সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!! "কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত" প্রায়শই এমন অভিযোগ শুনা যায়। ঠিক এ মুহুর্তে আমার কাছে এমন তথ্যের কোন বিশুদ্ধ পরিসংখ্যান নেই। পরিসংখ্যান না থাকলেও প্রায় সময়ে পত্রিকার পাতায় জঙ্গীবাদের অভিযোগে ধৃত যেসব জঙ্গীদের ছবি ছাপা হয় বিস্তারিত পড়লে জানা যায় তাদের বেশিরভাগই কওমী মাদ্রাসার ছাত্র। ২০০৫ সালের আগস্ট মাসে সারাদেশে একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ও পরবর্তীতে বিচারালয়গুলোতে বোমা বিস্ফোরণের সাথে জড়িতরাও অধিকাংশ কওমী মাদ্রাসার ছাত্র।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই লোকগুলো কি নিতান্তই শখের বশে এমন হিংসাত্মক কাজে জড়িত হচ্ছে? না তেমনটা না।
এটা আসলে সামাজিক অবক্ষয়ের একটি অংশ। সোজাভাষায় বলতে গেলে এটা পরিস্কার আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা। আপনি জেনে থাকবেন যে কওমী মাদ্রাসাগুলোর কোন সরকারি স্বীকৃতি নেই। এখান থেকে পড়ালেখা করা অধিকাংশকেই কোন মসজিদে ইমাম-মুয়াজ্জিনের কাজ কিংবা কোন কওমী মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতে হয়। এদের কর্মসংস্থানের আর কোন সুযোগ নেই।
ফলে অধিকাংশের ভাগ্যেই জোটে বেকারত্ব। এসব কর্মহীন বেকার যুবকদের সহজেই বিপথে পরিচালিত করা যায়। পেশাদার জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা আদতে সে সুযোগটাই গ্রহণ করে।
কওমী মাদ্রাসাগুলোর সরকারি অস্বীকৃতির সিদ্ধান্তে আমি পুরোপুরি একমত। আমি মনে করিনা এ ধরণের সনাতন পদ্ধতির শিক্ষাব্যবস্থার আদৌ আর কোন প্রয়োজন আছে।
এটা যুগ, সমাজ চাহিদা মিটাতে সম্পূর্ণ অক্ষম। কাজেই এ শিক্ষাব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার কোন যৌক্তিকতা নেই। কিন্তু সরকার তাঁদের শিক্ষাকার্যক্রমকে স্বীকৃতি না দিলেও পুরো বিষয়টিতে সরকারের আচরণ এক্ষেত্রে দ্বিমুখী। সরকার এ মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষাকার্যক্রমের কোন স্বীকৃতি দিচ্ছেনা। আবার এ মাদ্রাসাগুলো বন্ধও করছেনা।
ফলে মাদ্রাসাগুলো থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত বেশিরভাগ ছাত্রই শিক্ষা শেষে কোন কর্ম খুঁজে পায়না। এরফলে তাঁরা এক ধরণের হতাশায় ভোগে। তাদের ধারণা জন্মে প্রচলিত এই ব্যবস্থাটাই তাদের অনুন্নয়নের প্রধান কারণ। প্রচলিত ব্যবস্থার প্রতি ঘৃণাপোষণকারী এ কর্মহীন গোষ্ঠীটিকে পেশাদার জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা সহজেই কব্জায় নিয়ে নিতে পারে।
শিক্ষা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরী পাওয়ার অধিকার ব্যক্তির সংবিধান স্বীকৃত অধিকার।
আমাদের সংবিধান রাষ্ট্রের প্রতিটি ব্যক্তিকে এ অধিকার দুটোর নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। কওমী মাদ্রাসার ছাত্ররাও রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে যুগোপযুগী শিক্ষা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরী পাওয়ার অধিকার রাখেন। সাধারণত দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরাই কওমী মাদ্রাসায় শিক্ষাগ্রহণ করে থাকে। বেশিরভাগ বাবা-মায়ের তাদের সন্তানকে লালন-পালনের পাশাপাশি শিক্ষা দেওয়ার সামর্থ্য রাখেননা। বেশিরভাগ কওমী মাদ্রাসার সাথেই এতিমখানা সংযুক্ত থাকে।
ফলে এখানে সন্তানকে পাঠিয়ে বাবা-মা তার লালন-পালনের দায় থেকে মুক্ত থাকেন। শিক্ষা যতটুকুন পাওয়া যায় তা বাড়তি পাওনা।
কওমী মাদ্রাসার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সেখানে অধ্যয়নরতদের পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো বিশেষ করে দারিদ্রতার বিষয়টি অবশ্যই আমলে নেয়া উচিত। বাধ্যতামুলক প্রাথমিক শিক্ষা হয়তো শিশুকে বিনামুল্যে শিক্ষার নিশ্চয়তা দিয়েছে কিন্তু দারিদ্রতার কারণে তার রুটির অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার বা মাদ্রাসামুখী হওয়ার এটা অন্যতম কারণ।
উপবৃত্তি কার্যক্রমটি যথেষ্ট নয়। এর আরো বিস্তার প্রয়োজন। তাছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের মতো ছেলেদেরও শিক্ষা ফি অবৈতনিক করা প্রয়োজন। অন্য কোন খাতে ব্যয় কমিয়ে বা সংকোচন করে হলেও এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
মোদ্দাকথা হচ্ছে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তনের স্বার্থে কওমী মাদ্রাসাগুলোর বিষয়ে সরকারের আশু গঠনমূলক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে মাদ্রাসা- শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভুতির দৃষ্টি নিয়ে। কারণ তাঁরাও রাষ্ট্রের নাগরিক, রাষ্ট্রের উপর তাদেরও সমান অধিকার আছে। তাদের যুগোপযুগী শিক্ষার অধিকার আছে, আছে কাজ পাবারও অধিকার। বর্তমান অবস্থায় সরকার কওমী মাদ্রাসাগুলোর স্বীকৃতিদান থেকে বিরত থেকেই তার কর্তব্য শেষ করছে। তাদেরকে বিকল্প শিক্ষার দিকে প্রণোদিত বা বাধ্য কিংবা ব্যবস্থা করছেনা।
উপরন্তু তারা মাদ্রাসাগুলো বন্ধও করছেনা। ফলে হাজার হাজার ছাত্র এ মাদ্রাসাগুলো থেকে পাস করে বেকার অবস্থায় দিন কাটায়। একটা সময় দেখা যায় বেকারত্বের এই হতাশা থেকে তাঁরা জড়িয়ে পড়ছে নানা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডে।
অবশ্য হুট করেই এ শিক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ করা সরকারের সম্ভব নাও হতে পারে। এর সাথে দেশী-বিদেশী নানা ক্ষমতাধর শ্রেণী বা গোষ্ঠী জড়িত আছে।
ভোটের রাজনীতির কারণে সরকার হয়তো এদের চটাতে চাইবেনা বা পারবেনা। 'ডকট্রিন অব নেসেসিটি' অনুযায়ী সরকার যদি এটা মনেও করেন যে এ মাদ্রাসাগুলো তাদের পক্ষে ঠিক এ মুহুর্তে বন্ধ করা সম্ভব নয় তথাপি প্রাথমিক কাজ অনুযায়ী সরকার এ মাদ্রাসাগুলো শিক্ষা কার্যক্রমে পরিবর্তন আনতে বাধ্য করতে পারেন। আরবী শিক্ষার পাশাপাশি আবশ্যিকভাবে একটি যুগোপযুগী কর্মমুখী শিক্ষা সম্বলিত সিলেবাস প্রবর্তন করতে পারেন। যেসব মাদ্রাসা এ সিলেবাস গ্রহণ করবে তাদের প্রয়োজনীয় সরকারী স্বীকৃতি দিতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পেতে পারে। আর যেসব মাদ্রাসা সরকার প্রবর্তিত সিলেবাস মেনে নিতে অস্বীকার করবে সেগুলো আবশ্যিকভাবে বিনা-ব্যর্থতায় বন্ধ করে দিতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।