শুরু করি একটা ছোট ঘটনা দিয়ে। দয়াল রাসূল (সাঃ) বসে আছেন মদিনাতে কয়েকজন সাহাবা (রাঃ) -দেরকে নিয়ে। একটি শেষকৃত্যের মিছিল যাচ্ছে লাশ নিয়ে । তাদের সামনে দিয়ে। তা দেখে, দয়াল রাসূল (সাঃ) দয়া করে উঠে দাড়িয়ে গেলেন।
সাহাবারা অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলেন। একজন বললেন, ইয়া রাসুল আল্লাহ (সাঃ) – ইহা একজন ইহুদি ব্যাক্তির লাশ।
রাসুল (সাঃ) জবাব দিলেন ”সে কি একজন মানুষ ছিল না ?” (মুসলীম শরীফ)
সবার উপরে মানুষ সত্য। মানবতাই মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্ম। দয়াল রাসুল (সাঃ) দয়া করে সাহাবা (রাঃ) দেরকে এই কথাটিই বুঝিয়ে দিলেন।
বুঝিয়ে দিলেন একজন মানুষ হিসাবে আরেকজন মানুষের প্রতি তাদের আচরন কেমন হবে। তিনি শুধু সাহাবাদেরকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছেন তা কিন্তু নয়। এ দিক র্নিদেশনা আমাদের সবার জন্যই।
যখন স্কুলে পড়তাম, প্রথম সাময়ীক পরীক্ষায় একবার প্রশ্ন আসল - অক্সিজেনের ধর্ম কি? প্রশ্নপত্রের অপর পৃষ্টা উল্টাতেই দেখি , এসিড ও ক্ষারের ধর্ম গুলো কি কি? উহাদের মধ্যে র্পাথক্য নির্ণয় কর। চিন্তায় পরে গেলাম ।
আসলাম সায়ান্স পরীক্ষা দিতে, এখন দেখি সবই ধর্ম নিয়া প্রশ্ন। কি একটা অবস্থা ! আসলে ধর্ম কি? এই ধর্মের সাথে সেই ধর্মের র্পাথক্যই বা কি। অনেক বছর পর বুঝলাম অর্থগত কোন র্পাথক্য আসলে নেই। ধর্ম বলতে চরিত্রকেই বুঝানো হয়েছে। যার যাহা চরিত্র।
তাহাই তার ধর্ম।
ইসলাম বলতে আমরা বেশীর ভাগ সময়ই শান্তিই বুঝে থাকি। ( যদিও আরও অন্যান্য অর্থ রয়েছে)। অর্থাৎ , যে জন বা জনগোষ্ঠী বা দল - এর মধ্যে এমন কতগুলো চরিত্রাবলী রয়েছে যা ধারন করলে শান্তি পাওয়া যায় বা শান্তিতে বসবাস করা যায় তাই ইসলামের ধর্ম। যেমন তায়েফবাসীদের হাতে চরমভাবে নির্যাতিত হওয়ার পরেও রাসুল (সাঃ) বলেছেন - হে আল্লাহ তুমি তাদের ধংস্স করে দিও না, তাদের হেদায়েত কর”।
ওহুদের যুদ্ধে রক্তাত্ত হয়েও বলেছেন - ও আল্লাহ তুমি তাদের সঠিক পথ প্রদর্শন কর। তিনি আরও বলেছেন - প্রকৃত ঈমানদার সেই, যার হাত ও মুখ হতে অন্য মুসলমান নিরাপদ। তিনি বলেছেন - আল্লার কসম, সে ঈমানদার নয়, আল্লার কসম, সে ঈমানদার নয়, আল্লার কসম, সে ঈমানদার নয়, যার হতে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়। প্রতিবেশী মানে কিন্তু বৃহৎ অর্থে দেশের সব মানুষও হতে পারে। এরকম অসংখ্য বাণী মোবারক রয়েছে।
আর তিনি যে শুধু বলেছেন তা কিন্তু নয়। তিনি তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার বাস্তবায়ন করেছেন। এটাই ছিল তার চরিত্র, এটাই হল তার ধর্ম।
আজ আমাদের দেশে ধর্মের নামে যে বিশৃংখলা চলছে, পুরাই প্যাঁচগোচ অবস্থা। ইসলাম নামধারীরা ইসলামের কান্ডারী সেজে বসেছে।
আর সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করে চলছে। আর তাদের দোষ দিয়েও লাভ নেই। আমরা বিএ, এমএ, পিইচডি করতে পারি কিন্তু সঠিক ধর্ম কি, ইসলামের ইতিহাসে কি আছে, কোরান হাদিসে কি আছে একটু পড়াশোনা করে তা নিজের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে যাচাই করে দেখতে পারি না। দেখার সময় নাই। তারা যা বুঝাইতাছে তাহাই আমাদের ধর্ম।
তারা বলতেছে যে চাঁদে সাইদি । সবাই বিদুৎ কেন্দ্র জ্বালাও। এটাই ধর্ম। জান্নাতের রাস্তা পরিস্কার। রাসুল (সাঃ) কি মানুষকে শুধু জান্নাতে নেয়ার জন্যই ইসলাম ধর্ম নিয়ে আসছেন, নাকি চরিত্রবান বানানোর জন্য ? তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, কিভাবে চরিত্রবান হয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি লাভ করা যায়।
এজন্যই কোরানে বলা হয়েছে - হে আমাদের প্রভু, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। (আল বাকারা, আয়াত ২০১)। কল্পনা করুন, এ মুর্হুতে যদি তিনি আমাদের মাঝে জাহেরিভাবে উপস্থিত থাকতেন, তাহলে কি এসব কর্মকান্ডের অনুমতি দিতেন?
আজ অপর একদল বলছে, ব্লগাররা সব নাস্তিক। আমি যে এখানে লিখছি, আমি কি নাস্তিক ??
প্রথম আলোর আজকের খবর:
--আপনি যেসব ব্লগারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন, তারা আসলে কী লিখেছে, আপনি কি একটা বলতে পারবেন? আপনি নিজে তা পড়েছেন? বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, পড়ি নাই। না পড়লেও সমস্যা নাই, আমার যারা কর্মী আছে, কর্মীদের আমরা দায়িত্ব দিছি।
তারা পড়েছে। তারা আমাদের শুনাইছে। তারা তো সেইগুলা আমাদের সামনে নিয়া আসছে। ’
View this link
তিনি নিজে পড়েন নাই !!!
উনারা আলোচনায় বসবেন না। নাস্তিকদের সাথে আলোচনা করবেন না।
আরে ভাই, দয়াল রাসুল (সাঃ) পর্যন্ত কাফেরদের সাথে দয়া করে সন্ধি স্থাপন করেছেন শান্তির জন্য। ইতিহাসে যা হুদায়বিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত। নিজের পবিত্র নাম মোবারকের আগ থেকে রাসুল (সাঃ) শব্দটি বাদ দিয়েছেন পর্যন্ত। কি জন্য করেছেন ? উনার ব্যাক্তিগত কোন স্বার্থ ছিল ? না, ছিল না। করেছেন শান্তির জন্য।
কারন উনার চরিত্র ছিল শান্তির। সেটাই ছিল উনার ধর্ম। আর আপনাদের স্বার্থ যে কোন জায়গায়.....
শেষ করব আরেকটি ঘটনা দিয়ে। মদিনায় একবার এক বেদুইন মসজিদে ঢুকে প্রসাব করা শুরু করে। আশেপাশে উপস্থিত যারা ছিল তারা ছুটে গেল।
তাকে থামাতে। রাসুল (সাঃ) নির্দেশ দিলেন - তাকে শেষ করতে দাও। তারপর তিনি, এক কলসি পানির জন্য বললেন এবং তা তিনি নোংরা প্রসাবের উপর ঢেলে দিলেন। (ইবন হাজর) । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।