আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুরন্ত সাহসী কে উতসর্গ করলাম

আলোচিত এমপি গোলাম মাওলা রনির বাবা শামসুউদ্দিন মুন্সির (শামসু কাপুুরিয়া) আদিনিবাস ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায়। স্থায়ী বসবাসের জন্য তিনি সত্তরের দশকে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার উলানিয়া বাজারে আসেন। এখানে তার সম্পত্তি ছিল না। উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজাম্মেল হোসেনের কাছে অনুনয়-বিনয় করে এক টুকরো খাস জমি বন্দোবস্ত নেন তিনি। এ জমিতেই তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন।

শামসুর একমাত্র আয়ের পথ ছিল কাপড় বিক্রি করা। তবে দোকান ছিল না। তিনি কাঁধে গামছা নিয়ে গাওয়ালি (ফেরি) করে বিক্রি করতেন। এ থেকে যৎসামান্য আয়েই চলতো তার সংসার। নব্বইয়ের দশকে গলাচিপা উপজেলার বিএনপির সভাপতি আলহাজ শাহজাহান খানের ভাগ্নি বিয়ে করেন তিনি।

এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্ষমতা, আধিপত্য আর অর্থ তার হাতের মুঠোয় আসতে থাকে। জানা যায়, এসএসসি পাসের পর এলাকা ত্যাগ করেন রনি। রাজধানীর ধনাঢ্য এক পরিবারের গৃহশিক্ষক ছিলেন। কোনোমতে পড়াশোনা চালিয়ে যান।

ছোটবেলা থেকেই তিনি চাটুকার ছিলেন। এক পর্যায় তিনি জড়িয়ে পড়েন কালোবাজারিদের সঙ্গে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু করলে তিনি পিঠ বাঁচাতে বেছে নেন সাংবাদিকতা। সেখানেও বেশিদিন স্থায়ী হননি। অশোভন আচরণ আর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে তাকে অব্যাহতি দেয় কর্তৃপক্ষ।

এরপর বিদেশি একটি কোম্পানির সঙ্গে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। গড়ে তোলেন সেবোল্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান। আওয়ামী লীগের রাজনীতি আর অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার কারণে শেখ রেহেনার সঙ্গে তার শখ্য গড়ে ওঠে। ২০০৮ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে গলাচিপা-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের এমপি নির্বাচিত হন। ক্রমশই কোন্দল আর সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়েন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাকর্মীদের সঙ্গে।

তার বাহিনীর হামলা-মামলা থেকে বাদ যাননি স্থানীয় সাংবাদিকরাও। উন্নয়নমূলক কাজের কমিশন নিয়ে দলে সৃষ্টি হয় কোন্দল। গলাচিপা পৌর মেয়র হাজী ওহাব খলিফা বলেন, রনির সঙ্গে ছিল জামায়েত-শিবির হট কানেকশন। এরই ধারাবাহিকতায় তার পৃষ্ঠপোষকতায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা নানা সুবিধা পেয়েছেন। এ উপজেলায় সরকারি বরাদ্দের উন্নয়ন কাজ হয়েছে ৫০ ভাগ।

বাকি ৫০ ভাগ গেছে রনির পেটে। মাদকসেবনকারী হিসেবে পরিচিত তার শ্যালক মকবুল আজ ডাউকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয়, মকবুল বর্তমানে কয়েক কোটি টাকার মালিক। শালা-বোনাই দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ হাওলাদার বলেন, তার বাবা সামসুদ্দিন মুন্সি ১৯৭৪ সালে গলাচিপার উলানিয়া নামক এলাকায় সপরিবারে আসেন ব্যবসার খোঁজে।

তখন তিনি গামছা ফেরি করে বিক্রি করতেন। ওই আয়েই চলত সংসার। খাসজমিতে ছোট্ট একটি কাপড়ের দোকান নিয়ে বসেন। তখন গোলাম মাওলা রনি ছোট। অথচ তিনি এখন নিজেকে পটুয়াখালী জেলার সবচেয়ে বড় সম্পদশালী কিংবা ধনী মানুষ হিসেবে দাবি করেন।

তার কোটি কোটি টাকা কিভাবে এসেছে তা অনুসন্ধান করলেই বেরিয়ে আসবে। এদিকে রনি গ্রেফতারের খবরে এলাকায় মিষ্টি বিতরণ হয়েছে এবং তার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করে দশমিনা ও গলাচিপায় মিছিল বের করেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। রনির স্বেচ্ছাচারিতা ও নানা দুর্নীতির কারণে এলাকাবাসী ছিল অতিষ্ঠ। তার গ্রেফতারের খবরে এলাকায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। তবে এত ধূর্ত রনি কীভাবে ফাঁদে আটকে গেল তা নিয়ে ছিল নানা আলোচনা।

উৎসঃ আলোকিত বাংলাদেশ bdtoday.net 22 Jul, 2013 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।