একলা মানুষ মাতৃ গর্ভে একলা মানুষ চিতায় একলা পুরুষ কর্তব্যে একলা পুরুষ পিতায় আর, মধ্যে খানে বাকিটা সময় একলা না থাকার অভিনয় দোস্ত আমার দুই জন গেস্ট আইছে জটিল কইরা দুইটা চটপটি বানা।
"১৯৯৮ সালের রোজার ঈদে আমরা ৫ বন্ধু মিলে চটপটির ষ্টল দিয়েছিলাম। আমাদের নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে স্টলের নাম ছিল "জরসলিম", যেখানে মেয়েদের জন্য চটপটি এবং ড্রিংকস বিলকুল ফ্রি, আর এলাকার বড় ভাইদের জন্যে সর্বশান্ত মুল্য মানে পকেটে যা আছে দিয়ে যেতে হবে। "
মাইয়া না পোলা?
মাইয়া, দুড় সম্পর্কে ভাগনী হয়।
আমি অন্দর মহল থেকে চটপটি নিয়ে হাজির।
তখনও বুজতে পারিনি চটপটি হাতেই আমার প্রেমময় জীবনের সুচনা হতে চলেছে।
ছালা পরে ঘুরছেন কেন?
প্রশ্ন কর্তার দিকে তাকালাম। মারুফ পরিচয় করিয়ে দিলো, আমার ভাগ্নী, নাম আঁকা।
"এলিফেন্ট রোড থেকে অনেক ঘুরে পাঞ্জাবিটা কিনেছি। যদিও এখন আমার নিজেরই পছন্দ হচ্ছেনা, মনে হচ্ছে আমি না পাঞ্জাবিটা দাড়িয়ে আছে।
জীবনে আর কখনই পাঞ্জাবিটা পরিনি"
আমি কিছুটা রেগে বললাম, আপনার পছন্দ না হলে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকুন।
আঁকা চুপ মেরে গেল।
ওর সাথে চাচাত বড় বোন ছিল নাম রজি।
রজি আপা জানতে চাইল আমি কি করি?
আমি বললাম, ক্লাস ১১ তে পরি, আর চটপটি বানাইয়া সংসার চালাই।
উনি হাসতে লাগলেন।
তোমার কি কোন বোন আছে আইডিয়াল গার্লস কলেজে পরে?
জি? আপনি জানলেন কি করে?
তোমাদের ভাইবোনের চেহারা অনেক মিল। রুবি আমার বান্ধবী। তোমার নাম রনি। রুবি বলেছে।
আঁকার সাথে আর কোন কথা বললাম না।
শুধু বিদায়ের সময় ওর চোখের দিকে তাকাতেই আমার হালুয়া টাইট। হায়, বায়, বিদায়, শাব্বাখায়ের, ফের মিলেংগে কিছুই মুখ দিয়ে বের হলনা।
রাতে খুব মজা করলাম কোকা কোলার বোতল খুলে একজন আরেক জনকে ভেজান। অনেক বন্ধুরা এসেছিল। ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে নাচা নাচি চলল রাত ১১ টা অব্দি।
"সেই সময়ের সেই ঈদ উৎসব গুল এখন আর দেখা যায়না পারা মহল্লার অলি গলিতে"
বাইরের বন্ধুরা সব চলে যাওয়ার পর মারুফকে বললাম,
দোস্ত আঁকা কোন ক্লাসে পরে?
ক্লাস নাইন। কেন বন্ধু?
তর ভাগ্নিকে আমার ভাল লাগছে। ফিরি না বুক্ট ?
বুক্ট থাকলে রিজার্ভেশন বাতিল করমু কি কস বেটা । আমার কি করেত হইব কয়া ফালা।
ওকে জানালাম আমি আঁকাদের বাসায় যেতে চাই।
ফার্স্ট অফ অল ছরি বলা দরকার।
পরের দিন বিকেল ৫ টা।
আঁকাদের যৌথ ফ্যামিলি। চার তলা বাড়ি পুর বাড়িতেই ওদের বাপ চাচারা এক সাথে থাকে। আমরা নিচ তলায় আকার চাচাত বোন রজি আপাদের ফ্লাটে বসলাম।
আকা আসছেনা। আমার টেনশন বাড়ছে। মারুফকে খোঁচা দিলাম। ও উঠে চলেগেল। কিছুক্ষণ পর আঁকাকে নিয়ে ঘরে ঢুকল।
আমাদের আসার সংবাদ পেয়ে এক চাচি থেকে শুরু করে আন্ডা বাচ্চা সব ভির করেছে। কারণ ঈদের পর দিন মারফ কে পাওয়া গেছে, এখন গানের আশার হবে। ও, বলতে ভুলে গিয়েছি মারুফ একজন ভাল সংগীত শিল্পী।
আমাদের বার বার চোখা চখী হচ্ছিল।
ইশারায় বোঝাল, আপনার ছালা পাঞ্জাবি কই।
আমি হালকার করে কানে ধরলাম। ও হাসল।
মেঘনা (না) চাইতে বৃষ্টির মত দাওয়াত পেয়ে গেলাম মারুফের সাথে কেরানীগঞ্জ বেরাতে যাওয়ার। সাথে রজি আপা এবং আঁকা....।
আমার পাগলা ঘোড়া রে কই থাইকা কই লইয়া যায়..গাইতে গাইতে বাড়ি চলে আসলাম।
আম্মা কিছুতেই কেরানীগঞ্জ যেতে দিবেন না, কি আর করা পালাতেই হল।
মহাম্মদপুর বেড়ি বাধে অপেক্ষা করছি আমি আর মারুফ। আঁকা আর রজি আপা আসলো আধ ঘন্টা পর। আকা বেবি টেক্সি থেকে নেমে সোজা আমার হাতে লাগেজটা ধরিয়ে দিল।
ধরেন এটা আপনার কাজ।
আমার কাজ মানে? আমি কি কুলি নাকি?
আমি জানি আমার লাগেজ টানতে আপনার ভালই লাগবে। হি হি হি ।
মনে মনে ভাবছি এই মেয়ে তো আমাকে এখনই নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরান শুরু করে দিয়েছে। কি আর করা আমি লাগেজ নিয়ে ট্রলারে উঠে পরলাম। আকা আমার মুখো মুখি বসে আছে আমরা দুজনেই সানগ্লাস পরা।
ও সাদাকালো স্কার্ট পরেছে সাথে সানগ্লাসে অপুর্ব লাগছে। টেনারি বর্জ্যে দুর্গন্ধ ময় পরিবেশেও আমি স্বপ্নের দেশে হারিয়ে গেলাম। ঘাটে ট্রলার ভিরতেই আমি সংবিত ফিরে পেলাম। সবাই কাপর, রুমাল, হাত, দিয়ে নাক চেপে আছে আমি ছারা। আঁকা হাসছে।
সবার দৃষ্টি আমার দিকে এই প্রথম বুজলাম গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছে।
আমরা উঠলাম মারুফের ভাইয়ের বাসায়। আমরা বিয়ে বাড়িতে এসেছি।
I don’t fucking care বিয়ে বাড়ি হোক আর মরা বাড়ি। আমার কাঠের চশমায় শুধু একটা ছবি 'আঁকা'।
আমি আজো জানিনা বিয়েটা কার ছিল বা বৌ দেকতে কেমন ছিল।
ফ্রেস হয়ে আমরা গ্রামে ঘুরতে বের হলাম। সন্ধায় বাসায় ফিরে সবাই মিলে ধাঁধার আসরে বসলাম। আঁকা একটা ধাঁধা বলল। 'শোয়ার আগে কি করতে হয়?' O my goodness আমি উত্তর জানি।
কেও বলছে বাতি নিভাতে হয়, কেও বলছে দাঁত মাঝতে হয়। আমি খুব টেনশনের ভাব নিলাম। উ এ্যা আ করে বললাম, শোয়ার আগে বসতে হয়। আঁকা আর রজি আপা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। আমি বিজ্ঞানী বিজ্ঞানী ভাব নিলাম ।
কিন্ত একটু পরেই ঝামেলা বাঁধল। আঁকাকে রজি আপার চামচ বলে ফেলেছি মুখ ফসকে। ব্যস তেলে বেগুনে। রাতে আর কোন কথা হলনা।
মদ্য পান হবে, আয়োজন চলছে।
আর বাহিরে নাচের পর্ব চলছে। আঁকা বারান্দায় দাড়িয়ে দেখছে আমি বারান্দায় আসতেই ও স্টেইজের কাছে কত গুল ছেলে বসে ছিল ওদের পাশে চেয়ার নিয়ে বসল। আমার তো মাথায় আগুন। আমি আমার ব্যাগ গোছাতে লাগলাম। মারুফ কে ঘটনা বললাম ও গিয়ে আঁকাকে নিয়ে আসল।
আকা পাসের রুমে চলে গেল। মারুফ বোঝাল রাতে না কাল সকালে যেতে। রাতে ঘুম হলনা। ভরের দিকে খাটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছি।
পানির ছিটায় ঘুম ভাংল।
আকা হাসছে। আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি কেও নেই। ও গোসল করেছে, চুল বাঁধা। ভোরের আল ওর মুখে এসে পরছে। আমি কি স্বপ্ন দেকছি?ও জেন মানুষ নয় কোন শিল্পীর তুলিতে 'আঁকা'।
এভাবে ঘুমাচ্ছেন কেন?
ঘুমিয়ে পরব বুঝি নাই। কিছু একটা ভাবছিলাম।
কাকে ভাবছিলেন?
তোমাকে।
শ্যামলা মুখ খয়েরি করে চলে গেল। আজ কি কোন বিশেষ দিন।
শুরুটা এত ভাল হল কেন। আমি আবার চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ভাবছি আমাদের সংসার। আমি ঘুমিয়ে আছি আঁকা আমার ঠোঁটে চুমু দিয়ে ঘুম থেকে জাগিয়েছে। গোসল করে টাওয়েল পেঁচিয়ে আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।
আর দুর থেকে গান ভেসে আসছে- রাত কা নেশা আভি আঁখ ছে গেয়া নেহি....।
জীবন থেকে নেয়া, আমি এবং আঁকা - সম্পূর্ণ (পর্ব- ১ থেকে পর্ব-৭) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।