাতিকদের রাহু থেকে জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে মুক্ত রাখতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।