এই ব্লগটি নোমান বিন আরমান'র দায়িত্বে প্রবর্তিত। এখানে মাঝেমধ্যে তিনি আসেন। numanbinarmanbd@gmail.com
কওমী মাদরাসা : জোসনায় কেনো অন্ধকার
নোমান বিন আরমান
(যারা পড়েনিন তাদের জন্য আবার পোস্ট করা হলো। বিষটি সম্পর্কে সবার মতামত, চিন্তা ও পরামর্শ দরকার। তবু পুঃন পোস্ট এর জন্য কেউ বিরক্ত হলে `দুঃখপ্রকাশ' করব।
ধন্যবাদ)
শিক্ষাকে ইসলাম যতটা গুরুত্ব দিয়েছে, অন্য কোনো ধর্ম ততটা নয়Ñ এমনটা শুধু দাবি নয়, অসংকোচেই বলা যায়। ইসলাম প্রসারের শুরুর সময়েই মক্কায় রাসূল সা, এর মাধ্যমে দারুল আরকাম থেকে নিয়ে মদীনা মুনাও ওয়ারার আসহাবিস সুফফাহ এবং সর্বশেষ সব প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা আয়োজন আর তালিম-তরবিয়ত এসবের চিরকালীন উপমাÑ সঞ্জীবনী প্রেরণা। মাদরাসা নামে এসব প্রতিষ্ঠান এখন ইসলামের শিক্ষাকেই প্রধানত পরিচিত করে। আর কোনো ধর্মের শিক্ষার এমন একক পরিচয়বাহী নাম রয়েছে কি না সন্দেহ। শিক্ষাকে ইসলামে কতভাবে যে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সেসব আলোচনার সতন্ত্র বিষয়।
কুরআন, হাদীস আর ইসলামের ইতিহাস থেকে এর জন্য উপমার পর উপমাই দেয়া যাবে। জিহাদকে যদি ইসলামের প্রতিরক্ষা আর সার্বভৌমত্বের নিয়ামকশক্তি বলি, তবে অনিবার্যভাবেই শিক্ষাকে তার জীবন বলব। শিক্ষা ছাড়া ইসলাম পাথর আর মূর্তির চে’ বেশি কিছু নয়। জীবন্ত তো নয়ই।
অন্যভাবে বললে, ধর্ম বলতে এখন যা বুঝায়Ñ ইসলাম কখনো তা নয়।
কিছু রসুম আর উপাসনার নাম ইসলাম নয়। অবশ্যই। ইসলাম সর্বকালীন মানবের একটি জীবননির্দেশিকা। আর শিক্ষাই তার প্রধান ও মৌলপ্রাণশক্তি। তাই যতদিন ইসলামের সাথে শিক্ষার আলো থাকবে ততদিন সে বিশ্বমানবের, সর্বকালের মানুষের পথনির্দেশ করতে পারবে।
যেদিন এই শিক্ষা বিষয়টিকে ‘ধর্ষণ’ করে ইসলামকে ‘ধর্ম’ বানিয়ে ফেলা হবে সেদিনই তার মৃত্যু। বাকি থাকবে শুধু লাশ। আর লাশ তো এমনই যার নিজেকেই অন্যদের বহন করে নিতে হয়। সে কখনো কাউকে বহন করতে পারে না।
এই শিক্ষার আলো না থাকার কারণে পৃথিবীতে কত ধর্ম, আর সভ্যতা-সংস্কৃতি যে অঙ্কুরেই হারিয়ে গেছে, মরে গেছেÑ তার কোনো হিশেব নেই।
এদের কতগুলোর লাশেরও এখন অস্তিত্ব নেই। অথচ এসব ঠিকই তার সময় ও পরিবেশকে কাঁপিয়ে তুলেছিলো। শ্রেষ্ঠত্বের অহমে আকাশ ফুঁড়ে মাথা তুলতে চেয়েছিলো। গিলে খেয়ে ছিলো আর সব কিছুকে। কিন্তু এখন এ সবের কোনো হদিস নেই কেন।
কারণ, শিক্ষার আলো এরা মানুষের হাতে তুলে দিতে পারেনি। এসব বিষয় আল্লাহর খুব জানা ছিলো বলেই উম্মি রাসূলকে শুরুতেই তিনি শিক্ষিত হতে বললেন। আর শিক্ষার সঠিক আলো যেহেতু তখন ছিলো না, তাই রাসূলকে শিক্ষা দেবার জন্য তিনি ‘এগিয়ে এলেন’। দূত করে পাঠালেন জিবরীলকে। আর এই আসমানি দূত তাঁকে শিখালেন সব।
তারপর রাসূল বললেন, বু-ইসতু মুয়াল্লিমান।
শিক্ষার বিষয়টি আরও অনেকের রয়েছে। তারা ‘শিক্ষা’ দিচ্ছে মানুষকে। তবে তার সিংহভাগ না বলে বলা ভালো সবটাই আত্মকেন্দ্রিক ও একমুখী। দুনিয়াটা লুটেপুটে খাবার শিক্ষাই এদের কাছে ‘জ্ঞানের’ উদ্দেশ্য।
সৃষ্টির সেবা নয় মোটেই। রুটিরুজি আর আখের গোছানোর ধান্ধাটাই এখানে প্রথম। স্রষ্টা আর পরকাল তাদের কাছে অপেয়াঙক্ত। মানবতা, নৈতিক মূল্যবোধ আর মনুষ্যত্ব এদের কাছে অচ্ছুত। মোটকথা এই শিক্ষা যতটা খাও-দাওর পাঠ দেয় ততটই দূরে রাখে সময়, সমাজ, রাষ্ট্র আর মানুষের প্রতি সহমর্মীতা আর দায়িত্ববোধ থেকে।
আর এই দূরে রাখাটাও ‘শিক্ষার’ খোলসে। জ্ঞানের অহমে। ফলে অনেকেই ধোঁকায় পড়েন। পড়িয়েও স্বর্বস্বান্ত হন আখেরে। দায় চাপে বিবেকের।
কষ্ট বাড়ে হৃদয়ের। সুখের ‘নিড়’ আর রচনা হয় না। অট্টালিকায় কাঁদে নি®প্রাণ ‘মানুষ’। হাকার আসে প্রসাদ থেকে। জীবন যন্ত্রণায় দগ্ধ মানবের ক্রন্দন ভারী আর নীল করে কোমল হাওয়াকে।
আকাশভরে জমীনে নামে অন্ধকার।
এই দায় থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করতে ইসলাম প্রসার করে ছিলো ওয়াহীর শিক্ষা। যে শিক্ষার আলো জোছনা থেকে কোমল, ঝরনার জল থেকে স্বচ্ছ, আবে হায়াত থেকেও চিরন্তন, চিরঞ্জীব। জমজম থেকেও পবিত্র, সেই শিক্ষাটাই ধূলোর মানুষের জন্য নিবেদন করা হয়েছিলো। যারা একে গ্রহণ করেছিলেনÑদুনিয়া দেখেছে তাদের বিজয়গাঁথা।
ওই শিক্ষাগ্রহণের ‘অপরাধে’ ‘সমাজপতি’দের হাতে নানা ভাবে তারা অসম্মান আর নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জন্মভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। বাধ্য হয়েছেন বাবার নির্যাতন সইতে, মায়ের অপমান সহ্য করতে আর ভাইয়ের ভ্রুকুটি দেখতে। তবুও তারা দমে জাননি। এক চুলও নড়েননিÑ ‘আধুনিক’ মানুষ হওয়ার জোসনা থেকে।
সেই আলোয়, মুহাম্মাদ সা.এর জোসনায় তারা নিরন্তর সাঁতার কেটেছেন। পবিত্র হয়েছেন। নিজেদের পৃথিবীর ভার গ্রহণের যোগ্য করে তুলেছেন। মুক্তোগ্রহণ করেছেন। সব ছেড়ে এসেও তাই হারাননি কিছু।
বরং পেয়েছেন বিপুল। অগণন। হিন্দু এক কবির একটি স্তবক বিষয়টি বুঝতে আমাদের সহায়তা করতে পারে :
কত অজানারে জানাইলে তুমি
কত ঘরে দিলে ঠাঁই
দূরকে করিলে নিকট বন্ধু
পরকে করিলে ভাই।
০ দুই ০
আমাদের শিক্ষাটা ওয়াহীর হলেও তার পুরো ফল কিন্তু আয় করতে পারছি না। আকৃষ্ট করার মত কিছু দিতে পারছি না সময় ও সমাজকে।
সময় ও সমাজকে দেয়া তো পরের, নিজেও নিতে পারছি না সবটুকু। ফলে বিপুল মানুষ এখনও ওয়াহীর জোসনালো থেকে বঞ্চিত। স্বর্গসুখ থেকে দূরে সকল জাতি। এই দায় বা দায়িত্ব কার। কেউ একজনকে তো দায়িত্ব নিতেই হবে।
কিছু একটা যখন ঘটে যায়, তখন কল্যাণের স্বার্থে দায় স্বীকার জরুরি, বোধ করি। আর এই দায়টা আমার মনে হয় নিতে পারে কিংবা নেয়া দরকার কওমী মাদরাসার। কারণ রাহবার বলতে এখন যে কেবল এই এক প্রতিষ্ঠানই। এই কওমী মাদরাসা ছাড়া কে আর এখন পৃথিবীব্যাপী মানুষের জন্য আশার মোম জ্বালবে। ঝড়হাওয়ায়ও আলো নিয়ে এগিয়ে আসবে।
পথ দেখাব দিনান্ধকে। অসংকোচে বলতে পারি, কওমী মাদরাসাই এখন কাণ্ডারি।
তবে এর জন্য তাকে যেটা করতে হবে, তা হলোÑ আত্মপরিচয় ও আত্মউপলব্ধি। কওমী মাদরাসাকে এখন এটা খুব করে ভাবতে হবে, দুদিনের রুটিরুজির কোনো শরাইখানা সে নয়, সে হচ্ছে সসময় ও অনাগতকালের আলোককেন্দ্র। দিশারী।
কোনো এক আবদ্ধ দালান কোটা বা গাছতলা কিংবা টিনশেডের গরীবি কোনো আস্তানার নাম কওমী মাদরাসা নয়। কওমী মাদরাসা সেই মারকাজ যে খানটায় প্রত্যহ সূর্যোদয় হয়। আশার চাষাবাদ। নূতন নূতন সৃষ্টি হয়। স্বপ্নরা নিত্যদিন বায়ূ পায়।
খাদ্য পায়। মহিরুহু হয়। যেখানটায় মহাকালের স্রষ্টার তৈরি হয় সেই আলোককেন্দ্রের নামই কওমী মাদরাসা। ভুলে যায় এই সত্যকে নূতন করে হৃদয়ে জাগাতে হবে, ধারণ করতে হবে। উল্টো পথে হাঁটা পা’কে সামনের দিকে বাড়িয়ে দিতে হবে ঐশ্যিক সাহসে।
শঙ্কা বা জড়তা নয় ‘খলিফা’র অবিচলতায় দৃঢ় পদে এগুতে হবে মানুষ ও সৃষ্টির জন্য। কোনো মাতাল হাওয়ায় একদণ্ডও ভয় পাওয়া যাবে না।
যুগটাকে বদলে দেয়ার যে নৈতিক ও আত্মিক শক্তি দরকার, সেটাতো রয়েছে কওমী মাদরাসারই। আল্লাহয় যদি বিশ্বাস রাখেন, সত্য হয় কুরআন-হাদিসÑ তাহলে পৃথিবীর কোথাও এই ‘ঔদ্ধ্যত্ব’ দেখাতে মিনমিন করব না। এই বিশালসব সৃষ্টি যদি আল্লাহর হয়।
আর আমি আপনি, তুমি তার ‘খলিফা’ হইÑ তাহলে, সৃষ্টির কোথায় পরিবর্তন হবে, সীমানা কী হবে। কীভাবে হবে। কেমন করে হবে। তা নিয়ন্ত্রণ করার নৈতিক শক্তি তো কেবল এই আপনার, আমার, তোমারই। এককভাবে ইলমে ওয়াহীরই।
এই সত্য উপলব্ধিতে সময়ব্যয় কেনো। হীনমন্যতা কেনো। ওয়াহীর শক্তিস্বাদ যদি আস্বাদন না হলো, তবে কেনো যুগ যুগ থেকে এই কুরআন, হাদিসে মাথা ঠুকা। কেনো তবে বেহেশতের আশায় ‘বুঁদ’ থাকা। ছুঁড়ে ফেলো সব কিছু।
ভাঙ্গ আর ভেঙে দাও সব, সব কিছু। আবার ধ্যান বসো। মদীনায় যেয়ে রাসূলকে জিজ্ঞেস করো, শুধু ‘ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের’ দালান নির্মাণ জন্য তিনি সোয়া লক্ষ খলিফা তৈরি করেছিলেন কি না?
জাহেলী অন্ধকারে ওয়াহী তো এসেই ছিলো আলো নিয়ে। আশার আলো। মুক্তির আলো।
জীবনের আলো। সমৃদ্ধির আলো। তবে সেই আলো নিয়ে কেনো আমরা এখন অন্ধকারে। কেনো অন্য আলো সেখানে অলো বিস্তারের নামে অন্ধকার কে দুর্ভেদ্য করে তুলছে। নৈরাজ্য ছড়াচ্ছে! জাহেলী অন্ধকার কেনো আবার নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে ‘সক্ষম’ হচ্ছে! এর জন্য কি আকাশের ফেরেশতারা দায় নেবে।
দায় তো নিতে হবে ওয়াহীর ধারকবাহক কওমী মাদরাসাকেই। কোনো কথায় আহত নয়, শরীরটাকে যন্ত্র করুন। ‘জাহেলী ঐতিহ্যপ্রীতি’ ভুলে কুরআন-হাদীসের আলোয় পথ দেখুন। জগৎ আর জাতিকে পথ দেখান। না হয় ফেরআউন, নমরুদ আর আবু জাহলদের মুখ দেখানো যাবে না!
০ তিন ০
একটি প্রশ্ন করা যাক, আমাদের কাছে প্রাধ্যান্য কারÑদরসে নেজামী না কুরআন হাদীসের।
নিশ্চয় কুরআন-হাদিসের। আরেকটি প্রশ্ন, কুরআন-হাদিস সর্বকালীন না সমকালিক। সর্বকালীন। আর দরসে নেজামী? সমকালিক। এই বিষয়টি গভীরভাবে বুঝতে হবে।
দরসে নেজামীকে যদি কুরআন-হাদিসের মত অবশ্য বিষয় ধরে নেয়া হয়, তাহলে ইসলামকে শ’শ’ বছর অতীতে রেখে আসতে হবে। যে সময়টায় দরসে নেজামী প্রণয়ন হয়ে ছিলো ওই সময়ের জন্য এটা ‘নিশ্চিতভাবে কল্যাণকর ও প্রয়োজন পূরণে’ সক্ষম ছিলোÑ এমনটা বলতে পারি। দরসে নেজামী ওইসময় সমকালীন ছিলো। আর সেটি প্রণয়ন হয়েছিলো ওই সময়ের জন্য। কারণ এর প্রণেতা ছিলেন আমাদের মতই রক্ত মাংসের মানুষÑ প্রভু নন।
গাইব তিনি জানতেন না। ভবিষ্যৎও কী হবে, কেমন হবে তা তার ভাবনার ত্রি সীমানায়ও ছিলো না। তিনি জানতেন না, একসময় মানুষ ‘নীল আকাশে’ যাবে। সমুদ্রের তলদেশ চষে বেড়াবে। মঙ্গলে যান পাঠাবে।
দুনিয়ার চেহারা এমন করে আমূল পাল্টে যাবে। এ সব জানা তার দরকারও ছিলো না। তখন তার এটুকুই জানলে চল তো, কুয়ার পানি কীভাবে পাক করতে হবে। উট, ঘোড়ায় সোয়ারী হলে নামাজ কীভাবে পড়তে হবে। তিনদিনের পথ অতিক্রম করলে কসর করতে হবে কি নাÑ এইসব বিষয়ই তার জানার দরকার ছিলো।
কিন্তু আমাদের সময়ে এসে এখন শুধু ওই আগের সিলেবাস নিয়ে পড়ে থাকলে, পড়েই থাকতে হবে। এগুনো যাবে না। এই বোধটির বয়স মোটামুটি কম হয়নি। কিন্তু তবু এগুনো হচ্ছে না। না হওয়ার বিস্তর কারণ আছে।
বলতেও মানা আছে। তবে সময় আরো কঠিন হওয়ার আগে এ দিকে চোখ দেয়া দরকার।
পরিবর্তন বা সংস্কার দরকার পাঠপদ্ধতিতেও। যে নিয়মে এখন পাঠদান হয়, নানা দিক থেকেই এর অনুপযোগিতা প্রমাণ করা সম্ভব। আমাদের দরস থেকে একটু ঘুরে আসা যাক ।
৩৬৫ দিনের বছরে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো লাযিমীভাবে ‘বন্ধ’ থাকে (ক্লাস শুরুর আগপরে) প্রায় ২ মাস (রামযান পুরো মাস ও শাবান শাওয়ালে ২৫ থেকে ৩০ দিন) তারপর ঈদুল আযহার পর ১০ দিন এবং তিনটি পরীক্ষায় (কমপক্ষে ৫ দিন করে) ১৫ দিন। বিভিন্ন দিবসের ছুটি úালন আরো অন্তত ৭ দিন। এর মধ্যে শুক্রবার রয়েছে প্রায় ৪০ দিন। এ ছাড়া পরীক্ষার কারণে, ঈদের ্অজুহাতে পাঠদান (ক্লাস) হয় না আরো কয়েকদিন। এর সাথে রাজনৈতিক কর্মসূচিকে যোগ করলে বন্ধের দিন আরো বাড়বে।
এসব ছাড়াই ৩৬৫ দিনে মাদরাসায় পাঠদান বন্ধ থাকছে কমপক্ষে ১৩২ দিন। বাকি রইলো ২৩৩ দিন। এই দিনগুল্য়োও যে নিরঙ্কুশ পাঠদান হয়, তা কিন্তু নয়। এই সময়েও তিনটি পরীক্ষা চলাকালে ক্লাস বন্ধ থাকছে অন্তত ১০ দিন করে ৩০ দিন। তাহলে ২০৩ দিন মাত্র ছাত্ররা পাঠগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে।
এই সময়টা যে তাদের নেসাব পূরণের জন্য মারাত্মক রকমের কম তা তো প্রতিদিনই মাদরাসার দেয়ালে লেখা হচ্ছে। এই সময়-অভাব ও পাঠদান পদ্ধতির কারণে ছাত্ররা শিক্ষাগ্রহণে নাকাল হচ্ছে আর শিক্ষকদের থাকতে হচ্ছে নেসাব ‘শেষ’ করার ‘প্রতিযোগিতায়’। ফলে ‘একান্ত ইচ্ছে’ থাকলেও হৃদয়মনের তৃপ্তি নিয়ে পাঠদান করতে পারেন না শিক্ষকরা। পাঠের ‘পাগলা ঘোড়া’ তাদের ছোটাতে হয়, বাধ্য হয়েই ‘চলিয়ে ভাই’ তাদের বলতে হয়। এ ছাড়া উপায় কী?
এ বার চোখ ফেলি সময়ের দিকে, যে ২০৩ দিনের একটি খসড়া হিশাব আমরা করে এলাম, এই সময়ও পুরোটাই ক্লাস কিন্তু হচ্ছে না।
২০৩ দিনে সাকুল্যে সময় হচ্ছে ৪,৮৭২ ঘণ্টা। আর ক্লাস হচ্ছে প্রতিদিন ৭ ঘণ্টা করে (সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪টা) সর্বমোট ১,৪২১ ঘণ্টা। মায়নাস ৩,৪৫১ ঘণ্টা! এই বিপুল সময়ট্য়া টোটালই ক্লাস হচ্ছে না। তাহলে পুরো বছরের সময়ের সারাংস হলো, ৪, ৮৭২ ঘণ্টার বছরে ক্লাস হচ্ছে মাত্র ১,৪২১ ঘণ্টা আর ৩, ৪৫১ ঘণ্টার বিপুল সময়টায় ছাত্ররা থাকে ক্লাস ছাড়া। এই সময়টা পাঠ তৈরি, খাবার-দাবার, ‘অবসর’ আর ঘুম ও ‘প্রয়োজন’ পূরণে ব্যয় হচ্ছে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, পাঠ তৈরিতে গড়ে ছাত্ররা সময় ব্যয় করছে সকাল (যদি হিসাবে ধরি, কারণ প্রায় সবখানেই ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ ছাত্র এ সময়ও (ফজর পর থেকে ৯টা) এখন ঘুমায়!) ও মাগরিব পর থেকে ঘুমোনোর আগ (এশার নামায, রাতের খাবারসময় ছাড়া রাত ১১টা) পর্যন্ত বড়জোর ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। (এই হিশেবটা অঞ্চল ভেদে কমবেশি হতে পারে)। বাকি সময়টা নানান ‘কাজে’ ব্যয় হচ্ছে।
এবার সরাসরি ক্লাসে ঢুকি। প্রতি ‘ঘণ্টার ক্লাস হচ্ছে মাত্র ৪৫ মিনিটের।
বৃহস্পতিবারে অনেক প্রতিষ্ঠানে আবার তা ৩০ মিনিটের। আমরা কথা বলবো ৪৫ মিনিটের হিশেব ধরেই। এই ৪৫ মিনিটিরে কম সময়টায়ও পাঠদান হচ্ছে সেটা কিন্তু বলা যাবে না। এর সাথে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক কিছু বিষয় এবং ‘হাজিরা ডাকা’। এই হাজিরা ডাকতে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট ব্যয় হয় (ছাত্র একশোর মধ্যে হলে)।
রইলো চল্লিশ মিনিট। ক্লাসের মধ্যে কোনো বিরতি যেহেতু নেই, তাই অনেক সময়ই নির্ধারিত সময় থেকেই এক হযরতের বিদায় ও অন্যজনের আগমনে ব্যয় হয় অন্তত আরো পাঁচ মিনিট। তো বাকি থাকে ৩৫ মিনিট। কাহিনী আছে এই সময় নিয়েও। অনেকে আলীয়া আউয়াল (কাফিয়া-শরহেজামী/শরহে বেকায়া) থেকে দাওরায়ে হাদিসের ক্লাসে এখনো দারস দেন আরবী থেকে উদু।
উর্দু থেকে বাংলায়। ওই সব ক্লাসের প্রায় সবগুলো কিতাব-ই আরবী হওয়ায় প্রথমে তাকে আরবী ‘মতন’ (মূলপাঠ) পড়তে হয়। তিনি সেটা পড়েন। তারপর ছাত্রদের উদ্দেশে এর তরজমা করেন উর্দুতে। এই উর্দু তরজমার আবার অনুবাদ করেন বাংলায়।
তো ফল দাঁড়াচ্ছে একটি মাসয়ালা বা একটি প্যারা যদি তিনি পড়ান (মূলপাঠ) ১০ মিনিটে, তাহলে এর উর্দু ও বাংলা অনুবাদে ব্যয় হচ্ছে আরও ২০ মিনিট। ৩৫ মিনিটের মধ্যে ৩০ মিনিট খতম। বাকি পাঁচ মিনিটে তিনি একটি পাঠের ‘সারর্মম’ দিতে পারেন না। এই যে হিশেবটা আমরা করলাম¬Ñ এও কিন্তু শেষ না। মূলপাঠ অনেক ক্ষেত্রেই ১০ মিনিটও ধরা সম্ভব নয়।
কারণ অনেক শিক্ষককেই মূলপাঠটি বুঝাতে সময় নিতে হয় (এক ভাষায় বললেও) দুই থেকে তিনগুণ। একাধিক ভাষায় পাঠ হলে মূলপাঠ ক’মিনিটের হচ্ছে তা যাচাই করা যেতে পারে। কিন্তু কেউই সময়টাকে এভাবে বিচার করে দেখেন না। কোনো কোনো সময় তারা ক্লাসে এতো কথা বলেন যে, মূল বিষয়ে ফিরে আসার আগেই তার জন্য ‘ঘণ্টা’ পড়ে যায়। এ কারণে যেটা হয়, খারেজী ক্লাসে ‘নাকেমুখে’ না হলে নেসাব শেষ করা সম্ভব হয় না।
কিন্তু এভাবেই তিনি নেসাব শেষ করেন। কে কী বুঝলো তা দেখার তখন সময় থাকে না। তবে উল্টোটিও আছে, অনেকে ৪৫ মিনিটের সময়ও শেষ করতে পারেন না। ‘সবক’ দিয়ে তাকে নানা কিছু করতে হয় কিংবা ‘আব্বাস আর গাবগাছ’ জাতীয় অন্তমিলের ‘গল্প’ করতে হয়। তাদের কাছে ৪৫ মিনিটের সময়টা এতো দীর্ঘ ।
তাই এখানে তাদের নিয়ে কথা বলে সময় খরচ করবো না।
০ চার ০
তাহলে কী করতে হবে? ‘বড়রা’ থাকতে এই প্রশ্নের উত্তর করা আমার জন্য আসলেই কঠিন। তবু ‘নাচতে নেমে ঘুমটা’ খুঁজবো না। কথা অবশ্যই বলবো। কারণ, আমি যা বলছি তা তো কেবল ‘পরার্মশ’ বা প্রস্তাবনামাত্র।
নির্ধারণ তো করবে সময়ই। বিচার করবেন জ্ঞানীরাই। আমার ভাবনাটুকু শেয়ার করা অপরাধ হবে না নিশ্চয়।
কথা বলি সিলেবাসের উদ্দেশ্য নিয়ে। সিলেবাসের উদ্দেশ্য কী।
ষোলো বছরে (বেফাকের সিলেবাসে) হাতেগুণা কয়েকটি বিষয়ে ১৪৮টি গ্রন্থ পড়ানো হয়। এই সিলেবাসের উদ্দেশ্য কিÑ ‘জ্ঞানদান’ আর আলিম বানানো? না। এই ক’টি কিতাব কখনো কাউকে ‘আলিম’ বানাতে পারে না। ‘আলিম’ করার জন্য এই সিলেবাস প্রণয়নও হয়নি। সিলেবাস প্রণিত হয়েছেÑ সেলাহিয়্যত বা যোগ্যতা তৈরির জন্য।
যাতে এই কয়েকটি গ্রন্থ আয়ত্ব করে জ্ঞানের অসীম সাগরে যে কেউ ডুব দিতে পারে। কিন্তু অনেকের সমস্যা হলো এই ডুব দেয়াটাকে সে সাগরজয় ভাবে। মনে করে, সাত আসমান আর জমীন তার নোখে ভরে করেছে। বাস্তবতা হলো, এরা এই কয়েকটি কিতাব ছাড়া দুনিয়ার আর কোনো বিষয়ই বুঝতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে পঠিত কিতাবগুলোও বুঝে না।
এটা তো সিলেবাসের উদ্দেশ্য ছিলো না।
সিলেবাসের উদ্দেশ্য আয় না হওয়ার কারণ অনেকই থাকতে পারে। প্রথম ও প্রধান সমস্যা যেটি, তা হলো ভাষা আয়ত্ব করতে না পারা। মনখারাপ হতে পারে, তবু বলবো, কওমীর প্রচলিত সিলেবাস এখনকার ছাত্রদের ভাষায় দক্ষ করতে পারছে না। বাংলা ইংরেজি তো নয়ই।
যেটি মূল ভাবা হয়, সেই আরবী ভাষাই ৯০ ভাগেরও বেশি ছাত্র আয়ত্ব করতে পারে না। ফলে ষোলো বছর পড়ে ‘মাওলানা’ হয় ঠিকইÑ সারা জীবনেও সে ‘জ্ঞানী’ হতে পারে না। শিক্ষার সার্থকতা তার জীবনে প্রতিফলিত হয় না।
তাই সিলেবাস পরিবর্তনে সর্বাধিক প্রাধান্য দিতে হবে ভাষা শিক্ষার বিষয়টিকে। এর জন্য প্রতি ভাষার জন্য (বাংলা, আরবী, ইংরেজি) এক বা দু বছর মেয়াদী আলাদা কোর্স (ক্লাস) চালু করা যেতে পারে।
তার পর মন দেয়া দরকার সিলেবাস ‘প্রণয়ন’ ও বিন্যাসে। এ ক্ষেত্রে প্রচলিত ধারা পরিবর্তন করে আলীয়াস্তর থেকে বিষয়ভিত্তিক পাঠ দেয়া যেতে পারে। আর একই পাঠ প্রত্যেক ক্লাসে পড়ানোর যে রীতি সেটিরও পরিবর্তন দরকার। যেকোনো একটি বিষয়ে (প্রধান কিতাগুলোর সমন্বয়ে) একটি কিতাব করা যেতে পারে। তখন সেটি ছাত্রদের পক্ষে হৃদয়ঙ্গম করা ও বোঝা সহজ হবে।
এবং এর থেকে তারা উপকৃত হতে পারবে।
আরেকটি বিষয়ে নজর দিই, দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত শিক্ষাকে আমরা কি বলবো। অনেকে একে উচ্চশিক্ষা বলেন। পরিচয়ে লিখে তৃপ্তিবোধ করেন। আমার মনে হয়, দাওরায়ে হাদিসকে মাধ্যমিকশিক্ষা ধরে সিলেবাস ‘প্রণয়ন’ দরকার।
আর ভাষা ও বিষয়ভিত্তিক সিলেবাস তৈরি করে ষোল বছরের সময়টাকেও কমিয়ে আনা যায়। একই সাথে ছ’খানা হাদিসগ্রন্থই যদি দাওরার ছাত্রদের পড়ানো জরুরিই হয়, তাহলে এর জন্য অন্তত ২ বছরের কোর্স করা জরুরি। শিক্ষার স্বার্থে এর কোনো বিকল্প নেই। তবে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত পাঠগ্রহণ করে ‘আল্লামা’ বা ‘আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন’ মুফাসসিরে কুরআন হওয়া যদি উদ্দেশ্য হয়, তা হলে অবশ্য বলার কিছু নেই।
কিন্তু এখনকার বাস্তবতায় দাওরাকে এ কারণেই উচ্চ শিক্ষা বলতে আমি রাজি নই, কারণ প্রচলিত সিলেবাস আর পাঠদান কোনো ছাত্রকেই উচ্চ করে না।
শিক্ষিত করে না। কিন্তু এটাকে উচ্চশিক্ষা জ্ঞান করে অনেকেই ‘ইসলামের নিশান বর্দার’ ‘মুফাসসিরে কুরআন’ ‘আহলে সুন্নতের ভাষ্যকার’ ‘মুনাযিরে যমান’ আর ফারেগের বছর তিনেক পড়ে লাল রোমাল কিংবা শাদা পাগড়ি ও জুব্বা পরে আল্লামা বনার যে কদর্যতা শুরু হয়েছে, তার পরিণতি তো এখন চোখের সামনে। হাতে গুণা কয়েকজনকে বাদ দিলে প্রাজ্ঞ থাক ‘আলিম’ খুঁজে পাওয়া যায় না। সময় সমাজ আর রাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দেয়ার মানুষ এখন আমাদের নেইÑএর কারণ তো এই শিক্ষাহীনতাই। দু অক্ষর পড়েই ভাবে সে আল্লামা হয়ে গেছে।
দ্বীনের খেদমত এখন সে করতে পারে! অন্তত এই বিশেষণ বিভীষণদের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে এখকার দাওরাকে মাধ্যমিক ধরে উচ্চশিক্ষার সিলেবাস প্রণয়ণ জরুরি। যেখানটায় সময়, সমাজ, রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক বিষয়, বিজ্ঞান, ভূগোল, অর্থনীতি, ব্যাংকিং, বীমা, শেয়ার, পূজিবার, তাফসির, হাদিস, ফেকাহ ও প্রচলিত আইনের উপর বিশেষ কোর্স থাকবে। এই কোর্স সম্পন্নর পরই কেবল ‘মাওলানার’ সনদ দেয় দরকার। না হয় এখন যাও চলছে, বছর দশেক পরে মুর্খ কাউকে সময় ‘মাওলানা’ বলে স্বীকার করবে বলে মনে হয় না। এই বিষয়টি যতদ্রুত বুঝবোÑ মঙ্গল।
ভয় হচ্ছে কিছুটা, তবুও বলি, ফেকাহর পাঠদান ও বিষয় চয়নে ভৌগলিক সীমানা, পরিবেশ, সময় এবং মাযহাবপন্থীর বিষয়টি বিবেচনায় রাখা দরকার। ফেকাহর কল্যাণের জন্যই তা জরুরি। খোলাসা করি এবং কথা বলি শুধু এদেশের মাদরাসাগুলো নিয়েই। আমাদের ফেকার কিতাবগুলো (আলীয়স্তরের) ইখতেলাফী মাসআলায় পূর্ণ। এখানে হানাফীদের মাযহাব ছাড়াও অন্যন্য তিন মাযহাবের ইমামদের মতসহ অখ্যাত, অপ্রসিদ্ধ, ও অসমর্থিত (কেউ গ্রহণ করেননি এমন) মতও (রায়) স্থান পেয়েছে।
অথচ এখানের শিক্ষার্থী সবাই হানাফী। বাংলাদেশের ৩৮ বছরের ইতিহাসে অন্য কেনো মাযহাবের ৩৮জন ছাত্রও এসব প্রতিষ্ঠানে পড়েছে কি না সন্দেহ। তবু সেসব মাসআলা পড়ানো হচ্ছে। অথচ হানাফিদের তার নিজের মাযহাবের মতটি জানলেই চলে যাচ্ছে। কিন্তু না, এর সাথে তাকে আরো একশটি ‘মত’ শোনানো হচ্ছে।
এতে আখেরে যেটা হচ্ছে, নিজের মাযহাবের মতটিও সে ভালো করে রপ্ত করতে পারছে না। অথচ এই সব ইখতেলাফ যেভাবে পড়ানো হয়, তাতে মনে হবে কোনো ‘ডক্টরেট ক্লাস’ চলছে। সামনে বসে আছে ‘থিসিস’কারী ছাত্রছাত্রী, যারা এসব বিষয় জেনে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার সংগ্রামে রয়েছে। অথচ কী ক্ষতি হবে শাফী, মালিক বা হাম্বলের মতটি আমার না জানলে।
এ সব বিষয় জানার দরকার নেই, তা বলছি না।
জানা উচিত। তবে সবার জন্য জরুরি নয়। এই সব বিষয় ‘গবেষণার’ জন্য থাক। ফেকাহর প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জানা হয়ে গেলে আরও ‘অধিক তথ্যের’ জন্য সে ‘রিসার্স’ করতে পারে, কেউ তো তাকে বাধা দেবে না। কিন্তু প্রাইমারি বা মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীকে ধরেবেঁধে ‘গবেষক’ বানাতে হবে কেনো।
ব্যবহারিক জীবনে তো এসব তার কাজে আসছে না। জাতীয় কেনো অগ্রগতি উন্নতিও এতে হচ্ছে না। অথচ ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োজন কতকিছুই তার থেকে সযতেœ দূরে পড়ে আছে। যেসব জানলে সার্বিক কল্যাণ সম্ভব ছিলো।
এই লেখাটি যখন ছাপা হবে তখন মাদরাসাগুলোয় নূতন বছর শুরু হচ্ছে।
ক্লাস শুরুর আগে বিষয়টির কিছুও কি আমাদের উসতাযরা গ্রহণ করবেন। নীতিনির্ধারকরা কিছুটা হলেও ভাববেন। মেহেরবান ‘বরাবরের মত’ এখন দয়া না করেনÑআশা করছি। , তাহলে অন্ধকে পথ দেখাবে কে
নোমান বিন আরমান : সম্পাদক, মাসিক কালকণ্ঠ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।