মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে চলতি বছরের জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধন করে তিনি বলেন, “আর যেন দেশে কোনো অসাংবিধানিক শাসক না আসতে পারে সেজন্য মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হবে। ”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা সম্মেলন কক্ষে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশন শুরু হয়। সরকারের মেয়াদের শেষ বছরের এই সম্মেলনে ২৪২টি প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরা সরকারের কাছে এসব প্রস্তাব করেছেন।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭টি বিষয়ে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।
তিনি বলেন, “আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মিলিটারি, কোজি মিলিটারি এবং মিলিটারি ব্যাকড সরকারের জাঁতাকলে মানুষ নিষ্পেষিত হয়েছে। ”
অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সেভাবেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলে অনুষ্ঠানে আবারো উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
“আমাদের এক জায়গা থেকে শুরু করতে হবে। আমাদের দেশে কখনোই ক্ষমতার হস্তান্তর সুষ্ঠু হয়নি।
পঁচাত্তরে হত্যা-ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল শুরু হলো। তারপর, এভাবেই চললো। ২০০১ সালেই কেবল শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর হয়েছে। ”
বর্তমান সরকারের সময়ে জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে পাঁচ হাজার ৬৪৪টি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আমরা কোনো নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করিনি।
জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জনগণ ভুল করতে পারে। বিভ্রান্ত হতে পারে। কাকে ভোট দিতে হবে- তা দিতে দিতে শিখবে। ”
জেলা প্রশাসকদের ত্যাগ ও সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধনমন্ত্রী বলেন, “জেলা প্রশাসক হিসেবে আপনাদের বহুবিধ জনকল্যাণমুখী কাজের মধ্যে কিছু বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখার জন্য আমি আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
”
এই ১৭টি বিষয়ের মধ্যে তৃণমূলে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করা; সরকারি সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষের হয়রানি বন্ধ; নারী ও শিশু নির্যাতন ও পাচার, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার, যৌতুক, ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহের মতো ‘সামাজিক ব্যাধির’ বিস্তার রোধ; প্রতিবন্ধী ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণ; জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া শিক্ষার সব স্তরে নারীশিক্ষার হার বৃদ্ধি ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করা; প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তার ও মানোন্নয়ন; পণ্যের চাহিদা, মজুদ ও সরবরাহ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ; রোজায় পণ্য সরবরাহে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির চেষ্টা কঠোরভাবে দমন; ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি; কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ; খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ; স্থানীয় সম্পদ এবং সম্ভাবনার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি; প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সমবায়ে উৎসাহিত করা; পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি; দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে নির্দেশনা অনুসরণ এবং সাধারণ মানুষের সুবিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিতে গ্রাম আদালতকে কার্যকর করার বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া সোমবার সচিবালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, জ্যেষ্ঠ সচিব, সচিব ছাড়াও কয়েকটি সংস্থার প্রধানরা সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে উপস্থিত থাকবেন।
এবারের সম্মেলনে ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালীকরণ, দুর্গ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম, স্থানীয় পর্যায়ে কর্ম-সৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্নেন্স, শিক্ষার মান ও শিক্ষার হার বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য সেবা ও পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ সংরক্ষরণ দূষণ ও রোধ এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে।
সচিব বলেন, “বাস্তবায়নযোগ্য বিভিন্ন বিষয় আলোচনার জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
মনে রাখতে হবে এটা কিন্তু দাবি-দাওয়ার কোনো ফেরাম না। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।