প্রবাসী
বিশ্বাস করুন আমি গ্যাস চুক্তি সম্পর্কে কিছুই জানি না আর গ্যাস দিতে মানে গুল মারতে ও আমি আসিনি । আজকের লেখার মূল উদ্দেশ্য, মানে আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্যাস সম্পর্কে জানা আর জানানো। কেউ যদি লেখা পড়েন তা আমার বাড়তি পাওনা আর যদি কেউ প্রসংসা করেন তো আমি ধন্য।
প্রাকৃতিক গ্যাস সারা পৃথিবীর শক্তি চাহিদার প্রায় শতকরা ২০ ভাগ পুরন করে থাকে। কোথা থেকে আসে গ্যাস? কতটুকু নিরাপদ বা পরিবেশ সম্মত, এবং আর কতদিনই বা তা আমাদের শক্তি যুগিয়ে যাবে?
বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস লক্ষ লক্ষ বছর ধরে স্তরে স্তরে জমতে থাকা গাছাপাতা এবং প্রানীর ধংসাবশেষ, প্লাঙ্কটন,ইত্যাদি ঢাকা পড়তে থাকে ধুলিকনা এবং কাদা মাটির নীচে।
ভু গর্ভস্থ তাপে,চাপে এবং ব্যাক্টেরিয়ার পচনের ফলে তা ক্রমশঃ পরিনত হয় তেল, কয়লা এবং প্রাকৃতিক গ্যাসে যাদের কে এক সাথে বলা হয় জীবাশ্ম জ্বালানী বা fossil fuel। নিশ্ছিদ্র শিলা স্তরের নীচে ফাকে ফাকে গ্যাস জমে তা পরিনত হয় গ্যাস ক্ষেত্রে। অনেক গ্যাস ক্ষেত্রের আয়তন আবার বিশাল, কয়েক দশক ট্রিলিয়ন ঘনমিটার পর্যন্ত। পৃথিবীতে সবচে বড় গ্যাসক্ষেত্র হল কাতারে আর মোট পরিমানের দিক দিয়ে প্রথম হল রাশিয়া।
গ্যাস কিভাবে খুজে পাওয়া যায়?
উপগ্রহ (Remote Sensing satellite), গ্লোবাল পজিশানিং সিস্টেম(Global positioning system), শব্দ(Reflection seismology) এবং কম্পিউটার(Computer)।
রিফ্লেক্সান সিসমোলজি অনেকটা চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহৃত আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মত। উচু মাত্রার শব্দ পৃথিবীর স্তরে পাঠানো হয় যা প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। ফিরে আসা শব্দ তরংগ কম্পিউটারের সাহায্যে পরীক্ষা করে গঠন প্রনালী সম্পর্কে জানা যায়। সাধারনতঃ ছোটখাট বিস্ফোরন বা ভাইব্রেটরের সাহায্যে শব্দ তৈরী করে ভুস্তরের ভিতরে পাঠানো হয় এবং কম্পিউটার যে ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরী করে তা থেকে সম্ভাব্য গ্যাস ক্ষেত্র সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানে উচ্চ চাপে বাতাস, বাস্প বা পানি সমুদ্র তলদেশে পাঠানো হয়ে থাকে ।
প্রতিফলিত চাপ হাইড্রোফোন যন্ত্রের মাধ্যমে পৌছে জরীপ জাহাজে যেখানে কম্পিউটার দিয়ে বিশ্লেষন করে সম্ভাব্য গ্যাস ক্ষেত্র সম্পর্কে ধারনা জন্মে।
অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক হওয়ার জন্য গ্যাস ক্ষেত্রে যথেস্ট পরিমান গ্যাস এবং গ্যাসের চাপ থাকতে হবে । গ্যাসের চাপ নির্নয় করা সহজ কিন্তু গ্যাসের মোট পরিমান নির্নয় করা অপেক্ষাকৃত কঠিন। পরিমান নিরুপনের একটা পদ্ধতি হল গ্যাস ক্ষেত্রের চাপ মেপে নিয়ে নির্দিস্ট পরিমান গ্যাস বের করে নিয়ে আবার চাপ মাপা। যদি দেখা যায় চাপের পার্থক্য সামান্য তাহলে গ্যাসের পরিমান বেশী হবে আর যদি চাপের তারতম্য বেশী হয় তাহলে মজুদের পরিমান কম হবে।
প্রক্রিয়াকরন
উত্তোলনের পর গ্যাস পাইপের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হয় রিফাইনারীতে বা শোধনাগারে পরিশোধনের জন্য। শোধনাগারে ব্যবহার্য গ্যাসের সাথে মিশে থাকা অনাকাংখিত গ্যাস যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, জলীয় বাস্প ইত্যাদি পৃথক করে নেওয়া হয়। তারপর পাতন পদ্ধতিতে নাইট্রোজেন গ্যাস এর থেকে পৃথক করা হয়। অনান্য ব্যাবহার্য মুল্যবান গ্যাস যেমন, হিলিয়াম, প্রোপেন বিউটেন, ইথেন আলাদা করা হয়। যা অবশিষ্ট থাকে তাই হল প্রাকৃতিক গ্যাস ।
এর পুরোটাই হল মিথেন সুতরাং আমরা জ্বালানী হিসেবে যে গ্যাস ব্যাবহার করে থাকি তা হল মিথেন গ্যাস। মিথেন স্বাধীন, বর্নহীন এবং গন্ধহীন গ্যাস এবং দাহ্য। মিথেনকে নিরাপদ করার জন্য তার সাথে সামান্য পরিমান গন্ধকের যৌগ পদার্থ মিশ্যে দেওয়া হয়ে থাকে যাতে। গন্ধকের ঝাঁঝালো গন্ধের কারনে গ্যাস নির্গমন প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা সম্ভব হয় এবং বিস্ফোরন ঘটা এড়ানো যায়। গ্যাস অনান্য জীবাশ্ম জ্বালানী যেমন কয়লা বা তেল থেকে নিরাপদ,পরিস্কার এবং পরিবেশ বান্ধব।
পরিবহনের সুবিধার জন্য তাপমাত্রা কমিয়ে গ্যাসকে তরলীভুত করা হয়। বিউটেন এবং প্রোপেন তরলীভুত পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এল পি,জি(liquefied Petrolium Gas) সিলিন্ডারে করে রান্না বা যানবাহনে ব্যাবহার করা হয়। বিউটেন এবং প্রোপেন থেকে প্লাস্টিক, কৃত্রিম তন্তু, বিভিন্ন ধরনের দ্রাবক, ও অনান্য পদার্থ তৈরী করা হয়ে থাকে।
আর কতদিন চলবে গ্যাস?
ধারনা করা হয় ভবিষ্যতে হয়ত আরো অতিরিক্ত ৪৫ শতাংশ গ্যাস খুজে পাওয়া যাবে আর এখনকার হারে যদি তা ব্যবহার করা হতে থাকে তাহলে আরো ৬০ বছর হয়ত গ্যাস আমাদের শক্তি যুগিয়ে যাবে। জ্বালানীর ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে , জীবাশ্ম জ্বালানী ফুরিয়ে যাবে, নিউক্লিয়ার বা পারমানবিক জ্বালানী এবং নবায়ন যোগ্য শক্তির উৎস যেমন সুর্যরশ্মি, বা বায়ুশক্তি আগামীদিনের শক্তির চাহিদা মেটাতে পারবে কি? সময়ই তা বলে দেবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।