আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরো দেশটা যদি শনির আখড়া হত!!

সত্যের কাছে মিথ্যে চিরকালই পরাজিত দেশে হরতাল চলছে। হরতাল সবসময়ই জনভোগান্তি তৈরী করে। তাই হরতাল সমর্থন করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু হরতাল দিলেই আমরা একশ্রেণীর মানুষ আছি যারা হরতালের চিত্র তুলে ধরে মানুষের ভোগান্তির কথা বলে বেড়াই, আর ধিক দেই রাজনৈতিক দলগুলোকে। আরেকদল যারা ঘরে বসে বসে সমর্থন দেই তারা হরতালে পুলিশ বাহিনীর অত্যাচারের ছবি দেখিয়ে হরতালের যৌক্তিকতা তুলে ধরার চেষ্টা করি।

আরেকদল মানুষ আছি যারা মনে করি আমাদের দাবী দাওয়া আদায়ের দায়িত্ব বিরোধীদলের কাছে ন্যস্ত করা আছে। এভাবে সাধারন জনগন বলতে আসলে কিছু আছে সেটা ভুলে যাই। এখন বাস্তবতা হল, যাদের কে দেশ চালানোর দায়িত্ব দেয়া আছে তারা মনে করে আমরা কাজ করি তাই এর পরিশ্রমের বিনিময়ে না হয় একটু লুটপাট করে খেলাম তাতে কি আসে যায়। আবার যারা বিরোধীদলে আছে তারা মনে করে এই যে রাস্তায় বের হয়ে হরতাল করে মার খাই, সাধারন জনগন তো খালি কাজে কর্মে একটু কষ্ট পায় তাহলে ক্ষমতায় গেলে আমরা একটু বেশি সুবিধা নিব তাত দোষের কি আছে? এভাবে নিজেদের সবকিছু তাদের হাতে ছেড়ে দেয়ায় তারা পরিশ্রম(?) করে আর ফলটা তারা ভোগ করবে এটাই কি স্বাভাবিক নয়! আর তাই ক্ষমতা পেলেই নিজের সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা দুর্নীতি করলে তো তাদের কে দোষ দেয়া যায় না। ধরুন আমার একটা ফাইল অফিসে আটকে আছে , আমি ফাইল ছাড়াতে গেলে কিছু ঘুষ দিতে হবে, আমিও সুন্দর করে ঘুষ দিয়ে এসে তাদেরকে গালাগালি করি আর বলে বেড়াই দুর্নীতিতে দেশটা ভরে গেল, ঘুষ ছাড়া কিছু করা যায় না ইত্যাদি ইত্যাদি।

অথচ আমি যদি ঘুষ না দিয়ে তাৎক্ষনিক প্রতিবাদ করতাম, এভাবে প্রতিটা মানুষ যদি প্রতিবাদ করত তাহলে ঘুষ আর দুর্নীতি এমনিতেই বন্ধ হয়ে যেত। কিন্তু আমরা এসব ক্ষেত্রে প্রতিবাদ না করে বরং নিজের কাজ বাগিয়ে নিতে ঘুষ দিব আর বড় বড় বুলি ছাড়ব ন্যায় নীতির কথা বলে বেড়াব। কারন আমি যে আমার এই সামান্য ক্ষতিটা মেনে নিতে পারি না। এভাবেই সব ক্ষেত্রে কিছু পেতে হলে কিছুটা তো ত্যাগ স্বীকার করতে হয় কিন্তু আমরা এখন নিজের টা ষোলআনা বুঝি আর তাই এই ভোগবাদী পৃথিবী আমাদের শিখিয়েছে “ত্যাগে নয় ভোগেই প্রকৃত সুখ”। এই ভোগের আবার বিচিত্র ধরন।

কেউ ঘরে বসে আনন্দ উপভোগ করে, পুনম পান্ডের নগ্ন হওয়ার আশায় বসে থাকে, প্রভা আর চৈতীর নগ্ন ভিডিও একজন আরেকজন কে শেয়ার করে আনন্দ খুঁজে, কেউ পাকিস্তানি আর রাজাকারদের গালিগালাজ করে মানসিক প্রশান্তি উপভোগ করে, কেউ জিয়া না মুজিব কে স্বাধীনতার ঘোষক এই নিয়ে তর্ক করে মনে মনে সুখ পায়, কেউ রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশ চেয়েছে কি চায় নাই তা নিয়ে তর্ক জুড়ে দেয়, কেউ আবার মুজিব বা জিয়ার মাজারে ঘন্টায় ঘন্টায় ফুল দিয়ে ভালোবাসা প্রদর্শন করে, কেউ খালেদা হাসিনার নগ্ন ছবি বের করে সুখ পায়, দিনে কি খাইছে, কি গালি দিতে ভালো লাগে, মেয়েরা ভালো না মন্দ, এভাবে হাজারো সুখের ভিড়ে হারিয়ে গেছি আমরা। এতসব সুখের ভিড়ে ভুলে যাই চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় অভাবে পড়ে পাশের বাড়ীতে কান্না করছে অবোধ শিশু, ভুলে যাই সড়ক দূর্ঘটনায় লাশ হয়ে ফিরেছে পাশের বাড়ির যুবকটি, ভুলে যাই চাকরি না পেয়ে মায়ের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়েছে সদা হাস্যোজ্জ্বল ছেলেটি, ভুলে যাই ইভটিজিং এর স্বীকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে পাশের বাড়ীর মিষ্টি মেয়েটি, ভুলে যাই পরকীয়ার বলি হয়ে রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে আছে ফুটফুটে শিশুটির। কানে হেড ফোন দিয়ে গান শুনছি মেটাল রক আর তাই এইসব আর্তনাদ আমার কানে পৌঁছানোর কোন সুযোগ নেই। ফেসবুক খুলে কিছু করার না থাকলেও একটা ডট দিয়ে যাই, আর তাই উপভোগ্য হয়ে যায় সবার কাছে, বাহ কি চমৎকার! সবসময় আশায় থাকি ভোগ করার হোক তা বিন্দুসম, পাহাড়সম দুঃখ আর দুঃখী মানুষের কথা ভেবে তো আর কিছু করা যাবে না তার তাই সুখে থাকার চেষ্টা করাই শ্রেয় মনে করি। এভাবে বলতে গেলে হাজারো সুখ বলে যেত পারব।

তাই শেষ করার আগে সেই শনির আখড়ার কথা মনে করিয়ে দেই, মসজিদ গুলোতে নিয়মিত মুসল্লীরা নামাজ পড়তে এসে পানির অভাবে অযু করতে পারছে না, পরিবারের মানুষগুলো পানির অভাবে যাচ্ছেতাই ভাবে জীবন চালিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে। এমন সময় মসজিদে বসেই সিদ্ধান্ত হল রাস্তা অবরোধ করার। মাইকে জানিয়ে দেয়া হল, ফজরের পরে সবাই সমবেত হয়ে অবরোধ করল ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক। মুহুর্তেই জনাকীর্ণ হয়ে গেল রাজপথ। এভাবেই এক জনসমুদ্র তৈরী করতে কোন বিরোধী দল লাগে নি, কোন নেতা লাগে নি।

সালাউদ্দিন এসে তাদের কে ছত্রভংগ করতে চাইলে বিনিময়ে জান নিয়ে বাঁচতে দৌড়ে পালাতে হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এখানেও তথাকথিত বাম্পন্থী মোসলেহ উদ্দিন নেতা হয়ে গেল। অথচ সেই মসজিদের শান্তিবাদী মানুষেরা শান্তিপূর্ণ ভাবে সেই অবরোধ করেছিল। পুরো দেশটা যদি শনির আখড়া হয়ে যেত, মানুষ গুলো যদি ফুঁসে উঠত, যদি প্রতিবাদ করতে প্রতিটা অন্যায়ের তাহলে আজ দেশের এই ভগ্ন দশা হত না। এখনো সময় আছে নিজ নিজ জায়গা থেকে যদি প্রতিটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করি তাহলে অন্যায় দূর হতে বাধ্য।

আমার ছোট প্রচেষ্টায় কিছু হবে না এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। না হয় সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে, বরং আরো বেশি কুৎসিত আর জঘন্য এক পৃথিবী দেখার জন্য তৈরী হতে হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.