আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সামহয়্যার ইন ব্লগ- আমি আমরা এবং অত:পর...

তার্কিক দুই প্রকার: সু-তার্কিক আর কু-তার্কিক... দুই বছর তিন মাস পেরিয়ে গেল এই ব্লগে আমার পদচারনা। লেখক কখনই ছিলাম না-তবে পাঠক ছিলাম। এখনও আছি.... কিন্তু এক এক করে অনুভুতি শেয়ার করতে করতে একজন হয়ে গেলাম। গত 01 এপ্রিল দিবাগত রাত হঠা‍তই নজরে পড়ল ‍ঁকুড়ের বাদশার সংকলন: সকল ব্লগারের তালিক । ভাবলাম আমার নিকটা কি আছে? কিন্তু এত বড় সংকলন দেখে ভয় পেলাম এটা যাচাই করব কিভাবে? শেষে করলাম কপি।

কিন্তু সেও এক মহা ঝামেলার ব্যাপার। কারন: তিন কলামে সর্বমোট 82 পৃষ্ঠার এই কপিটি সেভ হতে হতে বাজল প্রায়: 2:30। কম্পিউটার বন্ধ করে ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু এক সেকেন্ডের জন্যও ঘুমাতে পারলামনা। কারন আমার মাথায় ঢুকেছে এক চিন্তা: চিন্তাটি হল-- আজকের এই বাংলাদেশে কিংবা পৃথিবীর অন্য কোন প্রান্তে আপনার আমার জীবনের স্বাভাবিক মৃত্যুর কি কোন নিশ্চয়তা আছে? ঘর থেকে বের হলাম হয়ত এই গ্রাম ছেড়ে কোন কাজে ঢাকায় যাব।

বাসটি একটি এক্সিডেন্টে পড়ে গেল খাদে অন্যদের মাঝে আমারও হল সেই রকম কোন পরিনতি- যা বর্তমান বাংলাদেশে অহরহই ঘঠে। অর্থ‍াত অস্বাভাবিক মরন। তারপর: কি হবে? এই যে ..... 2 বছর 4 মাস হতে চলল অনেক ব্লগারের ভিড়ে আমি এক নগন্য মানব সন্তান ঘন্টার পর ঘন্টা বসে পড়ি’ ব্লগের লেখাগুলি। কখনও কখনও দুচার কথা লিখিও- ফলে ঘুমোতে গিয়েও ভাবি-কেউ হয়ত আমার লেখায় মন্তব্য করল- জেগে উঠি, পোষ্ট দেখি, আবার মন্তব্য করি, মন্তব্য পাই কথা কাটাকাটি ঝগড়া, গালাগালি হজম, গালি দেই, ছাগু, নাস্তিক, ভাদাকার, কী বোর্ডে অসংখ্য শব্দাবলীর সংযোজনে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালাই। কিন্তু ধর্ম আর মতাদর্শের শত কোটি অমিল সত্যেও আমরা এই ভার্চুয়াল জগতে, একটি ছাদের নিচে, কতগুলি মানব প্রাণ, সকলেই চাই মানবতার কল্যান, শান্তির জীবন।

অতপর গন্তব্য একই... কেউ আগে, কেউ বা পরে, কেউ স্বাভাবিক ভাবে.. কেউবা অস্বাভাবিক ভাবে। জন্ম, কর্ম, আর মৃত্যু, এই তিনটা সত্যের সমম্বয়ে যে জীবন- মৃত্যুর মাঝেই যদি আসে জীবনের পরিপূর্নতা। সেই সত্যের একটা অতিক্ষুদ্র অংশ হলেও অতিক্রান্ত করেছি এই এই ব্লগের ছায়ায়। কিন্তু আমার জীবনের অন্য ‍একটি সত্যের আহবানে- কোন কারনে হঠাত মৃত্যুর পর থেকে যাবে আমার এই লেখাগুলি। হয়ত বা আমাকে দাফন করা, অন্যকে চিতায় পোড়ানো, বা অন্য কাউকে অন্য কোন দিকে নিয়ে যাবার পরও এই ভার্চুয়াল জগতে আমার কোন লেখা পড়ে হয়ত মতাদর্শের অমিলের কারনে মনে মনে দিব গালি।

অথবা আমার লেখার নিচে মন্তব্যের ঘরে আমার প্রতি প্রকাশ করা হলো ঘৃণা। কিন্তু আমিত নেই এর জবাব দেবার জন্য-প্রতিবাদ করার জন্য। উল্টোটাই যদি ভাবি হয়ত অন্য কেউ চলে গেল- এই পৃথিবীর সকল বন্ধন ছেড়ে... হয়তবা আমিই অজান্তে ... তার প্রতি... আর ভাবতে পারিনা আমি। এই ভার্চুয়াল জগতে ঘন্টার পর ঘন্টা দিনের পর দিন ব্যয় করার পরে.. এই পৃথিবীর সকল বন্ধন ছেড়ে যাবার পরেও কি আমার এই ক্যাচালের জগত থেকে মুক্তি নেই। ক্যাচাল বাদ দিয়ে যদি বলি- অনেক ভাল লেখার সংকলন আমি পড়েছি.. এই ব্লগেই।

যার মূল্য অনেক। কিন্তু তার (ব্লগারের) হঠাত অনুপস্থিতিতে তার পরিবার যদি না জেনে থাকেন বা না বুঝেন ব্লগ কি? তার প্রিয়জন দিনের পর দিন কি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন? অথবা সেই ভাল লেখকটির লেখাটি যদি না পড়তে পারেন-তার পরবর্তী প্রজন্মের কোন বংশধর। কি মুল্য রইল সেই ভাল লেখকটির ভাল কোন কর্মের? ঘন্টার পর ঘন্টা শ্রম দিয়ে লেখা ভাল কোন পোষ্ট যা তার পরবর্তী প্রজন্মকে কোন প্রভাবিত করতে পারলনা- শুধু এই ভার্চ‍ুয়াল জগত ছাড়া। আমরা ব্লগের সকল ব্লগাররা যে কোন ধর্ম, বর্ন গোত্রেরই হই সবাই পরোক্ষ ভাবে মানবতার কথা বলি। গালাগালি/ কাটাকাটি যাই করি সবার উদ্যেশ্ব অন্তত একটা দিকে মিলে যায় সেটা হলো সবাই চাই এই পৃথিবীটা শান্তির হোক।

চাওয়ার পথ ভিন্ন হতে পারে- কিন্তু জয় হোক মানবতার। কিন্তু হঠাত কোন এক ব্লগারের এই পৃথিবীর নাড়ীর বন্ধন ছিড়ে যাবার পরেও মানবতার কল্যান চাওয়া সেই মানুষটির জন্য চলতে থাকল কিছু- ভার্চুয়াল গালি। সেটা কি মানবতার কল্যান চাওয়ার এক বিপরীত চিত্র হলোনা? নি:সন্দেহে এখানের এই (World' s Largest Bangla Blog Community) বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সবাই মেধাবী তো বটেই। এমন কোন ব্যবস্থা কি আবিস্কার করা যায়না? এই পৃথিবীর নাড়ীর বন্ধন ছিড়ে যাওয়া সেই মেধাবী মানব সন্তানটির মৃত্যুর পরে তার লেখাগুলিতে কমেন্ট করার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। অথবা একটা মার্ক এসে যাবে যে তিনি আমাদের মাঝে আর নেই।

অথবা এই ব্লগ পরিবার থেকে তিনি হারিয়ে গেছেন। প্রযুক্তির মোহে আমরা যদি সবাই তো ভার্চুয়াল চরিত্র হয়ে গেলাম তাহলে মানবতার কল্যান চাওয়ার ফলাফল কি ভার্চুয়াল ভাবেই প্রতিষ্টিত হয়ে গেলনা? প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা কি পারিনা ব্লগকে সময় দেওয়া আমাদের এই ব্লগারগুলিকে অন্তত মৃত্যুর পরে হলেও যেন সীকৃতি দেওয়া হয় এই বলে যে: তিনি এই পরিবারেরই একজন সদস্য ছিলেন- তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। এর ফলে হয়ত তাঁর সেই মৃত বা হারিয়ে যাওয়া মানুষটির লেখা একটা “মার্কড” পরিজশানে চলে যাবে। ফজরের আজান হলো... অলসতা সত্যেও মসজিদে গেলাম কিন্তু নামাজে দাঁড়িয়েও এই সব ভাবনা থেকে মুক্তি মিলল না- মসজিদ থেকে আসার পর জোড় করে ঘুমানোর পূর্ব পর্যন্ত। .. চলবে .. ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.