মানুষের চরম বিকাশের প্রথম পথ হচ্ছে মুক্তবুদ্ধি, যাতে জগতের প্রয়োজন অনিসারে যুগধর্মের ইঈিত অনুসারে স্বীয় জীবন নিয়ন্ত্রিত করা সহজ হয়। রবীন্দ্রনাথের শক্তির ও রচনার অসামান্য গুনমান-মাত্রা ও মাহাত্ম্য কেউ অস্বীকার করে না। রচনা যে জীবন দৃষ্টির প্রসূন তার স্বরুপ ও রচনার উপযোগ নিরুপন ক্ষেত্রে অভিভূত ভক্তে ও যুক্তিপ্রবণ রুচিবান পাঠকে পার্থক্য রয়েছে অবশ্যই। এ হচ্ছে মুগ্ধ ও মুক্ত দৃষ্টির রবীন্দ্রবির্তক। বুঝতে হবে কবি রবীন্দ্রনাথের কল্পজগতের রুপ-স্বরুপ, জানতে হবে রবীন্দ্র অভিজ্ঞতাজাত গল্প-উপন্যাসের জগতকে, রবীন্দ্র নাটকে দেখতে হবে রবীন্দ্র-বাঞ্ছিত জীবন-ভাবনাকে ও জগত প্রতিবেশকে।
অমিত শক্তি ও মনীষাধর রবীন্দ্রনাথও ইন্দ্রয়চালিত মানুষ।
শিবনারায়ণ রায় বলেছেনঃ তিনি(রবীন্দ্রনাথ) কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে কিছুই চর্চা করেননি। সম্পূর্ন অবহেলা করেছেন.... রবীন্দ্রনাথের সমস্ত লেখা পড়লে কোথাও দেখা যাবে না তিনি কোরান দেখেছেন। এতবড় সংখ্যাক একটা প্রতিবেশী, তাদের যে কি বিশ্বাস সেটা জানার কোন আগ্রহ ছিল না। [প্রতিক্ষণ, জুলাই ১৯৯৩ পৃঃ ১৭]
নোবেল পুরস্কারের দু'বছর আগে অর্থাৎ ১৯১১ সালে সুইডিশ রাজপুত্র কার্ল উইলহেম লুদভিগের উৎসাহে সুইডেনে রবীন্দ্র চর্চার শুরু।
প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে সে দেশে কবিগুরুকে নিয়ে লেখা হয়েছে বিপুল সংখ্যক বই। রবীন্দ্রনাথের 'স্ফুলিঙ্গ' কবিতা গ্রন্থটি 'Eldflugor' নামে সুইডিশ ভাষায় অনূদিত হলে কাব্যপ্রেয়সীদের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়। রবীন্দ্রনাথের ২৪০ টি টুকরা কবিতা নিয়ে প্রিন্স কার্ল উইলহেম লুদভিগ আরেকটি বই প্রকাশ করেন। সুইডিশ ভাষায় অনূদিত ওই বইটিও ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পায়। বিশ্বকবি চীন ও জাপান সফরকালে ছোট্র ছোট্র যেসব লিরিক রচনা করেন সেগুলোই স্থান পায় প্রিন্সের অনূদিত ওই গ্রন্থে।
এই বইটি প্রকাশ পায় কবিগুরুর নোবেল পুরস্কারে লাভের ১৪ বছর পর। ততদিনে সুইডেনের সবার কাছেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিচিত নাম। লিরিকধর্মী কবিতার এ সংকলনটি বিশ্বকবির অনুমতি নিয়েই প্রকাশ করেন সুইডিশ রাজপুত্র। রবীন্দ্রনাথ এ বইটি উৎসর্গ করেন তার আরেক গুনগ্রাহী সুইডিশ একাডেমীর অন্যতম সদস্য খ্যাতিমান লেখক ও পর্যটক সেভন হেদিনকে।
সুইডেনে রবীন্দ্রচর্চার সূচনা প্রিন্স কার্ল উইলহেম লুদভিগের মাধ্যমে হয়েছে বলে মনে করা হয়।
তবে সুইডিশ ভাষায় রবীন্দ্রনাথের অনুবাদ প্রথম প্রকাশের কৃতিত্ব ক্রিসচিনা এন্ডারবেরি ও হরাল্ড হাইসেনের। ১৯১৪ সালে অর্থাৎ নোবেল পুরস্কার লাভের এক বছর পর তারা যথাক্রমে রবীন্দ্রনাথের 'মালি' ও 'শিশু' কবিতা গ্রন্থের বেশির ভাগ কবিতার অনুবাদ নিয়ে দু'টি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। যে বইয়ের জন্য বিশ্বকবি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান সেই গীতাঞ্জলী সুইডিশ ভাষায় অনূদিত হয় ১৯১৫ সালে। আন্দ্রিয়া বেতেনশোনের অনুবাদে। গীতাঞ্জলির সুইডিশ অনুবাদ সুইডিশ সাহিত্যপ্রেমীদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
"শুনেছি আমারে ভালোই লাগে না, নাই বা লাগিল তোর।
কঠিন বাঁধনে চরণ বেড়িয়া
চিরকাল তোরে রব আঁকড়িয়া
লোহার শিকল-ডোর।
তুই তো আমার বন্দী অভাগী, বাঁধিয়াছি কারাগারে,
প্রাণের বাঁধন দিয়েছি প্রাণেতে, দেখি কে খুলিতে পারে।
একবার তোরে দেখেছি যখন কেমনে এড়াবি মোরে?
চাও নাহি চাও, ডাকো নাই ডাকো,
কাছেতে আমার থাকো নাই থাকো,
যাব সাথে সাথে, রব পায় পায়, রব গায় গায় মিশি-
এ বিষাদ ঘোর, এ আঁধার মুখ, এ অশ্রুজল, এই ভাঙ্গা বুক,
ভাঙ্গা বাদ্যের মতন বাজিবে সাথে সাথে দিবানিশি।
গভীর নিশীথে একাকী যখন বসিয়া মলিনপ্রাণে
চমকি উঠিয়া দেখিবি তরাসে
আমিও রয়েছি বসে তোর পাশে
চেয়ে তোর মুখপানে।
দুঃস্বপ্নের মতন চিরকাল তোমারে রহিব ঘিরে।
অবিরাম শুধু আমি ছাড়া আর কিছু না রহিবে মনে।
অনন্ত ক্ষুধা অনন্ত তৃষা করিতেছে হাহাকার।
এ ঘোর পিপাসা যুগযুগান্তরে মিটিবে কি কভু আর !
বুকের ভিতরে ছুরীর মতন,
মনের মাঝারে বিষের মতন,
রোগের মতন, শোকের মতন রব আমি অনিবার।
যেথায় আলোক সেইখানে ছায়া এই তো নিয়ম ভবে-
ও রুপের কাছে চিরদিন তাই এ ক্ষুধা জাগিয়া রবে।
"
(চলবে....)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।