আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেমন আছো, প্রিয় সামহয়্যার ইন ?-(2) /সুনীল সমুদ্র

কেবল সমুদ্র পারে শুষে নিতে সব, যা কিছু বিপ্রতীপ, ভেসে আসে নিদারুণ কষ্টের নীলজলে..

সামহয়্যার নিয়ে আমার অশেষ আনন্দের যেমন শেষ নেই, তেমনি একে ঘিরে রয়েছে আমার সীমাহীন অতৃপ্তি। লিখতে না পারার যন্ত্রনা তো আছেই, সেই সঙ্গে পড়তে না পারার কষ্টও আমাকে খুব বেদনার্ত করে তোলে। প্রায়শঃই ভাবি হাসান মোরশেদ, শোহেইল মোতাহির চৌধুরী, কৌশিক, আস্তমেয়ে, ব্রাত্য রাইসু, রাসেল (আট ডট), হিমু , হযবরল, রাগ ইমন, সাদিক মোহাম্মদ আলম, এস এম মাহবুব মোর্শেদ, তীরন্দাজ, কালপুরুষ, শেখ জলিল, অঃরঃপিঃ, পথিক, শরৎ ইত্যাদি অনেক অনেক ব্লগারগনের পুরনো ভাল লেখাগুলো খুঁজে খুঁজে পড়বো, কিন্তু শেষপর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠে না। ..... সামহয়্যার ব্লগ নিয়ে কতোবার কতো অনুভবের কথাই না লিখতে চেয়েছি। কিন্তু হয়নি।

... শেষ পর্যন্ত কেন যেন আর হয়ে ওঠেনি। .... ইমনের মতো ব্লগব্লগানির স্মৃতি নিয়ে 6 পর্ব লিখতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম, কিন্তু পারিনা। একেবারেই পারিনা আমি। আমার না পারা কাজগুলোর পরিসীমা বড়ো হতে হতে কতোটা দীর্ঘ হয়ে গেছে, ভাবলে খারাপই লাগে। সেই কবে সাদিক এর কাছে ই-মেইল করার কথা ছিল, হয়নি।

... সেই কবে ইমন পরামর্শ চেয়েছিল মোবাইলে বাংলার ব্যবহার বিষয়ে, তাকেও শেষপর্যন্ত আর লেখা হয়নি। আমার এতোসব না পারার ব্যর্থতা আমাকে কেবলই দগ্ধ করে ভেতরে ভেতরে ....। আসলে বাস্তব সত্য বোধহয় এটাই যে, 'লিখতে না পারা'র যন্ত্রনা সহ্যের পর কিছু একটা করতে 'পারা'র সফলতার জন্য হৃদয় গোপনে গোপনে খুব অপেক্ষায় থাকে....। আমি নিজেই অবাক হয়ে ভাবি, কেন আমি পারবোনা প্রতিদিন সামহয়্যারের সাথে পুরোপুরি সম্পৃক্ত হতে? সামহয়্যারকে কি আমি অন্য কারো চাইতে কম ভালবাসি? সামহয়্যার এর সাথে পরিচয়সূত্রে '2006 সাল' হৃদয়ে চিহ্নিত হয়ে গেছে জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তির বছর হিসেবে। সামহয়্যার আমার আর ভাল লাগছে না, এ কথা বলার আগে মৃত্যু নিশ্চয়ই আমার সকল লজ্জা ঢেকে দেবে বিবর্ণ বোধশূন্যতায়...।

আমি বিশ্বাস করি- 'সামহয়্যার আমার আর ভাল লাগছে না'- এ কথাটি বলার দিন আসলে আমার জীবনে কোনদিনই আসবে না। ... সামহয়্যার আমার কাছে এক আশ্চর্য্য আনন্দ অনুভূতির স্মৃতিচারী গোলাপ, যার স্পর্শ পেলেই অনিঃশেষ এক শিহরণ আর অসামান্য এক স্নিগ্ধ অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে আমার অনুভবের রন্ধ্রে রন্ধ্রে...। সামহয়্যার তো আমার খুব প্রিয় সেই মোহময়ী উন্মুক্ত এক জানালা, শত ব্যস্ততায়, শত কাজের ফাঁকেও যেখানে আমি বারবার মুখ রাখি। এই মুগ্ধ জানালায় তাকিয়ে আমি কতো বিচিত্র অনুভবেরই না মুখোমুখী হই ! কি আশ্চর্য্য গভীর মমতায় এখানে মুখ রেখে পল্লবিত কিছু মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত হ্্রদয়ের কাকলীতে চুপচাপ কান পাতি। রোদ, বৃষ্টি আর তীক্ষ্ন আলোক মেশানো সব অসামান্য লেখা পড়ে আমি আসলে প্রতিনিয়তই মুগ্ধ হয়ে পড়ি।

পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালীর প্রাণের বিচিত্র সব উচ্ছাস যখন সামহয়্যারের ছোট্ট জানালায় জমা হয়ে একত্রিত উচ্ছাসে ফুঁসে ওঠে, তখন সেই তর তর স্রোতের তোড়ে ভেসে যাওয়ায় আমি যে কী প্রবল আনন্দ পাই , তা শুধু আমার একান্ত সত্তাই জানে...। তাহলে সেই 'সামহয়্যার' কিভাবে পড়ে থাকবে আমার স্পর্শ থেকে দূরে? কিভাবে ফেরাবো মুখ- জীবনের এমন প্রাণবন্ত স্পর্শ থেকে অন্য কোন নিষপ্রাণ অভিমুখে? আসলে লেখার সুযোগ না হলেও পড়ার সুযোগ এসেছে প্রায়শঃই বিভিন্ন পরিমন্ডলে। পড়েছি অফিসের পিসিতে হঠাৎ হঠাৎ শত ব্যস্ততার মাঝেও...। পড়েছি বিকেল থেকে রাত অবধি কম্পিউটার কাউন্সিলের প্রশিক্ষণ কোর্সের ফাঁকে ফাঁকে...। এমনকি পড়েছি প্রতিদিনের এক-দেড় ঘন্টা বাস জার্নির সময়টুকুতে, নোকিয়া-6070 তে, খোদ ইউনিকোড বাংলাতেই...।

'সামহয়্যার' এর সেমিনারের খবরটি চোখে পড়ে তেমনি এক জার্নির সময়, মোবাইল ফোনের স্কী্রনে । তখন রাত নয়, পরদিন সেমিনার, কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে রাতের মধ্যেই, নন ইনভাইটেড-ব্লগারদের মধ্য থেকে আরো কেউ যদি যেতে আগ্রহী থাকে...। আমি ইনভাইটেড নই, এ বিষয়টি আমাকে খুব একটা দুঃখিত করলোনা... সামহয়্যারের জন্য আমার ভালবাসা খুব প্রবল.. সেই অনুভবের প্রাবল্য সব সাধারণ দুঃখবোধ, লজ্জা বা সংকোচের সীমানা অতিক্রম করে আমাকে নিয়ে যায় অন্য এক আনন্দ অনুভূতির অসামান্য তৃষ্ণার এক জগতে, যেখানে দাওয়াত ছাড়াই জোর করে গিয়ে বলা যায়- আমি এসেছি... সব দ্বিধা সংকোচ উপেক্ষা করে আমি চলে এসেছি... আমি যে তোমাকে খুব ভালবাসি সামহয়্যার ইন... আমি জানি... আমার লেখা একটি শব্দও যদি তোমার 'পৃষ্ঠা' কে সামান্যতম অলঙ্কৃত করে থাকে, তবে তুমি নিশ্চয়ই -তোমার আসর থেকে আমাকে ফেরাতে পারোনা....। ই-মেইল করলাম 'যোগাযোগ' বরাবরে। রাত্রিতে একবার , পরদিন সকালে আরেকবার।

দুবার। নো রিপ্লাই। কি আশ্চর্য্য, তবে কি যাবোনা শেষ পর্যন্ত? নাহ, তা কি করে হয়? আমি যে তোমাকে খুব ভালোবেসেছি সামহয়্যার, তোমার পৃষ্ঠার বুকে অনেকদিন একটি শব্দও বসাতে পারিনি বলে তুমি কি এতোটা নিষ্ঠুর হবে? তুমি কি তোমার উজ্জল স্রোতধারার শীতল স্পর্শ থেকে দূরে সরিয়ে.. আমাকে পাঠাতে চাও-শুষ্ক, প্রাণহীণ ,মরুভূমির মতো কঠিন দন্ড দিয়ে, অচেনা অদ্ভূত মৃতলোকে? না, আমি সত্যিই তোমাকে খুব ভালবেসেছি সামহয়্যারইন, তাই দ্বিধা আর দ্বন্দ্বের দ্বিখন্ডিত রুমাল ছুড়ে ফেলে আমি শুধু ভালবাসার ইনভাইটেশান বুকে নিয়ে পৌছে গেলাম ব্রাক ইনের রুফটপে। কী ভীষণ এক সুন্দর দিন-জীবনে আমার ! রুমে ঢুকতেই যে মানুষটির সাথে প্রথম দেখা হলো- তিনিই হাসিন, সামহয়্যারইনের স্বপ্নলোকের চাবী যাঁর হাতে, যিনি তার অসাধারণ যত্নে আর মেধায় মনের মতো করে সাজান- সামহয়্যারের অতু্যজ্জ্বল রঙের মনলোভা ভুবন...। হাসিন 'সুনীল সমুদ্র' শুনে আমাকে টেনে নিয়ে গেলেন ভেতরে.... পরিচয় করিয়ে দিলেন অরিল আর অন্যান্যের সাথে।

অরিল সম্পর্কে তখনো আমি তেমন করে কিছু জানিনা। অরিল যে এতো ভালো বাংলা বলতে পারে, তাও আমি জানিনা তখনো। ব্রেক এর সময় নাস্তা বাদ রেখে আমি মেতে উঠলাম অরিল এর সাথে দীর্ঘ আলোচনায়....। আমার আলোচনায় সামহয়্যারইনের প্রতি পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বাঙালীর বর্ধিষ্ণু ভালোবাসার বিষয়টিই বারবার তুলে ধললাম। তুলে ধরলাম আমি যে ট্রেনিং ইনষ্টিটিউটে কর্মরত আছি, সেখানকার বেসিক কম্পিউটার কোর্সের 'ইন্টারনেট ও ই-মেইল' এর ওপর কাশ নিতে গিয়ে আমি কিভাবে আমার প্রশিক্ষনাথর্ীদের অন্যান্য ওয়েবসাইটের পাশাপাশি 'সামহয়্যার-ইন-ব্লগ' সাইটের বিষয়েও আকৃষ্ট করে তুলি, সেই বিষয়ে।

... তবে অরিল বোধহয় সবচেয়ে অবাক হলেন তখনই- যখন তাকে আমার নোকিয়া-6070-তে ব্রাউজ করে বাংলায় 'সামহয়্যারইন ব্লগ' দেখালাম। অরিল বারবার আমাকে বলতে লাগলেন-'তুমি কি হাসিনকে এটি দেখিয়েছ? হাসিন কি এটি দেখেছে?'... আমি 'না' বলতেই অরিল টেনে নিয়ে গেলেন হাসিন এর দিকে....। সামহয়্যারে লিখতে না পারার যন্ত্রনাটা সেমিনারের আলোচনা শুনতে শুনতে কিছুটা যেন ফিকে হয়ে আসলো। মনে হচ্ছিল আমি আর সামহয়্যারের দূরের কেউ নই। হোক না অনেকদিন আমি তোমার পাতায় একটিও ভালবাসার অাঁচড় কাটতে পারিনি।

হোকনা অনেকদিন আমার একটিও কবিতা তোমার সাজানো বাগান দখল করে ডানা মেলতে পারেনি অন্তর্জালের অপরূপ অনিন্দ্য বিচ্ছুরণে...। তাতে কি? আমি যে তোমাকে খুব ভালোবেসেছি সামহয়্যারইন... আমার অস্থি মজ্জায় রক্তে মিশে গেছে তোমার জন্য বিকশিত প্রেম, আমার কল্পনা জাগরণে সারাক্ষণ তোমার জন্যই জমে ওঠে হাজার হাজার না বলা বাণীর আড়ালের যতো কথা। ..... আমি তোমাকে একটুও ভুলতে পারিনি সামহয়্যার ইন । যখন আমার পৃথিবীতে কষ্টের অাঁধার কালো মেঘে অঝর ধারায় বৃষ্টি নামে, যখন খুব অচেনা মেঘাচ্ছন্ন শীতার্ত এক দিন আমাকে নষ্টালজিয়ায় আক্রান্ত করে, তখন আমিতো পরিপূর্ণ ভর করেছি তোমাতেই....তোমার পৃষ্ঠার দিকে তাকিয়েই উৎফুল্ল জীবন খুঁজতে চেয়েছি বারবার নানা রূপে...। নানা সাজে..।

বিশ্বাস করো, আমি তোমার থেকে দূরে থেকেছি, কিন্তু তোমার সাফল্য আমাকে আনন্দিত করেছে। আমি তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেছি, কিন্তু তোমার ভাবনা আমাকে আন্দোলিত করেছে। ...যখন হঠাৎ কোন অনিবার্য কারণে একটানা দু'তিনদিন একেবারেই তোমার পৃষ্ঠায় আমি ঢুকতে পারিনি, তখন হঠাৎ রাত্রিতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমি লক্ষ্য করেছি, তোমার জন্য আসলে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে...আমি কিছুতেই তোমাকে ছাড়া কাটাতে পারছিনা নিশ্চিন্তে কোন বেলা....। সামহয়্যার , তুমি হয়তো কোনদিনই জানবেনা- ডিসেম্বর-জানুয়ারীর শীতার্ত সব ভোরে খুব কান্নাভেজা স্বরে বাইরের কুয়াশার দিকে তাকিয়ে-আমি কত শত বার প্রশ্ন রেখেছি- 'কেমন আছো? তুমি কেমন আছো, প্রিয় সামহয়্যার ইন?' ...............................................................................

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.