বিশ্বাস জীবনাচরণকে প্রভাবিত করে। যদি কেউ বলে সে বিশ্বাস করে অথচ বিশ্বাসের প্রতিফলন কর্মে ঘটেনা তবে আমার বলতে দ্বিধা নেই যে বিশ্বাসে গলদ আছে। প্রকৃত বিশ্বাসীদের আবেগময়তার বহি:প্রকাশ আচরণে প্রতিফলন ঘটা অবশ্যম্ভাবী। পারির্পাশ্বিকতা ও বাস্তবতাকে উপলব্ধির ক্ষেত্রে বিশ্বাসের ধরণই অধিক ক্রিয়াশীল।
গন্তব্যে পৌছাতে অন্যের সহযোগিতা প্রাকৃতিক ও ঐশ্বরিক নিয়মেরই অন্তর্ভুক্ত।
পরিণতি বা ফলাফলের প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ আর পরোক্ষ অনুধাবনকারীর মধ্যকার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ভিন্নতা বিশ্বাসের মাত্রার উন্নতি কমিয়ে আনতে পারে। স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক দুই ধরণের অবস্থায় একজন মানুষের চিন্তা ও আচরণে ভিন্নতা আনতে পারে। স্বাভাবিক অবস্থায় কৃত আচরণটা তার নিজস্ব চিন্তা, যৌক্তিক বোধের প্রতিফলন কিন্তু অস্বাভাবিক অবস্থায় ব্যক্তি নয় পারিপার্শ্বিক বাস্তবতাই অধিক শক্তিশালী।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উন্নতি অবনতি হঠাৎ ঘটা কোন ব্যাপার নয় । একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই টেকসই উন্নয়ন কিংবা চরম বিপর্যয় আসে।
মানুষের স্বভাব, প্রবৃত্তি, প্রকৃতির পেছনে পরিবেশের প্রভাবটা তীব্রভাবে কার্যকর। তবে জ্ঞানগত ক্ষেত্রে এক স্তর থেকে আরেক স্তরে উত্তরণ আচরণের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনে। মানুষের চেতনা জাগ্রতকরণে ভয়ের প্রভাব্ও কার্যকর। শাস্তি চেতনা জাগায়, সচেতন করে তবে এটিই সংশোধনের উত্তম পন্থা নয়। এক পর্যায় থেকে আরেক পর্যায়ে পৌঁছার প্রক্রিয়াগত ভিন্নতা ফলাফলে ভিন্নতা আনে।
তবে অতীত নয় বর্তমানকে বিবেচনা করেই ব্যক্তিকে মূল্যায়ন করতে হবে।
সংক্ষিপ্ত জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সক্রিয় থাকাই সত্যিকারার্থে বেঁচে থাকার স্বার্থকতা। সারাজীবন প্রবাহমান নদীর মতই প্রাণবন্ত ও গতিশীল থাকাতেই জীবন হয় অর্থবহ। আসলে খন্ডিত সময়ের জন্য নিজের রুপ পাল্টানো প্রতারণার নামান্তর। নিজের আত্মপরিচয় ও বিশ্বাস অনুযায়ী কর্মপরিচালনাই স্বচ্ছ ব্যক্তিত্বের লক্ষণ।
যোগ্যতা,প্রতিভাকে বিকশিত করতে সদা সচেষ্ট থাকাই যথেষ্ট নয় সময়, শ্রম, জান-মাল পরের কল্যাণে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেই আনন্দ।
যেমন করে কোন সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের কর্মধারার আদর্শ উপর থেকে নীচে প্রবাহিত হয় তেমন করে নীচ থেকে উপরে প্রবাহিত কিন্তু হয়না। আমরা যতটা অন্যকে শিখাতে চাই নিজে অন্যের কাছ থেকে ততটা শিখার মানসিকতা রাখিনা। ফলে যেটা হয় একই ধরনের মন মানসিকতার ফলে অযথাই কিছু ব্যর্থ চেষ্টা হয়। ব্যক্তিগত আশা -আকাঙ্খা, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনশীলতার ক্ষেত্রে সবার ক্ষেত্রে একই ধরনের প্রভাব পড়েনা।
ব্যক্তিভেদে ব্যক্তিক মূল্যবোধ গড়ে ওঠার পেছনে নানান ধরনের ভুমিকাই স্পষ্ট হয়। ফলে ব্যক্তির অর্ন্তজগত গঠনে বর্হিজগতের গুরুত্বকে আমরা কিছুতেই অস্বীকার করতে পারিনা।
সময়ের দাবি পূরণ করেই এগিয়ে থাকতে হয়। তাই নেতৃত্ব দিতে হলে সময়ের দাবিগুলো বুঝতে হয়। কোন উদ্যোক্তাই সময়ের দাবি অনুযায়ী প্রস্তুতি না নিয়ে কাংখিত ফলাফল আনতে পারবে না।
তবে হ্যাঁ এটিও ঠিক যে আজ যা গুরুত্বপূর্ণ কাল তার প্রয়োজনীয়তা নাও থাকতে পারে। আমাদের সমাজ জীবনের যাপিত বাস্তবতার সাথে মিলালে একথার প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পাওয়া যায়। কিছু পেতে গেলে যে কিছু দিতে হবে এটা মেনে না নিয়ে এগুনো চরম বোকামি ছাড়া কিছু নয়। স্রষ্টাও আপনার কাছ থেকে কিছু নেয়ার বিনিময়েই কিছু দিবেন। তবে নেয়ার চেয়ে দেয়ার পরিমাণটা যার পক্ষ থেকে বেশি হয় সেই শ্রেষ্টত্বে এগিয়ে থাকে।
সফলতা অর্জনের কৌশল ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হয়। যিনি কবি আর যিনি ব্যবসায়ী দুজনের জীবন সংগ্রাম ভিন্ন ধরনের। ফলে অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গিও ভিন্ন ধরনের। এই যৌক্তিক বাস্তবতাই বিল গেটসের কাছে আর ওসামা বিন লাদেনের কাছে জীবনের ভিন্ন অর্থ তৈরি করেছে। এখন স্ব স্ব ফিল্ডে যারা প্রতিষ্ঠিত তাদেরও পরামর্শ আপনার কোন কাজে না্ও লাগতে পারে; এমনকি ক্ষতিও করতে পারে।
আপনার কি করনীয় বা কিভাবে জীবন পরিচালনা করা উচিৎ এসবক্ষেত্রে দুনিয়াবী ব্যাপারে সঠিক দিক নির্দেশনা আপনি কোথাও পাবেন না। কারণ গবেষক ও রাজনীতিবিদ দুজনের কাছ থেকে আপনি ভিন্ন গাইড লাইন পাবেন। তাই আপনার নিজস্ব উপলব্ধি, বিচারক্ষমতা , নিজ প্রকৃতি ও পারিপার্শ্বিক বাস্তবতার আলোকেই নিজের চলার উত্তম পথ বাছাই করতে হবে। স্রষ্টা ও আপনি ছাড়া আপনার সার্বিক দিক অন্য কোন ব্যক্তি মানুষের কাছেই স্পষ্ট হওয়া সম্ভব নয়। ধর্মতো মূলনীতি দেয় কিন্তু তার আলোকে সমযোপযোগী বাস্তবমুখী পরিকল্পনা ও কাজ মানুষকেই ঠিক করতে হয়।
নোবেল বিজয়ী ইউনুস হয়তো স্কুলে, কলেজে নোবেল বিজয়ী শিক্ষক পাননি তবে তিনি সবাই হয়তো যা ধারণাও করেনি তাই করেছেন। ফলে উপযুক্ত পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দিয়ে পরিচালনা করার মত লোক চারপাশে থাকবে এটা সবক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত নাও হতে পারে।
চাওয়া ও পাওয়ার মাঝে ব্যবধান যত বাড়ে ততই যে হতাশা বেশি ঘীরে ধরে এটা ঠিক না। অনেক সময় এই ব্যবধানই কর্মে উদ্দীপ্ত করে। ফলে ব্যক্তি বিশেষে একই ধরনের অবস্থাও ভিন্ন ফলাফল নিয়ে আসে।
আসলে সমাজকে সরলতা থেকে জটিলতার দিকে নিয়ে যা্ওয়া কল্যাণকর নাকি অকল্যাণকর এটা নিয়ে তর্ক বিতর্ক করতে যেয়ে যদি কেউ ব্যক্তির চিন্তা বা মত প্রকাশে ভাষার জটিলতাকে তুচ্ছ জ্ঞান করেন তবে আমি তা মানিনা। কারণ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেমন নানা স্তরের লোক আছে, বয়সভেদে শিক্ষাভেদেও চিন্তাবুদ্ধিতে এরকম নানা স্তরের লোক আছে। ফলে সব কিছুই যে নিজেকে দিয়েই মাপব এটা ঠিক হবেনা।
যে কোন তুলনামূলক মূল্যায়ন মূল্যায়নকারীর ওপরই নির্ভরশীল। ফলে তুলনামূলক মূল্যায়নের ফলাফল বিদ্যমান বাস্তবতায় কখনো সঙ্গতিপূর্ণ আবার কখনো অসঙ্গতিপূর্ণ হয়।
আর ফলাফলের প্রভাবটাও কারো জন্যে নেতিবাচক কারো জন্য ইতিবাচক হয়। আসলে বৈচিত্রময় চিন্তা ও কর্মের মাধ্যমে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতার স্বাদ কখনো ঝাল কখনো মিষ্টি হয়। তবে বুদ্ধিমানের কাছে কোন অভিজ্ঞতাই অর্থহীন নয়।
ব্যক্তির উন্নতি মানেই কি জাতির উন্নতি? অবশ্যই। তবে যদি কোন ব্যক্তির উন্নতি অন্য ব্যক্তির ক্ষতি করে হয় তবে সেটা অবনতি।
কারণ অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও চারিত্রিক অবনতির কারণে সেটাকে সামগ্রিকভাবে উন্নতি বলা ঠিক হবেনা। ফলে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে যেকোন বৃহৎ পর্যায়েই সার্বিক উন্নতির জন্যে ক্ষতিকর দিকগুলো এড়িয়ে যেতে হবে। একজনকে মেরে আরেকজনকে ৫০ বছরের ক্ষেত্রে ১০০ বছর হায়াত দানের দরকার নেই। উন্নয়ন কার্যক্রমকে প্রায়োগিক ফলের আলোকে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণে এনজিওদের কর্মকৌশল যদি অযৌক্তিক যুক্তির পোশাকেই আচ্ছাদিত বলে স্পষ্ট হয় তবে বলার আর কিইবা থাকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।