আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে চিকিৎসার নামে প্রতারণা (১)

মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে বসতে ভা্ল লাগে....। নির্ধারিত টেস্ট ফি মানে না রাজধানীর কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঢাকা কেন্দ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ নাগরিকরা। অতিরিক্ত রোগীর চাপে রাজধানীর ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলো একেকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক নির্ধারিত টেষ্ট ফি বা ‘রেট কার্ড’ মানে না রাজধানীর কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের রয়েছে নিজস্ব রেট চার্ট। অনেক ক্ষেত্রে টেষ্টের টাকা পরিশোধ করেই সর্বস্বান্ত হয়ে আর পরবর্তী চিকিৎসা করাতে পারেন না মধ্যবিত্ত শ্রেণীর রোগীরা। আবার বেশি টাকা দিয়ে টেস্ট করলেও সবসময় সঠিক রোগ নির্নয় হচ্ছে না। সেন্টারগুলোর পরীক্ষকদের যোগ্যতা এবং দক্ষতা সম্পর্কে প্রশ্ন রয়েছে অনেকের। এ বিষয়ে উপযুক্ত আইন থাকলেও আমলে নেয় না কোনো প্রতিষ্ঠান।

ফলে সুচিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে আশংকাজনক হারে। গত এক সপ্তাহে রাজধানীর কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের টেষ্ট ফি অনুসন্ধানে এ চিত্র পাওয়া গেছে। রাজধানীর কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারই স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক নির্ধারিত রেট কার্ড বা মূল্য তালিকা মেনে চলেন না। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এসব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলো রোগীদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো ফি আদায় করছে। যার নিরীহ বলি হচ্ছেন রাজধানীর এক কোটি ২০ লাখ জনগণসহ সারাদেশের কোটি কোটি মানুষকে।

এসব প্রতিষ্ঠানে একেকটি সেবার ফি একেক স্থানে একেক রকম। সঠিক ফি সর্ম্পকে না জানায় নীরবেই পকেট কেটে যাচ্ছে উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিন্মবিত্তের মানুষদেরও। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীর পপুলার, ল্যাবএইড, কমফোর্ট প্রভৃতি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে একই টেষ্ট বাবদ ভিন্ন ভিন্ন অংকে ফি আদায় করা হচ্ছে। দেখা গেছে, রাজধানীর পিজিতে ইকোকার্ডিওগ্রাম (সাদাকালো) করতে লাগে ৬০০ টাকা। একই পরীক্ষা করাতে ইবনে সিনা ১৫০০, ল্যাবএইডে ১৬৫০ এবং পপুলারে ১৫৫০ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।

আলট্রাসনোগ্রাম (ফুল অ্যাবডোমেন) করতে মেডিনোভা নিচ্ছে ১৩৫০ টাকা, ল্যাবএইড ১৪০০ এবং পপুলার ১৩০০ টাকা। পিজিতে এই টেস্ট করা হয় ৩৫০ টাকায়। ব্রেনের সিটিস্ক্যান করতে ল্যাবএইড নেয় ৪০০০, মেডিনোভা ৫০০০ এবং পপুলার ৫৫০০ টাকা। উক্ত তিনটি পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত ফি যথাক্রমে ইকোকার্ডিওগ্রাম (সাদাকালো) ২৫০ টাকা, আলট্রাসনোগ্রাম (ফুল অ্যাবডোমেন) ৫০০ টাকা এবং ব্রেনের সিটিস্ক্যান ১৮০০ টাকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, সারা দেশে বৈধ লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথলোজিক্যাল ল্যাবরেটরির সংখ্যা ৪ হাজার ৫৯৮টি।

এর বিপরীতে সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৬০৫টি। সারা দেশে অনুমোদিত বেসরকারি রোগ নির্ণয়কেন্দ্রের সংখ্যা পাঁচ হাজার ১২২টি। যার মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীতে রয়েছে ৫৯২টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের সেবা মূল্যের বিষয়টি ‘অন্ধকারে অর্থ ঢালা’র মতো করেই চিকিৎসা ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে জনগণকে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সকল মেশিনের টেষ্ট ফি একই রকম হতে পারে না।

মেশিন ভেদে ফি ভিন্ন হওয়া উচিত। কিন্তু বিষয়টি কোনো প্রতিষ্ঠানেই মানা হয় না। এ ধরনের মেশিনের মেইটেনেন্স নিয়ে কাজ করেন ফরিদ উদ্দিন। তিনি বললেন- বড় বড় ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে যখন ভালো মেশিন নিয়ে আসা হয় তখনই কর্তপক্ষ টেস্ট ফি বাড়িয়ে দেন। প্রত্যেক ডায়াগনস্টিক কর্তৃপক্ষ রোগিদের বলেন তারাই সবচেয়ে আধুনিক এবং ভালো মেশিন ব্যবহার করছেন।

এজন্য তাদের ফি একটু বেশি। কিন্তু সাধারন মানুষ সেটা জানে না এরকম ভালো মেশিন হলিক্রস হাসপাতালসহ সরকারী হাসপাতালগুলোতেও রয়েছে। ‘দি মেডিক্যাল প্রাকটিস এ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক এ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ রেগুলেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৮২’ এর ভিত্তিতে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও এ অধ্যাদেশ বর্তমানে অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত সাতবার আইনটি যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেয়া হলেও চিকিৎসা সেবা আইন প্রণয়ন করা যায়নি। ফলে স্বাধীনভাবেই নিয়ম ভাঙ্গার প্রতিযোগীতায় অবতীর্ণ হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান।

ফলশ্রুতিতে স্বাস্থ্য সেবার নামে নিঃস্ব হচ্ছে রোগাক্রান্ত মানুষটিসহ তার পরিজনরাও। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক বলেন, বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলি টেস্টেও জন্য বেশি নিচ্ছে বিষয়টি সর্ম্পকে আমরা জেনেছি। সাধারন মানুষ এভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে, এটা দুঃখজনক। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন উঠছে। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি।

যার যা খুশি করবে, ফি আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা থাকবে না, এটা কখনোই কাম্য হতে পারে না। সরকার পুরো স্বাস্থ্যসেবা খাতকে একটা সুশৃঙ্খল অবস্থায় নিয়ে যেতে চায় এবং তা নিয়ে কাজ হচ্ছে বলেও মন্ত্রী জানান। #  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.