যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে. ১।
রাত ৩ টা ।
কোনমতেই ঘুম আসছে না রাফির। এপাশ ওপাশ করছে সমানে। কিন্তু উপায়ন্তর না দেখে বিছানা ছাড়তেই হল কিছুক্ষণ পর।
ইদানিং ঘুম না আসাটা রাফির একটা বাতিকে পরিণত হয়েছে। আর যেদিন এরকম হয় সেদিন সব কিছু কেমন জানি ওলোট পালোট লাগে রাফির। একটা বিরক্তিকর চাহনি আর কিছু না পাওয়ার হতাশা নিয়ে রাতটা পার করে দেয় সে। মাঝে মাঝে যখন খুব কষ্ট হয় তখন নিজের রুমের আলমারির পাশ থেকে গিটার বের করে নিজের মনে বাজাতে থাকে। আর এভাবেই তার সময়গুলো কেটে যায়।
আজকে চারপাশের আবহাওয়া অন্য সবদিন থেকে একেবারেই আলাদা। কেমন জানি একটা মাদকতা রয়েছে এর মাঝে। পর পর ২ মাসের টানা অসহ্য গরমের পর আজকের আষাঢ় মাসের প্রথম দিনে প্রকৃতি এক অপরূপ সাজে সেজেছে। সবকিছুই তাই আপন আপন লাগছে যেন। এদিকে সারাদিন বৃষ্টি হওয়ায় বেশ ভাল লাগছে পরিবেশটা।
হাল্কা ঠান্ডা বাতাসে মন প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকলো রাফি। কিন্তু খুব একটা স্বাদ না পেয়ে ছুড়ে ফেলে দিল রাস্তায়।
এত রাতেও পাশের বাসার বাতি জালানো। দূরের কিছু বাসা চোখে পড়ছে।
সেই বাসার কিছু কিছু বাতি সকাল অব্ধি জালিয়ে রাখে বাসার মানুষজন। মাঝে মাঝে তার জানতে ইচ্ছে করে কেন তারা এভাবে বাতি জালিয়ে রাখে!!
২।
সকাল ৯ বেজে ১৩ মিনিট
ক্রিং ক্রিং ক্রিং
মোবাইলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় রাফির। ফজর নামাজ পরে তবেই ঘুমাতে গিয়েছিল রাফি। তাই ঘুমটা খুব একটা ভাল হয় নি।
আর এই ঘুমের ১২ টা বাজিয়ে কে ফোন দিল এটা মনে করেই ফোনদাতার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে তবেই ফোন ধরলো সে।
রাফিঃ হেল্লো, কোন শালা? সকাল বেলা আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাইলো।
ওপাশ থেকেঃ (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) আ......... আমি!!
রাফিঃ আমি কে?
ওপাশ থেকেঃ এটা কি হাসান সাহেবের নম্বর?
রাফিঃ না, এটা তার বাপের দাদার নম্বর!! ধুর। যত্তসব!!
এ বলেই ফোন রেখে দিল রাফি। মোবাইল সাইলেন্ট করে আবার ঘুম দিল রাফি।
ঘুম যখন ভাঙ্গলো তখন দুপুর পেরিয়ে বিকেল প্রায়।
৩।
বিকেল ৫ টা
অনেকদিন পর আজ রাফি ছাদে উঠেছে। শেষ কবে উঠেছ তার মনে নেই। বেশ কয়েক বছর পর বেশ কিছু ফ্রী সময় এখন হাতে আছে।
পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে ফেলেছে কয়েকদিন হল। তাই এখন বেশ চাঙ্গাভাবে দিন কাটাচ্ছে সে। কোন চিন্তা ভাবনা নেই মনে। খায় দায় ঘুমায় টিভি দেখে আর আড্ডা মারে বন্ধুদের সাথে। মাঝে মাঝে আবার ঘুড়তেও যায় সে শহর ছেড়ে অনেক দূরে।
রাফিদের বাসা ৫ তলা। তাদের বিল্ডিং এর আশেপাশে আরো কিছু বিল্ডিং আছে যা ৪ কিংবা ৫ তলার। এসব বাসার বাসিন্দাদের সাথে খুব একটা জানাশোনা নেই তার। কোথায় কে কি করে কিছুই তেমন জানে না সে। রাফির মা নিজেই তাকে মাঝে মাঝে বলেন।
আর রাফি শুনে এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আর এক কান দিয়ে বের করে দেয়।
ছাদে কিছুক্ষণ পায়চারী করছিল রাফি। এমন সময় ফোন বেজে উঠলো। নম্বরটা অপরিচিত তাই সে বেশ খানিকক্ষণ পর সময় নিয়ে ধরলো।
রাফিঃ হেল্লো।
ওপাশ থেকেঃ কেমন আছেন?
রাফিঃ ভাল। আপনি কে?
ওপাশ থেকেঃ আমাকে চিনবেন না। সকালে ফোন দিয়েছিলাম।
রাফিঃ মনে করতে পারছি না। কেন? আপনি কি এলিয়েন নাকি যে চিনবো না।
ওপাশ থেকে হাসির শব্দ শোনা গেল। রাফি বেশ বিরক্ত হল। ফোন রাখতে যাবে এমন সময় ওপাশ থেকে বলে উঠলো -
ওপাশ থেকেঃ প্লীজ, ফোন রাখবেন না।
রাফিঃ (অবাক হয়ে) আমি ফোন রাখছি সেটা আপনি কি করে বুঝলেন?
ওপাশ থেকেঃ কারণ, আপনাকে আমি দেখতে পাচ্ছি এখান থেকে।
রাফিঃ কোথায় আপনি?
ওপাশ থেকেঃ পিছনের বিল্ডিং এর দিকে তাকান।
এক ঝটকায় পিছনে তাকালো রাফি। কয়েকজন লোকের ভিরে সাদা সালোয়ার কামিজ পরিহিতা এক সুন্দরী মেয়েকে দেখতে পেল তার দিকেই তাকিয়ে আছে অপলক।
রাফিঃ এটাই কি আপনি?
ওপাশ থেকেঃ হ ম ম। আমি।
আচ্ছা এখন তাহলে রাখি।
৪।
টিনার সাথে পরিচয়ের পর কেটে গিয়েছে প্রায় ২ বছর। এর মাঝে রাফির সাথে টিনার খুব ভাল একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। যা বন্ধু হিসেবে দেখতেই বেশ সাচ্ছন্দ লাভ করে দুজনেই। দুই পরিবার খুব ভাল মতই তাদের ব্যপারটা জানেন।
এমন কি তাদের মধ্যে বাসায় যাওয়া আসাও নিয়মিত হচ্ছে। বেশিরভাগ সময় নানা অজুহাতে টিনা রাফির বাসায় আসে। রাফি খুব একটা না গেলেও ফোনে কথা বলে নিয়মিত।
টিনা এবার অনার্স ফাইনাল দিয়েছে। টিনার বাবা মা টিনাকে বিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
আড়ালে টিনার মা আকারে ইঙ্গিতে রাফির সাথে টিনার বিয়ে দেয়া যায় কি না তা টিনার কাছে জানতে চেয়েছিল। টিনার তা এড়িয়ে গিয়েছে। এ বিষয়টা নিয়ে রাফির পরিবারের সাথে কথা বলেছিল টিনার বাবা মা। কিন্তু তারা উৎসাহ দেখালেও রাফির কোন সম্মতি সেভাবে পাচ্ছিল না। তাই তারা প্রায় হাল ছেড়েই দিয়েছিল।
৫।
এদিকে বাসায় আজ তুলকালাম কান্ড।
কারণ গত ১ বছর আগেই যে রাফি আর টিনা ভালবেসে বিয়ে করেছে কাজি অফিসে সেটা ফাঁস হয়ে গিয়েছে। রাফির মামাই তদন্ত করে বের করেছেন বিষয়টা। গত কিছুদিন ধরে উনি আঠার মত রাফি আর টিনার পিছনে লেগেছিলেন।
যদিও বিষয়টা একেবারেই বুঝতে পারে নি ওরা। রাফির পরিবার এতে বিচলিত হয় নি একটুও। তবে টিনার পরিবারের সবাই খুব অবাক হয়েছেন। কাউকে কিছু না জানিয়ে এভাবে কাজি অফিসে বিয়ে করাটা তাঁরা মেনে নিতে পারেন নি। তাই বেশ রাগারাগি করেছেন তাঁরা টিনার সাথে।
টিনার পরিবার তাই টিনার কাছ থেকে জানতে চায় কেন কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করেছিল দুজনে। এ সময় রাফি এবং তার পরিবার কেও টিনার বাসায় ডেকে আনা হয়েছিল। টিনা ইতস্তত করছিল বলতে। বেশ জড়সড় হয়ে ছিল সে। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না তার।
রাফি তা বুঝতে পেরে নিজেই বলা শুরু করলো।
“আমরা চেয়েছিলাম দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হোক। কিন্তু আমরা দু জন দু জনকে এতটাই ভালবেসে ফেলেছিলাম যে আমাদের দুজনের মাঝে একটা শংকা কাজ করেছিল। সেটা হল দুজন দুজন কে হাড়ানোর শংকা। আর এটা অমূলক ছিল না।
কারণ সেই সময় আপনাদের পরিবার টিনার বিয়ে অন্নত্র দেয়ার জন্য ভেবেছিলেন। যা টিনা আমাকে বলেছিল। সবকিছু ভেবে আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে বিয়ে করবো কিন্তু পালিয়ে না গিয়ে সবার সাথেই থাকবো। সময় হলে নিজেরাই জানাবো। কিন্তু তার আগেই মামা জেনে গিয়েছেন।
”
৬।
আর কোন সমস্যা নেই। আজ টিনা রাফির ২য় বারের মত বিয়ে হচ্ছে। দুই পরিবার তাদের এই সম্পর্ক মেনে নিয়েছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।