আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাবা দিবসে............. বাবার সাথে কথোপকথন।

* আমি খুজে বেড়াই নিজেকে * রাত থেকেই পরিকল্পনা ছিলো বাবা দিবসে আমার বাবাকে নিয়ে একটা ব্যতিক্রমী পোষ্ট দিব। পোস্ট টা হলো এরকম যে আজ বাবার সাথে যাহা যাহা কথা হবে তাহাই ব্লগে প্রকাশ করব। একান্ত পারিবারিক কথা সেন্ষর করে। সকাল থেকে সময় বের করে ফোন করার সুযোগ খুঁজছিলাম। কিন্তু ঘুম থেকে একটু দেরী করেই উঠলাম।

একটু মানে সকাল ১০.৩০মিনিটে। আসলে ছুটির দিনও। ঘুম থেকে উঠতেই বিধি বাম। ছেলেও উঠে পড়লো। কি আর করা তাকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষন হাটা হাটি।

তারপর বাসা থেকে বের হলাম, ফার্মেসীর উদ্দেশ্যে। গতকাল থেকে আহানের বাথরুম হয়নি। তাই টেনশন! ফার্মেসীতে গিয়ে গ্লিসারিন স্টিক নিলাম। সাথে বাসায় ওর জন্য আগে থেকে নাপা সিরাপ, এইস সাবোজিটরি নিলাম। কারন ইদানিং ভাইরাস জ্বরের যে অবস্থা কথা নাই বার্তা নাই যেকোন সময় হানা দেয়।

তাই যদি মধ্যরাতের জ্বর আসলে আগে থেকেই একটু প্রস্তুতি নিয়ে রাখা। যাই হোক ফার্মেসী থেকে এসে ছেলেকে বাথরুম করালাম। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে নিতেই বউ আমাকে ময়লা জমে যাওয়া বাসার পাঁচ খানা ফ্যান পরিস্কারের নির্দেশ দিয়ে দিলেন। সাথে দেয়ালে ঘরের কোনে ঝুল পরিস্কারের দায়িত্ব দিয়ে দিলেন। কি আর করা।

একান্ত অনুগত স্বামীর মত সব কাজ শেষ করলাম। আহান বাবুর একঝুড়ি ছোট ছোট খেলনা গুলো ধোয়া দরকার, তাই সার্ফ এক্সেলে ডুবিয়ে পরিস্কার করে নিলাম। গোসল সেরে খাওয়া দাওয়া করে ছেলেকে খাইয়ে আবার ঘুম পাড়ানোর দায়িত্বও চলে আসে আমার কাছে। বিশ মিনিটের চেষ্টায় উনি ঘুমালেন। বাবা দিবসে বাবার দায়িত্ব পালন করতে হলো আর কি এতোক্ষনে সময় বের হলো বাবার সাথে একান্তে একটু কথা বলার।

মোবাইলটি হাতে নিলাম। ফোনবুক ওপেন করলে সবার আগে আমার বাবা নাম দিয়ে সেভ করা উনার নাম্বার। ডায়াল করি ফোঁ ফোঁ ফোঁ...... ২/৩বার রিং হতেই ওপার থেকে জবাব আসে হ্যালো........ও একটু জোরেই। সরকারী ব্যাংকে চাকরী করতেন। তখনতো ডিজিটাল ফোন ছিলোনা।

আব্বার অফিসে প্রায়ই যেতাম। স্কুল থেকে ফেরার পথে। চা আর গোলাপী রংগের প্যাকেটের গ্লুকোজ বিস্কুট খেতে দিতো। কখনো স্কুলে যাওয়ার পথে বা অন্য সময় গেলে আব্বার কোন কলিগ পরাটা আর ডিম ভাজি খেতে দিতো। মজা করেই খেতাম।

কেন জানি এখটু বেশীই স্বাদ লাগতো। আব্বা টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে থাকতাম, প্রায়ই ফোন বেজে উঠতো। কিংবা আব্বাকে দেখতাম ফোনের রিসিভারের নীচের বাটনটা চাপতে থাকতো বা কিংবা হ্যান্ডেল ঘুরাতে থাকতো। ওপার থেকে রেসপন্স পাওয়া গেলে আব্বা মোটামুটি চিৎকার দিয়ে বলে উঠতো হ্যালো....ওপার থেকে আওয়াজ পেতে সমস্যা হলে আরো জোরে বলতো হ্যালো........। ইস সেই এনালগ ফোন যারা দেখে নাই তারা বুঝতে পারবেনা সেটা কি জিনিস ছিলো।

এনালগ এখন ডিজিটাল হয়ে গেছে। ফোনের বাটন চাপলেই ওপার থেকে হ্যালো জবাব আসে মধুর শব্দে। কিন্তু যাদের সেই এনালগ ফোনে হ্যালো বলে মোটামুটি চিৎকার দিতে হতো তাদের কেউ কেউ এখনো ফোন রিসিভ করে সেই আগের মত করেই হয়তো আওয়াজ একটু কমেছে কিন্তু ধরনটা রয়েই গেছে। আব্বার হ্যালো শুনেই আমি সালাম দিলাম, আসসালামুয়ালাইকুম। জবাব আসে ওয়ালাইকুম আসসালাম।

আমি কুশল জিগ্যাসা করতে যাবো তার আগে উনি জিগ্যেস করে ফেলেন, কি রে, কেমন আছস বাবা। -ভালো, আপনি কেমন আছেন? - হ্যাঁ আছি, ভালো আছি। আহান, আহানের মা কেমন আছে? -জ্বি ভালো আছে সবাই। -আহানের শরীর কেমন আছে, আবারো জানতে চান। -জ্বি, মাশাল্লাহ ভালো আছে।

আম্মার শরীর কেমন আছে - হ্যাঁ ভালো আছে। কথা একটু অন্যরকম লাগলো। - আপনি কোথায় আছেন, কি করেন? জানতে চাইলাম। -সেলুনে এসেছি, দাঁড়ি কাটাবো। - ও আচ্ছা, তাহলে পরে ফোন করবো, রাতে।

আমি বলি........ -আচ্ছা ঠিক আছে, রাতে ফোন করিস। বাবার সাথে আমার কথোপকথন বাবা দিবসে এটুকুই হলো। বাবাতো আর জানেনা আজ বাবা দিবস। বাবা এখন মফস্বল গ্রামে থাকেন। কখন যে এসব দিবস আমাদের কালচারে ধীরে ধীরে প্রবেশ করেছে এসব উনারা খেয়াল করেন না।

হয়ত মনেও করেন না বাবা দিবস নামে কোন একটা দিবসের দরকার। বাবার সাথে আমার সম্পর্ক অনেক মধুর। বাবা এই সম্পর্ককে যতটা লালন করেন আমি ততটাই ব্যর্থ হই। এই শহর, এই জীবন , এই প্রতিযোগীতা, এই যান্ত্রিকতা আমাকে ব্যর্থ করে দেয়। কিন্তু বাবাকে এসব ছোঁয় না ছুঁতে পারেনা।

বাবাকে মিস করি,এই শহরে, দুরে থেকে নানান জটিলতা যখন আষ্টেপিষ্টে ভর করে তখনই বাবার আশ্রয় খুঁজি। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.