''গ্রামে তিনটা মসজিদ, তিনটা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আমার দেওয়া টাকায়। আমি দুটি এতিমখানা পরিচালনা করি। গ্রামের কত গরিব মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছি! কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে না, আমার কাছে সাহায্যের জন্য এসে খালি হাতে ফিরে গেছে। চুরি করলেও আমি এক ওয়াক্ত নামাজ পড়া বাদ দিইনি। চুরি করা যে পাপ, সেটা আমি আগে জানতাম না।
এখন বুঝতে পারছি। গত আট বছরে চুরি করে অনেক টাকা আয় করেছি। কিন্তু কোনো টাকা জমা রাখতে পারিনি। সব টাকা কোনো না কোনোভাবে খরচ হয়ে গেছে''-----এমনই সরল স্বীকারোক্তি মোহাম্মদ বদিউল হক ওরফে নাছিরের (৩৭)।
চট্টগ্রামের ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান মিশম্যাকের ২৩ লাখ টাকা চুরির মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে নাছিরকে।
নিজেকে 'ধার্মিক' দাবি করা নাছির জানায়, মিশম্যাকে চুরির পর নিজের ভাগে পাওয়া পাঁচ লাখ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে ৭০ হাজার টাকা সে মসজিদের উন্নয়নে দান করেছে। তার চোরদলের প্রত্যেক সদস্যকে অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সদর দপ্তরে গতকাল বুধবার দুপুরে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলে নাছির। পুলিশের কাছে সে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ধর্ষ চোরদলের সরদার হিসেবে চিহ্নিত। টানা দুই দিন নগরী ও জেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ গত মঙ্গলবার রাতে তার চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে।
এরপর তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নাছিরকে গ্রামের বাড়ি চন্দনাইশের পূর্ব ধোপাছড়ির শঙেরকূল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া পুলিশের হাটহাজারী সার্কেলের সিনিয়র এএসপি বাবুল আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নাছির একজন অসম্ভব চালাক ও ধূর্ত প্রকৃতির চোর। চুরির ক্ষেত্রে তার নিজস্ব কিছু কৌশল আছে। কোনো জায়গায় চুরির আগে সে দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত রেকি করে। পুলিশের কাছে ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে সব কিছু স্বীকার করে নেয়।
কিন্তু কখনো আদালতে গিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয় না। জামিন নেওয়ার জন্য প্রচুর টাকা দিয়ে ভালো আইনজীবী নিয়োগ করে সে। ' নাছিরের বিরুদ্ধে বর্তমানে চারটি চুরির মামলা আছে, তবে সব মামলায়ই সে জামিন পেয়েছে।
পুলিশ জানায়, নাছির ১৯৮৮ সালের দিকে হোটেল বয় হিসেবে নগরীতে কাজ করত। পরে ইপিজেড এলাকার চোরদলের সঙ্গে তার সখ্য হয়।
২০০২ সাল থেকে বড় চুরি করতে শুরু করে সে। পুলিশের হাতে এর আগে চারবার গ্রেপ্তার হলেও কয়েক মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পায় সে। মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ব্যাপক দান করার পাশাপাশি গ্রামে একটি দ্বিতল বাড়িও করেছে নাছির।
অভিযানে অংশ নেওয়া নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক মোহাম্মদ মহসিন কালের কণ্ঠকে জানান, মিশম্যাকে সাম্প্রতিক চুরির ঘটনায় সরদার হিসেবে নাছির সবচেয়ে বেশি টাকা পায়। বাকিদের মধ্যে সহযোগী জামাল চার লাখ, আলম চার লাখ ১০ হাজার, বিপ্লব চার লাখ ও কামাল দুই লাখ টাকা পেয়েছিল।
এর মধ্যে গ্রেপ্তারের পর নাছির তিন লাখ ২০ হাজার, আলম তিন লাখ, জামাল আড়াই লাখ ও বিপ্লব তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা পুলিশকে ফেরত দিয়েছে।
সিএমপি সদর দপ্তরে গতকাল নাছির কালের কণ্ঠকে জানায়, গত আট বছরে সে ১০০-র বেশি বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চুরি করেছে।
(দৈনিক কালের কণ্ঠ ও প্রথম আলো : ০৯-০৬-২০১১) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।