আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিচ্চি পুতুলের বকরবকর!!

জীবনটা যেন এক বর্ণীল প্রজাপতি - এই আপু, তুমি ভূত দেখছো? - এই আপু, তুমি ভূত দেখছো? - এই আপু, তুমি ভূত দেখছো? আমি সেদিন ছিলাম খুব টায়ার্ড। ইচ্ছে করছে গিয়ে হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় ঘুমাই। কিন্তু, প্লে গ্রুপে পড়া চার বছরের বাচ্চাকে টেবিলে পড়তে বসিয়ে রেখে এই কাজ করা যাবেনা। ওর পাশে আমাকে থাকতে হবে। আমি টেবিলে হাত রেখে তার উপর মাথা এলিয়ে দিয়েছি।

পিচ্চিটা বার বার ডেকে যাচ্ছে। আমি উত্তর দেইনা। বার বার প্রশ্ন করে পিচ্চিটা রেগে যাচ্ছে! বেশি রেগে গেলে বিগড়ে যাবে। আমি উত্তর দিলাম, “না ভূত দেখিনি। আমার ভয় করে!” -“আমার ভয় করেনা।

আমি দিখছি। হিনোভাইয়া (হিনয়ভাইয়া)দ্যাখে নাই। আমার আম্মুও দ্যাখেনাই। “- পিচ্চি বলে উঠলো। তারপরে আমার কোন কথা না পেয়ে রঙ করায় মন দিলো।

আমি প্রতিদিন কিছু ফল, ফুল, ছাতা, বাড়ি, গাড়ির ছবি এঁকে দেই। এগুলোর রঙ করে। - আপু, কোন রঙ করবো? টেবিলে ছড়ানো প্যাস্টেল রঙ এর মাঝে হাত রেখে বলে উঠে। - যা ইচ্ছা করো। আজকে তোমার ইচ্ছা দিন।

- এটা কমলা না? - হুঁউউ...(আমার ক্লান্ত কন্ঠস্বর! পিচ্চি মনোযোগ দিয়ে কমলা, আম, গাজরে ঠিকঠাক রঙ করে যায়। তারপরে, গান গেয়ে উঠলো। “গো গো গোলমাল...গো গো গোলমাল...গোলমাল...” কথা না বললে, পিচ্চি আবার বাসায় যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে যাবে। তাই বললাম, “তুমি গানও গাইতে পারো?” - হুঁ! (লজ্জিত হাসি!) - এইডা কইরা হালাই? - কথা ভালোভাবে বলো। - এটা করে ফেলি? - হ্যাঁ, কর।

- কুনটা রঙ করবো? - কুনটা না! - কোনটা রঙ করবো? - তোমার ইচ্ছা। - আপেল? পতাকা? আম? আম? দুইটা আম আঁকছো ক্যান? - একটা কাঁচা আম, আরেকটা পাকা। - কোনটা কোন রঙ করবো? - তোমার ইচ্ছা! একটা বাচ্চার কান্নার শব্দ শোনা গেলো। - কে কান্দে? - আমার মামাতো বোন। - নাম কি? - এশা।

- নাম কি? - এশা। “আজকে ওর বড় আপুর জন্মদিন। “- আমি বলে উঠলাম। - তুমি যাবা? - না। - কেন? - আমাদেরকে দাওয়াত দেয়নি! - কেন দেয়নি? - জানিনা! - কেন জানোনা? - “এত কথা বলে না! রঙ কর।

“- ওর উত্তর দিতে দিতে আমি হাঁপিয়ে উঠি। - তোমার জন্য একটা চকলেট আনছি। - দেও তাহলে? - না দেবোনা! - আমি খাবো তো। (আমি মজা করে বলে উঠি) - তাইলে আমাকে উই রংটা দ্যাও। - কোন রংটা? তোমাকে তো সব রঙ এখানেই দিয়ে দিয়েছি।

- না, কালকের ঐ রংটা! - কালকের কোন রঙ? ওর কালো রংটা খুব পছন্দ। ওর আম্মু আমার কাছে রঙ এর বক্স কিনে দিয়ে গেছে। আমার কাছেই রাখতে বলে দিয়েছেন। নইলে বাসার দেয়ালে রঙ করে ঘর নষ্ট করে। ভাড়া বাড়িতে এইসব করলে বাড়িওয়ালার কথা শুনতে হয়! আর, পিচ্চিটাকে খাতা কিনে দিলে একবারে সব পৃষ্ঠা একদিনেই দাগিয়ে নষ্ট করে ফেলে।

বকা দিলে জেদ করে। চিল্লাচিল্লি করে। আন্টিরা কনট্রোল করতে পারেনা। আবার প্রতিদিন একটি করে খাতা কিনে দেওয়াও সম্ভব না। আমি পরে বুদ্ধি দিলাম, “আন্টি, আমার কাছে এক দিস্তা সাদা কাগজ কিনে দিয়ে যাবেন।

আমি ঐখান থেকে একটি বা দুটি পৃষ্ঠা ব্যবহার করাবো। আমার সাথে তো জেদ করে পোষাতে পারবে না। “ আন্টির খুব পছন্দ হয়েছে কথাটা। এভাবেই মাস তিনেক চলছে। তো যা বলছিলাম, ওর কালো রং টা চাই।

আমি দিতে চাইছিনা ওইটা। কারণ-ও সবগুলো রঙ এর সাথের কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছে। রঙ করতে গিয়ে হাতে রঙ লেগে যায়। কালো রংটা বেশি ছড়ায়। গতদিন এসেছিলো পুরো হাত মাখিয়েছে।

আবার সেই হাত ধোয়াও। কত্ত ঝামেলা। আমি গতদিনই রাগ করে বলেছি, “এই রঙ আর ব্যবহার করতে হবেনা। এই দেখো ফেলে দিলাম। “ বলে লুকিয়ে রেখেছি।

আজ সে ঐটার কথাই বলছে। ঐটা দেবার জন্যে সে আমাকে চকলেট দিয়ে ভুলাতে চায়। - আমি এনে দিলাম কালো রংটা। তারপরে মনে করে বললাম, “কই দেও আমার চকলেট। “ - চকলেট তো আনি নাই।

আমি ওর চালাকিতে অবাক হয়ে গেলাম। “আনো নাই?” - না! (বলেই দুষ্টুমি হাসি!) - আমি হেরে গেছি। আর কি বলব? - বাচ্চাদের মত আমি বলে উঠলাম, “ ঠিক আছে লাগবেনা। আমি মিষ্টি খাবো। “ - আমিও খাবো।

- এই রে মরেছে। এখন মিষ্টির গন্ধ পেলে তো খেতে চাইবে। তার উপর কয়টা খেতে চাইবে তারও ঠিক নেই। আমি বলে উঠলাম, “মিষ্টি তো নাই। খেয়ে ফেলেছি!” - কেন খেয়ে ফেললা? আমাকে দেওনাই কেন? - আমার বাবা আমার জন্য আনছে তাই আমি খাই।

- আমি খাবো তো। - তুমি তোমার বাবাকে বইলো তোমার জন্য আনবে। - আমি ছুটুবেলায় অনেক মিষ্টি খাইছিলাম। - তোমার ছোট বেলায়? - হুউউ!! - আমার আম্মুকে ফুন কইরা দ্যাও, আজকে আর পোড়মু না! - আচ্ছা ঠিক আছে। - ফুন কইরা দিছো? - হ্যাঁ।

কয়েক মিনিট পর ওর ভাই আসে ওকে নিতে। - তুমি আসছো ক্যান? আম্মুকে পাঠাইতে পারলা না? - আম্মু আসবে না। চলো। - নাআআআ... আমি যামু না! ভাইটা বলে উঠে, “বাসায় এত্ত জ্বালায়!!” আমি বলে উঠি, “আমার কাছে জ্বালায় না। অনেক কথা বলে।

একটা পুতুলের মত লাগে আমার। “ ভাইটা হেসে উঠে। তারপরে দুই ভাই একসাথে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে যায় কথা বলতে বলতে। আমি তাকিয়ে থাকি ছোট্ট পুতুলটাকে নিতে আসা হাই স্কুলে পড়ুয়া ভাইটার দিকে। দুজনের দুইরকম সাইজ দেখে আনমোনা হেসে, দরজা লাগাতে ঘুরে দাঁড়াই।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।