সম্পাদনা করি আমিরাত-বাংলা মাসিক মুকুল। ভালবাসি মা, মাটি ও মানুষকে..
মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান
এবারের একুশে বই মেলা উপলক্ষে তরুণ তুখোড় ছড়াকার লুৎফুর রহমানের দুটি ছড়ার বই বের হয়েছে। এর আগে ২০১১ সালে ‘স্বপ্ন বলিকা’ নামে তার আরো একটি ছড়ার বই বেরিয়ে ছিলো। এবার বেরিয়েছে ‘সুরমা ফারর ছড়া’ এবং ‘লাল-সবুজের ছড়া’। লুৎফুর রহমানের লাল-সবুজের ছড়া বইটি পাঠক-লেখক-সুধী মহলে আলোচনায় স্থান পেয়েছে।
বয়সে তরুণ হলেও মা-বাবার বড়ো সন্তান হওয়ায় পারিবারিক অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালনে লুৎফুর রহমান দুবাই চলে গেছেন। দুবাইতেও লুৎফুর রহমান বাংলাদেশি সাহিত্যিক সাহিত্যামোদীদের সংগঠিত করে ‘মুকুল ফাউন্ডেশন’ ব্যানারে নিয়মিত সাহিত্য চর্চার আসর বসান। লুৎফুর রহমানকে দেখেছি, দেশে থাকতে এমনকি দুবাই থেকে দেশে এসেও দলবল নিয়ে স্কুলে কলেজে যেতেন এবং এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সমবেত করে ছাত্র-ছাত্রীদের সম্মুখে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলাতেন। মহান মুক্তিযোদ্ধাকে নিজে জানা এবং অপরকে জানানো লুৎফুর রহমানের ব্রত হয়ে যায়। একজন ছড়াকার হিসেবে এ মহৎ ব্রতেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন তার লাল-সবুজের ছড়া গ্রন্থে।
লাল-সবুজের ছড়া গ্রন্থে বিয়ানীবাজার উপজেলার ৩২ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার বীরত্ব কাহিনী বর্ণিত হয়েছে ছড়ার ছন্দে। প্রথম ছড়াটি শহীদ দার্শনিক জিসি দেবকে নিয়ে লেখা। এ ছড়া মর্সিয়ার শেষ প্যারায় বলা হয় : পাকবাহিনী হত্যা চালায় বুদ্ধিজীবী ধরে/ পঁচিশে মার্চ হামলা চালায় জিসি দেবের ঘরে/ নরপশু পাক সেনারা কাড়লো তাঁরি প্রাণ/ যাঁর মুখেতে ছিলো মধুর কমলালেবুর ঘ্রাণ/ চিরকুমার দেবের আছে পালক ছেলে মেয়ে/ কাঁন্দে আজো তাঁরে স্মরে ছবির দিকে চেয়ে/ হিন্দু ছেলে মুসলিম মেয়ে পালন করেছিলেন/ মানবতার গান গেয়ে দেব সেদিন মরেছিলেন। ছড়ার ছন্দে মর্সিয়া রচনায় ছড়াকার লুৎফুর রহমানের প্রচেষ্টা অনুপ্রেরণামূলক। চৌকস ছড়াকার লুৎফুর রহমান প্রতিটি ছড়ার সাথে একটি ফুটনোট দিয়েছেন।
এ ফুটনোটে শহীদের জন্মস্থান, যুদ্ধ স্থান এবং শহীদ হওয়ার স্থান উল্লেখ আছে। এতে ছড়া পাঠের সাথে শহীদের পরিচিতি জানতেও পাঠকের সুবিধা হয়েছে। লাল-সবুজের ছড়া বইয়ের প্রত্যেকটি ছড়া পড়ে একদিকে শহীদের যুদ্ধ জয়ের কাহিনী জানা যায়। অপরদিকে একজন ছড়াকার হিসেবে লুৎফুর রহমানের ছড়া তৈরীর নৈপুণ্যেরও পরিচয় পাওয়া যায়। উদাহরণ স্বরূপ ‘শহীদ খতিব আলী’ ছড়াটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
কি বলবো রণের কথা/ দুখের কথা অতীব,/ হাকালুকি জয় করেও/ শহীদ হলেন খতিব। / দেশ বাঁচাতে যুদ্ধে ছিলেন/ ক্যাম্প কুকির তলে/ আঠারোর ওই যুবা সেদিন/ বারুদ হয়ে জ্বলে। / হাকালুকি যুদ্ধ শেষে/ ঘর ফেরবেন যেই/ রাজাকাররা গুলি চালায়/ সকল মুক্তিকেই। / ওদের সাথে চললো তখন/ তুমুল গোলাগুলি/ শহীদ হলেন খতিব সেথায়/ কেমনে তারে ভুলি। স্বরবৃত্তে লেখা ছড়াটি একদমে পাঠ করা যায়।
ছড়াটিতে কোনো ছন্দপতন নেই। তাই বলা যায় ছড়া তৈরীর একজন দক্ষ কারিগর লুৎফুর রহমান। লাল-সবুজের ছড়া গ্রন্থটি পড়ে যেকোনো পাঠক লেখক গবেষকের কাছে প্রতীয়মান হবে, ছড়ার ছন্দে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন্ত করে তোলায় লুৎফুর রহমানই প্রথম এবং পথিকৃত। লুৎফুর রহমান যদি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ছড়া রচনা অব্যাহত রাখেন এবং তার পথ ধরে ছড়া শিল্পীরা মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা ছড়ার ছন্দে রচনায় ব্রত হন তাহলে একদিন মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক আমাদের ছড়া সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়ে ওঠবে। লাল-সবুজের ছড়া গ্রন্থের লাল-কালোর প্রচ্ছদ চমৎকার।
সবুজের একটু আঁছড় থাকলে প্রচ্ছদে গ্রন্থের নামকরণের সার্থকতা আরো পরিস্ফুট হতো। প্রচ্ছদ এঁকেছেন কিশোর! ছড়াকার লুৎফুর রহমানের লাল-সবুজের ছড়া গ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন ‘আমার প্রকাশনী’ ঢাকা। দাম রাখা হয়েছে ৮০ টাকা। বইটির বহুল প্রচার প্রত্যাশা করি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।