ইজ্জত রক্ষার জন্য দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ওরা আমাকে ধরে ফেলে। লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দেয়। এরপর পর ৭/৮জন দুবৃর্ত্ত পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এভাবে ৭ ঘণ্টা নির্যাতন করে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় বাড়িতে ফেলে রেখে যায়।
নির্মম এ লোমহর্ষক এ ঘটনা কাউকে বললে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় তারা।
প্রেমের প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় ধর্ষণের শিকার ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের তরুণী (১৮) ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন।
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, গত ২৫জুন সন্ধ্যায় অস্ত্রের মখে জিম্মি করে পাশ্ববর্তী বাগানে নিয়ে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। লোকলজ্জার ভয়ে ৭দিন ধরে পরিবারের কেউ ঘর থেকে বাইরে বের হননি। অপরদিকে সন্ত্রাসীদের সহযোগীরা বাড়িতে এসে কাউকে কিছু না বলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের পাঙ্গাশিয়া গ্রামের ৫ নং ওয়ার্ডের দরিদ্র ওই কৃষক পরিবারের ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে ছোট মেয়ে স্থানীয় পাঙ্গাশিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। গত ৪/৫ মাস ধরে একই এলাকার প্রভাবশালী মাহবুব তালুকদারের বখাটে ছেলে মমিন তাকে ফোনে বিরক্ত করতো।
এর প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয়নি। তার অত্যাচার চলতেই থাকে। ফোনে বিরক্ত করার পাশাপাশি বাড়ি থেকে কলেজে যাওয়া-আসার সময় প্রেমের প্রস্তাব দিত।
এক পর্যায়ে বিষয়টি বখাটের পিতাকে জানানো হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয় মমিন।
কলেজছাত্রী আরো জানান, গত ২৫ জুলাই সন্ধ্যায় স্থানীয় পরানগঞ্জ বাজার থেকে রিক্সাযোগে বাড়ি ফেরার পথে মমিন ধারালো ছুরি ঠেকিয়ে তাকে রিক্সা থেকে নামিয়ে নেয়। এরপর কোনও কিছু বলার আগেই লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করে।
এরপর মমিন ফোন করে তার সহযোগী রিপন, আফসার, সোহেলসহ ৭/৮জনকে ঘটনাস্থলে ডেকে আনে।
এসময় মেয়েটি দৌড়ে পালাতে চাইলে সহযোগীরা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে বাম পা ভেঙ্গে দেয়। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করলে মুখে রুমাল গুঁজে পাশের বাগানে নিয়ে যায়। এরপর চলে পালাক্রমে নির্যাতন।
ধর্ষিতার পিতা বলেন, ‘আমরা ঘরের ভেতর অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছি। লোকলজ্জায় ঘর থেকে বের হতে পারছি না।
মেয়েকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে ২৬ তারিখে ভোলা সদরের হাবিব মেডিকেল নামে একটি ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর তার জ্ঞান ফেরে। তার কাছ থেকে সব কিছু শুনি। মেয়ে কাউকে মুখ দেখাচ্ছে না। সারাদিন শুধু কাঁদছে।
আমরা এর বিচার চাই। ’
তার মা বলেন, ‘থানায় মামলা না করার জন্যে সন্ত্রাসীরা হুমকি দিচ্ছে। তাদের ভয়ে কেউ থানায় যেতে সাহস পাচ্ছে না। তবে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার এসে খোঁজ নিয়ে গেছে। মামলা দিতে বলেছেন।
কিন্তু ওদের ভয়ে মামলা দিতে পারছি না। ’
এদিকে, কলেজ ছাত্রী গণধর্ষনের ঘটনা ভোলার স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হলে রোববার দুপুরের দিকে ভোলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে আনেন।
এ ব্যাপারে জানতে পূর্ব ইলিশা ইউপি চেয়ারম্যান বশিরের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য রফি উদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি, তাদের থানায় মামলা করতে বলা হয়েছে। ’
ভোলা থানার ওসি মোবাশ্বের আলী বলেন, ‘আমরা এ ঘটনা শুনিনি, তবে সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ’
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী ভোলা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এনামুল হক বলেন, ভিকটিমের জবানবন্দী নিয়ে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। থানায় অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। ’
ভোলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পরিদর্শক সাইফুর ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তদন্ত চলছে বলে জানান।
রাত ৯টার দিকে ভোলা থানার ওসি মোবাশ্বের আলী বাংলনিউজকে জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।