হৃদয়ের দু'পাট ঠেলে স্মৃতিরা ঝড় তোলে দুঃখক্রোধে। আমার ছেলের দুষ্টামি আমাকে মনে করিয়ে দেয় আমার ছোটবেলার স্মৃতি। আর অনুভব করতে পারি আমার মায়ের অনুভূতি। ''মা'' না হলে মায়ের অনুভূতি অনুভব করা যায়না। সন্তান যে মায়ের কাছে কি, এক মাত্র মা-ই জানেন।
আমি যখন ছোট ছিলাম, অনেক স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে লেখাপড়া করে দেশ-বিদেশ ঘুরতে যাব। শুধু নিজেকে নিয়েই স্বপ্ন। আর আমার মায়ের স্বপ্ন আমাদের ঘিরে। মা যখন বলত, ‘আমি চাইনা তোমরা বড় হও, আমি চাই তোমরা ছোট থাকো আর সারাক্ষণ আমাকে ঘিরে থাকো। ’- আমার তখন মনে হতো, ইসস মা কি স্বার্থপর! মা চায়না আমরা বড় হই।
মা চায় আমরা ছোট থাকি আর সে ইচ্ছেমতো শাসন করতে পারে।
কিন্তু সেদিন যখন আমার ছেলে আমায় বলল, ‘মা আমি বড় হয়ে একটা বাসা কিনবো আর সেখানে আমি, তাহসিন আর তানিম থাকবো (তাহসিন আর তানিম আমার ননদের ছেলে), কি মজা হবে তাইনা মা!?’ এই কথা শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। তখন মনে মনে বললাম আমিও চাইনা আমার ছেলে বড় হোক। আমি চাই আমার ছেলে সব সময় ছোট থাকুক, আমার বুকে থাকুক। তখন বুঝতে পারলাম মায়ের ভালোবাসার অনুভূতি কি!
আমার ছেলে দুষ্টামি করে।
খুব পাকা পাকা কথা বলে। মাঝে মাঝে ওর কথা শুনে অবাক হই। কখনো হাসতে হাসতে মরি। অনেক ভাল লাগে ওর দুষ্টামি কথাবার্তা। ইচ্ছা হয় সবার সাথে শেয়ার করি ওর বলা মজার কথাগুলো।
কয়েক জনের সাথে ফোন করে বলি আর হাসি।
আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমরাও এমন মজার বা দুষ্টামি কিছু বলতাম। মা ধমক দিতো কিন্তু পরে আবার সবাইকে বলে খুব মজা পেতো। তখন মনে মনে অনেক রাগ হতো এই ভেবে যে মা কি আমায় ভালোবাসে না? আমাকে নিয়ে মা মজা করছে কেন? কিন্তু এখন বুঝি সেই বলার মধ্যে ছিল কত ভালোবাসা।
মায়ের কাছে কিছু চাইতে হলে অপেক্ষায় থাকতাম কখন মেহমান আসবে।
কারণ মেহমান আসলে মা অনেক খুশি থাকেন। তখন যা চাই মা দিয়ে দিতেন বা লজ্জায় না বলতেন না। আমরাও সুযোগ হাত ছাড়া করিনা। মা বুঝতে পারতো আমাদের চালাকি কিন্তু কিছু বলত না; না বুঝার ভান ধরে থাকতো। সেদিন সেটা বুঝলাম যখন আমার ছেলে এই রকম একটা সুযোগে আদায় করে নিল আমার কাছ থেকে।
ওর পছন্দের অনেক কিছু যা আমি সহজে দেইনা ওকে। আমি নেটে বসে কাজ করছি ও এসে বসলো আমার পাশে।
- মা কি করছো?
- কাজ করি।
- কি কাজ?
- চুপ করো বাবা কাজ করতে দাও।
- ওকে মা কাজ করো।
- মা! ওমা!?
- কি?
- আমি বাহিরে যাই?
- ওকে...
- মা মা...
- কি?
- আইসক্রিম খাই?
- ওকে! খাও।
- মা! মা! ওমা!?
- কি?
- বাবাকে বলি ফুপ্পির বাসায় নিয়ে যেতে?
- ওকে
- ওমা! মা! কাল স্কুলে যাবনা।
- ওকে!
নেটের কাজ শেষ করে নিচে এসে আমি অবাক আমার ছেলের কাণ্ড দেখে। সে আইসক্রিম খাচ্ছে আর জুতা পড়ছে। আমাকে দেখে দৌড়ে এসে আদর দিয়ে বলে, ‘ওহ! মা, তুমি কত্ত ভাল!!’ আমি বলি, ‘কিরে বাবা, হঠাৎ মা এতো ভাল হয়ে গেলো কি করে?’ ‘মা তুমি বলেছ ফুপ্পির বাসায় যেতে পারব।
আইসক্রিম খেতে পারব। ’ ‘আরে কখন বল্লাম?’ ‘নেটে বসে কাজ করছিলে তখন। ’ এরপর থেকে ছেলে আমার এই সুযোগটা নেয় মাঝে মাঝে। আমি বুঝতে পারি কিন্তু বলিনা। কারণ ওর এই সব ছোট ছোট দুষ্টুমি আমার অনেক প্রিয়।
এতো ভাল লাগে যা বলে বুঝানো যাবেনা।
এখন বুঝতে পারি কেন মা বুঝেও না বুঝার ভান ধরে থাকতো।
কি ছিল মায়ের অনুভূতি, কেমন ছিল তার ভালোবাসা!!! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।