একজন জামাতের দালাল আমাকে খুর ক্রোধ ও কষ্টের সাথে বলল,ভাই এই জালিম সরকার নাস্তিক সরকার হেফাজতের অনেক কর্মীকে হত্যা করেছে একটি গুজব। তাও আবার স্পর্শকাতর। আদরের শিশুদের নিয়ে। যারা নিজেদের ভেতরের অসুখ-বিসুখের কথা বলতে পারে না। তাদেরকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ও একটি কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো নিয়ে গুজবের সূত্রপাত।
‘এই ক্যাপসুল খেয়ে লাখ লাখ শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ছে’। ‘মারা যাচ্ছে অনেকে’। এরকম কথা মহুর্তে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে যারা ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়াতে শিশুদের কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলেন তারা পড়লেন চরম অস্থিরতায়।
না জানি তার শিশুও আক্রান্ত হয় কিনা। সুস্থ আছে তো সে? এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে সিভিল সার্জন আর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে মাইকিং করা হল, গুজবে কান দেবেন না। আপনার শিশুকে ভিটামিন এ খাওয়াতে নিকটবর্তী কেন্দ্রে নিয়ে আসুন। তাতে গুজব কমলো না, বরং আরও বাড়লো। তারপর থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বেসরকারী হাসপাতাল আর ক্লিনিকগুলোতে শিশুদের ভিড়।
অনেক জায়গায় শিশুদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে চিকিৎসকদের। এ দৃশ্য গতকালের। আজও বিভিন্ন স্থান থেকে খবর পাওয়া গেছে গুজবের কারণে শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে। সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ লাইন। ডাক্তাররা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েও সামলাতে পারছেন না।
কোথাও কোথাও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ হাসপাতাল গেইটে অবস্থান নিয়েছে। শহর-গ্রাম-গঞ্জ, সবর্ত্র একই অবস্থা। এটি শুধুই গুজব। কোথাও কোন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তাই বিভ্রান্ত না হতে দেশবাসীকে আহবান জানায় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
কিন্তু তাতে কান দেননি কেউ। তারা এখনও ছুটছেন হাসপাতালে। গতকাল সকাল ৮ টা থেকে সারা দেশে একযোগে শুরু হয় জাতীয় ভিটামিন এ ক্যাম্পেইন। বছরে দুবার হয় এটি। কিন্তু চলতি বছর এই ক্যাম্পেইন নিয়ে নানা রকম আলোচনা সমালোচনা হয় শুরু থেকেই।
তার কারণ, ভারত থেকে নিম্ন মানের ভিটামিন ক্যাপসুল আমদানী। ফলে আলোচনা-সমালোচনায় একাধিকবার পেছানো হয় ক্যাম্পেইনের তারিখ। সবর্শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১২ই মার্চ, মঙ্গলবার। সে দিনই ক্যাম্পেইন শুরুর পরপরই ছড়িয়ে পড়ে গুজব। ভিটামিন নিয়ে আগের আলোচনা-সমালোচনাই গুজবের মূল উৎস।
ওইদিনের পর তা মুহূর্তে তা ডালপালা বাঁধে সারা বাংলাদেশে। ছড়িয়ে পড়ে সবর্ত্র। একটার পর একটা ফোন আসতে থাকে গণমাধ্যম অফিসে। জানতে চান এর সত্যতা সম্পর্কে। অনেকে অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারেও বিষয়টি ছড়িয়ে দেন।
ফলে দেশের বাইরের বাঙালিরা দেশে থাকা তাদের স্বজন নিয়ে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় পড়েন। খবর ছড়িয়ে পড়লে যোগাযোগ করা হয় ক্যাম্পেইনের তত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠান রাজধানীতে অবস্থিত জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট উইংয়ের সঙ্গে। তারা এটিকে গুজব বলে জানায়। এর সূত্রপাত চট্টগ্রামের বোয়ালখালি উপজেলার সাতপুরা ইউনিয়ান। সেখান থেকে প্রথমে ভিটামিন খেয়ে ৪ শিশুতর মৃত্যু কথা ছড়ানো হয়।
বলা হয় ডেড বডি হাসপাতাল কমপ্লেক্সে পড়ে আছে। এই তথ্য অনেকে ফোন করে সংবাদ পত্রকেও জানান। তবে সেখানে আদৌ এরকম কোন ঘটনা ঘটেনি। বোয়ালখালি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মুর্শিদা বেগম জানান, তিনি ৪টা নয়, ৯ টি মৃত্যুর খবর শুনেছেন। তা আসলে মোটেও সঠিক ছিল না।
অবশ্য তিনি বলেন, একেবারে খালি পেটে শিশুকে ক্যাপসুল দুটি খাওয়ানোর ফলে বমির ভাব বা বমিও হতে পারে। দুপুরে এরকম দুটি কেস পেয়েছি আমরা। এর বাইরে কিছু ঘটেনি। জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি কেন্দ্রের ভিটামিন ক্যাম্পেইন প্রকল্পের ডিপিএম ডা. মোবারক হোসেন দিগন্ত বলেন, দুপুর থেকেই বিভ্রান্তিটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এর কোন ভিত্ত ছিল না।
ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন নিয়ে এই বিভ্রান্তিকে গুজবে উল্লেখ করে মঙ্গলবার রাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত আন্তর্জাতিক গবেষণাগারে পরীক্ষা দ্বারা মানসম্পন্ন, জীবাণুমুক্ত এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল দেশব্যাপী খাওয়ানো হয়েছে। এ নিয়ে দেশে একটি কুচক্রীমহল বিভিন্ন স্থানে অপপ্রচার ও গুজব ছড়িয়ে জনগণকে আতঙ্কিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ও কৃমিনাশক ট্যাবলেট খেলে অনেক শিশুর বমি বমি ভাব হতে পারে। এছাড়া বাচ্চাদের একটু ঘুম ঘুম ভাব হতেই পারে।
এতে মৃত্যুর কোনো ঝুঁকি নেই। সুতরাং এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।
কমিটি গঠন : ভিটামিন এ ক্যাম্পেইন নিয়ে অপপ্রচারকারীদের চিহ্নত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চার সদস্যদের একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। আজ সকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম লস্করকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আজ সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন (অব) মজিবুর রহমান ফকির এ তথ্য জানান। এসময় স্বাস্থ্য সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন আহমেদ এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. খন্দকার মোহাম্মদ সিফায়েত উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।