হা হা হা পায় যে হাসি!!! কাজী সালাউদ্দিন ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে থাকাবস্থায়ই খেলা ছেড়েছেন ১৯৮৩ সালে। এত পুরোনো ভিডিও পাওয়া সহজ কথা না আর বাংলাদেশ টেলিভিশনও পুরোনো অনুষ্ঠান বা খেলা সংরক্ষনে খুব উৎসাহী না। তাই খুব বেশি লোকে হয়ত সালাউদ্দিনের খেলা কখনোই দেখেননি। তা সত্ত্বেও নিঃসন্দেহেই বলা যায়, বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে বড় তারকা। প্রায় সারাজীবন আবাহনীতে থাকলেও সব দলের মধ্যেই এবং স্টেডিয়াম পাড়ার বাইরেও সর্বমহলে তার একটা ভদ্র এবং ক্লিন ইমেজ বরাবরই আছে।
এই তারকা খেলোয়াড় যখন দু'বছর আগে ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠান বাফুফের হাল ধরেন, সবার মধ্যেই ফুটবল নিয়ে প্রচুর আশার সঞ্চার হয়। অনেক ব্যর্থতা সত্ত্বেও কিছু কাজ সালাউদ্দিন করেছেন, এটা অস্বীকার করা যাবে না। ফুটবলকে নিয়মিত মাঠে রাখা, কোটি টাকার সুপার কাপ আয়োজন ইত্যাদি তার সাফল্যের পাল্লা ভারী করেছে। দলবদল বা খেলার জন্য খেলোয়ারদের রাস্তায় নামতে হয়নি তার সময়ে। তাই বিদেশী কোচের মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা বা পাতানো খেলার মহাসমারোহকে পাশে ফেলে উনি তার শ্রদ্ধার আসন ধরে রাখতে পেরেছেন।
কিন্তু সবকিছুতে পানি ঢেলে দিলেন সাম্প্রতিক পাকিস্তান সফরকে কেন্দ্র করে।
বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে বাংলাদেশকে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে হবে পাকিস্তানের সাথে, ২০০৯ সালের লাহোরে শ্রীলংকা ক্রিকেট দলের বাসে বোমা বিষ্ফোরনের পর যেখানে যেকোন ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রীড়ানুষ্ঠান বন্ধ আছে কারন বিশ্বের কোন দেশের কোন খেলার দলই সেখানে যেতে রাজী হয়নি। হঠাৎ বাংলাদেশ ফুটবল দল রাজী হয়ে যায় সেখানেই গিয়ে তাদের অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ২০০৯ সালের চেয়ে উন্নতি তো দূরের কথা, আজকে বরং বহু গুন খারাপ হয়েছে। গতকালও খবর এসেছে পাক সেনাবাহিনীতে তাদের সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অসন্তোষ চরম আকার ধারন করেছে এবং যেকোন সময় মার্কিন বিরোধী সেনারা বিদ্রোহ করতে পারে।
এই অবস্থায় বাংলাদেশ কেন সেখানে খেলতে যাচ্ছে, এই প্রশ্নের জবাবে চারদিন আগে সালাউদ্দিন জানান, "ম্যাচটা ঢাকায় আয়োজনের জন্য ফিফাকে আমরা অনুরোধ করেছি। কিন্তু ফিফা তাতে সাড়া দেয়নি। এ কারণে লাহোরেই খেলতে হবে। " কিন্তু গতকাল রয়টার্স ফিফার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘ম্যাচটা স্থানান্তরের জন্য বাংলাদেশের কাছ থেকে কোনো আবেদন আমরা পাইনি। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের সঙ্গেও যোগাযোগ করে জানা গেছে, সেখানেও বাংলাদেশ কোনো আবেদন করেনি।
’ রয়টার্সের এই রিপোর্টের পর গতকাল আবার যোগাযোগ করা হলে বাফুফের সহসভাপতি বাদল রায় জানান, ‘আমরা জুরিখে ফিফা কংগ্রেসে যাওয়ার পর সেখানে পাকিস্তান ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তাদের অনুরোধ করেছিলাম ঢাকায় দুটি ম্যাচই তারা যেন খেলে যায়। তখন তারা আমাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছে। সে কারণেই আমরা যাচ্ছি। ’
প্রথমত, ফিফাকে আসলেই আবেদন করা হলে সেটা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল প্রায় শুন্য।
এটা সারাবিশ্বই মেনে নিয়েছে যে পাকিস্তানের অবস্থা এই মুহুর্তে খুবই খারাপ এবং একটা আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজনের ক্ষমতা তাদের নাই। নিরাপত্তার দাবী জানিয়ে ফিফার কাছে আবেদন পাঠালে ফিফা কোনভাবেই বাংলাদেশকে দল পাঠাতে বাধ্য করতে পারত না।
দ্বিতীয়ত, শুধু দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারনেই যে বিশ্ব ক্রীড়াসম্প্রদায় পাকিস্তানকে বয়কট করেছে, তা না। বরং এটাও সবাই মাথায় রাখছে যে একটা ভয়ংকর ঘটন ঘটেছিল পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার সময়। ওই বোমা বিষ্ফোরনের কিছুদিন আগেই সাবেক পাক অধিনায়ক এবং বর্তমান শীর্ষ রাজনীতিবিদ ইমরান খান তার কলামে লিখেছিলেন, "আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি পাকিস্তানে যেকোন ক্রিকেট দল নিরাপদ।
কারন জঙ্গীদেরও জনগনের সমর্থন দরকার হয় আর পাকিস্তানে ক্রিকেট এত জনপ্রিয় যে এর কোন ক্ষতি করার ঝুঁকি তারা নিতে চাইবে না। " কয়েক মাসের মধ্যেই ইমরানের এই দায়িত্ব তার মুখে হাজার চপেটাঘাতের মত পড়ে। যেখানে ক্রিকেটের মত হাই প্রোফাইল ম্যাচের নিরাপত্তাই পাকিস্তান দিতে পারে না, সেখানে ফুটবল তো তাদের কাছে কিছুই না। এর জন্য কতটুকু নিরাপত্তাই বা তারা দিবে? শ্রীলংকাকেও তো তারা পূর্ন নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল!
তৃতীয়ত, পাকিস্তানের কাছে এই ম্যাচটা শুধুই একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ না। বরং একঘরে অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার একমাত্র উপায়।
এই ম্যাচের সফল আয়োজনের মাধ্যমে তারা বিদেশী দলগুলির সুনিরাপত্তা ব্যবস্থার দাবী জানাতে পারবে। অন্য সব খেলার চেয়ে ক্রিকেটের জন্য তাদের এই দাবী খুব জরুরী। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের স্বার্থ কি যে সে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তানকে একঘরে অবস্থা থেকে বের করতে চাচ্ছে? কি এমন দোস্তি পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের যে তাদের সাহায্য করতে হবে? নাকি এখানে কিছু কর্মকর্তার নিজস্ব স্বার্থ আছে?
চতুর্থত, কাজী সালাউদ্দিন এভাবে প্রেসের কাছে মিথ্যা কথা বললেন কেন? ফিফাকে জড়িয়ে এত বড় মিথ্যাচার ধরা পড়বে না, এটা তার কেন মনে হল? নাকি ধরা পড়লেও উনি কেয়ারই করেন না?
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম সদস্যের কাছ থেকে এটা প্রত্যাশিত ছিল না। দুঃখিত কাজী সালাউদ্দিন। আপনি সেই পুরোনো কথাটাই আবার প্রতিষ্ঠিত করলেন - রাজাকার সবসময়ই রাজাকার, মুক্তিযোদ্ধা সবসময় মুক্তিযোদ্ধা না।
তাই আজ সরাসরিই বলতে বাধ্য হলাম - আমাদের বাংলা ব্লগের পরিভাষায় আপনার মত লোককেই আমরা ছাগু বলি।
সুত্র
আপডেটঃ হাটে হাঁড়ি ভাঙার পর বাফুফের বোধোদয় হয়েছে এবং গত পরশু ফিফাকে আনুষ্ঠানিক চিঠি লিখে ফিরতি ম্যাচটা ঢাকায় অথবা অন্য কোনো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজনের আবেদন জানিয়েছে। বিষয়টা এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনকেও জানানো হয়েছে বলে কাল দাবি করেছে বাফুফে।
এদিকে জাতীয় দলের নতুন কোচ জর্জি ইয়োভানভস্কিও পাকিস্তানে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং একারনেই পাকিস্তান সফরের আগে দলের দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।