আমি অপার হয়ে বসে আছি ওহে দয়াময়, পাড়ে লয়ে যাও আমায় নিজেকে কখনো কবি ভাবি নি। তবে, মাথায় দু একটা লাইন খেলা করলেই লিখে রাখতাম। অনিবার অত্যাচার চালিয়েছি পুরনো ম্যাথ খাতার সাদা পৃষ্ঠাগুলোর উপর। কিছু পাওয়ার আশায় লিখি নি কখনও, তবুও নিজের লেখায় পড়ে ল্যাভেন্ডারের গন্ধ পেতাম। মাদকতার সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়া এক গন্ধ, একটা অবর্ণনীয় নেশায় আমাকে পেয়ে বসেছিলো তাই সংযাত্রার লোভে শব্দের অন্ত্যমিলকে ধ্যানজ্ঞান করেছি।
তবে অনুভূতির তীক্ষ্ণ উপাখ্যানেরা কি -
মধ্যরাতীয় মধ্যবৃত্ত স্বপ্নগুলোর উচ্চমর্গীয় ভাবনা
নাকি একই মানচিত্রের দুটি কাঁটাতারের সীমানা
কিংবা সস্তা কাগজে দামী জেলপেনের আলপনা ?
আমি জানতাম না, সত্যিই আমি জানতাম না ...........
বিশ্বাস করুন।
খেয়ে পড়ে বাঁচার জন্য একটা চাকরী, সংসার ধর্ম পালনে একজন সুন্দরী রমণীর স্পর্শ, এসব ভাবনা আমার সচেতনতার সর্বস্তর সম্মোহন করে রেখেছিলো। তাই আমার পৃথিবী আমি আত্মকেন্দ্রিকতায় সাজিয়েছিলাম। জগতের সব আনন্দ খুঁজতাম মলিন চেহারার পাঠ্য বইয়ের বুকে।
সস্তা দামী সিগারেট , শব্দ অন্ত্যমিলে মহক, যান্ত্রিকতার জ্যামিতি ঠাসা পাঠ্যবই ছাড়াও আমার একা দিনগুলো সঙ্গ পেয়েছে শত নিস্তব্ধ রাতের।
বালুঘড়ির কাঁটায় চলা প্রতি রাত আমায় গম্ভীর রাগিণী শোনাত, তখন -
সাদা ক্যানভাসে ক্ষয়ে যাওয়া তুলির আঁচড় স্পষ্ট হয়ে উঠে
রাতের পাখিরা সেখানে কোরাস গায়,
অপার্থিব সুরের মূর্ছনায়।
বিনিদ্র রাতেরা অশ্বারোহী; ফিসফিসিয়ে বলে যায় –
পথিক, তোমার প্রতিটিক্ষণ এখন কবিতা সাজায়।
প্রেম যে জীবনে কখনও আসে নি, তা নয়। এক মন্দ্র বিকেলে ব্যাকুলতা সব সংজ্ঞা পেয়েছিলো এক পরীর কবরী সাজানো ক্যামেলিয়ায়। তাকে লাজমাখা গলায় বলেছিলাম,
মেয়ে, এইযে আনমনে কার্নিশে পা দুটো ঝুলিয়ে বসে আছো
কিংবা সর্পলতা চুলগুলো বাতাসের নিরেট দেওয়ালে নাচাচ্ছো
দৃষ্টিপথে এরচে সুখকর আবেশ নির্লিপ্ততা সৃষ্টি করে না, তাই-
বুড়িয়ে যাওয়া বিকেলে তোমাতেই থেমে থাক আমার প্রার্থনা।
কবিতায় চিড়ে ভিজে না সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম। আমার অস্থিরতায় তার অনাস্থা প্রকাশ ছিলো, আমার কবিতিকা তার কাছে অর্থহীন শব্দের বাচালতা ছিলো। কথায় আছে, নিজের দৈন্যতা মানুষকে পশুর চেয়েও অসহায় করে তোলে। আমি সময়ের আয়নায় নিজের অপ্রাপ্তির হিসেব মিলিয়ে হেসেছি।
রাতে নিজের লেখা একটি অনুকবিতায় চোখ পড়ে -
মধ্যবিত্ত সংসারে চাওয়া পাওয়ার হিসেব মিলানো জরুরী বৈ কি
ভূপেনের যাযাবর মন তো সেখানে কর্পূরের মতোন উবে যায়।
বেপরোয়া বেয়াড়া শখ দল বেঁধে সন্ন্যাস নেয়, হয়ে গৃহত্যাগী
চুলোয় পাশে শুয়ে নিভৃতে কাঁদে, সদ্য আগুনে পোড়া ধূসর ছাই!
সত্যিই তো, নয় কি ?
কেন জানি না ধূলো জমা স্মৃতির পঙতিগুলো আমাকে উপহাস করে, যতবার আমি পিছনে ফিরে তাকাই ততবার । নিজের কাছে করা কিছু প্রশ্নের উত্তর আমি আজও দিতে পারিনি শত চেষ্টা করেও -
পিচঢালা পথটির মরীচিকার সাথে
আমার অটুট বন্ধুত্ব,
ঠিক কতবার যে প্রতারিত হয়েছি,
এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না।
মিথ্যেকে দুহাতে জড়িয়েছি, আর
সত্য বরন করেছে চারদেয়ালে বন্দীত্ব
সেই কবেই তো পেরিয়ে এসেছি
বিশ্বাসের শেষ সীমানা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।