আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জলের মত ঘুরে ঘুরে

vagabond only ১। ঘুম হয় না , প্রায় রাতেই খুব নিঃসঙ্গ বোধ করে জব্বার আলি। কিন্তু কিছু করার থাকে না তখন তার, ফলে বারান্দা থেকে পাশের বাড়ির তিন তলার ফ্লাট এর জানালায় উকি দেয়ার চেস্টা করে সে; এখনো আলো জ্বলে কেন ওই ফ্লাটে? তারপর আবার ফিরে আসে নিজের ঘরে, কিন্তু তখনও কিছুই করার থাকে না তার। ডেক্সটপ অন করে অনলাইনে খুঁজতে থাকে না ঘুমানো তার মত আর কাউকে । মন মত পাওয়াও যায় হয়তো কেউ একজনকে ।

নাম রুহি হোসেন। বয়স ৩৮। ম্যারিড। লুকিং ফর ফ্রেন্ড। উৎসাহি হয়ে নক করে জব্বার আলি, কিন্তু কিছুক্ষন পরেই হয়ত আবারো হতাশ মনে হয় তাকে।

কেননা, রুহি হসেন তাকে জানায় যে সে তার সঙ্গি হতে পারে যদি নিজের নাম বদল করে সে; বলে, 'আই ডোন্ট চ্যাট উইথ এনি জব্বার আলি, হাউ খ্যাৎ!' রাত বাড়তে থাকে, নাম বদল বিষয়ে আরও আরও কথা হতে থাকে তাদের। এক পর্যায়ে রুহি জানায় যে, এইসব খ্যাৎ নাম কিছুতেই সহ্য করে না সে, সেটা এমন কি নিজের নাম হলেও না। বাপ মা তার নাম তো রহিমা রেখেছিল, শেষের অক্ষর বাদ দিয়ে সেটাকে পোষ্টমর্ডান করে সে। বাপ মা তো ব্যাকডেটেডই হয়ই, তারা তো আর বোঝে না কোন কোন নাম বেশি এট্রাকটিভ। রাত বাড়ে আরও, জব্বার তার ছোটবেলার গল্প বলে রুহিকে, সে জানায় যে তার আকিকাতে আঠরোটি খাসি জবাই হয় এই নামে।

তারপর রুহিকেও যেন কিছুটা আস্বস্ত করে সে,বলে যে নাম বদলের বিষয়টা নিয়ে ভাবা যেতে পারে, কেননা ততক্ষনে রুহি কে ভাল লাগতে শুরু করে তার। এরপর থেকে রাতের নিঃসঙ্গতা আর আক্রান্ত করে না তাকে। তো, কোন একদিন দেখা করতে যায় তারা পার্কে অথবা শপিং মলে। ফুচকা খেতে খেতে আলাপ করে তারা। মাঝে মাঝে খুব লোনলি লাগে তার, রুহি বলে।

ফলে জব্বার জানতে চায় কি কারনে তার এমন হয়? কোন উত্তর দেয় না রুহি, একমনে তাকিয়ে থাকে দুই আঙ্গুলে ধরে থাকা ফুচকার দিকে। কিন্তু জব্বার মনে হয় বুঝতে পারে কেন এমন হয়। রিকশায় নিয়ে ঘুরতে বের হয় তারা। ফলে বৃষ্টি আসে, ভিজতে ভিজতে নাকি বৃষ্টি থেকে বাঁচতে জব্বারের ঘরে ঢুকে তারা। ‘কিন্তু তোমার তো নাম বদল করতে হবে’, হাসতে হাসতে বলে রুহি।

রুহি হোসেনের লোনলি আর লাগে না। ২। নাম বদল করা বিষয়ক এই গল্পটা আমি নিয়া গেলাম এক সাহিত্য পত্রিকার নির্বাহি সম্পাদক অথবা কোনো দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকের কাছে। তিনি হয়তো লেট এইটিজ অথবা আর্লি নাইনটিজের কবি হইয়া থাকবেন। একসময় লিটলম্যাগ করতেন, সেইটা নিয়া তো খুব গর্ব তার! ফলে এখন তিনি উঁচা জুতা পরেন, বেনসন খান।

আমার জন্য চায়ের কথা বললেন কাউকে। গল্পটা পুরাটাইতো মনযোগ নিয়া পরলেন তিনি, তার মাঝে একবার গরম লেবু চাতে চুমুক দিয়া না কি কারনে জানি চেহারা কুচকাইয়া রাখলেন কিছুক্ষন। তারপর কিছুটা প্রশংসার স্বরে বললেন, আপনের লেখার হাত তো ভাল। আরও লেখেন না কেন? এখন তো আপনেদেরই সময়, বুইড়ারা আর কয়দিন; কি বলেন? এই প্রশ্ন কইরা উনি আমার দিকে তাকাইলেন। আমি লেবু চা তে চুমুক দিতেই উনি বলতে থাকেন, কত কিছু ঘইটা গেল আমাদের আশেপাশে, আপনেরা যে কি, খালি আছেন এইসব প্রেম ভালবাসা গল্প নিয়া।

এর বাইরে কি আর কিছু নাই দুনিয়ায়? মার্কেজ পরছেন? সার্ত্র? কাফকা নাইলে কামু পইরা দেখেন। তারপর হয়ত উনি আরো চায়ের কথা বলার জন্য কাউকে ডাকাডাকি করতে থাকবেন। ৩। ঘুম হয় না , প্রায় রাতেই খুব নিঃসঙ্গ বোধ করে নাকি সাহিত্য সম্পাদকরাও? যেহেতু কারুরই কিছু করার থাকে না রাতে,ফলে টেলিভিশনের চ্যানেল ঘুরাতে থাকে সে; যথেষ্ট উদ্দিপক কিছু না পেয়ে সেখানে তারপর আবার ফিরে আসে নিজের ঘরে, অথচ কিছুই করার থাকে না তার। ডেক্সটপ অন করে সে, সার্চ অপশনে টাইপ করে- রুহি হোসেন।

পাওয়াও যায় হয়তো একজন রুহি হোসেনকে, কিন্তু কিছুক্ষন পরেই হয়তো আবারো হতাশ মনে হয় তাকে। কেননা, রুহি হসেন তাকে জব্বার আলির কথা বলে ,বলে যে, ‘হি ইজ সো সুইট। ‘ রাত বাড়তে থাকে, আরও, জব্বার এর ছোটবেলার গল্প তাকে শোনায় রুহি,। বলে,জব্বার আলির আকিকাতে আঠরোটি খাসি জবাই হয়। তারপর তার আকিকার বিযয়ে জানতে চায় সে।

রুহিকে আস্বস্ত করে সে বলে, আকিকার বিষয়টা নিয়ে কথা বলা যেতে পারে, কেননা ততক্ষনে রুহি কে ভাল লাগতে শুরু করে তার। সেরাতে রাতের নিঃসঙ্গতা আর আক্রান্ত করে না তাকে। ৪। একদিন সকালে না জানি বিকালে সেই সাহিত্য পত্রিকার নির্বাহি সম্পাদক অথবা দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকের সাথে দেখা হইয়া গেল একটা বড়লোকদের খাওনের দোকানে। নতুন দোকান, কিন্তু একটা এনশিয়েন্ট ফীল আছে মনে হইলো।

ফলে, আমি ঢোকার সময় আমার দুই পায়ের ফাঁক দিয়া এক চামচিকা দিলো দৌড়। তো, দেখি তার সাথে বইসা রুহি হোসেন, পাশে। আমাকে দেইখা হাসি উপহার দিলো তারা। মৃদুমন্দ বাতাসের সাথে তার শরির থেকে ভাসে বহুল বিজ্ঞাপিত কোন পারফিউমের সুগন্ধ, যেখানে মডেল মেয়েটিকে দুই চোখ বুজে ছেলেটির বুকে ঝিমাইতে দেখা যায়। সম্পাদক ভদ্রতা কইরা আমাকে বসতে অনুরোধ করলেন তাদের সাথে।

বললেন, আপনের গল্পটা নিয়া তো বসা হইলো না আর। আসেন না আর একদিন, পত্রিকায় তো চাইলে নেক্সট উইকেই ছাপানো যাইতে পারে। তবে একটা কথা কি, ওই জব্বার আলি কে দিয়া কিছু হবে না। তারে আপনে বাদ দেন। এই কথা বইলা উনি গেলেন আমার জন্য লেবু চায়ের কথা বলতে, নাকি তার নিজের জন্যই? সেই ফাঁকে রুহি আমার দিকে ঘুইরা তার দাঁত দিয়া নিজের ঠোটে এমন কায়দা কইরা কামড়াইতে থাকল যে আমি তো আমি, আমার কলিজা শুদ্ধা শিরশির কইরা উঠে।

আমি বললাম তারে, তুমি তো বদ আছো দেখতাছি। সম্পাদক সাহেব আসলে আমি তাদের প্লেটে থেকেই ফুচকা নিয়া খাইতে লাগলাম। ৫। ফলে নিঃসঙ্গতা কাটে না জব্বার আলির । আবার রাত হয়, বারান্দা থেকে পাশের বাড়ির তিন তলার ফ্লাট এর জানালায় উঁকি দেয়ার চেস্টা করে সে; ভাবে, এখনো আলো জ্বলে কেন ওই ফ্লাটে? তারপর আবার ফিরে আসে নিজের ঘরে, কিন্তু তখনও কিছুই করার থাকে না তার।

ডেক্সটপ অন করে বসে থাকে সে, কিন্তু রুহিকে খুঁজে পাওয়া যায় না অনলাইনে। হয়তো পাওয়া গেলে এক এক সময় খোঁজ খবর জানতে চাইতে পারে জব্বার। এরকম কোন একদিন সে জানতে চায়, ‘কেমন আছ, রুহি?’ রুহি বলে, ‘স্যাড আছি। মিস ইউ। ‘ তারপর কি আর কোনদিন কোথাও তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না? কোথাও খুঁজে না পেয়ে হয়তো একদিন জব্বার আলি গেল যে কোন পত্রিকা অফিসে, সেখানে কারও কাছে গিয়ে সে জানতে চাইলো, রুহির কোন খবর তাদের জানা আছে কি না।

তো, জব্বার আলি কে বসতে বলে সেখানে কেউ একজন কাউকে চায়ের কথা বলে থাকবেন। গরম লেবু চাতে চুমুক দিয়ে না কি রুহির কথা শুনে সে তার চেহারা কুচকাইয়া রাখবেন কিছুক্ষন, তারপর হয়ত বলবেন, নিখোঁজ নাকি? তার খবর তো এখানে থাকবে না। সাহিত্য নিয়ে কাজ হয় এখানে। আপনি আজিমপুর চিনেন? গোরস্তান? ওখানে গিয়ে খোঁজ করতে পারেন। ফলে, জব্বার আলি আজিমপুর যায়, খোঁজ করে থাকে রুহি হোসেনের, যার সঙ্গ পেয়ে আজ সে নিঃসঙ্গতায় ভোগে।

৭। তো, আমি করলাম কি,গল্প লিখতে লিখতে আমার কি জানি মনে হইলো, যে ঘুমানোর সময় রুহি হোসেনের রুমে এসি গেলো বিগড়াইয়া। ঘরের তাপমাত্রা শুন্য ডিগ্রির নিচে নাইমা যাওয়ার ফলে রুহি মারা যায় শীতে। আর তার কবর হইলো আজিমপুরে। আমার সাথে সেইখানে দেখা হইল জব্বার আলির।

আমারে দেইখা জব্বারের বাচ্চা জব্বার বলে কি, উচিত শিক্ষা হইছে। আমাকে নিয়া আর একটা গল্প লিখবেন এখন আপনে আর ওই সম্পাদকরে বলবেন না সেইটা। শালা, ঝামেলা লাগাইতে জানে ভালই। রাতে বাসায় ফিরা দেখি, আমার ঘরে আমার টেবিলে সেই সম্পাদক বইসা আছেন, তার সামনে আমার গল্পের পান্ডুলিপি। আমাকে দেখে ঘুইরা বসলেন তিনি, তারপর বললেন যে, আমাকে নিয়া একটা নতুন গল্প লিখতে পারেন আপনি এখন, সেই জন্যে আগের গল্পের একটা চমৎকার এন্ডিং কইরা দিলাম।

তারপরের দিন সকালে ঘুম থেকে উইঠা জব্বার দেখবে যে সে একটা পোকা হইয়া গেছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।