সত্যের সন্ধানে নির্ভীক আমার বাবাকে নিয়ে আমি গর্ব করি, আমি গর্ব করি মিলিটারী চাচা, এহসাক চাচা কিংবা আব্দুল চাচাকে নিয়েও। আমার বাবা তাদের মত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তবে তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের(উল্লেখিত তিন’চাচার)প্রানের বন্ধু, তাদের সহকারী।
৭১রে যুদ্ধ শুরু হলে বাবার বন্ধু এহসাক(পরবর্তীতে স্কুল মাষ্টার),আব্দুল চাচা(কাপড়ের দোকানদার), আর মিলিটারী (তার আসল নাম আমি আজও জানি না)তিনজন বাড়ী থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষন নিতে। তাদের সাথে বাবা যেতে চাইলেও উনারা বাবাকে সাথে নেন নি।
কারন আমার বড়ভাইয়ের বয়স মাত্র ২’বছর। ছোট সন্তান আর পরিবারের একমাত্র অবলম্বনকে তারা ছিনিয়ে নিতে চাননি।
তবে বাবাকে তারা ঠিকই ব্যবহার করেছেন। হঠাত এহসাক চাচার আগমন হয় আমাদের বাড়ীতে, শত বিপদের মাঝেও বাবা তাকে আশ্রয় দেন যদিও রাজাকাররা জানতে পারলে ফলাফল কি হবে তা বাবা ভাল মতই জানতেন।
চাচার কথামত বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের সরঞ্জাম, বন্দুক, মর্টার ইত্যাদি থেকে শুরু করে যাবতীয় দ্রব্যাদি যমুনা থেকে সখীপুর, অন্য চাচাদের কাছে পারাপাড় করতেন।
বলে রাখা দরকার চাচারা “কাদেরীয়া বাহিনীর” যোদ্ধা ছিলেন।
নৌকা চালক ছিলেন বলে রাজাকাররা তাকে কোনদিন সন্দেহ করত না। তাছাড়া আমার ফুফুর বাড়ী ময়মনশিংহ হওয়ার ফলে বাবার গতিবিধি কেউ লক্ষ করত না। বাবা এভাবেই যুদ্ধ না করেও আমার কাছে আরব্য উপন্যাসের নায়কের থেকে বেশি প্রিয়।
২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বাড়ী যাই।
তখন আমাদের ঈদ মাঠ নিয়ে পাশের গ্রামের সাথে তুমুল গণ্ডগোল হয়। মারামারিতে অনেকেই আহত হন। তবে ভাগ্য ভাল কেউ মারা যায়নি। সেদিন দেখলাম আমার বৃদ্ধ বাবার হাতে লাঠি। বাবা ঈদ মাঠ রক্ষার্থে ওখানে যাবেন।
আমি বাবাকে বললাম, বাবা, সংসারের ভার বইতে বইতে তুমি ক্লান্ত, আমি যাব, এক পরিবার থেকে একজন সহীদ হলেই যথেষ্ট।
বাবা বললেন, আমার কবরে কি তুই যাবি?? আমাকেই তার(আল্লাহর)কাছে জবাব দিতে হবে। শুধু সহীদ হলেই সব হল না, আর লাঠি ধরলেই যোদ্ধা হয় না, তুই কলম ধর। তোর কলম আমার লাঠির থেকে কয়েক হাজারগুন শক্তিমান। আমি সেদিন কেদে ফেলেছিলাম আমার অশিক্ষিত বাবার মুখে এমন কথা শুনে।
কয়েকদিন আগে বাবাকে দেখলাম, বাজারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে মানব বন্ধনে ব্যানার হাতে তাতে লেখা\;-
রাজাকারের ফাসি চাই
আমি ভাবতে বাধ্য হই যে মানুষ দেশের জন্য মৃত্যুর ঝুকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করে, আবার সেই মানুষই ঈদমাঠের জন্য লাঠি হাতে নেয়। ধর্মীয় অনুভুতিতে কারো সাথে কোন আপস নয়। । কখনও আপস করা হবে কিন্তু সেই সাথে সত্য প্রচার থেকেও দূরে থাকা যাবে না। ধর্মের নামে ব্যবসাকে সমর্থন করা যাবে না।
তাই বাবার দেয়া আদর্শকে বুকে ধরে, আমিও বলে উঠি
যুদ্ধাপরাধীদের ফাসি চাই
শেষকথা, ধর্মের জন্য, সত্যের জন্য, ন্যায় বিচারের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া আবশ্যক। যতদিন দেশপ্রেমিক, প্রকৃত ইসলামপ্রেমী মানুষ থাকবে যুদ্ধাপরাধের বিচার হবেই হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।