আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জোয়ান আস্কারের নারীবাদী ঐতিহাসিক-বস্তুবাদী শ্রেণীতত্ত্ব

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই মূলঃ জন বেল্লামী ফস্টার ভাষান্তরঃ মেহেদী হাসান হেইদি হার্টম্যানের পরিভাষায় “অসুখী বিবাহের” পর ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার মত বিষয়কে অনুসরণ করে আজকের দিনে নারীবাদ এবং মার্ক্সবাদকে সাধারণত পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন বিষয়বস্তু হিসেবে দেখানো হয়। যদিও এখনও কিছু কিছু তাত্ত্বিক দুইটি বিষয়েরই পারস্পরিক প্রভাব দেখায়। আমার দৃষ্টিতে, জোয়ান আস্কার হল লিঙ্গ এবং শ্রেণী উভয় বিষয়ে বিশ্লেষকদের অন্যতম নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিত্ব এবং এমন একজন, “নারীবাদী ঐতিহাসিক বস্তুবাদ” ধারনাটি তৈরী করার ক্ষেত্রে যার অসামান্য অবদান অনস্বীকার্য। খুব স্বাভাবিক ভাবেই, নারীবাদী তত্ত্বীয় ভিত্তির প্রভাবশালী প্রস্তাবক ন্যান্সি হার্টসক, ডরোথি স্মিথ এবং সান্ড্রা হার্ডিংদের পাশেই আমি তাকে রাখতে চাই। ফ্রেডেরিক জ্যামসন যেমন সঠিকভাবেই বলেন, এই চিন্তাবিদরা লুকাসের মার্ক্সীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে ঘোষণা করা প্রলেতারীয় তত্ত্বীয় ভিত্তির যথার্থ উত্তরাধিকার কে উপস্থাপন করে- এটাকে লৈঙ্গিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার ফলে এর ভেতরের দান্দ্বিকতাবোধের তাৎপর্য বৃদ্ধি পায়।

এটা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ যে আস্কারের গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বীয় কর্ম “শ্রেণী জটিলতাঃ অতঃপর নারীবাদী সমাধান” অর্থনৈতিক ধ্বশ শুরু হওয়ার একবছর পূর্বে ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয়। এটা অবশ্যই নিছক কোন দৈব ঘটনা ছিল না। বিশেষভাবে অধিকাংশ নারীবাদী তাত্ত্বিকদের আলোচনায় শ্রেণী বিশ্লেষণের নাজুক অবস্থার বিষয়ে আস্কার খুব গভীর ভাবে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। একই সময়ে সে এটাও বুঝতে পেরেছিল যে, শ্রেণী বিষয়টা আগেকার অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে অনেকবেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, শুধুমাত্র মানুষের সাথে মানুষের বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার কারনেই নয় বরঞ্চ পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতা বেড়ে উঠার ফলেও। এজন্যেই তার বইয়ের প্রথমেই সে “নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে অর্থনৈতিক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির” শরণ নেয়।

২০০০ সালে শেয়ার বাজারে বিশালাকার ধ্বশ, অর্থনৈতিক ফাঁপা গোলকের পতন ঘটায়; এর ফলে শ্রেণী শক্তির গতিবৃদ্ধির এবং শ্রেণী সংগ্রামের নতুন যুগের সূচনা ঘটে। হালফিল আবাসন ব্যাবস্থার নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরী হওয়া এবং “আমরা নিরানব্বই শতাংশ”- এই শ্লোগানকে ধারণ করে জেগে উঠা ওয়াল স্ট্রীটের অকুপাই আন্দোলনের সূত্রপাতের মুহূর্তে আস্কারের বিশ্লেষণকে ভবিষ্যত বাণীর মত দেখানো যেতে পারে। “শ্রেণী জটিলতাঃ অতঃপর নারীবাদী সমাধান” বইটি- সমৃদ্ধ এবং অন্তর্নিহিত বোধ সম্পন্ন মার্ক্সীয়, ওয়েবারীয় শ্রেণী বিশ্লেষণের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যবাহী নারীবাদী তত্ত্ব- প্রত্যেকটির শক্তি-সামর্থ্য এবং দুর্বলতাকে গুরুত্বারোপ সহকারে আমাদের দৃষ্টির সামনে মেলে ধরে। পুঁজিবাদ এবং পুরুষতন্ত্রের মাঝে সম্পর্ক বিষয়ক দীর্ঘ আলোচনায় আস্কারের বিবেচনা বিশেষভাবে কার্যকরী হয়ে উঠে। তার দৃষ্টিতে একমাত্র অর্থবহ বিবেচনা- শ্রেণী হচ্ছে এমন একটা বিষয় যাকে লৈঙ্গিকতা এবং সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতেই সবচেয়ে ভালোভাবে বোঝা সম্ভব।

এই ব্যাপারে সে টেনে আনে “লৈঙ্গিকতার ক্রিয়াশীল রূপ এবং সাম্প্রদায়িকতার বৈশিষ্টময় দিক যা শ্রেণী প্রক্রিয়া এবং বৈচিত্রময়তার ধারনাকে সবচেয়ে ভালোভাবে ধরতে সক্ষম”। এই উদ্দেশ্যে যেরকমভাবে সর্বজনীনতার বিরোধীতা করা হয় তা প্রায় সকল সময়েই সাম্যবাদী প্রক্রিয়ার এবং অনুশীলনের অনিশ্চয়তা ঘটিয়ে তোলে। যখন শ্রেণীকে(মার্ক্সবাদীরা যেখানে সবসময় জোর দিয়ে থাকে) দেখানো হয় উৎপাদন এবং বেতনভূক্ত শ্রমজীবী মানুষের সাথে পারস্পরিক সম্পর্কের সাথে সম্পর্কিত করে, সে যুক্তি দেখায়, এটাকে অবশ্যই আরো দেখানো যেতে পারে বন্টন ব্যাবস্থা এবং বেতনহীন শ্রমিকের সাথে আদ্যোপান্ত সম্পর্ককের সাথে মিলিয়েও। যে কেউ যেমন মনে করতে পারে, এটা তার চেয়েও চিরাচরিত মার্ক্সীয় তত্ত্বের থেকে অনেকটা কম সরে এসেছে। বুর্জোয়া পরিবারগুলোতে নারীকে একটা শ্রেণী বা দাস হিসেবে ধরে মার্ক্সের শ্রেণী সম্পর্কিত ধারণা, আমরা আজকের দিনে সাধারণত যেমন করে থাকি তার চেয়ে অনেক বেশী নমনীয়।

সে তার পুঁজি গ্রন্থে উল্লেখ করে, “ব্যাক্তিগত সম্পত্তির প্রত্যেক ধরনে” একটি পরিবারের সদস্যদের দাসত্ব অন্তত পক্ষে সর্বদাই ইঙ্গিতময় হয়ে উঠে যখন পরিবারের প্রধান তাদেরকে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ব্যাবহার করতে এবং কাজে লাগাতে শুরু করে। চিরাচরিত মার্ক্সবাদ তার বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যাপক আয়োজনের ফলে বর্তমান দশকেও আমাদের দেখায়, নিরূপিত শ্রেণী প্রাথমিকভাবে শাসন-শোষণ সমন্ধীয় এবং কিভাবে উদ্বৃত্ত পন্য/ উদ্বৃত্ত শ্রম তার সরাসরি উৎপাদকদের কাছ থেকে গৃহীত হয়। ঠিক যেরকমভাবে চিরাচরিত মার্ক্সবাদ, পুঁজিবাদ এবং বাজার সম্পর্কের পূর্ব অবস্থার শ্রেণী ধারণা প্রয়োগ করে এবং এরকমভাবে বেতনহীন সম্পর্ক যাতে করে এই ধারনা বেতনহীন শ্রমিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে, যা মার্ক্সীয় মতে উৎপাদন সম্পর্ককেই বুঝায়। মার্ক্সের মতে( যদিও ওয়েবার এই মতে বিরোধীতা করেন) দাসরাও একটি শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত যদিও তারা বেতনভূক্ত নয় এবং তারা নিজেরাই সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত। আস্কারের কাজের অনন্যতা প্রকাশ পায়, বর্তমান সময়ে শ্রেণীর আর পুনর্গঠিত না হওয়ার ধারনাকে সমালোচনা করার মাধ্যমে, বিশেষভাবে সেই শ্রেণী ধারনাগুলোর যেখানে জাতি এবং লিঙ্গকে অদৃশ্য করে ফেলা হয়।

শ্রেণী, জাতি এবং লিঙ্গ কিভাবে পারস্পারিক সহঅবস্থান করে- এটা দেখানোর মাধ্যমে সে শুধু মার্ক্সীয় এবং ওয়েবারীয় মতের সমালোচনাই করেননি, পাশাপাশি সাধারণ নারীবাদ এবং শ্রেণী, জাতি ও লিঙ্গের বিজড়নের উপর সমাজবৈজ্ঞানিক বিবেচনার বিষয়েও প্রশ্ন তোলে। এই ধারনাগুলো যেমন ভুল তেমনি বিশৃংখলই শুধু নয় এগুলো শ্রেণীকে সামাজিক সম্পর্কের প্রবাহমানতা হিসেবে ধরে, শ্রেণীর মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা এং লৈঙ্গিকতাকে অন্তর্ভূক্ত করে বৈচিত্রের অনুশীলন এবং প্রক্রিয়ার ক্ষেতে গুরুত্বারোপ না করে, বিশেষ শূন্যাবস্থা অথবা গঠনতান্ত্রিক দিকনির্দেশনায় শ্রেনী (জাতি এবং লিঙ্গ সহ) ধারনাকে হ্রাস করতে চেষ্টা চালায়। ই পি থম্পসনের “দ্যা মেকিং অফ দ্যা ইংলিশ ওয়ার্কিং ক্লাশ” বইয়ের শ্রেণী সমন্ধীয় প্রাথমিক আলোচনা থেকে এইরকম ক্ষেত্রে তার কাজ অনুপ্রেরণা লাভ করে, আস্কার এবং অন্যান্য নারীবাদী ঐতিহাসিক বস্তুবাদীদের উপর থম্পসনের এই বইটির ব্যাপক প্রভাব আছে। আস্কার আমাদের দেয় এমন একটি শিক্ষণ প্রক্রিয়া যা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে শ্রেণী, লিঙ্গ এবং জাতির সকল দান্দ্বিক জটিলতা সহ পারস্পারিক বিজড়িত হওয়াকে দেখতে সাহায্য করে। রোজ ব্রিউয়ারের দিকে দৃষ্টি ক্ষেপণ করে সে জোর দিয়ে বলে- “শ্রেণী, জাতি এবং লিঙ্গের গঠন প্রক্রিয়াকে যুগপৎ হিসেবে দেখানো উচিত এবং এই তত্ত্বীকরনকে অবশ্যই ঐতিহাসিক এবং সমকালীন হতে হবে।

মূলবক্তব্যে তার সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গী প্রকাশিত হয়, আস্কার ঘোষণা করেঃ শ্রেণী অনুশীলন হচ্ছে জাতিগত এবং লৈঙ্গিক, বিবেচনায় আনার মত ভিন্ন ভিন্ন ভাবে তাদের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে, পরস্পরের সীমারেখা অতিক্রম করে যাওয়া এবং নিজস্ব কর্মপদ্ধতির মিশ্রণ, এটাই হচ্ছে কিছু আলাদা আলাদা জিনিসকে একত্রে ধরে রাখার সঞ্জীবনী ধারনা; বিশেষভাবে অর্থনীতি এবং কর্মব্যাবস্থাপনা পুনর্গঠনকালীন সময়ে একবিংশ শতাব্দী শুরু হওয়ার মুহূর্তে ঠিক যেমনটি হয়েছিল। যদিও আমি, এমন শ্রেণী ধারণার কাছে অনেকটাই দায়বদ্ধ যেখানে সম্পর্কগুলো সবসময় প্রক্রিয়াধীন, তারপরেও কিছু কিছু সময় আসে যখন খুব তাড়াতাড়ি অবস্থান নির্দেশ করা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং আমি মাঝে মাঝে, সাধারণ শ্রমজীবী শ্রেণী, কেরানীসংক্রান্ত শ্রমজীবী শ্রেণী, মধ্যবিত্ত শ্রেণী- বিশাল এবং বৈচিত্রময় গ্রুপ এবং পুঁজিবাদী শ্রেণী যারা বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, গোত্রের হয়েও অধিকার বজায় রাখার ক্ষেত্রে একই রকম শক্তি-সামর্থ্য দিয়ে অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রন করে থাকে- তাদের সকলের যথার্থ বিবরন সম্বলিত পুস্তিকা ব্যাবহার করবো। শ্রেণীর জাতিগত ও লৈঙ্গিক সকল গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বীকরণে আস্কার কখনই শ্রেণীর নিজেরই তোলা প্রশ্নের বিষয়ে অথবা শ্রেণী বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক তাৎপর্য সমন্ধে অমনোযোগী হয়ে পড়েন নি। সুতরাং পুরো বিশ্লেষণ জুড়ে তার মূল বক্তব্য হচ্ছে, উন্নত পুঁজিবাদী সমাজে লিঙ্গ এবং জাতিগত বৈষম্যের সরাসরি যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি না থাকা, শ্রেণী সংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে সত্য হতে পারেনা; শ্রেণী স্বার্থ এবং শ্রেণী বৈষম্য খুব যুক্তিসঙ্গতভাবেই গৃহীত হয় এমন একটি ব্যাবস্থায় যেখানে পুঁজির সঞ্চয়নের মূল প্রক্রিয়ার জন্য ব্যাবস্থাটি ওগুলোর উপরই নির্ভর করে থাকে।

আস্কার এরকমভাবে বলেঃ শ্রেণী ভিত্তিক বৈষম্যে- টাকা-পয়সা পাওয়ার হার এবং সম্পদের উৎস সমূহ, শক্তি-সামর্থ্য ও কর্তৃত্বের উপর নিয়ন্ত্রন বজায় রাখা এবং কার্যকলাপ ও নিত্যনৈমিকতার অনুশীলন যা প্রতিনিয়ত তাদেরকেই পুনঃসৃষ্টি করে থাকে যা আর্থসামাজিক ব্যাবস্থাটির চলমান ক্রিয়া-কলাপের ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয় মনে হয়। শেষ পর্যন্ত আস্কার, নব্য স্বাধীনতাবাদের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে পলানিয়ানের আকাঙ্ক্ষিত-“দুই তরফা আন্দোলন” কে ধরে রাখে, একেবারে নিচ থেকে ভিত্তিমূল নাড়িয়ে দেওয়ার মত বিদ্রোহ করার প্রতিজ্ঞা, যা অসংখ্য জনসাধারনের মাঝখান থেকে উঠে আসবে এবং পুঁজিবাদীদের নিজের সুবিধার্থে অন্যকে ব্যাবহার করার গঠনরূপকে সীমাবদ্ধ করে ফেলা। আস্কার ঘোষণা করে, মাঝে মাঝে মনে হয় বৃহৎ পুঁজিকে নিয়ন্ত্রন করা যায় কিন্তু তা মূলগতভাবে লৈঙ্গিক এবং জাতিগত শ্রেণী অনুশীলনের পুনর্গঠনের দিকে ধাবিত হয় এবং সাম্প্রদায়িকতাকে একেবারে ভেতর থেকে জীবন্ত এবং ক্রিয়াশীল পরিস্থিতির মধ্যে জাগিয়ে তোলে, অনেক সংখ্যক মানুষ নিদারুন বাস্তবতার সম্মুখীন হয়। সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদ পুরো জনসংখ্যার বিশ শতাংশের মত লোকের জন্য বিত্ত-বৈভব বহন করে নিয়ে আসে আর অন্যান্য কিছু মানুষের(মধ্যবিত্ত) জন্য ডেকে নিয়ে আসে উদ্বেগ ও জীবন-যাপনের অনিশ্চয়তা যারা এখনও ভোগ করে এবং টিকে আছে আর বাকী সকলে(শ্রমজীবী শ্রেণী) পতিত হয় গভীর দারিদ্র এবং আগ্রাসনের মধ্যে। মাত্র ছয় বছর পরে, আজকে যদি মনে হয় এটা আমাদের সম্মুখে চলে এসেছে, তার একমাত্র কারন এই যে- নিষ্ক্রিয়তা, বেকারত্ব এবং দারিদ্রতার হার বৃদ্ধিকালীন সময়ে সার্বিক পরিস্থিতি এত মাত্রায় ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, তা আবাসন ব্যাবস্থার ফাঁপা গোলককে চূর্ন-বিচূর্ন করে দিচ্ছে।

আমরা এখনই নিরানব্বই শতাংশ বনাম এক শতাংশের মধ্যকার সংঘাতের ব্যাপারে কথা বলতে শুরু করে দিয়েছি। আস্কারের বিশ্লেষণের বিষয়ে আমার যদি কোন সমালোচনা বা প্রশ্ন উঠানোর থাকে- তা হচ্ছে একটি সুনির্দিষ্ট পথে সে শ্রেণীর ভূমিকাকে খাটো করে ফেলেছে। এর কারন হচ্ছে শ্রেণীর নিশ্চিতভাবেই দরকার তার বৈশিষ্টসূচক রূপ। আমাদের বোঝা প্রয়োজন নারীর দরিদ্র-করনের ফলে লিঙ্গ একটি শ্রেনী হিসেবে বেড়ে উঠছে যখন হয়তো কিছু নারীর অবস্থা ভালোর দিকে যাচ্ছে; এবং ঠিক তেমনিভাবে জাতিও হয়ে উঠছে শ্রেণী। শ্রেণীকে এমন একটি প্রক্রিয়া হিসেবে দেখানো উচিত যা আসলে জাতিগত এবং লৈঙ্গিক সম্পর্ককেও আত্তীকরণ করে।

অনেক মার্ক্সীয় চিন্তাবিদরা শ্রেণীর যে সমস্ত ধারনা নিয়ে কাজ করে সেখানে এখনও আস্কারের এরকম ধারার সমালোচনা প্রথমেই চলে আসে। যদিও আস্কার নিজেকে একজন মার্ক্সবাদী হিসেবে পরিচয় দেয় না এবং বাস্তবিক নিজেকে একজন ঐ ধারার(অথবা অন্তত পক্ষে আরো বেশী কাঠামোগত রূপের) সমালোচক হিসেবেই দেখে, আরো সংশ্লেষণ দাঁড় করানো মাধ্যমে এবং জটিল বিপ্লবী সম্ভাবনাকে আরো বেশী দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগীতে করার ফলে তার কাজ, খুব বেশী না হলেও মার্ক্সীয় তত্ত্বের একটা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে আজকের দিনের মার্ক্সবাদীদের দ্বারা গৃহীত হবে। আস্কার যে একজন ঐতিহাসিক বস্তুবাদী বিশাল ঐতিহ্যের একটা অংশ হিসেবে বিবেচিত- এই সত্যের সাথে তার নারীবাদী গভীর সমালোচনার তেমন কোন ফারাক নেই। বাস্তবিকই সে দেখায় যে শ্রেণী, জাতি এবং লিঙ্গ প্রত্যেকটিই অন্যগুলোর একধরনের প্রতিফলন। আস্কারের প্রত্যেকটি কাজকে কেউ কেউ মৌলিক পরিবর্তনের নতুন কলাকৌশলের পরিকল্পনার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখতে পারে।

সুতরাং সে তুলনামূলক মূল্য নির্ধারণের সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী ব্যাক্তিত্ব এবং নারীদেরকে গরীবদের মত কল্যাণ ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসার একজন তীক্ষ্ণ সমালোচক হিসেবে যেমন আবির্ভূত হয় ঠিক তেমনি লৈঙ্গিক ব্যাবস্থার একজন দক্ষ বিশ্লেষকেও পরিণত হয়ে উঠে। নব্য বামদের কাছে তার বেলায় অনেক বেশী বিপ্লবী হয়ে উঠা কোন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় নি- বরঞ্চ যথেষ্ট পরিমাণ বিপ্লবী না হয়ে উঠাই অনেকটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন সে মন্থলী রিভিও এর ২০০১, ডিসেম্বর সংখ্যায় লিখেছিলঃ নৈরাশ্যজনক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মৌলিক এবং সমাজতান্ত্রিক নারীবাদী দর্শন যেমন অতীতে তেমনি বর্তমানেও শুধু এটা নয় যে আমাদের লিঙ্গ এবং জাতিগত সমতাভিত্তিক বিকল্প ব্যাবস্থা পুঁজিবাদে নেই বরঞ্চ লিঙ্গ এবং জাতির সাথে অর্থনীতি এবং পুঁজিবাদী সামাজিক সম্পর্ক আমরা যতটুকু কল্পনা করতে পারি তার চেয়ে বেশী মাত্রায় বিজড়িত এবং পরিব্যাপক হয়ে আছে। নারীদের অবস্থার মৌলিক পরিবর্তন ঘটাতে হলে প্রায় সকল কিছুকেই পরিবর্তিত করে ফেলতে হবে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.