ধরুন আপনি নিজের বাড়ি রেখে অন্যত্র বাসা বেঁধেছেন। তাই বলে তো কেউ আপনার বাড়িতে এসে লুটপাট করতে পারে না। রবীন্দ্রনাথ তার গান-কবিতা নিয়ে নিজেই বলে গেছেন- 'আমার গান-কবিতা একান্তই আমার সম্পদ। কারও যদি ভালো না লাগে তাহলে তার এগুলো গাওয়ার দরকার নেই। ১৯৯১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণের ৫০ বছর পূর্ণ হয়।
সে হিসাবে ওই বছরেই তার গানের কপিরাইট আইন উঠে যায়। কিন্তু ভারত সরকার আরও ১০ বছর এর মেয়াদ বাড়ায়। ফলে ২০০১ সালে রবীন্দ্রসংগীতের কপিরাইটের সমাপ্তি ঘটে। এরপর থেকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে রবীন্দ্রসংগত চর্চার আগ্রহ বৃদ্ধি পেতে থাকে। রবীন্দ্রনাথ সব বাঙালির আশ্রয়।
তার রেখে যাওয়া গানগুলো সম্বল করে আমরা সংগীত চর্চা করে আসছি।
রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলংকার জাতীয় সংগীত রচনা করেছেন। শ্রীলংকার আনন্দ সমরকুন নামের এক ছাত্র শান্তিনিকেতনে কবিগুরুর কাছে কলা ও সংগীত বিভাগে পড়তে গিয়েছিলেন। তার অনুরোধেই রবীন্দ্রনাথ একটি গান লিখে দেন শ্রীলংকার জন্য। এই গানের প্রথম লাইনে আছে 'শ্রীলংকা মাতা...' ।
সিংহলী ভাষায় অনুবাদের পর ১৯৫৩ সালে এটি শ্রীলংকার জাতীয় সংগীত হিসেবে অনুমোদন পায়। বাংলাদেশে ও ভারতের মতো শ্রীলংকায়ও রবীন্দ্রনাথের সুরেই গানটি গাওয়া হয়।
কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রসংগীত চর্চা করতে হয়। যে কেউ চাইলেই রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হতে পারবেন, এই ধারণা একেবারে ভুল। রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হতে প্রথমেই প্রয়োজন এর স্বরলিপি জানা,এরপর তা সাধনা করা।
সাধনা ছাড়া সংগীত শেখা যায় না। রবীন্দ্রনাথ শব্দ দিয়ে কবিতা রচনা করেছেন এবং সেই শব্দের আঙ্গিকে সন্তুষ্ট হতে না পেরে অবশেষে রঙে হাত দিয়েছেন। জীবনের শেষ ১৭টি বছর তিনি ছবি এঁকেছেন। 'দিব আর নিব মিলিবে মিলিবো'- এই বিশ্বাস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সবসময়ই ছিল। তার চিত্রকর্মেও এর প্রতিফলন রয়েছে।
তার ছবি নিয়ে প্রথমে ভাবতাম, এ ছবি গুলো এমন কী! অলকিডের ওয়াটার কালার দেখে রবীন্দ্রনাথের ওয়াটার কালার কোথায় বুঝতে পারলাম। মানুষের মন অচেতন পদার্থের মধ্যেও একটা অন্তরের পদার্থ দেখে। স্বভাবতই মানুষের মন সকল জিনিসকেই মনের জিনিস করে নিতে চায়। তাই আমরা যখন একটা ছবি দেখি তখন এই প্রশ্ন করি, এই ছবির ভাবটা কী। যারা শিল্পী তাদের লক্ষ্য থাকে এই যে, তাদের সৃষ্ট পদার্থ মনের দরবারে নিত্য আসন পাবে।
রবীন্দ্রনাথের ভ্রমন কাহিনী বের হয় তার ২০ বছর বয়সে। 'ইয়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র' তার সেই প্রথম যৌবনের লেখা। সেই ছোটবেলা থেকে বুড়ো বয়স পর্যন্ত, তার অন্তত গোটা নয় বই আছে ভ্রমনের ওপর। যেমন- পথের সঞ্চয়(১৯১২), জাপানের যাত্রী(১৯১৯), পারস্যে(১৯৩২)রাশিয়ার চিঠি(১৯৩১) ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথকে যারা বিশ্বপথিক মনে করেন, তারা ঠিকই মনে করেন।
আমাদের প্রায়ই মনে থাকে না, রবীন্দ্রনাথ 'দেশ' বলতে সংকীর্ণ অর্থে নিজের মাতৃভূমি বলে ভাবতে তৃপ্তি পেতেন না। তার 'দেশ' ধারণার মধ্যে এক ধরণের মহাজাগতিক উপলব্দির ব্যাপাত ছিল। তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত আত্মপরিচয়(১৯৪৩) গ্রন্থের রচনা গুলো তার উপলব্দির অন্য এক জগতের মুখোমুখি করে আমাদের।
'শেষের কবিতা' উপন্যাস প্রকাশিত হয় ১৯২৯ সালে। এই উপন্যাস বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঠকের কাছ থেকে প্রবল সাড়া এসেছিল।
কবি বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন, অবাক হয়ে দেখলাম রবীন্দ্রনাথের আধুনিক মূর্তি আমরা আধুনিক বলতে যা ভাবছিলাম, ঠিক তা নয়। শিলাইদহ থেকে ইন্দিরা দেবীকে কবি লিখেছেন- 'সবে দিন চারেক হলো এখানে এসেছি, কিন্তু মনে হয় যেন কতদিন আছি তার ঠিক নেই- মনে হচ্ছে আজিই যদি যাই তা হলে যেন অনেক বিষয়ে অনেক পরিবর্তন দেখতে পাবো....'। আর স্ত্রীকে লিখেছেন- শিলাইদহে এসে মনটা কেমন ব্যাকুল হয়। যাকে ছেড়ে যেতে হবে তাকেই বেশি সুন্দর দেখায় এই আমাদের মোহ। '
ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বীরভূম জেলার বোলপুর রেলওয়ে স্টেশনের পাশে তৈরি হচ্ছে 'গীতাঞ্জলি' রেলওয়ে জাদুঘর'।
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনাদর্শ, কবিতা, রচনা, কবির আঁকা চিত্রকর্ম,পান্ডুলিপিসহ বিভিন্ন সৃষ্টি সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে অবহিতের লক্ষ্যেই এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কবির শেষ যাত্রার 'চিরন্তনী' নামের যে ট্রেনের কামরাটি বর্তমানে বোলপুর স্টেশনের পাশে রাখা আছে সেটিকে ওই জাদুঘরের নিচতলায় রাখা হবে।
(চলবে....)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।